আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটিতে পদবাণিজ্য

আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটিতে পদবাণিজ্য

দীর্ঘদিন পর ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের থানা-ওয়ার্ডের কমিটি হচ্ছে। প্রস্তাবিত কমিটির তালিকা এরই মধ্যে জমা দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় দপ্তরে। অভিযোগ উঠেছে– কমিটিতে চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, মাদক কারবারি, ফুটপাত-জমি দখলবাজ, ক্যাসিনোকাণ্ডে জড়িত ও হত্যা মামলার আসামিরাও স্থান পেয়েছে।

মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এসব কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রস্তাব করা হয়েছে বিএনপি-জামায়াত সমর্থকের নামও। এ ছাড়া ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে শীর্ষ নেতার সন্তানসহ স্বজনের নামও তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে।

সীমাহীন পদবাণিজ্যের মাধ্যমে মহানগরের দুই অংশের শীর্ষ নেতারা বিতর্কিতদের নাম কমিটিতে রেখেছেন। একটি পদের জন্য ১০ থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত নেতার পকেটে ঢুকেছে। পদ বাগাতে নেতাকে দামি গাড়ি উপহারেরও ঘটনা ঘটেছে। আবার মোটা অঙ্কের টাকা দিয়েও বনিবনা না হওয়ায় ছিটকে পড়েন অনেকে।

গত ৪ জুন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি ২৬ থানা ও ৬৪ ওয়ার্ডের এবং ১৬ জুন মহানগর দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী ও সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির ২৪ থানা ও ৭৫ ওয়ার্ডের প্রস্তাবিত কমিটি কেন্দ্রীয় দপ্তরে জমা দেন। ঢাকা-৯ আসনভুক্ত খিলগাঁও, সবুজবাগ ও মুগদা থানার জন্য আলাদা কমিটি জমা দেন মন্নাফী ও হুমায়ুন। এসব কমিটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো হয়। ২০২২ সালের অক্টোবরে মহানগরীর থানা-ওয়ার্ড সম্মেলনের এক বছর আট মাস পর কমিটিগুলো জমা পড়ল। সর্বশেষ ২০১৬ সালে কমিটি গঠন করা হয়। সে হিসেবে প্রায় আট বছর পর নতুন কমিটি আসছে মহানগরের দুই অংশে।

অবশ্য প্রস্তাবিত কমিটির বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ দলের কেন্দ্রীয় দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন পদপ্রত্যাশী নেতা অনেকে। তারা বলছেন, কমিটিতে কারা আছেন, সেটি আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো না হলেও সংশ্লিষ্ট নেতার মাধ্যমে নামধাম সবাই জেনে গেছেন। কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে বিতর্কিতদের নাম জেনে বিস্মিত অনেক ত্যাগী নেতা। কয়েকজন এমপি ও কেন্দ্রীয় নেতা তাদের উপেক্ষা করে প্রস্তাবিত কমিটি তৈরি করেছেন বলে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছেন পদপ্রত্যাশীরা। এ পরিস্থিতিতে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা দলের সাধারণ সম্পাদককে বিষয়টি তদন্ত ও যাচাই-বাছাইয়ের নির্দেশ দিয়েছেন।

লেনদেন ১০ থেকে ৫০ লাখ 

ঢাকা মহানগর দক্ষিণের শাহবাগ থানা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটি নিয়ে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, শাহবাগ থানার সভাপতি পদে জি এম আতিকুর রহমান আতিকের কাছ থেকে ৫০ লাখ এবং সাধারণ সম্পাদক পদে কাউন্সিলর আসাদুজ্জামান আসাদের কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা নিয়ে মহানগর দক্ষিণের সভাপতি মন্নাফী তাদের নাম প্রস্তাব করেছেন। আবার মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন একই থানার সভাপতি পদ পাইয়ে দিতে বিদায়ী সহসভাপতি সহিদুল ইসলাম সহিদের কাছ থেকে ৪০ লাখ ও সাধারণ সম্পাদক পদ দেওয়ার কথা বলে আরেক নেতার কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা নিলেও মন্নাফীর চাপে তিনি কাউকেই ‘খুশি’ করতে পারেননি।

