‘আজ হোক, কাল হোক, হামজা বাংলাদেশের জার্সিতে খেলবে’—কথাটা এ বছর ফেব্রুয়ারিতেই বলেছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের কোচ হাভিয়ের কাবরেরা।
ইংল্যান্ডে জন্ম নেওয়া হামজা চৌধুরী নিজেও এর আগে তাঁর মাতৃভূমি বাংলাদেশের হয়ে খেলার আগ্রহের কথা বলেছিলেন। সেই সূত্র ধরেই কাবরেরা বলেছিলেন এমন আশার কথা।
এ প্রত্যাশা কতটুকু বাস্তবসম্মত, সেই প্রশ্নও ছিল। তবে এবার বোধ হয়, সেই প্রশ্নের উত্তরও মিলছে। হামজা নিজেই প্রথম আলোর সঙ্গে বলেছেন, তিনি বাংলাদেশের হয়ে খেলবেন, এটা নিশ্চিত।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বিদেশি খেলোয়াড় এ দেশের জাতীয় দলে খেলার ঘটনা নতুন নয়। জামাল ভূঁইয়া, তারিক কাজীরা তো জাতীয় দলের অপরিহার্য সদস্যই হয়ে গেছেন। জামাল এখন অধিনায়কও। তবে হামজাকে নিয়ে বাড়তি আগ্রহ বা আলোচনার কারণ ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলের শীর্ষ পর্যায়ে খেলেছেন, এমন কেউ আগে বাংলাদেশের হয়ে খেলেনি।
২৬ বছর বয়সী হামজা বর্তমানে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের সাবেক চ্যাম্পিয়ন লেস্টার সিটিতে খেলছেন, ক্লাবের অধিনায়কত্ব করেছেন, জিতেছেন এফএ কাপও। খেলেছেন ইউরোপের দ্বিতীয় সেরা ক্লাব টুর্নামেন্ট ইউরোপা লিগ ও এর পরের ধাপ কনফারেন্স লিগেও। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কোনো ফুটবলারই এর আগে এ পর্যায়ে প্রতিনিধিত্ব করেননি।
সেই হামজা এবার নিজের মাতৃভূমি বাংলাদেশের হয়ে খেলতে চান জাতীয় দলে। প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘আমি বাংলাদেশের হয়েই খেলব, এটা নিশ্চিত। ইনশা আল্লাহ, আমার মনে হয় খুব শিগগিরই এ ব্যাপারে আমি একটা ইতিবাচক কিছু বলতে পারব।’
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সঙ্গে এ ব্যাপারে হামজার যে কথাবার্তাও এগিয়েছে, সেটি আগেই জানিয়েছিলেন জাতীয় দল ম্যানেজমেন্ট কমিটির প্রধান ও বাফুফে সহসভাপতি কাজী নাবিল আহমেদ।
প্রথম আলোকে হামজাও বলেছেন, ‘বাফুফের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে, আমার এজেন্টের সঙ্গেও তাদের কথাবার্তা ভালোই এগিয়েছে। আরও কথা হবে। আমাদের মধ্যে যে আলোচনা হয়েছে, সেগুলো খুবই ইতিবাচক।’ তাঁর কথা, ‘বাংলাদেশের হয়ে খেলতে চাই, বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসা থেকেই। বাংলাদেশের হয়ে খেলতে পারলে গর্বিত বোধ করব।’
ফিফার নিয়মানুযায়ী হামজাকে বাংলাদেশের হয়ে খেলতে হলে কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। প্রধান শর্ত তো অবশ্যই হামজাকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব নিতে হবে, নিতে হবে বাংলাদেশের সবুজ পাসপোর্ট।
দ্বিতীয় শর্ত হলো, তাঁর মা–বাবার যেকোনো একজনকে বাংলাদেশের পাসপোর্ট থাকতে হবে, বাবা বা মায়ের না থাকলে দাদা বা দাদি কিংবা নানা বা নানির থাকতে হবে। এরপর ইংলিশ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের ছাড়পত্র নিতে হবে তাঁকে।
এর আগে হামজা ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব-২১ দলের হয়ে খেলেছেন। তবে ফিফার নিয়মানুযায়ী, যেহেতু ২১ বছর বয়সের পর তিনি ইংল্যান্ডের জার্সিতে (বয়সভিত্তিক বা জাতীয় দল) খেলেননি, তাই তাঁর বাংলাদেশের হয়ে খেলতে বাধা নেই। আর অন্য শর্তগুলোও পূরণ করা হামজার ক্ষেত্রে কঠিন কিছু নয়।
হামজার জন্ম ইংল্যান্ডে হলেও তাঁর মা বাংলাদেশি। মায়ের বাড়ি ছিল সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলায়। মায়ের সঙ্গে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন, সিলেটেও ঘুরে গেছেন।
হামজা বাংলাদেশের হয়ে খেলার আগ্রহ প্রকাশের পরই বাফুফে তাঁকে পাওয়ার চেষ্টা শুরু করেছে। হামজার বাবা মোরশেদ দেওয়ান প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘এখানকার (লন্ডনে) বাংলাদেশ হাইকমিশনে এরই মধ্যে হামজার পাসপোর্টের প্রক্রিয়া শুরু করতে গিয়েছিলাম। তবে সেখানে কিছুটা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে।’
তবে তাঁর আশা, এ ব্যাপারে বাফুফে সহায়তার হাত বাড়াবে। দ্রুতই হামজা বাংলাদেশের পাসপোর্ট পেয়ে যাবেন।
এ অপেক্ষা হামজার তো বটেই, বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীদেরও।
prothom alo