এবারের খায়েস গৃহপালিত বিএনপি
গৃহপালিত বিরোধী দলের ব্যবস্থা আল্লাহর রহমতে তো অনেক আগেই হয়েছে। এখন সরকারের দরকার পড়েছে বোধ হয় একটি গৃহপালিত ‘বিএনপি’র । সরকারে থেকে এই ধরনের খায়েস মেটানো কারো পক্ষেই কঠিন নহে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, অচিরেই তারও বন্দোবস্ত হয়ে যেতে পারে।
বিষয়টি এতদিনে দেশের সচেতন সব মানুষই উপলব্ধি করতে পেরেছেন । সঙ্গত কারনেই সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপিকে ভাঙার অভিযোগ উঠেছে। একটি স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের যতগুলি বৈশিষ্ট্য থাকে, তার মধ্যে অন্যতম হলো এরা সকল ধরনের বিরোধিতাকে খতম করতে চায়।
সৈয়দ ঘরের সন্তান জনাব আশরাফুল ইসলাম মানুষ হিসাবে ভদ্র হলেও একজন শতভাগ আওয়ামী লীগার।
এই সৈয়দ ঘরের সন্তান ভদ্রতার খাতিরেই হয়তোবা বলেছেন, সরকার বিএনপিকে ভাঙার চেষ্টা করছে না। তার চেয়েও বেশি ঈমানদারির পরিচয় দিয়েছেন এক সেনগুপ্তের সন্তান। সরকারের এই অপরাধকে অস্বীকার না করে তাকে লঘু করার উদ্দেশ্যে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন, ‘ সকল সরকারই বিরোধী দলকে ভাঙতে চায় ‘।
কিছুদিন আগে বেগম জিয়া জানিয়েছেন, যদি কেউ সরকারের সঙ্গে হাত মেলাতে চায়, তাহলে যেন দল ছেড়ে দেয়। ইদানিং যারা খাঁটি জিয়া প্রেমিক সেজে নতুন হুক্কা হুয়া তুলেছেন তাদের উদ্দেশ্যে আরো স্পষ্ট করে বলেছেন যে বর্তমান বিএনপি জিয়ার আদর্শই ধারন করে আছে। দেশ ও জাতিকে চরম সংকটে ফেলে নিজের পিঠ বাঁচানো বা কোনরূপ সুবিধা লুন্ঠন কখনই জিয়ার আদর্শ নয়। স্বভাবে এরা অনেকটা কচছপের মত। আমার ধারনা এরা খোলস থেকে আর হাত পা বের করবে না। কারন খোলস থেকে হাত পা বের করলেই মানুষ এদেরকে চিনে ফেলবে। গৃহপালিত বিরোধী দলের চেয়েও গৃহপালিত এই বিএনপির অবস্থা হবে আরো করুণ।
বেগম জিয়ার এই ধরনের কিছু শক্ত কথায় মর্মাহত হয়েছেন বিএনপির অতি দরদি মাসি পিসি গণ। মা বাবার চেয়ে এরা প্রায়শই বিএনপির প্রতি বেশি দরদ প্রদর্শন করে থাকেন । বিএনপির জন্যে দুশ্চিন্তায় এদের অনেকের ঘুম আসে না। বিএনপি সহ সকল বিরোধী দলের উপর সরকারের চরম নির্যাতন ও ফ্যাসিবাদি কার্যকলাপ এদের চোখে পড়ে না। বিরোধী দল একটি মানব বন্ধনও করতে পারে না। রাজনৈতিক মিছিলে সরাসরি গুলি করা হয়। তখন বিএনপি দরদি এই সব সাংবাদিক কলামিস্টরা বলেন, বিএনপি নেতাদের হেডমের অভাব।
এই সব দরদি পিসিদের একজন প্রথম আলোতে লিখেছেন, বিএনপিতে নেই বিএনপি। এতদিনে ইনারা মূল কারণটি বের করেছেন, আসলে বিএনপি নেতাদের হেডম নয় – বিএনপির এই দুর্দশার জন্যে আসলে জামায়াতই দায়ী!
এই জামায়াত থেকে মুক্ত হলে বর্তমান সরকারই তাদেরকে কোলে করে ক্ষমতায় বসিয়ে দিবেন। জামায়াত জোটে থাকাতে এই পিসি মহাশয়েরা এই মহৎ কর্মটি করতে পারছেন না। এই পিসি মহাশয়েরা অংকে খুবই কাঁচা!
