ট্র্যাজেডি ক্র্যাকডাউন এবং সত্য বাবুর মৃত্যু
সাজেদুল হক: নাটক এগিয়ে চলে আপন গতিতে। হ্যামলেটের হাতে খুন হন মন্ত্রী। মৃত্যু হয় প্রেমিকা ওফেলিয়ারের। এবং সব শেষে আবার মৃত্যু। এনকাউন্টারের শব্দ। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে। হ্যামলেট নাটকে মৃত্যুর মিছিল দেখতে দেখতে উপস্থাপক বলেন, ‘মৃত্যুর মিছিল চলছে, মারা যাচ্ছে মানুষ, আর তোমরা শুধুই নীরব।’ ৪০০ বছর পর ফিরে এসেছে হ্যামলেট। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে। প্রতিমুহূর্তে মৃত্যুর মিছিল চলছে এখানে। মারা যাচ্ছে মানুষ। সাভার ট্র্যাজেডিতে মৃত্যুর সংখ্যা ১০০০ ছাড়িয়েছে। প্রতিদিনই লাশ বেরুচ্ছে রানা প্লাজার মৃত্যুকূপ থেকে। লাশের গন্ধে ভারি হয়ে উঠেছে বাতাস। স্বজনের হাহাকার শোনা যাচ্ছে সর্বত্র। কিন্তু তা-ও যথেষ্ট হয়নি। লাশের লাথিতেও হুঁশ ফিরেনি আমাদের। সাভার ট্র্যাজেডিকে ঘিরে শুরুতে আমরা কিছু ধন্যবাদের রাজনীতি দেখেছি। কিন্তু এসবই ক্ষণিকের। ঠিক সময়মতোই পুরনো চেহারায় ফিরে যায় রাজনীতি। টি-টোয়েন্টির এই যুগেও রাজনীতিতে দেখা যায় টেস্ট ক্রিকেটের রহস্যময়তা। চমক নিয়ে হাজির হন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিরোধী দলের প্রতি সংলাপে বসার আহ্বান জানাতে থাকেন তিনি। বিরোধী দল একে দেখে কৌশল হিসেবে। শাপলা চত্বরে দাঁড়িয়ে আল্টিমেটামের কার্ড ছুড়ে দেন খালেদা। কিন্তু তা কতটা যৌক্তিক ছিল তা নিয়ে খোদ বিএনপিতেই এখন নানা আলোচনা। কিছু দিন আগেও স্বল্প পরিচিত হেফাজতে ইসলামের ঢাকা অবরোধ কর্মসূচিকে ঘিরে তৈরি হয় অস্থিরতা। আল্টিমেটাম আর অবরোধের সমীকরণ মেলাতে থাকেন ক্ষমতাসীনরা। ৫ই মে দুপুর থেকেই দেখা দেয় উত্তেজনা। হেফাজত কর্মীদের সঙ্গে সংঘাতে জড়ান পুলিশ আর ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা। দিনভর থেমে থেমে চলতে থাকে গুলি। এসবই ছিল আসলে কৌশল। ভীতি সৃষ্টির মাধ্যমে শাপলায় জমায়েত ছোট করার চেষ্টা। সৈয়দ আশরাফের কড়া হুঁশিয়ারির পরও শাপলা চত্বরে অবস্থান নেয় হেফাজত। রাত ২টার কিছু পরে যেখানে পরিচালিত হয় অপারেশন সিকিউরড শাপলা ওয়াচ। দুই ঘণ্টার অভিযানে উৎখাত হয় হেফাজত। মুহূর্তেই বদলে যায় রাজনীতির দৃশ্যপট।
রাজনীতির হিসাব কষবেন রাজনীতির কারবারিরা। তবে অপারেশন শাপলা এক নয়া বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে বাংলাদেশকে। বিস্ময়কর হলেও সত্য বাংলাদেশ চলছে গুজবের ওপর ভিত্তি করে। এমনকি গুজব এতটাই শক্তিশালী হয়ে পড়েছে যে, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীকেও এ নিয়ে কথা বলতে হচ্ছে। গ্রাম থেকে শহর কোথায় নেই গুজব। কেন এই গুজব? এ প্রশ্নের জবাব খুঁজছেন পর্যবেক্ষকরা। দি ইকোনমিস্ট বাংলাদেশ বিষয়ক সর্বশেষ রিপোর্ট বলছে, শাপলা চত্বরে আসলে কি হয়েছে তা অস্পষ্ট। স্থানীয় মিডিয়াকে নীরব রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের মিডিয়া এমনতিই ছোট হয়ে আসছে। আমার দেশ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে আগেই। অপারেশন শাপলার রাতে বিনা নোটিশে বন্ধ করে দেয়া হয় দিগন্ত টিভি আর ইসলামিক টিভি। দিনভর হোমিও ওষুধের অনুষ্ঠান প্রচার করা ইসলামিক টিভি বন্ধ দেখে বিস্মিত হওয়ার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেছেন অনেকে। ভিন্নমতের মিডিয়া যখন থাকবে না তখন মানুষ গুজবের ওপর নির্ভর করবে- এতে আর অবাক হওয়ারই বা কি আছে? আমার দেশ, দিগন্ত টিভি আর ইসলামিক টিভির পরিণতি দেখে আতঙ্কিত অন্যরা। চাপে রয়েছে একটি টিভি চ্যানেল আর তিনটি পত্রিকা। স্বয়ং মিডিয়া নিজেও আজ গুজবের শিকার। সেলফ সেন্সরশিপ আর ভয় গ্রাস করেছে সংবাদ মাধ্যমকে। বাংলাদেশের আজকের মিডিয়া দেখে প্রয়াত সাংবাদিক ফয়েজ আহমদের একটি গ্রন্থের নামই কেবল বারবার মনে আসছে ‘সত্য বাবু মারা গেছেন’।