একইভাবে মন্নাফীকে দামি গাড়ি (ঢাকা মেট্রো ঘ-২১-৬৩৩১) উপহার দিয়ে রমনা থানার সাধারণ সম্পাদক পদে নিজের নাম প্রস্তাবে উঠিয়েছেন গোলাম মোস্তফা শিমুল। স্থানীয় নেতারা কেন্দ্রে পাঠানো লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, ২০১০ সালে যুবলীগ নেতা ইব্রাহিম হত্যা মামলার আসামি ও ক্যাসিনোকাণ্ডে জড়িত শিমুলের নামে ছয় থেকে সাতটি মামলা রয়েছে।

বিলুপ্ত সারুলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি হাজি মোহাম্মদ আলী লিখিত অভিযোগে বলেন, ৬৭ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি পদে তাঁর নাম প্রস্তাবের বিনিময়ে ২০ লাখ টাকা দাবি করেন মন্নাফী। তবে মোহাম্মদ আলী টাকা দিয়ে পদ নিতে রাজি না হওয়ায় মোটা অঙ্কের টাকা পকেটে নিয়ে দক্ষিণ আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত চিহ্নিত চাঁদাবাজ জয়নাল আবেদিন হাজারীর নাম প্রস্তাব করা হয়েছে।

বিপুল টাকার বিনিময়ে মন্নাফী কদমতলী থানার সাধারণ সম্পাদক পদে ৪৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আকাশ কুমার ভৌমিক ও যাত্রাবাড়ী থানার সাধারণ সম্পাদক পদে শান্ত নূর শান্তর নাম প্রস্তাব করেছেন বলেও চাউর আছে। শান্তর বিরুদ্ধে রয়েছে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস ও জমি দখলের অভিযোগ। ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী সভাপতি গিয়াস উদ্দিন গেসুর অভিযোগ, তিনি আবারও একই পদে আসতে দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবিরকে ১৫ লাখ টাকা ও দুটি দলীয় কর্মসূচিতে মাছ সরবরাহসহ আরও পাঁচ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। এখন তাঁর বদলে আরেকজনের নাম প্রস্তাব করায় ২০ লাখ টাকা ফেরত চান তিনি।

পদবাণিজ্যের এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আবু আহমেদ মন্নাফী সমকালকে বলেন, ‘থানা-ওয়ার্ডে দুটি পদের জন্য অনেকে পদপ্রত্যাশী থাকেন। যিনিই বাদ পড়েন বা বাদ পড়ার শঙ্কা থাকে, তিনিই এমন মিথ্যা অভিযোগ করেন। কারও কাছ থেকে টাকা বা উপহার নিইনি। ফলে কে কী বলল, তাতে কিছু যায় আসে না।’

হুমায়ুন কবির বলেন, ‘টাকার বিনিময়ে পদ দেওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন ও অসত্য। প্রকৃতপক্ষে আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে কোনো কোনো মহল গণমাধ্যমে এমন মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করছে।’

এদিকে প্রস্তাবিত কমিটি নিয়ে পদবাণিজ্যের অডিও রেকর্ড এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সমকালের হাতে থাকা একটি অডিওতে শোনা যায়, মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানকে ফোন করে দক্ষিণখান থানার ৪৭ নম্বর ওয়ার্ড নেতা আকবর আলী পদ পেতে ১০ লাখ টাকা দেওয়ার বিষয়ে কথা বলছেন। কথোপকথনে বজলুর রহমান টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করলেও এসব ফোনে না বলে সাক্ষাতে বলার পরামর্শ দিয়েছেন। তবে শেখ বজলুর রহমানের দাবি, ভাইরাল হওয়া অডিও রেকর্ডটি খণ্ডিত। দুই সেকেন্ডের মতো কথা বাদ দিয়ে এডিট করা হয়েছে। এ নিয়ে তিনি সাইবার সিকিউরিটি আইনে মামলা করবেন।

মহানগর দক্ষিণে অভিযোগের পাহাড়

পল্টন থানার প্রস্তাবিত সভাপতি মোস্তবা জামান পপি ক্যাসিনোকাণ্ডসহ নানা অপরাধে যুক্ত থাকায় কাউন্সিলর পদ থেকে বহিষ্কার হয়েছিলেন। মতিঝিল থানার প্রস্তাবিত সাধারণ সম্পাদক শেখ এনায়েত করিম বাবলুর পরিবার বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, তিনিও একসময় জাতীয়তাবাদী সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংস্থায় যুক্ত ছিলেন। রমনা থানার প্রস্তাবিত সভাপতি এমদাদুল হক এমদাদের বিরুদ্ধে মগবাজার মোড়ে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর বাড়ি দখল করে ফার্মেসি ব্যবসা এবং শাহজাহানপুর থানার প্রস্তাবিত সাধারণ সম্পাদক নুরের নবী ভূঁইয়া রাজুর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে।

