সরকার আর কী করবে, জামায়াত চলবে কোন পথে?

ফাইজ তাইয়েব আহমেদ

জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। অথচ সিদ্ধান্তটা হয়েছে ১৪ দলীয় মিটিংয়ে। একাধিক সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী একটা দল নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন জারির আগে গণভোট হয়নি। সংসদে কোনো আলোচনা হয়নি, মন্ত্রীসভায়ও না। ফলে এই প্রজ্ঞাপনের বৈধতা নিয়ে বিতর্ক থেকে যাবে। তবে তাতে সরকারের ছাত্র খুনের দায় আড়ালের ষড়যন্ত্র ছলাকলা থেমে থাকবে না।

যাইহোক নিষিদ্ধ দলের তকমা নিয়ে জামায়াতকে বাস্তবতা মোকাবিলা করতে এবং প্রকৃত রাজনীতিতে ফিরতে হবে। দলটি এতদিন সরকারের বিরুদ্ধে শক্তিশালী আন্দোলন প্রশ্নে সরকারের খেলার গুটিতে আটকে ছিল। আন্দোলনে নামলেই জামায়াতকে নিষিদ্ধের ভয় দেখানো হইতো। আজকে আন্দোলন না করেই জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হইল। কারণ সরকারের হাতে গণহত্যা লুকানোর টুল বেশি বাকি নাই।

যদিও গত ১৭ বছরে জামায়াত ও শিবিরের নামে ফিজিক্যাল অ্যাসল্টসহ গুম খুন টার্চারকে বৈধতা দেওয়া ছিল, ছাত্রলীগ যুবলীগ আওয়ামী লীগ এটা চর্চা করেছে। এখন নিষিদ্ধ সংগঠনের ওজুহাতে নতুন করে কাজটা চালিয়ে যাবে, পার্থক্য এটাই।

সরকার নেক্সট কি করবে? সেটা শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যে হিন্টস পাওয়া যায়। ‘নিষিদ্ধ ঘোষণার পর জামায়াত-শিবির ‘আন্ডারগ্রাউন্ডে গিয়ে ধ্বংসের চেষ্টা করবে’ মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এদেরকে মোকাবিলা করতে হবে ‘জঙ্গি সংগঠন’ হিসেবে। ‘এরা তো জঙ্গিবাদী হিসেবে আন্ডারগ্রাউন্ডে গিয়ে আবার ধ্বংস করার চেষ্টা করবে। সেখানেও জঙ্গি সংগঠন হিসেবে এদেরকে মোকাবিলা করা ও মানুষকে রক্ষা করার চেষ্টা সকলে মিলে করতে হবে।’

অর্থাৎ সরকার জামায়াত ও শিবির প্রশ্নে প্রচুর স্যাবটাজ, জঙ্গি হামলা করবে নিজেরাই, উন্নয়ন প্রকল্প ধ্বংস করাবে এজেন্ট দিয়ে, এবং এগুলোর সাথে জামায়াত জড়িত এসব বলে ভারতকে দিয়ে পশ্চিমাদের খাওয়াবে। আমার ধারণা এসব বাতিল পরিকল্পনা এখন আর কাজ করবে না। তবে ইসলামোফোবিয়া ইউরোপীয়রা এগুলোর বিরুদ্ধে চুপ থাকবে। বিশ্ব যেহেতু ওয়ার অন টেরর এ নাই, তাই আমেরিকার দিক থেকে বেশি রাজনৈতিক ফায়দা সরকার পাবে না। স্বৈরাচার সরকার যেহেতু পরিস্থিতির সঠিক অ্যাসেসমেন্ট করতে ব্যর্থ, নাশকতা গুলা তারা করবেই। এদের কোন বিবেচনা বোধ অবশিষ্ট নাই, নাই কোন লাজ-শরম।

এমতাবস্থায়, জামায়াত কী করবে?

১। একই নামে থেকে যাবে?

২। নতুন নামে আত্মপ্রকাশ করবে?

৩। এতদিনের দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছেড়ে মাঠে সরব উপস্থিতি এবং সরকারকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ জানাবে? সেই শক্তি তাদের অবশিষ্ট আছে?

৪। সরকার কি করছে সেটাতে গুরুত্ব না দিয়ে সরকার পতনের আন্দোলনে ফোকাস করবে? কিন্তু তার জন্য আছে জামায়াতের দলীয় প্রস্তুতি?

এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বাংলাদেশের জন আন্দোলনের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় গণহত্যার পরেও বিএনপি এবং জামায়াত এখনও কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি দেয়নি। বাংলাদেশের ছাত্র ও তরুণদের জীবন ও সংগ্রামের বিএনপি এবং জামায়াত দলীয় ব্যানারে/ম্যানিফেস্টোতে কোনো কন্ট্রিবিউশন করেনি। এভাবে চলতে থাকলে নতুন প্রজন্মের কাছে একটি দলের আবেদন অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে।

ফলে একদিকে মানুষের সংগ্রামে পার্টিসিপেট করে নিজেদের প্রাসঙ্গিকতার জানান দেয়ার প্রশ্ন আছে জামায়াতের সামনে, একইভাবে সরকারের সচেতন স্যাবোটাজ থামিয়ে দেয়ার চ্যালেঞ্জও আছে।

ব্যাপক আগুন সন্ত্রাস, উন্নয়ন প্রকল্পে পরিকল্পিত স্যাবটাজ করবে সরকার, জঙ্গি আক্রমণের নাটক করবে, সংখ্যালঘুদের হামলা করে নাশকতায় জামায়াতকে যে জড়ানো হবে- এসবের মোকাবেলা তারা কীভাবে করবে? বিএনপিকেও নিষিদ্ধ সংগঠনের সাথে আঁতাতের অভিযোগে নতুন দফা হয়রানি করবে।

অর্থাৎ গণহত্যার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ব্যানারে কর্মসূচি না দিয়েও, ছাত্রদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনকে দলীয় ম্যানিফেস্টোতে সরাসরি এন্টারটেইন না করেও, সরকারের পরিকল্পিত স্যাবটাজের কন্সিকিউয়েন্সে পড়বে, মিথ্যা তীব্র দমন-পীড়ন এবং নাশকতার অংশ হতে হবে বিরোধী দলগুলোকে। জনতার পক্ষে রাজনৈতিক কর্মসূচি না করেও তারা গুম গ্রেফতার হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হবে নতুন দফা। প্রশ্ন হচ্ছে, বিষয়টা তারা আগে বুঝেনি কেন?

জায়ায়াত কি রাজনীতির মাধ্যমে সরকারের নাশকতা পরিকল্পনার জবাব দেয়ার সক্ষমতা রাখে? এমন সক্ষমতার জন্য তারা প্রস্তুতি নিয়েছে? নাকি তারা আসলে কাগুজে বাঘ বলেই নিজেদের আবারও প্রমাণ দিবে!

Bangla Outlook