গাজার রক্তস্রোত থেকে যুক্তরাষ্ট্র মুক্তি পাবে না

প্রকাশ : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯: ০৩
আপডেট : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯: ০৫

প্রতি বছর মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বেশ ঘটা করে ওয়াশিংটনে বিশ্ব মানবাধিকার প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে। শেখ হাসিনার দেড় দশকের দীর্ঘ ফ্যাসিস্ট আমলে আমি নিজেও আগ্রহভরে রিপোর্টটি প্রকাশের অপেক্ষায় থাকতাম, যাতে তৎকালীন বাংলাদেশের ভয়াবহ মানবাধিকার পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে ওইসব নথি প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করা যায়।

একসময় জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের বার্ষিক প্রতিবেদনের পর মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের রিপোর্ট বিশ্বে সর্বাধিক গুরুত্ব বহন করত। কিন্তু গাজায় ইসরাইলি গণহত্যায় ওয়াশিংটনের বিবেকহীন, অন্ধ সমর্থন মানবাধিকার ইস্যুতে ইসরাইলের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে একেবারে একঘরে করে ফেলেছে।

এখন মার্কিন মানবাধিকার রিপোর্ট এক স্ববিরোধী ও বেহুদা কাগজে পরিণত হয়েছে। স্বঘোষিত জায়নিস্ট প্রেসিডেন্ট বাইডেনের আমলে ওয়াশিংটন তবু কূটনৈতিক বয়ানের মারপ্যাঁচে কিছুটা রাখঢাক করার চেষ্টা করত, কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন বিশ্ব জনমতকে কোনো তোয়াক্কাই করছে না। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রধানত বর্ণবাদী ও ইসলামবিদ্বেষী জায়নিস্টদের বেছে বেছে নিয়োগ দিয়েছেন। এই আধুনিক যুগে মুসলমান এবং বিশেষ করে, ফিলিস্তিনিদের বিষয়ে এদের ঘৃণার মাত্রা দেখে বিস্মিত হতে হয়। মনে হয় লোকগুলো এখনো হাজার বছর আগের ক্রুসেডের দুনিয়ায় বসবাস করছেন। দেশটির কয়েকজন প্রভাবশালী রাজনীতিবিদের বিভিন্ন সময়ে দেয়া বক্তব্য উদ্ধৃত করলেই পাঠক তাদের প্রবল ইসলামবিদ্বেষের প্রমাণ পাবেন।

ফ্লোরিডার রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান র‍্যান্ডি ফাইন সম্প্রতি বলেছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকা যেভাবে জাপানের হিরোশিমা এবং নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা মেরে লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করেছিল, সেভাবেই গাজাকে ধ্বংস করে দেওয়া উচিত। সরাসরি গণহত্যায় উৎসাহ দেওয়া তার এই চরম নিন্দনীয় বক্তব্যের জন্য ট্রাম্প প্রশাসন কোনোরকম প্রতিবাদ জানায়নি। একই দলের ভয়ংকর ইসলামবিদ্বেষী সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম সরাসরি পারমাণবিক বোমা ব্যবহারের কথা না বললেও তিনিও গাজাকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছেন। তিনি এটাকে ‘ধর্মযুদ্ধ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

তার মতে, ইসরাইল এবারের সুযোগে গাজাকে মাটির সাথে মিশিয়ে না দিলে বিরাট ভুল করবে। কংগ্রেসম্যান ম্যাক্সমিলার গাজাযুদ্ধে ইসরাইলের আন্তর্জাতিক আইনের কোনোরকম তোয়াক্কা করার প্রয়োজন নেই বলে পরামর্শ দিয়েছেন। অপর একজন সিনেটর টম কটন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় দেওয়া ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইন্সটন চার্চিলের বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলেছেন, ‘আমার মতে, গাজাকে একেবারে ধ্বংস করে দিয়ে সেখানকার ইটপাথর নিয়ে ইসরাইলি সৈন্যদের খেলা করা উচিত।’ মানসিকভাবে অসুস্থ এই রিপাবলিকান সিনেটর সম্ভবত বলতে চেয়েছেন, ফিলিস্তিনিদের দেহাবশেষ নিয়ে ইসরাইলের সৈন্যদের খেলা করা উচিত।

