In politics, a dark cloud with looming storm

রাজনীতিতে কালবৈশাখী ঝড়, আম্মা ডাবল

Minar Rashid

 minar-rashid

আজ পহেলা বৈশাখ।

এই দিনটিতে বাঙালী মাত্রই নষ্টালজিক না হয়ে পারে না। অনেক স্মৃতির ভিড়ে এই মুহুর্তে মনে পড়ছে আমাদের প্রাইমারী স্কুলের এক স্যারের কথা। সেই স্যার পড়ার ফাকে ফাকে মজার মজার গল্প বলতেন। সেই গল্পগুিল হতো জীবনমুখী এবং হাস্যরসে ভরপুর। ক্লাসের কোন মেয়ে ভবিষ্যতে দজ্জাল শাশুড়ির পাল্লায় পড়লে কিভাবে আত্মরক্ষা করতে হবে সেই কৌশলও শিখিয়ে দিতেন। সেই উদ্দেশ্যে স্যারের বলা মজার একটি গল্প দিয়ে আজকের লেখাটি শুরু করতে যাচ্ছি।

এক দজ্জাল শাশুড়ি। ছেলে বউকে উঠতে বসতে বকা ঝকা করে। তখন গ্রামের এক দয়ার্দ্র ব্যাক্তি এই বউটিকে কিছু বুদ্ধি শিখিয়ে দেন ।
পরদিন ঘুম থেকে উঠে শাশুড়ি যথারীতি বউকে গালিগালাজ শুরু করে দেয় । বউ কাছে গিয়ে আস্তে করে বলে, ‘ আম্মা, এতক্ষণ আপনি আমাকে যা যা বলেছেন আমি আপনাকে তার ডাবল মানে দুই গুণ বললাম ।’ এই কথা শুনে শাশুড়ি খেপে গিয়ে আরো জোের বকাবকি শুরু করে দেয় । বউ আবারও কাছে গিয়ে আস্তে করে বলে, ‘ আম্মা ডাবল। ‘
এখন শাশুড়ি যতবার গালি দেয় বউ ততবার কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে, ‘আম্মা ডাবল’। গ্রামের মানুষ বলাবলি শুরু করে দিয়েছে, ‘ বুড়িটা কি শেষমেষ পাগল হয়ে গেলো নাকি ? ‘
এভাবে বকতে বকতে এক সময় শাশুড়ি ক্লান্ত হয়ে পড়ে। একদিন বউকে ডেকে বলে, ‘ দেখো বউমা , তোমার পায়ে পড়ি। তুমি আমাকে আর ‘আম্মা ডাবল’ এই কথাটি বলো না। আমিও তোমাকে আর কোনদিন গালি দেবো না। ‘

এই দজ্জাল শাশুড়ির মত বিএনপিকে এতদিন আপন মনে বকাঝকা করে গেছে আওয়ামী লীগ । বিএনপি তার বিরুদ্ধে তেমন কোন বাদ প্রতিবাদ করতে পারে নি বা করে নি । শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক থেকে পুরোদমে পাকিস্তানের এজেন্ট বানিয়ে ফেলেছে। খালেদা জিয়ার পরনের শাড়ী-ব্লাউজ থেকে পরীক্ষার মার্কশীট – এমন হীন বিষয় নেই যা এরা আলোচনায় আনে নি।
বিশ হাজার কেন, বিশ লাখ টাকা দিয়ে ব্লাউজ বানিয়ে পরালেও কারো কারো বর্তমান শ্রী সামান্য বৃদ্ধি পাবে না। বরং মনে হবে ব্লাউজটি বাংলা বাজার থেকে কেনা। যাদেরকে এরা ‘তেতুল হুজুর’ সম্বোধন করে তাদের চেয়েও এদের মানসিকতা অনেক পশ্চাৎপদ ও ভয়াবহ । তা না হলে সমাজের উচু স্তরে অবস্থানরত এক ভদ্রমহিলা অন্য ভদ্রমহিলার পোষাক নিয়ে কিভাবে এই ধরনের মন্তব্য করতে পারেন ? নিজেদের প্রগতিশীল দাবিদার এই দলটির নেতানেত্রীদের মানসিকতা গ্রামের সেই আব্দুল আলীদের মত যাদের গবেষণার বিষয় হলো বিলাতের রাজা রাণীরা হাগুর পর তাদের মতই হাত ও পানি দিয়ে ছুচো করে নাকি অন্য কিছু দিয়ে । এদেরকে যথোচিত জবাব না দেয়ার জন্যে অনেকেই বিএনপির উপর হতাশ ছিল।

