দড়িটা এখন কার গলায়, অতি চালাক মিন্টুর নাকি তাঁর দলের ?
ঢাকা উত্তরের মেয়র প্রার্থীকে সমর্থন নিয়ে বিশ দলীয় জোট বেশ জটিল অবস্থায় পড়ে গেছে। আর দলকে এই বেকায়দায় ফেলেছে বিএনপির মেয়র প্রার্থী আব্দুল আউয়াল মিন্টু। তাঁর প্রার্থিতায় যাকে সমর্থক হিসাবে দেখানো হয়েছে তিনি সেই নির্বাচনী এলাকার বাসিন্দাই নন। ফলে নির্বাচন কমিশন তার প্রার্থিতা বাতিল করে দিয়েছে। আপিল করেও লাভ হয় নি। এখন আরো উচ্চতর জায়গায় যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
তবে ‘সাবধানের মাইর নাই’ এই ভাবনা থেকে নিজের ছেলেকেও মেয়র প্রার্থী হিসাবে দাড় করিয়েছেন সাবধানী মিন্টু সাহেব। নির্বাচন কমিশনের ফিল্টারে বাপ আটকে গেলেও ছেলে টিকে গেছেন । সাধারন কর্মী সমর্থকগণ যদি মনে করে যে এটা জনাব মিন্টুর পূর্ব পরিকল্পিত তবে তাদেরকে খুব বেশি দোষ দেওয়া যাবে না। কারন তিনি অগত্যা ডিসকোয়ালিফাইড হয়ে গেলে আপদকালীন প্রার্থী কে হবেন তাঁর এই শংকার কথাটি দলকে জানিয়ে রাখলে তারাই একটা ব্যবস্থা করে রাখতে পারতেন। সেটাই উত্তম হতো। এভাবে দলকে বেকায়দায় ফেলে নিজের ছেলেকে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা প্রণিধানযোগ্য কারনেই কেউ সুনজরে দেখছে না।
যারা পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে কথা বলেন তারা এখান থেকে কিছু ক্লূ নিতে পারেন যে অপত্য স্নেহ আমাদের অস্থিমজ্জার কোন জায়গায় প্রবেশ করেছে। অপত্য স্নেহ আমাদের সমাজের বিজ্ঞ মানুষটিকেও কেমন বোকা বানিয়ে ফেলতে পারে। তথাকথিত এক এগারোর সময় মাইনাস টু এর প্রবক্তারা যখন সমস্যার মূল জায়গায় হাত না দিয়ে অহেতুক এই পরিবার তন্ত্রকে আক্রমণ করেন তখন এই কলামটি নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলাম। সেদিন যুক্তি দিয়েছিলাম যে পার্থিব -অপার্থিব সব পীরেরাই নিজেদের শাহজাদাদেরকে গদীনশীন করে রাখতে চান। নিজেদের বিচরন আধ্যাত্মিক জগতে থাকলেও পার্থিব এই টানটি এই যাবত অনেক পীরেরাই অতিক্রম করতে পারেন নি। ভক্ত মুরীদদেরকে দুনিয়ার ধন -সম্পদ- সন্তান -সন্ততির মোহ থেকে বের করার চেষ্টা করলেও তারা নিজেরা খুব একটা বের হতে পারেন নি। এটা ভেবেই তখন লিখেছিলাম যে আমাদের সার্বিক মানসিকতার পরিবর্তন না করে শুধু শুধু এক পরিবারতন্ত্র ধ্বংস করে অন্য পরিবারতন্ত্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা হবে জাতির জীবনে সময় ও শ্রমের অপচয় মাত্র।