ইসরাইলে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত, কট্টর জায়নবাদী ইভাঞ্জেলিকাল খ্রিষ্টান মাইক হাকবি ফিলিস্তিনের জনগণের অস্তিত্বেই বিশ্বাস করেন না। তিনি পশ্চিম তীরকে সর্বদা বাইবেলে বর্ণিত জুদা ও সামারিয়া নামে অভিহিত করেন এবং ইসরাইল কর্তৃক পুরো ফিলিস্তিন দখলের পক্ষে ওকালতি করে থাকেন। ফ্লোরিডার ইসলামবিদ্বেষী গভর্নর ডি’সানটিস যিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দলীয় প্রার্থিতার জন্য গত বছর প্রাইমারিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন, তার মন্তব্য হলো, যেহেতু সব ফিলিস্তিনি হামাসের অপরাধের জন্য সমভাবে দায়ী, কাজেই সবাইকে ফলভোগ করতে হবে। অর্থাৎ, রিপাবলিক দলীয় গভর্নর ডি’সানটিস ইসরাইল গাজায় এ পর্যন্ত যে ২০ হাজার শিশুকে হত্যা করেছে তাকে ন্যায্যতা দিতে চেয়েছেন।

মাইকেল ম্যাক্কল নামে আরেকজন প্রভাবশালী রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান ইসরাইলি গণহত্যা জায়েজ করার জন্য এক সম্পূর্ণ বানোয়াট প্রচারণা চালিয়েছেন যে, হামাস নাকি গাজায় খাঁচা বানিয়ে সেখানে ইহুদি শিশুদের জন্তুর মতো আটকে রেখেছে। এ ধরনের মিথ্যা প্রচারণা যেমন ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলের অভ্যন্তরে হামলাকালে হামাস ইসরাইলি শিশুদের ওভেনে জ্যান্ত পুড়িয়েছে, শিশুদের মাথা কেটে নিয়েছে, ইত্যাদি ইত্যাদি, ডেমোক্র্যাটদলীয় সাবেক প্রেসিডেন্ট বাইডেনও নিঃসংকোচে অহরহ চালাতেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের সেই সময়কার প্রচারণা ইসরাইলকে গাজায় গণহত্যা চালাতে ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করেছিল। সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সাবেক মুখপাত্র ম্যাথু মিলার ইসরাইলের প্রতি ওয়াশিংটনের অন্ধ সমর্থনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ফাঁস করে দিয়েছেন। এটা বিস্ময়ের ব্যাপার যে, মার্কিন মুলুকের কট্টর সব ইসরাইলপন্থি রাজনীতিবিদরা আন্তর্জাতিক আইনের প্রেক্ষিতে তাদের বক্তব্যের ভয়াবহতা একেবারেই বুঝতে সক্ষম হচ্ছেন না! তারা যে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে একদিন সার্বিয়ার যুদ্ধাপরাধী মিলোসোভিচ এবং ক্লাদিচের ভাগ্য বরণ করবেন না, তার নিশ্চয়তা কি দেওয়া সম্ভব?

যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান সেক্রেটারি অব স্টেট মার্কো রুবিও প্রশাসনে তার দায়িত্ব গ্রহণের আগে ইসরাইলকে গাজায় মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করার জন্য যথেষ্ট উৎসাহিত করেছিলেন। সেক্রেটারি অব স্টেট হওয়ার পর থেকে প্রত্যাশিতভাবেই মার্কো রুবিও ইসরাইলের প্রতি অন্ধ সমর্থনে তার পূর্বসূরি অ্যান্টনি ব্লিংকেনকেও ছাড়িয়ে গেছেন। তিনি আন্তর্জাতিক আইন উপেক্ষা করে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ফিলিস্তিনের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ করার ওপর বাধানিষেধ আরোপ করেছেন। এমনকি ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকেও ভিসা দিতে ওয়াশিংটন অস্বীকার করেছে।

বাইডেন প্রশাসন পশ্চিম তীরে নিরস্ত্র, অসহায় ফিলিস্তিনিদের হত্যা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানোর অপরাধে যেসব কট্টর জায়নিস্ট অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে ‘স্যাংকশন’ দিয়েছিল সেগুলো মার্কো রুবিও প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এর মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসন পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানো এবং তাদের আপন ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদের জন্য এক ধরনের সবুজ সংকেত দিয়েছে। তবে একদিক দিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রশংসা করতে হয় যে, তারা অন্তত বাইডেন প্রশাসনের মতো মানবাধিকারের বুলি আউড়িয়ে গাজার গণহত্যায় ইসরাইলকে সমর্থন দিচ্ছে না। বর্তমান মার্কিন প্রশাসনের কাছে মানবাধিকার মোটেই কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। তারা শক্তির দম্ভে আন্তর্জাতিক আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই ইসরাইলের সব অপরাধকে সমর্থন দিচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বাইডেন প্রশাসনের ভণ্ডামির একটা উদাহরণ দেওয়া জরুরি মনে করছি।

