- ২৪ ডেস্ক
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি এবং গণভোটের সময়সূচি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। দলগুলোকে আলোচনার মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর জন্য সরকারের বেঁধে দেওয়া সাত দিনের সময়সীমা সোমবার শেষ হচ্ছে। এই সময়ের মধ্যে কোনো সমাধানে আসতে না পারায় এখন সনদ বাস্তবায়নের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সরকারই নিতে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

রাজনৈতিক অঙ্গনে এই অচলাবস্থার মূলে রয়েছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর বিপরীতমুখী অবস্থান। সরকারের বদলে অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের উদ্যোগে আলোচনায় বসতে ঘোর আপত্তি বিএনপির। দলটি গত বৃহস্পতিবার তাদের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নীতিগতভাবে ঠিক করেছে যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডাকলে তবেই তারা আলোচনায় যাবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ প্রশ্ন তুলেছেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা কোনো বিষয়ে আলোচনার জন্য ডাকলে আমরা সব সময় আগ্রহী। কিন্তু অন্য কোনো একটি দল দিয়ে আমাদের আহ্বান জানানো হচ্ছে কেন?’
অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামী আলোচনার জন্য দুই সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে এবং বিএনপির মহাসচিবকে ফোনও করে। কিন্তু বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো সাড়া মেলেনি। এই পরিস্থিতিতে জামায়াতসহ আটটি দল পাঁচ দফা দাবিতে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছে। দলগুলো আগামী মঙ্গলবার ঢাকায় একটি বড় সমাবেশের ডাক দিয়েছে, যেখান থেকে দাবি মানা না হলে কঠোর পদক্ষেপের ঘোষণা আসতে পারে। জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহেরের কণ্ঠেও ঝরেছে হুমকির সুর। তিনি বলেছেন, ‘সোজা আঙুলে যদি ঘি না ওঠে, আঙুল বাঁকা করব।’
দুই দলের মধ্যে চলমান এই টানাপোড়েনের মধ্যেই তাদের নেতাদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য রাজনৈতিক উত্তাপ আরও বাড়িয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী জামায়াতের কর্মসূচির দিকে ইঙ্গিত করে সংঘর্ষের আশঙ্কার কথা বলেছেন। এর জবাবে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বিএনপির বর্তমান আচরণকে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বিএনপি আমন্ত্রণ জানালে জামায়াত আলোচনায় অংশ নিতে প্রস্তুত।
মূলত বিএনপির অনাগ্রহের কারণেই দলগুলোর মধ্যে আলোচনার উদ্যোগ সফল হয়নি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। জামায়াতের পাশাপাশি গণতন্ত্র মঞ্চ, এবি পার্টি এবং গণ অধিকার পরিষদসহ নয়টি দলের একটি জোটও বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু সেই উদ্যোগও সামনে এগোয়নি।
উল্লেখ্য, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তীব্র মতপার্থক্যের কারণে গত ৩ নভেম্বর উপদেষ্টা পরিষদের এক জরুরি বৈঠকে সরকার উদ্বেগ প্রকাশ করে। সেই বৈঠক থেকেই দলগুলোকে এক সপ্তাহের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছিল। একই সঙ্গে সরকার জানিয়ে দেয়, তারা আলোচনার কোনো আয়োজন করবে না এবং দলগুলো ব্যর্থ হলে সরকার নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেবে।
এ পরিস্থিতিতে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জুর মতো অনেকেই হতাশ। তিনি বলেন, ‘সবাই সমঝোতা চায়, কিন্তু সবাই গরম-গরম বক্তৃতা দেয়। কেউ আলোচনাই বসবে না, আবার কেউ আঙুল বাঁকা করবে। এ রকম হলে কীভাবে সমঝোতা হবে?’ গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূমও মনে করেন, বড় দলগুলোকে ছাড় দেওয়ার মানসিকতা দেখাতে হবে, নতুবা সমাধান প্রায় অসম্ভব।









