মালয়েশিয়া গমন: গন্তব্য নাকি গ্লানি?

logo

আল আমিন নয়ন

(১৭ ঘন্টা আগে) ২৫ জুলাই ২০২৫, শুক্রবার, ৪:৫৫ অপরাহ্ন

mzamin

facebook sharing button
twitter sharing button
skype sharing button
messenger sharing button
viber sharing button
whatsapp sharing button

শ্রমবাজার বন্ধ, তবুও বাড়ছে যাত্রা, প্রতিদিন ফেরত আসছে শত শত প্রবাসপ্রত্যাশী; প্রশ্ন উঠছে রাষ্ট্রের প্রস্তুতি ও দায়িত্ব নিয়ে।

মালয়েশিয়া সরকার যখন থেকেই শ্রমবাজার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়, তখন থেকেই বাংলাদেশি নাগরিকদের ‘ভিজিট ভিসা’র মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় যাত্রার হার আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পায়। এসব যাত্রার বেশিরভাগই ‘চাকরির সন্ধানে’ হলেও, বাস্তবতা হয়ে দাঁড়ায় হতাশা আর ফেরত আসার বেদনায়। প্রায় প্রতিদিনই মালয়েশিয়ার বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে, যা এখন এক নিয়মিত চিত্র।

২০২৩ সালে মালয়েশিয়ার একটি গবেষণায় উল্লেখ করা হয়, অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দেশের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। এই তথ্য শুধুই সংখ্যার খেলা নয়, বরং এটি আমাদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদার প্রতিচ্ছবি। প্রশ্ন হলো, এটি কি আমাদের জন্য গর্বের বিষয়, নাকি গভীর লজ্জা এবং ব্যর্থতার প্রতীক?

ঢাকা বিমানবন্দরেই প্রতিনিয়ত দেখা যায়, শত শত মানুষ মালয়েশিয়া গমনের অপেক্ষায়। তারা বেশিরভাগই ভিজিট ভিসার মাধ্যমে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করছেন, যাদের মধ্যে অনেকে প্রতারণার শিকার হন অথবা অন্ধ আশার পেছনে ছুটে পড়েন। অথচ এই পরিস্থিতি দীর্ঘদিন ধরেই চলমান। তাহলে প্রশ্ন ওঠে, রাষ্ট্র এখনো কারণ বিশ্লেষণ করেছে কি? কার্যকর কোনো কৌশল গ্রহণ করেছে কি?

বিমানবন্দরে স্থাপিত প্রবাসী লাউঞ্জ কিংবা ওয়ান-স্টপ ডেস্ক প্রবাসীদের স্বাগত জানাতে যতটা গুরুত্বপূর্ণ, তার চেয়েও বেশি প্রয়োজন অবৈধ বিদেশগমন রোধে সুনির্দিষ্ট ও কৌশলী পদক্ষেপ গ্রহণ। শুধু ফিরিয়ে দেওয়ার পরিসংখ্যান বাড়িয়ে নয়, বরং সোর্স লেভেলে প্রতারণা, দালালচক্র এবং ভিসা–ব্যবসার সাথে জড়িত চক্রকে আইনের আওতায় এনে এই পরিস্থিতি পরিবর্তন করতে হবে।

আমরা যদি সত্যিই প্রবাসীদের মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত হই, তাহলে এখনই প্রয়োজন:
১. সরকারি পর্যায়ে রুটকাজ বিশ্লেষণ ও উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত।
২. বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন স্ক্রিনিংয়ে বিশেষায়িত টাস্কফোর্স গঠন।
৩. দালাল চক্রের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি।
৪. সচেতনতামূলক প্রচারণা ও প্রবাস প্রত্যাশীদের তথ্যভিত্তিক পরামর্শ প্রদান।

আজকের বৈশ্বিক বিশ্বে যখন অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ একটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব, তখন আমাদের গাফিলতির কারণে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

অতএব, আবারও বলতে হয়, যদি এখনই কঠোর না হই, তবে অচিরেই এই অপমানজনক চিত্র আরও গভীর সংকটে রূপ নেবে। এখন সময় দায়িত্বশীলতা দেখানোর, শুধু বিমানবন্দরে চোখ রাখলেই তা স্পষ্ট বোঝা যায়।

লেখক: অভিবাসী কর্মী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here