সমাজকে পরিবর্তন করতে হলে প্রথমে আমাদের নিজেদের মন ও মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। নিজে যৎ সামান্য সুযোগ বা ক্ষমতা পেলেই অন্যের ছেলের হক নষ্ট করে নিজের ছেলে ভাগিনাকে বসিয়ে দেন । এরাই আবার বাঘ ভাল্লুক মেরে নেতা নেত্রী বা তাদের পরিবারতন্ত্রের চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করেন । নিজের জন্যে সব সময় সহজ রাস্তাটিই বেছে নেন । নেতা নেত্রীকে কঠিন পথ ধরতে বলেন।
আওয়ামী লীগের রাজনীতি ছেড়ে আসা ও প্রধানমন্ত্রীর শক্তিসালী উপদেষ্টার বেয়াই মিন্টু সাব অনেকদিন যাবত বিএনপির রাজনীতির প্রতি তার অানুগত্য দেখাতে পারলেও তাঁর ছেলের রাজনৈতিক ও আদর্শিক অানুগত্য ও সক্ষমতা সম্পর্কে কারো কোন ধারনাই নেই। এই ধরনের মাল্টি পার্টি পরিবার থেকে বিএনপির লাভবান হওয়ার রেকর্ড খুব একটা নেই। বরং উল্টো ফ্যানোমেনাটিই বেশি দেখা গেছে।
আনিসুল হকের মত একজন ঝানু প্রতিপক্ষের সামনে মিন্টু সাব নিজের ছেলেকে যোগ্য মনে করলেও সেখানকার ভোটাররা কতটুকু মনে করবে তা নিয়েও যথেষ্ঠ সন্দেহ রয়েছে।
বিএনপির সম্মুখে এই মুহুর্তে বিকল্প চয়েজটি হলো বিকল্প ধারার মাহী বি চৌধুরী। মাহী বি চৌধুরী এবং তার বাবার যোগ্যতা ও দক্ষতা নিয়ে কারো কোন সন্দেহ নেই। বরং তাদের অতি যোগ্যতা বা অতি কনফিডেন্স বিএনপির জন্যে অতীতে বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। এক্ষেত্রে বিএনপির ভাগ্যই খারাপ বলতে হবে। আওয়ামী লীগ তাদের দল থেকে যে দুজন প্রেসিডেন্ট বানিয়েছে তারা কখনই আওয়ামী রেডারের আওতার বাইরে যান নি। কিন্তু একই ধরনের স্বস্তি বিএনপি মনোনিত সর্বশেষ দুজন প্রেসিডেন্ট তাদেরকে দিতে পারেন নি। একমাত্র বিশ্বাস সাব এই বিশ্বাসটুকু ঠিক মতো রেখেছিলেন । তাঁকে নিয়ে অবশ্য বিএনপির প্রগতিশীল অংশ সব সময় একটা হীনম্মন্যতায় ভুগেছে এবং তাদের এই মনোবেদনা নিজের নাম গোপন রেখে আওয়ামী মিডিয়ায় জানিয়েছে। তথাকথিত ‘প্রগতিশীলতা’ এবং ‘আস্থা’ এই দুটি কেন যেন বিএনপির ভাগ্যে এক সঙ্গে জুটে না।
তাছাড়া বিকল্প ধারা বিশ দলীয় জোটের সাথে অান্দোলনে মাঝে মাঝে নৈতিক সমর্থন দিলেও এখনও সেই জোটে পুরাপুরি যোগদান করে নি। বিএনপিতেও ফিরে আসে নি। বিশ দলীয় জোটের কোন কোন সদস্য ‘ছুঁলেই তার জাত যাবে’ এই ধরনের ব্রাহ্মণ্যসুলভ আচরণ থেকেও বিকল্প ধারা বের হয়ে আসতে পারে নি।
কাজেই লাভের গুড় পিঁপড়া খাবে কি না সেই হিসাবটিও বিএনপিকে আগে থেকেই হিসাব করে রাখা দরকার।
বর্তমান এবং ভবিষ্যতের রাজনৈতিক ঝুকি বা হুমকি কমিয়েই দুটি বিকল্প থেকে একটিকে এখন বিএনপিকে বেছে নিতে হবে।
তবে বেয়াই সাব এই কঠিন সময়ে যদি মিন্টু সাবের পাশে দাঁড়ান, তবে তা ভিন্ন হিসাব। যদিও আগেই লিখেছি যে মাল্টি পার্টি পরিবার থেকে বিএনপির লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।