দেশেই তৈরি হচ্ছে ড্রোন, ৫৫১ কোটি টাকার বিনিয়োগ

দিনদিন বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হয়ে উঠছে মনুষ্যবিহীন আকাশ যান হিসেবে পরিচিত ড্রোন। এই প্রযুক্তি পণ্যটির ব্যবহার এখন কৃষিকাজেও বাড়ছে। ছবি: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাদিনদিন বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হয়ে উঠছে মনুষ্যবিহীন আকাশ যান হিসেবে পরিচিত ড্রোন। এই প্রযুক্তি পণ্যটির ব্যবহার এখন কৃষিকাজেও বাড়ছে। ছবি: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাড্রোন তৈরির কারখানা করবে দেশি কোম্পানি স্কাই বিজ লিমিটেড। বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (বেপজা) কারখানাটি নির্মিত হবে। এতে ৫৫০ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

আনম্যান্ড এরিয়াল ভেহিকেল (ইউএভি) বা মনুষ্যবিহীন আকাশযান তৈরির এই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হলে দেশে বাণিজ্যিক ও রপ্তানির উদ্দেশ্যে এটিই হবে প্রথম কোনো ড্রোন তৈরির কারখানা। যেখান থেকে বছরে ৭ হাজার ৩১৪টি বিভিন্ন ধরনের ড্রোন তৈরি হবে। এসব ড্রোন কৃষিকাজে কীটনাশক স্প্রে, অগ্নিনির্বাপণ, জরুরি উদ্ধারকাজ, পণ্য সরবরাহ, সিনেমাটোগ্রাফি, ম্যাপিংসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হবে; পাশাপাশি দেশে চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রপ্তানি হবে।

এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন সফল হলে এবং বিদেশে এই প্রযুক্তিপণ্য রপ্তানি করা গেলে তা দেশে বৈদেশিক আয় বাড়াতে সহায়ক হবে বলে মনে করেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. এম এম আকাশ। তিনি আজকের পত্রিকা’কে বলেন, এই উদ্যোগটা শ্রমঘন হবে না, পুঁজিঘন হবে। ফলে এর থেকে খুব বেশি কর্মসংস্থান না হলেও তৈরি হওয়া ড্রোন রপ্তানির মাধ্যমে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে সক্ষম হবে; যা রপ্তানি আয়ে ইতিবাচক প্রভাব রাখবে।

তবে ড্রোনের বাজার ও ব্যবহারের বিষয়ে সতর্কতার কথা জানিয়ে অধ্যাপক আকাশ বলেন, অনেক অপরাধমূলক কাজে এই ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছে। তাই দেশে এর ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন পড়বে। এর অভ্যন্তরীণ যথার্থ ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে এবং বাইরে রপ্তানি করা হলে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। অন্যথায় উদ্বেগের বিষয় রয়েছে।

তথ্যমতে, চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে প্রায় দুই একর জায়গাজুড়ে এই কারখানা করতে স্কাই বিজের ব্যয় হবে ৪ কোটি ৫৯ লাখ ৫০ হাজার ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের গত বৃহস্পতিবারের বিনিময় হার অনুযায়ী প্রতি ডলার ১২০ টাকা হিসাবে ৫৫১ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

স্কাই বিজ এই ড্রোন তৈরির কারখানা থেকে প্রাথমিকভাবে ১০টি মডেলের ইউএভি তৈরির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে; যার দুটি মডেলের উৎপাদন আগামী জানুয়ারিতেই শুরু হতে পারে। তবে পুরোপুরি চালু হওয়ার পর কারখানা থেকে বছরে ১৬৯ মিলিয়ন ডলারের ড্রোন রপ্তানির আশা করছে স্কাই বিজ কর্তৃপক্ষ; যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা।

এ বিষয়ে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দেশে কোনো রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) ও অর্থনৈতিক অঞ্চলের (ইজেড) মধ্যে এটিই প্রথম ড্রোন তৈরির কারখানা হিসেবে পরিচিতি পাবে। এরই মধ্যে বেপজা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে চুক্তি করেছে উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান স্কাই বিজ। এ লক্ষ্যে গত বৃহস্পতিবার বেপজা কার্যালয়ে সদস্য (বিনিয়োগ উন্নয়ন) মো. আশরাফুল কবীর এবং স্কাই বিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) জসীম উদ্দিন আহমেদ নিজ নিজ পক্ষে চুক্তিতে সই করেন।

চুক্তি সই অনুষ্ঠানে বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আবুল কালাম মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান বলেন, দেশে ড্রোন তৈরিতে বিনিয়োগের পথিকৃৎ হিসেবে এবং রপ্তানি বাস্কেট প্রসারে এই উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বেপজা সব সময় এ ধরনের বৈচিত্র্যময় পণ্যে বিনিয়োগ উৎসাহিত করে আসছে। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বেপজার সদস্য (প্রকৌশল) মোহাম্মদ ফারুক আলম, সদস্য (অর্থ) আ ন ম ফয়জুল হক, নির্বাহী পরিচালক (প্রশাসন) আ. স. ম. জামশেদ খোন্দকার, নির্বাহী পরিচালক (বিনিয়োগ উন্নয়ন) মো. তানভীর হোসেন, স্কাই বিজের চেয়ারম্যান মো. মাসুদ রাজ্জাক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, স্কাই বিজসহ মোট ৩৫টি প্রতিষ্ঠান বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের লক্ষ্যে এখন পর্যন্ত চুক্তি করেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাবিত বিনিয়োগের পরিমাণ ৮৫ কোটি ৫ মার্কিন ডলার

Ajker Patrika