বিএনপি দরদি এই সব মাসি পিসিদের জন্যে তাই ফরহাদ মজহার দৈনিক যুগান্তরে একটি হিসাব কষেছেন। তিনি অনেকটা বেরসিকের মত স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে জিয়ার খাঁটি প্রেমিক সেজে যারা হুক্কা হুয়া রব ( বিএনপিকে জামায়াত মুক্তকরন) তুলেছেন সেই রবটি মূলতঃ আওয়ামী লীগের। তিনি রাজনীতির জটিল অংককে সরল করে দেখিয়েছেন, বিএনপির ভেতরে থেকে এরা আসলে আওয়ামী রাজনীতিই করছেন।
কারন দেশের মানুষ ভালো করেই জানে যে ১৯৯৬ সালে জামায়াতের সাথে প্রেম করতে আওয়ামী লীগের একটুও অসুিবধে হয় নি, সামান্য ঘেন্না লাগে নি । আবার দরকার পড়লে ভবিষ্যতেও জামায়াতের সাথে প্রেম করতে কোন অসুবিধা হবে না। তখন এই পিসি মশায়েরা দেখেও তা না দেখার ভাণ করবেন।
সহজ গাণিতিক হিসাবের কারণে জাতীয়তাবাদী জোট থেকে ইসলামপন্থীদের বিচ্ছিন্নকরন গত এক দশক ধরে আওয়ামী রাজনীতির মূল মন্ত্র হয়ে পড়েছে। এই কাজটি আওয়ামীলীগ ( কিংবা তাদের প্রভুু বা মাস্টার) গত জরুরি সরকারকে দিয়ে করাতে পারে নি। যুদ্ধাপরাধের বিচারটিকে গত পাঁচ বছর যাবত দাবার চালের মত চেলেও কাঙ্খিত রাজনৈতিক সফলতা অর্জন করতে পারে নি। একটা গ্রহনযোগ্য নির্বাচন দিতে সরকারের ক্রমবর্ধমান এই ভীতিই উক্ত দাবির পক্ষে বড় প্রমাণ। সরকার যেরকম ভেবেছিল বাস্তব পরিস্থিতি সেরকম হয় নি।
সরকারের গ্র্যান্ড পরিকল্পনাটিকে ২০ দলীয় জোট এ পর্যন্ত অত্যন্ত ধৈর্য ও চরম বুদ্ধিমত্তার সাথে মোকাবেলা করেছে। এটাও সরকারকে যারপরনাই হতাশ করেছে।
এযাবত সকল রাষ্ট্র শক্তির পাশবিক প্রয়োগ এবং নিষ্ঠুর কুট চক্রের মাধ্যমে যে কাজটি করতে পারে নি সেই কাজটিই
আজ করতে চাচ্ছে বিএনপির মধ্যে থেকে যারা আওয়ামী রাজনীতি করতে চান সেই সব বসন্তের কোকিলদের মাধ্যমে। এই বিষয়টিই সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন ফরহাদ মজহার তার এই কলামটিতে।
কাজেই বিএনপির জন্যে এই বসন্তের কোকিলেরা কখনই এসেট নয়, এরা লায়াবিলিটিজ। মেজর অাখতার ঠিকই বলেছেন, এরা চলে গেলে বিএনপির ক্ষতি হবে না, বরং অনেক লাভ হবে। যত বড় করেই তুলে ধরা হোক না কেন, এদের পেছনে পাঁচ জন সমর্থকও খুজে পাওয়া যাবে না। মানুষ আজ রাজনৈতিকভাবে অনেক সচেতন। এই কিসিমের রাজনৈতিক বিশ্লেষক বা রাজনীতিবিদকে গ্রামের চায়ের স্টলের রহিমুল্লারাও রাজনীতি শেখাতে পারবেন। জনগণের সচেতনতার উত্তাপ এদের কাছে পৌছে নি। এদেরকে যারা ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে তুলে ধরে কিংবা এদেরকে যারা মনে প্রাণে সমর্থন করে তারা কখনই বিএনপিকে ভোট দিবে না। বিএনপির নেতৃত্ব ও কর্মীদেরকে এই সহজ কথাটি সর্বদা স্মরণ রাখতে হবে।
মনে রাখতে হবে, জন সম্পৃক্ত কোন দলকে এই ধরনের নিপীড়ন বা চক্রান্তের মাধ্যমে নিঃশেষ করা যায় না। বরং চক্রান্তকারীরাই নিজেদের পাপের ভারে নিঃশেষ হয়ে পড়ে।