১ নম্বর ওয়ার্ডের প্রস্তাবিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন সাজু চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন মামলার আসামি। ৮ নম্বর ওয়ার্ডের প্রস্তাবিত সাধারণ সম্পাদক মাসুম উদ্দিন মাদকাসক্ত। ৯ নম্বর ওয়ার্ডের প্রস্তাবিত সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদুর রহমান চৌধুরী ওয়াহিদের বিরুদ্ধে রয়েছে দিলকুশাসহ বিভিন্ন এলাকায় একাধিক জায়গা দখল ও মাদক কারবারের অভিযোগ। মহানগর দক্ষিণের সভাপতি মন্নাফীর ছেলে ও ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইমতিয়াজ আহমেদ গৌরবের বাল্যবন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার হওয়ার কারণে এ ওয়ার্ডে ওয়াহিদের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। ১০ নম্বর ওয়ার্ডের প্রস্তাবিত সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল হক হিরকের বিরুদ্ধে আছে হত্যা-চাঁদাবাজির মামলা এবং ১১ নম্বর ওয়ার্ডের প্রস্তাবিত সাধারণ সম্পাদক বি এম ফরহাদ অংকুরের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে।

১৩ নম্বর ওয়ার্ডের প্রস্তাবিত সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম ইফতেখার রহমান জয় শীর্ষ মাদক কারবারি। তিনি বেশ কয়েকবার মাদকসহ গ্রেপ্তার হন। চাঁদাবাজি, গাড়ি চুরি, ছিনতাইসহ একাধিক মামলাও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের প্রস্তাবিত সাধারণ সম্পাদক নুরুল বাসার রিমন আওয়ামী লীগকর্মী মিজান হত্যা মামলার হুকুমের আসামি এবং এলাকার জমি-প্লট বিক্রয় ও নির্মাণকাজে চাঁদাবাজিতে জড়িত।

২০ নম্বর ওয়ার্ডে প্রস্তাবিত সভাপতি হাসান মাহমুদ একই ওয়ার্ড যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বিএনপির বিতর্কিত নেতা ও সাবেক কমিশনার চৌধুরী আলমের ক্যাডার ছিলেন। একই ওয়ার্ডে প্রস্তাবিত সাধারণ সম্পাদক শাহজালাল সোহেলের বিরুদ্ধে মাদক কারবারের অভিযোগে শাহবাগ থানায় মামলা রয়েছে। ২১ নম্বর ওয়ার্ডের প্রস্তাবিত সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন শাওন বিএনপি ঘরোনার; তাঁর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রস্তাবিত সভাপতি ইয়ার উদ্দিন পিন্টুর বিরুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধা দিল মোহাম্মদের ছেলে সুমন হত্যা, বংশাল-নয়াবাজারে চাঁদাবাজি এবং প্রস্তাবিত সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন জয়ের বিরুদ্ধে মাদক সেবন, মাদক কারবার, চাঁদাবাজি, ছিনতাই ও ডাকাতির অভিযোগ রয়েছে।

৩৭ নম্বর ওয়ার্ডে প্রস্তাবিত সভাপতি জাবেদ হোসেন মিঠু ও প্রস্তাবিত সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ আহম্মেদ দু’জনই অন্য এলাকার বাসিন্দা। সাবেক যুবদলকর্মী মিঠুর বিরুদ্ধে সন্ত্রাস-চাঁদাবাজির অভিযোগে একাধিক জিডি ও মামলা রয়েছে। ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের প্রস্তাবিত সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম আশরাফ স্থানীয় মোরছালিন হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলার আসামি। ৭২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রস্তাবিত সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন মদ ও জুয়ার আসর থেকে গ্রেপ্তার হয়ে কিছুদিন আগে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও জমি দখলের অভিযোগ আছে। ৭৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রস্তাবিত সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধেও একই রকম অভিযোগ রয়েছে।

