সম্পাদক পরিষদ নাকি বাকশালের খোয়াড় ?
অবশেষে ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম উপলব্ধি করেছেন, মুক্ত গণ মাধ্যম শত্রু নহে। এখন এই কথা না বলে তার কোন উপায়ও নেই। বাকশালের কোপটি এবার সরাসরি নিজের ঘাড়ে এসে পড়েছে। অপরাধটিও তেমন মারাত্মক নহে। হিজবুত তাহরীর সম্পর্কে যে রিপোর্টটি ডেইলি স্টার ছাপিয়েছে তা পড়ে সরকারের খুশী হওয়ারই কথা ছিল। কিন্তু কেন যে নাখোশ হলো তা মালুম হচ্ছে না। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী সহ সরকারের বাঘা বাঘা মন্ত্রীরা তার পত্রিকাটির বিরুদ্ধে সরাসরি ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দিয়েছেন। কারন সরকার মনে করেছে যে এই পত্রিকাটি হিজবুত তাহরীরের সমালোচনার ছলে তাদের একটা লিফলেট ছাপিয়ে প্রচারের সুযোগ করে দিয়েছে।
এই মুহুর্তে এই মাহফুজ আনামের জন্য যুতসই একটি বাগধারা মনে আসছে না। মাত্র কয়েকদিন আগে (২৩শে জানুয়ারী) ‘ বাকশালের ডায়পার ও মাহফুজ আনামদের এয়ার ফ্রেশনার’ নামে একটি লেখা পোষ্ট করেছিলাম। যারা সেই লেখাটি পড়েন নি তারা আমার পেইজে গিয়ে তা পড়ে নিলে মাহফুজ আনামের এই উপলব্দিটি নিয়ে আরেকটু আনন্দ পেতে পারেন।
একদলীয় বাকশালের আনপ্লিজেন্ট শব্দ বা দুর্গন্ধকে এই মতি-আনামরা কখনও একটু কেঁশে, কখনও বা এয়ার ফ্রেশনার মেরে ঢাকতে চেয়েছে। শুধু মাহফুজ আনাম একা নন – সম্পাদক পরিষদ নাম দিয়ে সম্পাদকদের যে এলিট ক্লাবটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে তাদের প্রায় সকলেই এই অনৈতিক কাজটি করে যাচ্ছেন। কারন এই সম্পাদকরা মনে করেন যে সৃষ্টিকর্তা সবার মাথা খালি রেখে বুদ্ধি নামক জিনিসটি শুধু তাদের মাথাতেই দিয়ে রেখেছেন।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে দুয়েকজন নিরীহ সম্পাদককে ( যাদেরকে ব্যক্তিগতভাবে আমিও শ্রদ্ধা করি, তাদের অসহায়ত্বের জন্যে করুণাও করি ) এই ক্লাবের সদস্য করা হলেও তাদের তেমন কিছু করার নেই। বস্তুতপক্ষে এই ক্লাবটি বাকশালের একটা বিশেষ খোয়াড় যাতে চাহিবামাত্রই এই খোয়াড়ের সকল অধিবাসীকে বাকশালের টিকা বা মন্ত্রগুলি সহজেই গিলিয়ে দেয়া সম্ভব হয়। গোপনে এই টিকাটি খাওয়া ছাড়া প্রকাশ্যে এই পরিষদের অন্য কোন কাজ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না ।
সরকার সকল মিডিয়ার মুখটি আরো টাইট করে বন্ধ করে দেয়ার পরেও এই সম্পাদক পরিষদের মুখ থেকে তেমন কোন শব্দ উচ্চারিত হচ্ছে না । কাজেই এই সম্পাদক পরিষদকে বাকশালের খোয়াড় বললে খুব বেশি বেয়াদবি বা অশোভন হবে না।
কারন জাতিকে বর্তমান অবস্থায় পৌছে দিতে এই খোয়াড়ের একটা বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। মাহমুদুর রহমান নামক যে সিংহের বাচ্চাকে এই খোয়াড়ে আটকানো সম্ভব হতো না তাকে আগেভাগেই বন্দি করে ফেলা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে খোয়াড়ের অপরাপর বাসিন্দাদের কোন টেনশন নেই, সামান্যতম মর্মযাতনা বা অনুশোচনাও নেই। মাহমুদুর রহমানকে এরা সবাই ভুলে গেছে।
শাহরুখ খানের পোষা কুকুর বা বিড়ালটি বায়ূ ত্যাগ করলে এই সম্পাদকবৃন্দ তাদের পত্রিকায় বড় বড় শিরোনাম করে বসে । কিন্তু জাতিসংঘের সেক্রেটারী জেনারেলের মুখপত্র বাংলাদেশ নিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিবৃতি দিলেও তা দেশের মানুষকে জানাতে চান না।
গত শুক্রবার জাতিসংঘের প্রাত্যহিক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিক মাথ্যু রাসেল লি’ মহাসচিবের মুখপাত্রকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করেছেন।
ব্রিফিংয়ে লি জানতে চেয়েছেন , ‘যেখানে বাংলাদেশি সামরিক কর্মকর্তাদের নামের একটি সুনির্দিষ্ট তালিকা আছে, যাদের বিরুদ্ধে এখন এবং ২০১৩ সালের মে মাসে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। তারা এখন জাতিসংঘের মিশনে দায়িত্ব পালন করছেন। আমি এসব কর্মকর্তার বিষয়ে শান্তিরক্ষা মিশনের পর্যালোচনা জানতে চাই।’
জবাবে সেক্রেটারী জেনারেলের মুখপাত্র ডুজারিক বলেন, ‘শান্তিরক্ষা মিশন সম্পর্কে কোনো তথ্য এই মুহূর্তে আমার হাতে নেই।’
এই সংবাদটি দেশের জন্যে কতটুকু ভয়াবহ তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এখন জাতিসংঘ যে কোন সময় আমাদের হাতে হারিকেনটি ধরিয়ে দিতে পারে। বিদেশী সাংবাদিক মিঃ লী এর বক্তব্য থেকে স্পষ্ট দেশের মধ্যে মানবাধিকার লংঘন করে যে মুন্সীরা বিদেশে মানবাধিকার রক্ষায় ব্যস্ত এই ধরনের একটি তালিকা তাদের হাতে পৌছে গেছে। বাইরের দুনিয়ার এই প্রলয়টি আমাদের সম্পাদক পরিষদ দেশের মানুষকে জানতে দিতে চাচ্ছেন না।
প্রশ্ন হলো, ডিজিটাল এই দুনিয়ায় এনালগ এই ঠেকটি কতক্ষণ দিয়ে রাখতে পারবে বাকশালের খোয়াড়ে পরিণত হওয়া আমাদের সম্পাদক পরিষদ ?