প্রকাশ : রোববার ১৩ জুলাই ২০২৫, ২১:৪৮

গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়াকে ভারত মেনে নিতে পারেনি। তাই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের দাবিদার দেশটি বাংলাদেশের জানি দুশমনে পরিণত হয়েছে। জুলাই বিপ্লবকে কালিমালিপ্ত করার হেন কোনো অপচেষ্টা নেই যা দিল্লি করেনি। এতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হুমকিতে পড়েছে। এখনো আশঙ্কা রয়েছে ভারতের দ্বারা যেকোনো ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ার। এ অবস্থায় খবর পাওয়া যাচ্ছে, সশস্ত্রবাহিনীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করছে ভারতের সশস্ত্রবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। গণ-অভ্যুত্থানের প্রায় এক বছর পার হয়ে গেলেও তাদের বিদায় করে প্রতিষ্ঠানটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করেনি সরকার।
সহযোগী একটি দৈনিক খবর, সশস্ত্রবাহিনী পরিচালিত বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসে (বিইউপি) দু’টি বিভাগে ভারতীয় সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর চার কর্মকর্তা নিযুক্ত আছেন। কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ইন্সট্রাক্টর হিসেবে আছেন ভারতীয় সেনা কর্মকর্তা কর্নেল অরিন্দম। একই বিভাগে ইন্সট্রাক্টর হিসেবে কর্মরত আছেন ভারতীয় নৌবাহিনীর কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার টি গোপি কৃষ্ণ। অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার বিভাগে সিনিয়র ইন্সট্রাক্টর হিসেবে কর্মরত আছেন ভারতীয় বিমানবাহিনীর কর্মকর্তা গ্রুপ ক্যাপ্টেন সিদ্বার্থ শঙ্কর পাটনায়েক ও গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ এন সোমান্না। এরা সবাই হাসিনার ২০১৮ সালের নিশি নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মতো জোর করে ক্ষমতায় টিকে যাওয়ার পর নিয়োগ পান। এ সময়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রযন্ত্রের নানা পর্যায়ে ভারতীয় অনুপ্রবেশ বাড়ে। কোন বিবেচনায় এই ভারতীয়দের নিয়োগ দেয়া হলো- যেখানে দেশের যোগ্য লোকেরা উপযুক্ত কাজ পাচ্ছেন না। আবার এদের ব্যাপারেও প্রকাশ্যে কোনো তথ্য পাওয়া যায় না।
গুরুতর ব্যাপার হচ্ছে- বাংলাদেশের সবচেয়ে স্পর্শকাতর জায়গায় এদের কর্মস্থল। এরা কি শুধু শিক্ষাকার্যক্রমে নিজেদের কাজ সীমাবদ্ধ রেখেছেন, না এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় অনুপ্রবেশকে গোয়েন্দাগিরি করতে কাজে লাগাচ্ছেন। এ প্রশ্ন সচেতন মহলের। এর আগে বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার একেবারে কেন্দ্রস্থল সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা-ডিজিএফআইয়ের সদর দফতরে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর জন্য একটি ফ্লোর বরাদ্দ দেয়ার খবরও জানা গেছে। হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক সিদ্দিকী তাদের এ সুযোগ করে দিয়েছেন। তবে ‘র’-এর সদস্যদের বিতাড়িত করা হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। কিন্তু চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর হতে চললেও বিইউপিতে ভারতীয়দের কেন সরানো হলো না- কর্তৃপক্ষের কাছে তার জবাব থাকা উচিত।
বাংলাদেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর মধ্যে ভারতীয়দের অনুপ্রবেশের আরো বেশ কিছু অভিযোগ উঠেছে। বিডিআর হত্যায় নিহতদের পরিবারের অনেকে এমন অভিযোগ তুলেছেন। চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হওয়ার সময়ও রাস্তায় হিন্দিতে কথা বলা লোকদের নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যাযজ্ঞ চালানোর অভিযোগ আছে। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীগুলো এসব নিয়ে খোলাসা করে কোনো বিবৃতি দেয়নি। সরকারও এসব ব্যাপারে তদন্ত করেছে বলে আমাদের জানা নেই। দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এ বিষয়গুলো জনগণের সামনে স্পষ্ট করে জানাতে হবে। এ জন্য সামরিক প্রশাসনকে অন্তর্বর্তী সরকারের সহায়তায় এগিয়ে আসতে হবে। দূর করতে হবে জনগণের এ সংক্রান্ত উদ্বেগ।