রাজনৈতিক ডামাডোলের মধ্যেও ৭০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আহরণ

চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) তিন মাস পার হয়েছে। এর মধ্যে দুই মাসই কেটেছে রাজনৈতিক ডামাডোলের মধ্যে। কিন্তু এর পরও ৭০ হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আহরণে সক্ষম হয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় রাজস্ব আহরণ কিছুটা কমলেও বর্তমান প্রেক্ষাপটে তা আশাব্যঞ্জক। তিন মাসের রাজস্ব আহরণের এ প্রবাহ অব্যাহত থাকলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনও সম্ভব বলে মনে করেন তারা।

অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) ও এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, তিন মাসে প্রায় ৭০ হাজার ২৮৭ কোটি টাকার রাজস্ব আহরণ করা হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৬ হাজার ৬৩৯ কোটি টাকা কম।

এনবিআরের একটি সূত্র বণিক বার্তাকে জানিয়েছে, রাজস্ব আহরণের এ টাকার পরিমাণ ‘আইবাস++’-এর হিসাব অনুযায়ী নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এটি সাময়িক হিসাব। আহরিত রাজস্বের পরিমাণ আরো বেশি হতে পারে।

সূত্র বলছে, অর্থবছরের প্রথম মাসে (জুলাই) রাজস্ব আহরণ হয় ২০ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। পরের মাসে আসে ২১ হাজার ৭৯৮ কোটি ৫১ লাখ টাকা। আর গত মাসে ২৭ হাজার ৯২৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকার রাজস্ব আহরণ করে এনবিআর। তিন মাসে মোট রাজস্বের পরিমাণ প্রায় ৭০ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা।

সূত্র জানায়, প্রথম তিন মাসে আমদানি পর্যায়ে রাজস্ব আহরেণর পরিমাণ ২২ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা। স্থানীয় পর্যায়ে মূসক আয় হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার ১৪৪ কোটি টাকা। এছাড়া আয়কর ও ভ্রমণ কর বাবদ এসেছে ২২ হাজার ৮২৯ কোটি টাকার মতো।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে ৭৬ হাজার ৭৫১ কোটি ৩০ লাখ টাকার রাজস্ব আহরণ করে এনবিআর। সেই হিসাবে চলতি অর্থবছরের তিন মাসে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা কম আহরণ হয়েছে।

গত অর্থবছরের চেয়ে চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ৫০ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

রাজস্ব আয়ের পরিমাণ কমার পেছনে জুলাই-আগস্টের ঘটনাপ্রবাহ ও সম্প্রতি আঘাত হানা বন্যা পরিস্থিতির প্রভাব রয়েছে বলে মনে করেন এনবিআরের সাবেক সদস্য (কাস্টমস ও ভ্যাট) ফরিদ উদ্দিন। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘শেষ হওয়া তিন মাসের রাজস্ব আয়ের এ প্রবাহ ঠিক থাকলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বিবেচনায় গত অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের চেয়ে চলতি অর্থবছরের তিন মাসে কম আয় হওয়ার পরিমাণটা স্বাভাবিক। গত তিন মাসে রাজস্ব আয় খাতের হেডওয়ারি ও খাতের অভ্যন্তরীণ কম্পোজিশন গত অর্থবছরের সঙ্গে মিল থাকলে বছর শেষে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে।’

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, গত সেপ্টেম্বরে আমদানি (কাস্টমস) পর্যায়ে ৭ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা, স্থানীয় পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) থেকে ৯ হাজার ৮৫ কোটি এবং আয়কর ও ভ্রমণ কর থেকে ১১ হাজার ১৯১ কোটি টাকা আয় হয়েছে।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের মাসিক সমন্বয় সভার কার্যবিবরণী সূত্রে জানা গেছে, আগস্ট পর্যন্ত ৫৭ হাজার ১৭৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকার রাজস্ব আহরণ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আয় হয়েছে ৪৪ হাজার ১২৩ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। আগস্ট পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আয়ের হার ছিল ৭৭ দশমিক ১৭ শতাংশ। এর মধ্যে কাস্টমস থেকে লক্ষ্যমাত্রার ৯৪ দশমিক ৫৮ শতাংশ, মূসক থেকে ৭৬ দশমিক ৮৮ ও আয়কর থেকে ৬১ দশমিক ২৬ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের আগস্ট পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের হার ছিল ৯৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ।

এনবিআর সদস্য (মূসক বাস্তবায়ন) ড. মো. আব্দুর রউফ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমরা এখনো সেপ্টেম্বরের হিসাব পাইনি। ২০ অক্টোবরের দিকে সেপ্টেম্বরের হিসাব পাব। তবে রাজস্ব আহরণ তুলনামূলক কম হয়েছে এ কথা ঠিক। জুলাই ও আগস্টে ছাত্র-জনতার বিপ্লবের সময় ভ্যাট আহরণ কমেছে। সেপ্টেম্বরে প্রবৃদ্ধি হবে বলে আশা করছি। সম্প্রতি বেশকিছু বদলি ও পদায়ন হয়েছে। আগামী মাসে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে। আশা করছি এ বছর আমরা রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হব।’

bonik barta