নারায়ণগঞ্জের মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার বিচার এবং শামীম ওসমানকে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়েছে।
ত্বকী হত্যার বিচার এবং শামীম ওসমান পরিবারের ‘ত্রাসের রাজত্ব’ নির্মূলে সংক্ষুব্দ নাগরিক সমাজের সমাবেশ থেকে এ দাবি জানানো হয়েছে। আজ শুক্রবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে ওই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেন।
সমাবেশে বক্তারা অভিযোগ করেন, আশির দশক থেকে নারায়ণগঞ্জের সব প্রগতিশীল আন্দোলনের পরিচিত নাম রফিউর রাব্বি। সর্বশেষ তিনি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেলিনা হায়াত্ আইভীর পক্ষে কাজ করেছেন। এসব কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে সন্ত্রাসীরা রাব্বির কিশোর সন্তানকে হত্যা করেছে। আর এই হত্যার সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের পরিবার জড়িত।
সমাবেশে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি ও উপদেষ্টা মনজুরুল আহসান খান বলেন, ‘আমরা একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি। একদিকে আমাদের প্রকাশ্য শত্রু, আরেক দিকে ছদ্মবেশী শত্রু।’
মনজুরুল আহসান খান বলেন, ‘ত্বকী হত্যার বিচার হচ্ছে না। কারণ এই হত্যায় শামীম ওসমানের নাম এসেছে। আর শামীম ওসমানকে আওয়ামী লীগের দরকার।’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, আজকে শাহবাগ থেকে দাবি ওঠার পরও জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ হচ্ছে না। কারণ, সরকার ভোটের হিসাব কষছে। সব সংকট দূর করতে এ মুহূর্তে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি হালিম আজাদ বলেন, নারায়ণগঞ্জ এখন মৃত্যু উপত্যকা। শামীম ওসমান সেখানে যাকে-তাকে হুমকি দিচ্ছেন।
খেলাঘরের সভাপতি রথীন চক্রবর্তী বলেন, ‘আমরা নারায়ণগঞ্জ থেকে এখানে শোক প্রকাশ করতে আসিনি। আমরা এসেছি ত্বকী হত্যার বিচারের দাবিতে। ৬ মার্চ ত্বকী নিখোঁজ হওয়ার পর আমরা থানায় যাই, র্যাব অফিসে যাই। সেদিন তাঁরা তত্পর হলে ত্বকীকে জীবিত উদ্ধার করতে পারতেন। কারণ, নারায়ণগঞ্জে কোথায় নির্যাতন সেল আছে, সেটা সবাই জানে।’
রথীন চক্রবর্তী অভিযোগ করে বলেন, ‘ত্বকী হত্যার সঙ্গে জামায়াত-শিবির জড়িত নয়। কারণ, তারা জড়িত থাকলে রফিউর রাব্বিকে হত্যা করত।’
সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা ফেরদৌসি প্রিয়ভাষিণী, নিজেরা করির সমন্বয়ক খুশি কবীর, নাসিম আখতার হুসেইন, গীতি আরা নাসরিন, ফাহমিদুল হক, মানস চৌধুরী, মোশাহিদা সুলতানা, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী, গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের মোশরেফা মিশু, প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক, সংগীত শিল্পী মাকসুদুল হক, অরূপ রাহী, ক্ষুব্ধ নারী সমাজের শিপ্রা বোস প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা ত্বকী হত্যার ঘটনায় শামীম ওসমানের বিচার দাবি করেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ারও ঘোষণা দেন।
সমাবেশ শেষে একটি মিছিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে কাঁটাবন হয়ে শাহবাগে পৌঁছায়।
সমাবেশের শুরুতেই কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের একটি লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মশউদ ইমরান।
লিখিত বক্তব্যে হাসান আজিজুল হক বলেন, আজকে রাব্বির মতো লোকের সন্তান হারাতে হয়। এটা রাষ্ট্র ও সরকারের জন্য লজ্জার।
সমাবেশের দাবির প্রতি একাত্মতা জানিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৪ জন শিক্ষক সংহতি প্রকাশ করেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সংগঠন ওই সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করেছে।
Source: