স্টাফ রিপোর্টার
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, বুধবার
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিক সমান মর্যাদার অধিকারী এবং ধর্ম, মত বা অর্থনৈতিক অবস্থার ভিত্তিতে কাউকে কোনোভাবেই বঞ্চিত করা যাবে না। আমরা সবাই একই পরিবারের সদস্য। পুরো জাতি একটি পরিবার। পরিবারের ভেতরে মতভেদ থাকতে পারে, ব্যবহারের পার্থক্য থাকতে পারে। কিন্তু পরিবার একটি অটুট জিনিস- এটাকে কেউ ভাঙতে পারবে না। আমরা যেন জাতি হিসেবে এই অটুট পরিবার হয়ে দাঁড়াতে পারি, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। আমাদের এমন একটি দেশ গড়ে তুলতে হবে, যেখানে মানুষের ধর্মীয় উৎসব পালনে অতিরিক্ত নিরাপত্তার ঘেরাটোপের প্রয়োজন হবে না।
গতকাল রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে তিনি ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন করেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিক সমান মর্যাদার অধিকারী। ধর্ম, মত বা অর্থনৈতিক অবস্থার ভিত্তিতে কাউকে কোনোভাবেই বঞ্চিত করা যাবে না।
তিনি আরও বলেন, আমরা সবাই একই পরিবারের সদস্য। পুরো জাতি একটি পরিবার। পরিবারের ভেতরে মতভেদ থাকতে পারে, ব্যবহারের পার্থক্য থাকতে পারে। কিন্তু পরিবার একটি অটুট জিনিস, এটাকে কেউ ভাঙতে পারবে না। আমরা যেন জাতি হিসেবে এই অটুট পরিবার হয়ে দাঁড়াতে পারি, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।
প্রধান উপদেষ্টা জোর দিয়ে বলেন, আমরা চাই না নিরাপত্তা বাহিনীর ঘেরাটোপে থেকে ধর্ম পালন করতে। আমরা চাই নাগরিক হিসেবে মুক্তভাবে যার যার ধর্ম পালন করতে। এ অধিকার আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের ভূমিকা পালন করছে, আমরা এজন্য কৃতজ্ঞ। কিন্তু আমাদের এমন একটি দেশ গড়ে তুলতে হবে, যেখানে মানুষের ধর্মীয় উৎসব পালনে অতিরিক্ত নিরাপত্তার ঘেরাটোপের প্রয়োজন হবে না।
শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানাতে এসে ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার ব্যক্তিগত অনুভূতির কথাও ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, আমি ভেবেছিলাম, এবার হয়তো আমাকে এ আনন্দ থেকে বঞ্চিত করা হবে। কিন্তু আমি নাছোড়বান্দা। আমি বললাম, যাবোই। এই আনন্দ থেকে আমি নিজেকে দূরে রাখতে চাইনি। যদিও শারদীয় দুর্গাপূজার সময়ে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের অধিবেশনে সরকারপ্রধান হিসেবে আমাকে থাকতে হবে। তাই আমি আগেভাগে এসেছি আপনাদের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নিতে।
অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, গতবার যখন এখানে এসেছিলাম, তখনো বলেছিলাম, আমরা সবাই একটি পরিবার। পারিবারিক মতভেদ থাকবেই, কিন্তু পরিবার ভাঙবে না।
রাষ্ট্র সবাইকে সমান মর্যাদা দিতে দায়িত্ববদ্ধ জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যত ধর্মীয় পার্থক্য থাকুক, মতের পার্থক্য থাকুক, রাষ্ট্রের কোনো অধিকার নেই বৈষম্য করার। রাষ্ট্র দায়িত্ববদ্ধ সবাইকে সমান মর্যাদা দেয়ার জন্য। সে যেই ধর্মেই বিশ্বাস করুক, যে মতবাদেই বিশ্বাস করুক, ধনী হোক কিংবা গরিব-রাষ্ট্রের কাছে সে একজন নাগরিক। নাগরিকের সব অধিকার সংবিধানে লিপিবদ্ধ আছে।
তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্র আমাদের তালিকা করে দিয়েছে, আমার প্রাপ্য কী। কোনো সরকারের অধিকার নেই কাউকে বঞ্চিত করার, সামান্যতম পরিমাণেও নয়। আমরা নাগরিক। আমাদের প্রতি কোনো রকম বৈষম্য করা যাবে না। এ অধিকার প্রতিষ্ঠায় আমাদের সব সময় সোচ্চার থাকতে হবে।
নতুন বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য সবার নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করা উল্লেখ করে ইউনূস বলেন, যত কথাই বলুন, তার মধ্যে বারে বারে বলুন, আমি এ দেশের নাগরিক, আমার সংবিধান প্রদত্ত সব অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। তখন দেখবেন, সবাই আপনাদের সঙ্গী হবে। সারা দেশের মানুষ একসঙ্গে থাকবে। কারণ, সবার সমস্যাই এক-নিজের নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।
নাগরিক অধিকারের গুরুত্ব তুলে ধরে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আমরা বারবার লাঞ্ছিত হই, অপমানিত হই, নানা বৈষম্যের শিকার হই। কেন? কারণ, নাগরিক অধিকারের প্রশ্নে আমরা হতাশ হয়ে গেছি। এখন আর হতাশ হওয়া চলবে না। নতুন বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হলো সবার নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করা।
মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক তাপস সাহার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব একেএম আফতাব হোসেন প্রামাণিক, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর, ঢাকা মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দে প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ।