প্রকৃতির অবিচার এবং মতিয়া আপার মনোবেদনা
‘রাজনীতি করবেন কি না’ সাংবাদিকদের এমন একটা প্রশ্নে শাহরুখ খাঁন জবাব দিয়েছিলেন, I am too beautiful to be a politician.
অর্থাৎ পলিটিশিয়ান হওয়ার জন্যে আমার চেহারাটি আসলেই অতি মাত্রায় সুন্দর !
পলিটিশিয়ানদের ভেতর এবং বাইরের সৌন্দর্য নিয়ে যারা গবেষণা করেন তাদের জন্যে উক্তিটি খুবই প্রণিধানযোগ্য।
এক সময় বলা হতো, যার নাই কোন গতি, সেই করবে ওকালতি। মতিয়া আপাদের কথাবার্তা ও ভাবসাব দেখলে মনে হয়, ‘ যে নারীর নাই ছুরত , রাজনীতিই তার একমাত্র পথ । ‘
নারীবাদীরা দয়া করে এই অভাগার প্রতি অহেতুক ক্ষেপে যাবেন না। কারন আমি মূলত আজ আপনাদের পক্ষেই কলম ধরেছি।
সভ্য দুনিয়ায় অন্য কারো ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে সমালোচনা অত্যন্ত গর্হিত ও নিম্নমানের কাজ বলে গণ্য হয় ( নারী হলে তা আরো গর্হিত) ।
বঙ্গবন্ধুর শরীরের চামড়া দিয়ে যিনি ডুগডুগি বাজাতে চেয়েছিলেন সেই ক্ষ্যাপা মতিয়া আপা গতকাল জাতীয় সংসদে বলেছেন , পুত্র মারা গেলেও সাজ-সজ্জায় কলেজ গার্ল, কলেজ গার্ল ভাব নিয়ে চলছেন খালেদা জিয়া। তার সাজ-সজ্জা দেখে মনে হবে না তার সন্তান চারদিন আগে মারা গেছে। ‘
মনে করুন, আপনার বয়েস ষাট বা সত্ত্বর । আপনি নারী নন – আপনি একজন পুরুষ। আপনার মুখে দাঁড়িও রয়েছে। আপনার একজন অতি আপনজন বিদায় নিয়েছেন । তিন চার দিন পর কয়েকজন ভদ্রলোক ( সঙ্গে কোন ভদ্রমহিলা নেই) দেখা করতে এসেছেন ।
তখন আপনি কী করবেন ?
যে বেশে বাসার ভেতরে ছিলেন হুবহু কি একই বেশে তাদের সামনে যাবেন? আমার ধারনা অন্ততপক্ষে ওয়ার্ডরোব বা আলনা থেকে পরিস্কার ও ইস্ত্রি করা একটি কাপড় আপনি পরবেন। আয়নার সামনে গিয়ে চুল আচড়াবেন। স্বভাব বশত দাঁড়িটিও একটু ট্রিম করবেন। এই কাজটুকু অনৈতিক বা অশোভন হবে না। বরং এটি সভ্যতা ভব্যতার ন্যূনতম দাবি। যাদের প্রাইভেট লাইফ ও পাবলিক লাইফের তফাৎ যত বেশি তাদের জন্যে বিষয়টি আরো গুরুত্বপূর্ণ।
যেদিন কোকো মারা যান সেদিন প্রধানমন্ত্রীর সমবেদনা ও তা নিয়ে উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে আমি শফিক রেহমানের কাছ থেকে তার মনোভাবটি জানতে চাই। তিনি বলেন, ‘ দেখো, দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের একজন ভদ্রমহিলার প্রাইভেট ও পাবলিক লাইফের ভয়াবহ সংঘর্ষ ঘটে গেছে ঐ মুহুর্তে। কাজেই পুরো বিষয়টি নিয়ে আমাদের মিডিয়া ও সুশীল সমাজ যা করেছে তা অত্যন্ত লজ্জা জনক ও বেদনাদায়ক। বিএনপি পন্থী নামে যে কয়েকজন বুদ্ধিজীবী পালের হাওয়ায় তখন তাল দিয়েছেন তারাও বিষয়টির গুরুত্ব সম্যক অনুধাবন করতে পারেন নি বলেই মনে হচ্ছে।
যাই হোক মূল প্রসঙ্গে ফিরে যাই। আসলে মতিয়া আপাদের মনোকষ্টের জন্যে বেগম জিয়া দায়ী নন। দোষটি আসলে প্রকৃতির। কারন প্রাইভেট লাইফ থেকে পাবলিক লাইফে প্রবেশের ন্যূনতম পরিপাটি বেশ ( as minimum requirement at the scale of present human civilization) বেগম জিয়াকে যতটুকু সৌন্দর্য ও আভিজাত্য দান করে
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বিউটিশিয়ান দিয়েও যদি এই অগ্নিকন্যাকে সাজানো হয় তারপরেও ততটুকু লাগবে না। জানি না সেই হতাশা থেকেই কি না – একই বয়সের বেগম জিয়ার ন্যাচারাল সৌন্দর্য নিয়ে চিরাচরিত অভ্যাসমত একটি হৃদয়হীন ও অসভ্য খোঁচা মেরেছেন।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, তিনি নিজে যখন কলেজ গার্ল ছিলেন তখনও তাকে দেখে মনে হতো যেন সবেমাত্র তার একটি ছেলে মারা গেছে। একবিংশ শতাব্দীর একজন নারী কতটুকু ঈর্ষাপরায়ন এবং উপর ও মধ্য চেম্বার ( মগজ ও মন) কতটুকু খালি হলে অপর একজন নারী সম্পর্কে এমন জঘন্য ও রুচি বিবর্জিত মন্তব্য করতে পারে তা ভাবলেও অবাক হতে হয়।
আওয়ামী লীগ নিজেদেরকে অধিকতর প্রগতিশীল ও অগ্রসর ভাবনার মানুষ বলে গণ্য করে। কথায় কথায় নিজেদের শিক্ষা দীক্ষা জ্ঞান গরিমার জন্যে গর্ব করে। কিন্তু বর্তমানে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব যাদের হাতে তাদের কথাবার্তা, ভাব ও ভাবনা প্রাগৈতিহাসিক যুগের বলে মনে হয়।
যে তোফায়েলকে আওয়ামী লীগের কিংবদন্তী তুল্য নেতা গণ্য করা হয় তার সাথেও হাইব্রিড হানিফ ও হাছান মাহমুদদের পার্থক্য করা দুস্কর হয়ে পড়েছে। তিনি বলেছেন, তারেক কোকোর আপন ভাই হলে দেখতে যেতো। অথচ সবাই জানেন ভিসা জটিলতার কারনে ছোট ভাইকে শেষবারের মত দেখতে না পাওয়ায় তারেক রহমান বাচ্চার মতো কেঁদেছেন। সেই তোফায়েল আরো বলেছেন, কোকোর মৃত্যু বিধাতার অভিশাপ।
যে সুশীল সমাজ উঠতে বসতে বিএনপিকে আদব লেহাজ শেখায় তারা এখন একদম চুপ মেরে গেছেন । সর্বোচ্চ পর্যায়ের একজন ভদ্র মহিলার বিদ্যুৎ, পানি, ইন্টারনেট ও মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। তবুও এই মরাল ব্রিগেইডের মুখ থেকে কোন সমালোচনা বের হচ্ছে না ।
আসলেই আমাদের পচন ধরেছে খোদ মগজে। এই মগজ ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা ছাড়া এই জাতির মুক্তি নেই।