নারায়ণগঞ্জে সাত খুন : ১১ বছরেও শেষ হলো না বিচার

logo

কামাল উদ্দিন সুমন, নারায়ণগঞ্জ
ছবি : সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত সাত খুনের ঘটনার ১১ বছর আজ। তবে ১১ বছরেও শেষ হয়নি এই হত্যা মামলার বিচারকাজ। নিম্ন আদালত ও হাইকোর্টে রায় হলেও আসামিদের সাজা আটকে আছে আপিল বিভাগের রায়ের অপেক্ষায়।

বিচার প্রক্রিয়ায় ধীরগতির কারণে নিহতদের পরিবারের সদস্যরা হতাশা প্রকাশ করেছেন। দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি করে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।

২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ আদালতে একটি মামলায় হাজিরা দিয়ে ফেরার পথে অপহৃত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের তৎকালীন প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজন। তিন দিন পর শীতলক্ষ্যা নদীতে পাওয়া যায় তাদের লাশ।

এই ঘটনায় দুই মামলায় ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি নিম্ন আদালতে ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়। একই বছরের ২২ আগস্ট হাইকোর্ট ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল, ১১ জনকে যাবজ্জীবন ও ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করেন। এই রায়ের বিরুদ্ধেও আপিল বিভাগে গেছেন আসামিরা। যা এখনো রায়ের অপেক্ষায়।

নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘আমরা আমাদের স্বজনদের হারিয়েছি ১১ বছর পার হয়ে গেছে। অথচ এখন পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট খুনিদের ফাঁসি দেয়নি। বিচার বিভাগ ও অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানের কাছে আমাদের একটাই দাবি, অন্তত আমাদের সাতটা পরিবারের কথা চিন্তা করে বিচার কার্যক্রম শেষ করা হোক। আমি আইন উপদেষ্টার প্রতি আবেদন করছি, আমরা সাতটা পরিবার কর্তা হারা হয়েছি। আমাদের অবস্থা বিবেচনা করে সুপ্রিম কোর্টের বিচার কার্যক্রম শেষ করে দ্রুত মামলাটা নিষ্পত্তি করা হোক। আমরা এইটুকু দেখে যেতে চাই।’

নিহত জাহাঙ্গীরের স্ত্রী সামছুন নাহার নুপুর বলেন, ‘আমার স্বামীর হত্যার সময়ে আমার মেয়ে গর্ভে ছিল। এখন আমার মেয়ের বয়স ১১ বছর। অথচ এখন পর্যন্ত আমার মেয়ে তার বাবা হত্যার বিচার পায়নি। উচ্চ আদালতে মামলা ঝুলে রয়েছে। আমরা প্রধান উপদেষ্টার কাছে আবেদন করছি, অন্তত আমাদেরকে এই হত্যার বিচারটা শেষ করে দেয়া হোক। আমরা অসহায়।’

সাতজনকে অপহরণ ও হত্যার ঘটনায় নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি ও আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল দু’টি মামলা দায়ের করেন।

হত্যাকাণ্ডের ১১ মাস পর ২০১৫ সালের ৮ এপ্রিল মামলার তদন্তকারী সংস্থা নারায়ণগঞ্জ জেলা ডিবি পুলিশ দু’টি মামলার অভিন্ন চার্জশিট আদালতে দাখিল করেন। ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি চার্জশিটভুক্ত আসামি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি নুর হোসেন, র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মাদ, সাবেক কোম্পানি কমান্ডার মেজর আরিফ হোসেন ও লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মাসুদ রানাসহ ৩৫ জনকে দণ্ড প্রদান করেন নারায়ণগঞ্জের একটি আদালত। এর মধ্যে ২৬ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ৯ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here