২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারি হিন্দ রজব নামের এক ছয় বছরের কন্যাশিশুকে গাজায় ইসরাইলি বাহিনী নির্মমভাবে, রীতিমতো টার্গেট করে হত্যা করেছিল। শিশুটি তার পরিবারের সঙ্গে একটি গাড়িতে করে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর নির্দেশেই নিরাপত্তার খোঁজে গাজার এক শহর থেকে অন্য শহরে যাওয়ার পথে ইসরাইলি ড্রোন সেই গাড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালায়। সেই হামলায় গাড়ির সব আরোহী নিহত হলেও হিন্দ অলৌকিকভাবে বেঁচে গিয়েছিল। তার কাছে একটি সেলফোন ছিল। সেই অবুঝ, ভয়াতুর শিশু তার প্রিয়জনদের লাশের মধ্যে বসেই ফোনে তাকে বাঁচানোর জন্য আকুতি জানিয়েছিল। পৃথিবী যে কত নিষ্ঠুর সেটা ছয় বছরের হিন্দ বুঝতে পারেনি। ইসরাইলি বাহিনী সেই ফোন ট্র্যাক করে আবার ড্রোন পাঠিয়ে শিশুটিকে হত্যা করে।

আমার ধারণা, পৃথিবীতে একমাত্র কট্টরপন্থি জায়নিস্ট ছাড়া নিষ্পাপ, ক্রন্দনরত, একলা শিশুটিকে আর কোনো জাতি এভাবে হত্যা করতে পারত না। শুধু হিন্দকেই নয়, ফোন পেয়ে রেড ক্রসের যে উদ্ধারকারী দল হিন্দকে রক্ষা করতে গিয়েছিল তাদেরকেও বর্বর ইসরাইলি বাহিনী সেদিন হত্যা করেছিল। এই মর্মান্তিক ঘটনা নিয়ে ‘The Voice of Hind Rajab’ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। কদিন আগে ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে ছবিটি দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ ছবির পুরস্কার লাভ করেছে। ‘দি ভয়েস অব হিন্দ রজব’ ছবির প্রদর্শনীতে প্রতিটি দর্শক আকুল হয়ে কেঁদেছিলেন। প্রদর্শনী শেষে সিনেমা হলের সব দর্শক চোখভরা পানি নিয়ে ২৩ মিনিট ধরে দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়ে নির্মাতা এবং হিন্দ রজবের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়েছিলেন।

নিষ্পাপ হিন্দ রজবকে ইসরাইলি বাহিনী নির্মমভাবে হত্যা করার পর তৎকালীন মার্কিন সেক্রেটারি অব স্টেট অ্যান্টনি ব্লিংকেন নাটকীয়ভাবে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তারও হিন্দ রজবের মতো ছয় বছরের একটি কন্যা রয়েছে এবং ওই ঘটনায় বাবা হিসেবে তার হৃদয়ও নাকি বিদীর্ণ হয়েছিল। এরপর প্রায় এক বছর অ্যান্টনি ব্লিংকেন ক্ষমতায় থাকলেও হিন্দ রজবের নির্মম হত্যাকাণ্ড নিয়ে আর কোনো উচ্চবাচ্য করেননি। ইসরাইলকেও কোথাও কোনো জবাবদিহি করতে হয়নি। এই ছিল বাইডেন প্রশাসনের নির্লজ্জ ভণ্ডামির অতিপরিচিত চিত্র।

উল্লেখ্য, অ্যান ফ্রাংক নামে এক ষোলো বছরের কিশোরী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে হিটলারের ইহুদি গণহত্যার প্রতীক হিসেবে আজও স্মৃতিপটে বেঁচে আছে। তার জীবন নিয়ে ‘The Diary of Anne Frank’ নামে একটি ক্লাসিক চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। সেই সিনেমাটি আমরা আজও অশ্রুসজল চোখে দেখি এবং হিটলারের প্রতি ঘৃণা বোধ করি। পৃথিবী টিকে থাকলে, একইভাবে আজ থেকে শতবর্ষ পরের মানুষরাও ‘The Voice of Hind Rajab’ ছবিটি দেখবে, কাঁদবে এবং দানব নেতানিয়াহু এবং ইসরাইল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জায়নিস্ট খুনিদের প্রতি অভিসম্পাত দেবে। দুই গণহত্যাকারী হিটলার ও নেতানিয়াহুর মধ্যে কে বেশি নৃশংস ছিল, সেই তুলনা আগামীর মানুষ অবশ্যই করবে। আমার প্রত্যাশা, বিশ্বমানবতার কাছে অ্যান ফ্রাংক এবং হিন্দ রজব দুজনই পরম স্নেহের হয়ে বেঁচে থাকুক।

