আপনি যদি ভাই–বোন, বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে কোনো মুঠোফোন উপহার পান, তাহলে আপনাকে ওই ফোনের মূল্যের ওপর আয়কর দিতে হবে। শ্বশুরবাড়ি থেকে উপহার পেলেও কর দেওয়া বাধ্যতামূলক।
শুধু মা-বাবা, ছেলে-মেয়ে কিংবা স্বামী-স্ত্রীর কাছ থেকে উপহার পেলে কর দিতে হবে না। তবে কর না দিলেও আয়কর রিটার্নে সেটি দেখাতে হবে। এ ছাড়া অন্য যে কারও কাছ থেকে উপহার পেলে বছর শেষে তা আয়কর রিটার্নে দেখাতে হবে এবং করও দিতে হবে। আবার উপহারদাতাকেও তাঁর আয়কর রিটার্নে উপহার দেওয়ার বিষয়টি জানাতে হবে।
নতুন বাজেটের অর্থবিল পর্যালোচনায় দেখা গেছে, উপহারকে করের আওতায় আনা হয়েছে। গতকাল রোববার এসএমএসি অ্যাডভাইজরি সার্ভিসেস লিমিটেডের ২০২৪ সালের অর্থবিল বিশ্লেষণেও একই কথা বলা হয়েছে। রাজধানীর এক হোটেলে এ নিয়ে তারা এক আলোচনা সভার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এসএমএসি অ্যাডভাইজরি সার্ভিসেসের পরিচালক স্নেহাশীষ বড়ুয়া অর্থবিলের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, বিয়েতে শ্বশুরবাড়ির পক্ষ থেকে সোনা উপহার দেওয়া হলো। এ ধরনের উপহারসহ যেকোনো উপহারকে এখন করের আওতায় আনা হয়েছে। এ ছাড়া যিনি উপহার পেলেন, তাঁকে যেমন রিটার্নে দেখাতে হবে, তেমনি উপহারদাতাকেও নিজের রিটার্নে এই উপহারের কথা উল্লেখ করতে হবে।
সার্বিকভাবে বাজেটে শুল্ক-করের পরিবর্তন সম্পর্কে দ্য ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফআইসিসিআই) সভাপতি ও ইউনিলিভার বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) জাবেদ আখতার বলেন, করপোরেট কর কমেছে। কিন্তু কার্যকর করহার কমছে না। যেমন কোমল পানীয় ও মিষ্টিজাতীয় পানীয় পণ্যের উৎপাদকদের ওপর কর বেড়েছে। এই খাতে বিনিয়োগ হয়েছে। টেলিযোগাযোগ খাতে নতুন করে শুল্ক-কর বসানো হয়েছে। কার্যকর করহার বেড়ে যাওয়ায় বিনিয়োগের পরিবেশের ওপর প্রভাব পড়তে পারে।
একই অনুষ্ঠানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বিসিএস (কর) একাডেমির মহাপরিচালক ইখতিয়ারউদ্দিন মোহাম্মদ মামুন ও ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবদুর রউফ তালুকদার তাঁর বক্তব্য দেন। ইখতিয়ারউদ্দিন মোহাম্মদ মামুন বলেন, সামাজিক ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার জন্য জনগণের আয় পুনর্বণ্টন করা হয়েছে। এ জন্য ব্যবসা–বাণিজ্য সম্প্রসারণে কর সুবিধা দেওয়া হয়।
অর্থবিলে যা আছে
এসএমএসি অ্যাডভাইজরি সার্ভিসেস বলছে, নতুন প্রস্তাব অনুসারে, ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের বার্ষিক করযোগ্য আয় ৪৪ লাখ ৪০ হাজার ১২ টাকার বেশি হলে করভার বেড়ে যাবে। এতে অতিধনীদের ওপর করের চাপ বাড়বে।
কালোটাকা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, এতে অপ্রদর্শিত আয় দেখানোর সুযোগ বাড়বে। বিশেষ প্রতিষ্ঠানের অপ্রদর্শিত আয় ও সম্পদ দেখানো হলে তাদের ব্যালেন্স শিট শক্তিশালী হবে। এতে ওই সব প্রতিষ্ঠানের ঋণ পাওয়া সহজ হবে।
এসএমএসি অ্যাডভাইজরি সার্ভিসেসের মতে, বেভারেজ ও মিষ্টিজাতীয় কোমল পানীয় উৎপাদকদের উৎসে কর দশমিক ৬ শতাংশের পরিবর্তে টার্নওভার কর ৩ শতাংশ করা হয়েছে। এতে এসব প্রতিষ্ঠানের করভার ৫০০ শতাংশ বাড়তে পারে।
নিত্যপণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে উৎসে কর কমানো হয়েছে। এবারের বাজেটে উৎসে কর ২ শতাংশ থেকে ১ শতাংশ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ তালিকায় রয়েছে ধান, চাল, গম, আলু, মাছ, মাংস, পেঁয়াজ, রসুন, মটর, ছোলা, আদা, হলুদ, শুকনা মরিচ, ডাল, ভুট্টা, আটা, ময়দা, লবণ, ভোজ্যতেল, চিনি ইত্যাদি। এ ছাড়া তেল সরবরাহকারী কোম্পানি ও শিল্পের কাঁচামাল সরবরাকারী প্রতিষ্ঠানের উৎসে কর কমানো হয়েছে। এতে ব্যবসার খরচ কমবে বলে মনে করছে এসএমএসি অ্যাডভাইজরি সার্ভিসেস।
prothom alo