চাঁদার দাবিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে নির্মাণাধীন হলের কাজ ছাত্রলীগ বন্ধ করে দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ আছে, শুধু হল নয়, নির্মাণাধীন শরীরচর্চা কেন্দ্রের কাজও তারা বন্ধ করে দেয়।
নির্মাণাধীন হল ও শরীরচর্চা কেন্দ্রের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফ্রেন্ডস ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগে জানায়, ছাত্রলীগ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য দ্বিতীয় কলা অনুষদ ভবনের জন্য ৩ শতাংশ হারে চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে গতকাল শনিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অধীনে থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে নির্মাণাধীন হল ও শরীরচর্চা কেন্দ্রের কাজ বন্ধ করে দেন। তবে চাঁদা দাবির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আনোয়ারুল আজিম আরিফ সাংবাদিকদের বলেন, ‘নির্মাণাধীন হলের কাজ বন্ধ করে দেওয়ার কথা শুনেছি। এ ধরনের ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত। এটি সমাধানের চেষ্টা চলছে।’
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফ্রেন্ডস ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী মো. শাহজাহান জানান, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসংসদের সর্বশেষ ভিপি নাজিম উদ্দীনের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মামুনুল হক, সাধারণ সম্পাদক এম এ খালেদ চৌধুরীসহ ছাত্রলীগের ১৫-২০ জন নেতা-কর্মী গতকাল সন্ধ্যায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অফিসে যান। তাঁরা এ সময় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অধীনে চলা ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে কলা অনুষদ ভবনের জন্য ৩ শতাংশ হারে চাঁদা দিতে বলেন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এত টাকা দিতে রাজি হয়নি। এরপর ছাত্রলীগ নির্মাণাধীন ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা হল ও শরীরচর্চা কেন্দ্রে’র নির্মাণকাজ গতকাল রাতেই বন্ধ করে দেয়।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) ভিপি নাজিম উদ্দীনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ খালেদ চৌধুরী বলেন, ‘নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে এসব প্রকল্পের কাজ চলায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা নির্মাণকাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। এর সঙ্গে ছাত্রলীগের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, জননেত্রী শেখ হাসিনা হল, জীববিজ্ঞান অনুষদের বর্ধিত ভবন, শারীরিক শিক্ষা অনুষদ ভবন, দ্বিতীয় কলা অনুষদ ভবনসহ ৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন ভবনের নির্মাণকাজ চলছে। এর মধ্যে জননেত্রী শেখ হাসিনা হল ও শরীরচর্চা কেন্দ্র নির্মাণ করতে ১৯ কোটি টাকার কাজ পায় ফ্রেন্ডস ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সর্বশেষ চলতি মাসের ১৮ তারিখ কার্যাদেশও পায় ফ্রেন্ডস ইন্টারন্যাশনাল। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা। অন্যদিকে জননেত্রী শেখ হাসিনা হল ও শরীরচর্চা কেন্দ্র নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারেরও অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। এ নিয়ে প্রতিবাদ জানায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী আলমগীর হোসেন বলেন, ‘কয়েক দিন আগে জননেত্রী শেখ হাসিনা হল নির্মাণকাজের জন্য আনা নিম্নমানের দুই ট্রাকভর্তি বালু আমরা ফেরত পাঠিয়েছি। আমরা নির্মাণকাজ ও নির্মাণ সামগ্রীর ওপর আলাদা মনিটরিং করছি।’
Source: Prothom Alo