গাজায় ইসরাইলি নির্মম আগ্রাসন ৭০০ দিন পার হয়ে গেছে। এ পর্যন্ত রক্ষণশীল হিসেবে সেখানে ৬৫ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ইসরাইলের হিসাবেই ৮৫ শতাংশ বেসামরিক নাগরিক। প্রায় ২০ লাখ জনগোষ্ঠীর ছোট্ট ভূখণ্ডে আহতের সংখ্যা অন্তত ১ লাখ ৫০ হাজার। অর্থাৎ সেখানকার মোট জনগণের শতকরা প্রায় ১১ ভাগ হয় নিহত, না হলে আহত হয়েছেন। মঙ্গোল বিজেতা চেঙ্গিস খান সম্পর্কে বলা হয়, তিনি নাকি কোনো শহর আত্মসমর্পণ করতে সম্মত না হলে সেই শহর বিজয়ের পর কয়েক দিন ধরে গণহত্যা চালাতেন। তবে চেঙ্গিস খানের কাহিনি তো প্রায় হাজার বছরের পুরোনো, ১২ শতকের।

আধুনিক যুগে গাজার সঙ্গে তুলনীয় গণহত্যা আর কোথাও চালানো হয়নি, যেখানে একটি দেশের ১১ শতাংশ মানুষকে হয় নিহত নইলে আহত করা হয়েছে। আরো অবাক করার বিষয় হলো, এই গণহত্যা প্রতিদিন সারা বিশ্বের মানুষের চোখের সামনে এমন প্রযুক্তির যুগে চালানো হচ্ছে যখন আমরা সবাই সেই নির্মমতা ‘রিয়েল টাইম’ দেখতে পাচ্ছি। বিশ্ববিবেক মরে গেছে। মুসলমানরা তো বহু শতাব্দী ধরেই মৃত। সম্প্রতি ইউরোপের কিছু দেশের জনগণ জাগ্রত হতে শুরু করেছে। তবে যতদিন না প্রবল ক্ষমতাধর যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ এই হত্যাকাণ্ডে লজ্জিত বোধ করছে এবং তাদের বিবেক জাগ্রত না হচ্ছে ততদিন বর্বর নেতানিয়াহু ও তার জায়নিস্ট দানবদের রক্ততৃষ্ণার লাগাম টানা সম্ভব নয়।

যুক্তরাষ্ট্রের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে যে পরিবর্তন আমরা দেখতে পাচ্ছি তাতে কিছুটা আশাবাদী হওয়ার কারণ রয়েছে। এই প্রজন্ম ক্রমেই বুঝতে পারছে যে, ইসরাইল প্রকৃতপক্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এমন এক বোঝা যা বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্রটিকে ক্রমেই দুর্বল করে ফেলছে। একটি দেশ যতই শক্তিশালী হোক না কেন, সারা বিশ্বের জনমতের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর ক্ষমতা তার থাকে না। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবার নির্বাচনে জিতেছেন মূলত ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ স্লোগানের ওপর ভর করে। কিন্তু ইসরাইলের সব অন্যায়কে সমর্থন করতে গিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সেই ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ স্লোগান এখন প্রতিদিন প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।

দেখা যাচ্ছে, ইসরাইল উল্টো অর্থ, মিডিয়া ও লবির মাধ্যমে ওয়াশিংটনের রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করছে। সারা বিশ্বে কোথাও মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কথা বলার নৈতিক শক্তি ওয়াশিংটন কেবল ইসরাইলকে অন্যায়ভাবে সমর্থন করতে গিয়ে হারিয়েছে। আধুনিক বিশ্বে একটি পরাশক্তি কেবল বস্তুবাদী শক্তির ওপর ভর করে অধিককাল তার অবস্থান ধরে রাখতে পারে না। সেই পরাশক্তির ‘সফট পাওয়ার’ ক্ষয়প্রাপ্ত হলে তার পতন অবশ্যম্ভাবী হয়ে যায়। প্রধানত ইসরাইলের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ‘সফট পাওয়ার’ আজ সর্বত্র পরাজিত।

ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের মতো মিত্ররাও ইসরাইল প্রশ্নে এখন মার্কিন একতরফা নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে। বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব একেবারে বিলীন হওয়ার আগে ‘ওয়াশিংটন এস্টাবলিশমেন্টের’ নিজ স্বার্থেই ইসরাইলসংক্রান্ত নীতির অর্থবহ পরিবর্তন জরুরি হয়ে পড়েছে।

Source: https://www.dailyamardesh.com/op-ed/amdwwjvc1tlda

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here