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি তারেক রহমান ‘আম্মা ডাবল’ এর মত কোন কৌশল আয়ত্ত্ব করে ফেলেছেন। কারন তিনি ছোট্ট করে একটি শব্দ উচ্চারণ করেন আর আওয়ামীলীগ তাদের গালির এনসাইক্লোপিডিয়া নিেয় বের হয়ে আসে।
২৫শে মার্চ লন্ডনে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি নিয়ে প্রথম তীরটি তিনি ছুড়েছেন। তাতেই বেশ কাজ হয়েছে। সমস্ত আওয়ামী মেশিনারিজ মারাত্মক ঝাকুনি খেয়েছে।
তারেক রহমান নিজের দাবির পক্ষে বেশ কিছু সাপোর্টিং ডকুমেন্ট যুক্তি সহকারে তুলে ধরেছেন। বিএনপি পন্থী নেতা বা লেখক নয়, খোদ আওয়ামীলীগের বিভিন্ন নেতাদের লেখা বই থেকে উদ্বৃতি টেনেছেন। মজার ব্যাপার হলো যারা তারেক রহমানকে এজন্যে গালিগালাজ করছেন তারা ঘুণাক্ষরেও তার উথ্থাপিত যুক্তি খন্ডনের কাজটি করছেন না।

এরপর গত ৭ এপ্রিল আবারো কিছু তথ্য প্রমাণ নিয়ে হাজির হলেন তারেক রহমান।
মুজিবনগর সরকারের ঘোষণাপত্রে উল্লেখ ছিল নতুন সংবিধান রচনা না হওয়া পর্যন্ত শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি থাকবেন । কিন্তু স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭২ সালে দেশে ফিরে শেখ মুজিবুর রহমান শপথ নিলেন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। এতে ঘোষণাপত্র লঙ্ঘন হয়েছে। এই তথ্যের ভিত্তিতে তারেক রহমান বললেন শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন অবৈধ প্রধানমন্ত্রী।

এবারও তার উথ্থাপিত যুক্তিগুলি খন্ডন না করে আওয়ামীলীগ চরম গালাগািল শুরু করে দিয়েছে। তোফায়েল অাহমেদ থেকে শুরু করে ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক সবাই চাপাবাজি এবং গালাগালির মাধ্যমেই তাদের প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। কে কত মারাত্মক গালি দিতে পারে আওয়ামী সার্কেলে তার প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে।

তাছাড়া ১৯৭০ সালের নির্বাচন হয়েছিল পাকিস্তান রাষ্ট্র ব্যবস্থার অধীনে। সেই নির্বাচনে জয়ী হওয়া সদস্যরা নতুন দেশের সরকার গঠন করতে পারেন না।

বিষয়টি বুঝতে নিচের উদাহরণটি সহায়ক হতে পারে। এক লোক নিশ্চিত যে এই মেয়েটিই তার বউ হবে। দুই পরিবারের পক্ষ থেকেও তাদের বিয়েকে মেনে নিতে আপত্তি নেই। তারপরেও কবুল না বলা পর্যন্ত সে এই মেয়েটির সাথে ফুল ফ্লেজেড ঘর সংসার শুরু করে দিতে পারে না। ভবিষ্যতে একদিন বিয়ে হলেও কবুল পড়ার আগে কোন সন্তান হলে আইন ও নৈতিকতার দৃষ্টিতে তা অবৈধ হবে।

কাজেই তারেক রহমানের এই যুক্তিটিও খুব দুর্বল নয়। গায়ের জোরে গণতান্ত্রিক নিয়ম নীিত বা নীতি নৈতিকতাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া আওয়ামীলীগের জন্যে নতুন কিছু নয়। বর্তমানে ১৫৩ জন ফাও এবং বাকী ১৪৭ জনকে ৫% ভোটারদের ভোটে নির্বাচিত করে এনে সরকার গঠন করে তাকে পাঁচ বছর টিকিয়ে রাখার স্বপ্ন এই আওয়ামীলীগই দেখতে পারে।

বলা যায় এদের গোড়ায় গলদ। সেই বিষয়টি বাস্তব কারনেই তারেক রহমান জাতির দৃষ্টিতে এনেছেন। মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এমএজি ওসমানীর মত ব্যক্তিত্ব আওয়ামী লীগ প্রণীত ইতিহাসকে অনেকটা ফিকশন হিসাবে মনে করতেন । সেই সব ফিকশন নিয়ে যারাই প্রশ্ন উথ্থাপন করবেন তাদেরকেই নেতাজি সুভাস চন্দ্র বসুর নাত্নী শর্মিলা বসু বা তারেক রহমানের মত গালি খেতে হবে।

সব জেনেশুনেই তারেক রহমানর এই বিষটি পান করেছেন এবং দরকার মত ‘ অাম্মা ডাবল’ বলার দুঃসাহসটি দেখিয়ে যাচ্ছেন । কাজেই দজ্জাল শাশুড়ির তেজ কতক্ষণ বজায় থাকে তা দেখার জন্যে অধীর আগ্রহে সবাই অপেক্ষা করছে।

এই শুভক্ষণের জন্যে অপেক্ষারত সকলের জন্যে রইল নববর্ষের শুভেচছা। সবাই ভালো থাকুন এবং বেশি কিছু বলতে না পারলেও জায়গামতো বলুন, ‘আম্মা ডাবল’ ।