স্বজন কোটায়ও পদ 

মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের ‘স্বজন’ কোটায় পদ পাচ্ছেন কয়েকজন। ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি পদে মহানগর দক্ষিণের সভাপতি মন্নাফীর ছোট ছেলে ইমতিয়াজ আহমেদ গৌরবের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। গৌরবের বিরুদ্ধে কাপ্তানবাজারের মুরগির ব্যবসা ও চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণসহ আশপাশের এলাকা দখলে রাখার অভিযোগ রয়েছে। মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবিরের ভাই কাউন্সিলর হাজি মকবুল হোসেনকে লালবাগ থানার সভাপতি এবং ভাগনে কাউন্সিলর হাজি জামিল হোসেনকে ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক পদে রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।

মন্নাফী ও হুমায়ুন একসুরে সমকালকে বলেন, একটা থানা ও ওয়ার্ডে ১০ থেকে ২০ জন করে প্রার্থী ছিলেন। এর মধ্যে দু’জনকে বাছাই করা কঠিন। তার পরও তুলনামূলক জনপ্রিয়, স্বচ্ছ, ত্যাগী এবং মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয়দের নামই প্রস্তাব করা হয়েছে। নাম প্রস্তাবের ক্ষেত্রে মহানগরীর এমপিসহ সংশ্লিষ্টদের মত নেওয়া হয়েছে। এর পরও দু-একটি ক্ষেত্রে ভুলত্রুটি হতে পারে। প্রধানমন্ত্রীসহ কেন্দ্রীয় নেতারা যাচাই-বাছাই করে যাদের নাম চূড়ান্ত করবেন, তাতে আমাদের আপত্তি নেই।

উত্তরেও অভিযোগের শেষ নেই 

দক্ষিণখান থানা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত সভাপতি এ কে এম মাসুদুজ্জামান মিঠুর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও অস্ত্র দিয়ে নেতাকর্মীকে ভয়ভীতি দেখানোর লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে কেন্দ্রীয় দপ্তরে। খিলক্ষেত থানার প্রস্তাবিত সভাপতি এনামুল হকের স্ত্রী জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং শ্যালক সৈকত স্থানীয় যুবদল নেতা। তুরাগ থানার প্রস্তাবিত সভাপতি নুরুল ইসলাম মোল্লা সুরুজ ও প্রস্তাবিত সাধারণ সম্পাদক মুহিবুল হাসান সাংগঠনিকভাবে অদক্ষ হলেও ত্যাগী ও পুরোনো নেতা বাদ দিয়ে তাদের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে।

৪৮ নম্বর ওয়ার্ডে প্রস্তাবিত সভাপতি শফিকুল ইসলাম শামীম বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত। গাড়ি ভাঙচুর, পুলিশের ওপর হামলাসহ সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা রয়েছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার আসামি ও পুলিশের সাবেক উপকমিশনার ওবায়দুর রহমান খানের বোনজামাই সফিউদ্দিন মোল্লা পনুর নাম প্রস্তাব করা হয়েছে ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি হিসেবে। পনু নিজেও জমি দখলসহ কয়েকটি মামলার আসামি। নিজের বোন হত্যায় অভিযুক্ত হয়ে ছয় মাস জেল খেটে জামিনে থাকা শফিউল আজম ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের প্রস্তাবিত সাধারণ সম্পাদক। ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি পদে বিতর্কিত কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর হোসেন যুবরাজের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। বিএনপি নেতা জুম্মন খানের ছেলে যুবরাজের বিরুদ্ধে মাদক কারবার, সোনা চোরাচালান, জমি দখল, ফুটপাতে চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। ৫১ নম্বর ওয়ার্ডে প্রস্তাবিত সাধারণ সম্পাদক আরেফিন সিদ্দিকী যুবদল থেকে আওয়ামী লীগে এসেই পদ পেতে যাচ্ছেন।

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান বলেন, অভিযোগ ওঠায় প্রস্তাবিত কমিটি জমা দেওয়ার আগেই কিছু নাম রদবদল করা হয়েছে। ফলে প্রস্তাবিত কমিটিতে বিতর্কিতদের স্থান পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এর পরও কেন্দ্র চাইলে পরিবর্তন করতে পারে।

samakal