Arresting adherents while praying

P1_masjide-dhuke-namajroto

মসজিদে ঢুকে নামাজ আদায়রত মুসল্লিদের গ্রেফতার করা নিয়ে যশোরের মনিরামপুরে পুলিশের সঙ্গে গ্রামবাসীর ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়েছে। এতে পুলিশের গুলিতে আনিসুর রহমান নামে বিএনপির এক কর্মী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন পুলিশ ও মহিলাসহ অর্ধশতাধিক। সংঘর্ষকালে গ্রামবাসীর সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের কর্মীরা অংশ নিয়ে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুললে একপর্যায়ে পুলিশ পিছু হটে গেলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
এদিকে গ্রামবাসীর ওপর গুলিবর্ষণকালে পুলিশের সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ক্যাডাররাও অংশ নেয় বলে জানা গেছে। ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ জনতা ২৫ থেকে ৩০ আওয়ামী-সমর্থকের বাড়িতে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। পরে তারা যশোর-সাতক্ষীরা মহাসড়ক অবরোধ করে।
এর আগে আনিসুর রহমানের লাশ নিয়ে মিছিল করেছে উত্তেজিত জনতা। পরে বিকেলে আনিসুরের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তৃতাকালে আগামীকাল রোববার যশোরে আধা বেলার হরতালের ডাক দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। পরে ১৮ দলও কাল মনিরামপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে হরতালের ডাক দেয়।
ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসী পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ফজরের নামাজের সময় মনিরামপুর উপজেলার জয়পুর গ্রামের দীঘিরপাড় জামতলা বাজার মসজিদে হানা দেয় বিপুলসংখ্যক পুলিশ। তারা মসজিদে ঢুকে নামাজ আদায়রত মুসল্লি আক্কাস, দর্জি মোশারফ, মিজান ও তোফাজ্জেল নামের চারজনকে আটক করে। একই সময় পুলিশ গ্রামটির কাচারিবাড়ি মসজিদে ঢুকেও মামলার আসামিদের খোঁজ করে। এ ঘটনায় মুসল্লিদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
এ ঘটনায় এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী পুলিশকে ঘিরে ফেলে। আশপাশের গ্রাম হুরগাতি, বেগারিতলা, দেলুয়াবাড়ি, চান্দুয়া, সমসকাটি, জালঝাড়া ও শোলাকুড় থেকেও হাজার হাজার লোক ছুটে আসে ঘটনাস্থলে। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। গ্রামবাসী ইটপাটকেল ছোড়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে। পুলিশও নির্বিচার গুলি ছোড়ে।
গ্রামবাসী জানান, পুলিশের সঙ্গে মনিরামপুর আওয়ামী লীগ আশ্রিত কুখ্যাত সন্ত্রাসী আদম বাহিনীর লোকজন অংশ নেয়। পুলিশের পাশাপাশি তারা রাইফেল-পিস্তলের গুলি চালায়। প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী এই সংঘর্ষে জয়পুর গ্রামের ইব্রাহিম মোল্লার ছেলে আনিসুর রহমান নিহত হন। আহত হন নারীসহ অর্ধশতাধিক। তাদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ ১০ জনকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গুলিবিদ্ধরা হলেন জয়পুর গ্রামের কাদের মোল্লার ছেলে আমজাদ, এবাদত সরদারের ছেলে সাখাওয়াত আহমেদ, আবদুর রাজ্জাকের ছেলে সবুজ, মশিয়ার রহমানের ছেলে এনামুল, মতিয়ার রহমানের ছেলে আলমগীর, ফরহাদের ছেলে শহিদুল, কাউসার আলীর ছেলে আলমগীর, নুরুল ইসলামের স্ত্রী জহুরা খাতুন, শ্রীপুর গ্রামের পীর ইউসুফের ছেলে মোহাম্মদ।
আলী এবং চান্দুয়া গ্রামের শাহাদত গাজীর ছেলে রফিকুল ইসলাম। এদের মধ্যে জহুরা খাতুনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া চিকিত্সারতদের মধ্যে বুকে গুলিবিদ্ধ সবুজের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এদিকে ঘটনার পর পুলিশের গ্রেফতারের ভয়ে গুলিবিদ্ধ আমজাদ, সাখাওয়াত ও শহিদুল সরকারি হাসপাতাল ছেড়ে গেছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া অবশিষ্ট আহতরা মনিরামপুরসহ আশপাশের এলাকার বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিত্সা নিয়েছেন।
সংঘর্ষে পুলিশের আট সদস্য আহত হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে সংশ্লিষ্ট থানার ওসিও রয়েছেন বলে জানা গেছে।
সংঘর্ষ চলাকালে গ্রামবাসীর হাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় পুলিশের দুটি গাড়ি। প্রায় দু’ঘণ্টা পর পুলিশ পিছু হটলে গ্রামগুলোর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চলে যায় জনতার হাতে। তারা আহতদের চিকিত্সার জন্য হাসপাতালে পাঠানো, সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ মিছিল করতে থাকেন।
সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত গোটা এলাকা গ্রামবাসীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুভাষচন্দ্র সাহা জানান, পরিস্থিতি এখন শান্ত। পুলিশ আসামি গ্রেফতারের জন্য ফের এলাকায় যাবে।
পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ ঘণ্টা দুই স্থায়ী হলেও পরে এলাকায় ব্যাপক ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ চলে। বিএনপি ও জামায়াত নেতাকর্মীদের নেতৃত্বে বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী আওয়ামী লীগ সমর্থকদের ঘরবাড়িতে একের পর এক আগুন দেয়, ভাংচুর করে। এই আক্রমণে জয়পুর গ্রামের ২৫-৩০টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
জয়পুর গ্রামের আওয়ামী লীগ সমর্থক লুত্ফর বিশ্বাস বলেন, ‘ওরা আমার সবকিছু পুড়িয়ে শেষ করে দিয়েছে। দুপুরে খাওয়ার মতো কিছুও রাখেনি। তিনি বলেন, যারা আগুন লাগাতে এসেছিল তারা এ গ্রামের কেউ না, ওদের আমরা চিনি না।’
সংঘর্ষে হতাহতের পর ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী যশোর-সাতক্ষীরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মহাসড়কটি অবরুদ্ধ ছিল।
এদিকে, নিহত আনিসুর রহমান বিএনপি কর্মী বলে দাবি করেছে দলটি। যশোর জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন জানান, আনিসুর তাদের দলের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। ভোরে কর্মস্থলের দিকে যাওয়ার সময় তিনি গুলিতে নিহত হন।
ঢাকায় অবস্থানরত বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম পুলিশ ও আওয়ামী লীগ আশ্রিত সন্ত্রাসীদের বেপরোয়া তাণ্ডবের তীব্র নিন্দা করেছেন। তিনি এই নারকীয় তাণ্ডবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে সাধারণ মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
নিহত আনিসুর রহমানের মামা মুজিবর রহমান বলেন, উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির অধ্যাপক ফজলুল হককে গ্রেফতার করতে পুলিশ জয়পুর গ্রামের মসজিদে হানা দিয়েছিল। সংঘর্ষকালে গুলিবিদ্ধ আনিসুর দীর্ঘসময় বিনাচিকিত্সায় পড়ে থাকায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয় বলে তিনি দাবি করেন।
নিহত আনিসুরের ফুফা তৈয়েবুর রহমান জানান, পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের গুলিতে আহতদের সবাই সাধারণ শ্রমজীবী। মসজিদ থেকে নামাজরত মুসল্লিদের আটক করায় এরা ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধে এগিয়ে যায়।
জয়পুর গ্রামের আবদুল কাদের জানান, ফজরের নামাজ পড়ার সময় পুলিশ মসজিদের ভেতর থেকে মুসল্লিদের আটক করলে জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। পরে কাচারিবাড়িতে স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা রাস্তায় ব্যারিকেড দিলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বেধে যায়। একপর্যায়ে পাশের গ্রামের বিএনপি ও জামায়াত-শিবির সমর্থকরা সংঘর্ষে যোগ দেয়। অবস্থা বেগতিক দেখে পুলিশ বেপরোয়া গুলি চালায়।
আহত বেনজির আহমেদের বাবা আবদুর রাজ্জাক জানান, পুলিশের সঙ্গে আদম বাহিনী নামে পরিচিত মনিরামপুরের একটি সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা ছিল। তিনি দাবি করেন, হতাহতের ঘটনা ঘটেছে আদম বাহিনীর সদস্যদের গুলিতে।
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুভাষচন্দ্র সাহা জানান, মনিরামপুর থানায় বিজিবি সদস্যদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে তাদের নামানো হবে।
রোববার মনিরামপুরে আধাবেলা হরতাল ডেকেছে ১৮ দল : যশোর অফিস জানায়, আগামীকাল যশোরের মনিরামপুর উপজেলায় আধাবেলা হরতাল ডেকেছে ১৮ দলীয় জোট। নির্বিচারে গুলি করে মানুষ হত্যা, মিথ্যা মামলায় নেতাকর্মীদের গ্রেফতার-হয়রানির প্রতিবাদে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল রাতে জোটের জেলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও ১৮ দলীয় জোটের অন্যতম নেতা অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু জানান, একইদিন সকালে যশোরের পুলিশ সুপারের কার্যালয় ঘেরাও করে রাখা হবে দু’ঘণ্টাব্যাপী। এছাড়া ২৮ মার্চ ১৮ দলীয় জোটের উদ্যোগে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় মনিরামপুরে মসজিদে ঢুকে মুসল্লিদের গ্রেফতার, গ্রামবাসীর ওপর পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের নির্বিচার গুলিবর্ষণের তীব্র নিন্দা জানানো হয়। বলা হয়, অবিলম্বে সরকারকে গণনিপীড়নের পথ থেকে সরে আসতে হবে। নাহলে সাধারণ মানুষকে সংগঠিত করার মাধ্যমে তীব্র আন্দোলন গড়ে জবাব দেয়া হবে।
বিএনপি কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা ১৮ দলের আহ্বায়ক শামসুল হুদা। সভায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ঐক্যজোটসহ জোটভুক্ত দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

Source: Amar Desh