শত ভাগ হালাল কান্না বনাম হারাম কান্না
রান্নার মত কান্নাও একটি আর্ট। তারানা হালিমরা এদেশে কান্না শিল্পে নতুন মাত্রা যোগ করেছেন। অপরাপর শিল্পী সাহিত্যিক এবং বিনোদন জগতও বসে নেই।
এক শত ভাগ হালাল সাবানের কথা অবশ্য আমরা অনেক আগেই জেনেছি। এবার দেশবাসী উপভোগ করেছে এক শত ভাগ হালাল কান্না । আমাদের নেত্রী কিংবা অভিনেত্রীরা সংসদে যে কান্না করেছেন তাহলো এক শত ভাগ হালাল কান্নার নমুনা।
এই ধরনের হালাল হারামটি নির্ধারনের রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পেয়েছেন আমাদের মিডিয়ার মোজা বাবুরা । কাজেই কোন কিছু নিয়ে কান্না শুরু করার আগে মিডিয়া কর্তৃক সেটকৃত হালাল হারামের বিধানটির উপর নজর বুলিয়ে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।
বিশ্ব মানবতার একটি অখন্ডিত ও শাশ্বত রূপ রয়েছে এগুলি আসলে বাজে কথা। মানবাধিকার, মানবিকতা ইত্যাদি সবগুলির উপর কাজ করে মোজা বাবু ও জাফর স্যারদের হালাল হারামের ফর্মূলা।
একজন মানুষ নিহত হলেই আপনি ভ্যা ভ্যা করে কান্না শুরু করে দিবেন, এটা ভাই ঠিক হবে না। চোখের এই দামি জলকে অপাত্রে ফেলবেন না।
একজন সচেতন নাগরিক হিসাবে প্রথমেই আপনাকে বের করে নিতে হবে কী প্রক্রিয়ায় লোকটি নিহত হয়েছে। যদি র্যাবের ক্রস ফায়ারে বা তাদের উদ্ভাবিত নতুন কোন ফায়ারে বা গাড়ীর টায়ারের নিচে পড়ে লোকটি নিহত হয় তবে তাকে নিয়ে কান্না করা হবে বিলকুল হারাম। তেমনি বিডিআর কিলিং নিয়ে কান্না, রাতের আঁধারে বাতি নিভিয়ে হেফাজত কর্মীদের কিলিং নিয়ে কান্না, বর্ডারে বিএসএফের গুলিতে নিহতদের নিয়ে কান্না, বিশ্বজিতের মর্মান্তিক মৃত্যু নিয়ে কান্না, সরকারের বিভিন্ন বাহিনীর হাতে গুম হওয়া মানুষ নিয়ে কান্না এমনকি নরায়নগঞ্জের সাতখুন নিয়ে কোনরূপ কান্নাকাটি করা পুরাপুরি হারাম।
আমাদের দেশে যারা মানবতার ইজারাদারী নিয়েছেন সেই তারানাদের চোখের এক ফোটা জলও এই হালাম হারামের বিধানের বাইরে নির্গত হয় না। আগেই বলেছি, এই মুহুর্তে শতভাগ হালাল কান্না হলো শুধুমাত্র বাসের মধ্যে আগুনে পোড়া যাত্রীদের নিয়ে কান্না। ধরেই নেওয়া হয় এটা বিএনপি জামায়াতের কাজ। তাদের এই শতভাগ হালাল ও মহান কান্নাটি যাতে কোনরূপ সরবরাহ সংকটে না পড়ে তজ্জন্যে নাজমুল আলম সিদ্দিকী, শামীম উসমান, হাজী সেলিমরাও সদা জাগ্রত রয়েছেন । মির্জা আজম ও নানকরাও তো মরে যান নি।
এমন সময়ে এসএসসি পরীক্ষাটি এসে পড়ায় সরকার যেন অমাবশ্যার চাঁদ হাতে পেয়েছে। শুধুমাত্র এসএসসি পরীক্ষা না হওয়াতে বা এটি বিলম্ব হওয়াতে আমাদের সবকিছু যেন শেষ হয়ে গেল! সমস্যাটির রুট কজ এনালাইসিস করলে কাকে এখানে দায়ী করতে হয় ?
একটু ইতিহাসের পানে তাকালে আমরা কী দেখতে পাই?
১৯৭১ সালকে যেভাবেই চিত্রিত করা হোক না কেন – এটি ছিল মূলত সেনাতন্ত্রের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের সংগ্রাম। সেদিন সেনাশাসক মদ্যপ ইয়াহিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা বঙ্গবন্ধুর হাতে ক্ষমতা অর্পন করলে আমাদের পরাধীনতার প্রশ্নটি উঠতো না।
সেই গণতন্ত্র ইয়াহিয়া কর্তৃক ধর্ষিত হলে সেই সংগ্রামের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু সামনে কয়টি মেট্রিক পরীক্ষা বা পাবলিক পরীক্ষা রয়েছে সেই হিসাব করে সংগ্রামের ডাকটি দেন নি। এজন্যে কেউ তাঁর নিজের দেরি করে বাইশ বছর বয়সে মেট্রিক পাশ করাকে দায়ি করেন নি।
শফিক রেহমান এক আলাপচারিতায় জানিয়েছেন ১৯৫২ সালেও এই পরীক্ষা পিছিয়েছিল। তাতে বোর্ডে স্ট্যান্ড করা তার জন্যে সহজ হয়েছিল।
১৯৯৬ সালেও তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে এস এসসি পরীক্ষা ৩ মাসের জন্যে পিছিয়েছিল।
কাজেই এখন কেন পেছানো যাচ্ছে না?
এটা কি পরীক্ষার্থীদের দুয়েকজনকে ভিক্টিম বানিয়ে তারানা হালিমদের শত ভাগ হালাল কান্নার সুযোগ সৃষ্টির জন্যে?
বলটি তো সরকারের কোর্টেই। সরকার সাত দিনের মধ্যেই সকল সমস্যার সমাধান করে ফেলতে পারে।