সময় বিপন্ন। মানবতা ও সংবাদ মাধ্যমও কি বিপন্ন নয়? সাভার, শাপলা চত্বর, নারায়ণগঞ্জ, দারুস সালাম। মৃত্যু সর্বত্র। মানুষের জীবনের দামই আজ সর্বনিম্ন। সাভার ট্র্যাজেডির শিকার হতভাগাদের দাম ২৫০ ডলারের কিছু কম। শাপলায় নিহতদের তা-ও নয়। রাজনীতি থেমে নেই। সর্বশেষ খবর আবারও হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেছে সরকার। দু’জন মন্ত্রী কথা বলেছেন, আল্লামা আহমদ শফীর সঙ্গে। চেষ্টা চলছে সমঝোতার। রাজনীতিকে আরও কঠিন করার আয়োজন চলছে আরও জোরেশোরে। কিন্তু কি অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়, সামনের দিনগুলো হবে আরও কঠিন, সংঘাতময় এবং রক্তাক্ত। শেক্সপিয়ারের হ্যামলেট দিয়ে শুরু করা লেখা শেষ হচ্ছেও প্রতিশোধ-প্রতিহিংসা পালন সম্পর্কে হ্যামলেটের উক্তি দিয়ে, ‘করবো কি করবো না, প্রশ্ন্ন হলো তাই, বিরূপ ভাগ্যের শরাঘাত সয়ে যাওয়া, নাকি দুঃখ সমুদ্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ কিংবা বিরোধিতা করে, ওদের বিলীন করা, কোনটা মহত্তর?…’
রাজনীতির হিসাব কষবেন রাজনীতির কারবারিরা। তবে অপারেশন শাপলা এক নয়া বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে বাংলাদেশকে। বিস্ময়কর হলেও সত্য বাংলাদেশ চলছে গুজবের ওপর ভিত্তি করে। এমনকি গুজব এতটাই শক্তিশালী হয়ে পড়েছে যে, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীকেও এ নিয়ে কথা বলতে হচ্ছে। গ্রাম থেকে শহর কোথায় নেই গুজব। কেন এই গুজব? এ প্রশ্নের জবাব খুঁজছেন পর্যবেক্ষকরা। দি ইকোনমিস্ট বাংলাদেশ বিষয়ক সর্বশেষ রিপোর্ট বলছে, শাপলা চত্বরে আসলে কি হয়েছে তা অস্পষ্ট। স্থানীয় মিডিয়াকে নীরব রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের মিডিয়া এমনতিই ছোট হয়ে আসছে। আমার দেশ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে আগেই। অপারেশন শাপলার রাতে বিনা নোটিশে বন্ধ করে দেয়া হয় দিগন্ত টিভি আর ইসলামিক টিভি। দিনভর হোমিও ওষুধের অনুষ্ঠান প্রচার করা ইসলামিক টিভি বন্ধ দেখে বিস্মিত হওয়ার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেছেন অনেকে। ভিন্নমতের মিডিয়া যখন থাকবে না তখন মানুষ গুজবের ওপর নির্ভর করবে- এতে আর অবাক হওয়ারই বা কি আছে? আমার দেশ, দিগন্ত টিভি আর ইসলামিক টিভির পরিণতি দেখে আতঙ্কিত অন্যরা। চাপে রয়েছে একটি টিভি চ্যানেল আর তিনটি পত্রিকা। স্বয়ং মিডিয়া নিজেও আজ গুজবের শিকার। সেলফ সেন্সরশিপ আর ভয় গ্রাস করেছে সংবাদ মাধ্যমকে। বাংলাদেশের আজকের মিডিয়া দেখে প্রয়াত সাংবাদিক ফয়েজ আহমদের একটি গ্রন্থের নামই কেবল বারবার মনে আসছে ‘সত্য বাবু মারা গেছেন’।
সময় বিপন্ন। মানবতা ও সংবাদ মাধ্যমও কি বিপন্ন নয়? সাভার, শাপলা চত্বর, নারায়ণগঞ্জ, দারুস সালাম। মৃত্যু সর্বত্র। মানুষের জীবনের দামই আজ সর্বনিম্ন। সাভার ট্র্যাজেডির শিকার হতভাগাদের দাম ২৫০ ডলারের কিছু কম। শাপলায় নিহতদের তা-ও নয়। রাজনীতি থেমে নেই। সর্বশেষ খবর আবারও হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেছে সরকার। দু’জন মন্ত্রী কথা বলেছেন, আল্লামা আহমদ শফীর সঙ্গে। চেষ্টা চলছে সমঝোতার। রাজনীতিকে আরও কঠিন করার আয়োজন চলছে আরও জোরেশোরে। কিন্তু কি অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়, সামনের দিনগুলো হবে আরও কঠিন, সংঘাতময় এবং রক্তাক্ত। শেক্সপিয়ারের হ্যামলেট দিয়ে শুরু করা লেখা শেষ হচ্ছেও প্রতিশোধ-প্রতিহিংসা পালন সম্পর্কে হ্যামলেটের উক্তি দিয়ে, ‘করবো কি করবো না, প্রশ্ন্ন হলো তাই, বিরূপ ভাগ্যের শরাঘাত সয়ে যাওয়া, নাকি দুঃখ সমুদ্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ কিংবা বিরোধিতা করে, ওদের বিলীন করা, কোনটা মহত্তর?…’
Source: Manab Zamin