লিবিয়ায় নৌকাডুবিতে নিহতদের বেশির ভাগই বাংলাদেশি বলে শঙ্কা

mzamin

facebook sharing button

লিবিয়ার ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী দু’টি এলাকা থেকে এখন পর্যন্ত ২৩ অভিবাসনপ্রত্যাশীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, তাদের বেশির ভাগই বাংলাদেশি নাগরিক। তবে মরদেহ গলে যাওয়া এবং বিদ্রোহী বেনগাজী সরকার কর্তৃক তাদের তাৎক্ষণিক দাফন সম্পন্ন হওয়ায় পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এমনটাই জানিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের
দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা গতকাল মানবজমিনকে বলেন, গত সপ্তাহে লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলে ভূমধ্যসাগরের ব্রেগা তীর থেকে ২০ অভিবাসনপ্রত্যাশীর মহদেহ উদ্ধার করা হয়। শনিবার ব্রেগা তীর থেকে আরও ১৭৫ কিলোমিটার পশ্চিমে বেনজোয়া উপকূল থেকে আরও ৩টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সে হিসেবে উদ্ধার হওয়া মরদেহের সংখ্যা ২৩ এ পৌঁছালো। বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য মতে ত্রিপোলি মিশন বাংলাদেশ সরকারকে জানিয়েছে, মোট ৫৬ জন অভিবাসপ্রত্যাশীকে নিয়ে নৌকাটি ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে ডুবে যায়। ২৩টি মরদেহ ছাড়া দু’জন জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার হওয়া ওই দু’জন বেনগাজী মিলিশিয়াদের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি হাসপাতালে নিবিড় পর্যবেক্ষণে ভর্তি রয়েছেন। তাদের পরিচয়ও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বাকি ৩১ জনের ভাগ্যে কী ঘটেছে সেটা এখনো অজানা। দূতাবাস ঢাকাকে আরও জানিয়েছে, অকুস্থলসহ ভূমধ্যসাগরের গোটা পূর্বাঞ্চলে বিদ্রোহী সরকারের নিয়ন্ত্রণে। সেখানকার প্রসিকিউশনের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের চেষ্টায় সফল হয়নি ত্রিপোলি মিশন। উদ্ভূত  পরিস্থিতিতে দ্বার-আল লিবিয়া নামের একটি মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান যারা অভিবাসন নিয়ে কাজ করে তাদের দায়িত্ব দিয়েছে দূতাবাস। তাদের মাধ্যমে জীবিত দু’জন এবং মৃতদেহগুলোর তথ্য পাওয়ার চেষ্টা চলছে। তাছাড়া রেড ক্রিসেন্টের মাধ্যমেও চেষ্টা করা হচ্ছে। স্বজনদের মাধ্যমেও দূতাবাস কিছু তথ্য পাচ্ছে বলে জানানো হয়েছে। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার দূতাবাসের ফেসবুক পেজে এক পোস্টে বলা হয়, লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলে ভূমধ্যসাগরের ব্রেগা তীর থেকে গত দু’দিনে বেশ কয়েকজন অভিবাসীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। স্থানীয় উদ্ধারকারী কর্তৃপক্ষের মতে, অভিবাসনপ্রত্যাশীদের একটি নৌকা ভূমধ্যসাগরে ডুবে যাওয়ার পর এসব মরদেহ ব্রেগা তীরে ভেসে এসেছে। দূতাবাসের ওই ফেসবুক পোস্টে আরও জানানো হয়, উদ্ধার হওয়া মরদেহের মধ্যে বাংলাদেশি নাগরিক থাকার আশঙ্কার কথা বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। তবে এ বিষয়ে দূতাবাস এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি। বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যোগাযোগ রাখছে দূতাবাস। শনিবার দূতাবাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এসব মানুষ কোন দেশের নাগরিক তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে স্থানীয় রেড ক্রিসেন্টের ধারণা, তারা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। আর যে স্থান থেকে মরদেহগুলো উদ্ধার হয়েছে সেখানে যাওয়ার অনুমতি এখনো পায়নি দূতাবাস। মরদেহগুলো পচে গলে যাচ্ছিল উল্লেখ করে দূতাবাস আরও জানিয়েছে, এসব মরদেহের সঙ্গে জাতীয়তা সংক্রান্ত কোনো নথিপত্র পাওয়া যায়নি। পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় মরদেহগুলো ব্রেগা থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে আজদাদিয়া নামক একটি স্থানে সমাহিত করা হয়েছে। উল্লেখ্য, অবৈধভাবে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে ঢোকার অন্যতম একটি পথ লিবিয়া। এ পথে ইউরোপে যাওয়ার জন্য মূলত ব্যবহার করা হয় ছোট ছোট নৌকা। এসব নৌকায় ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত যাত্রী তোলা হয়। প্রতি বছর এ পথে যাত্রা করতে গিয়ে প্রাণ হারান অনেক অভিবাসনপ্রত্যাশী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here