বান্দরবানের রুমায় সেনাবাহিনীর অভিযানে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) দুই সন্ত্রাসী নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। গতকাল রোববার পাহাড়ের দুর্গম বাকলাইপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে, নিহত ব্যক্তিরা মূলত কেএনএফের সশস্ত্র শাখা কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মির (কেএনএ) সদস্য। তারা দু’জন থানচির ব্যাংক ডাকাতিতে জড়িত ছিল। তবে তাদের নাম নিশ্চিত করা যায়নি।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রোববার রাত সাড়ে ৩টার দিকে সেনাবাহিনীর টহল দল রুমায় অভিযান চালায়। এ সময় টহল দল একটি এলাকা ঘেরাও করে তল্লাশি করতে থাকে। এ সময় কেএনএর সন্ত্রাসীরা টহল দলের ওপর গুলি ছোড়ে। সেনাবাহিনীও পাল্টা গুলি ছুড়লে দুই সন্ত্রাসী নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়। পরে তল্লাশি চালিয়ে তিনটি অস্ত্র, বিপুল সংখ্যক কার্তুজ, ওয়াকিটকি সেট এবং ইউনিফর্ম উদ্ধার করা হয়। ওই এলাকায় অভিযান এবং সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে তল্লাশি কার্যক্রম চলছে।
বান্দরবানের পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন সমকালকে বলেন, দু’জনের লাশ আমাদের দেওয়া হয়েছে। তাদের পরনে কেএনএফের পোশাক রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, রুমার রেমাক্রীপ্রাংসা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড বাকলাইপাড়া এলাকার থানচি-লিক্রি সড়কের পাশের জঙ্গলে গুলিবিদ্ধ দুটি লাশ পড়ে ছিল। শনিবার রাত থেকে রোববার ভোর পর্যন্ত ওই এলাকায় প্রচণ্ড গোলাগুলি শব্দ শোনা যায়। পরে রোববার সকালে গুলিবিদ্ধ দুটি লাশ জঙ্গলে পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে খবর দেন তারা।
রুমা থানার ওসি মো. শাহজাহান জানান, গুলিতে দুই ব্যক্তি মারা যাওয়ার খবর পেয়েছি। রুমা থানা থেকে ঘটনাস্থল অনেক দূর। থানচি থানা থেকে সেখানে যাতায়াত কিছুটা সহজ। তাই থানচির পুলিশ লাশ উদ্ধার করেছে।
থানচি থানার ওসি মো. জসিম উদ্দীন জানান, ঘটনাটি রুমা থানায় হলেও ঘটনাস্থল কাছে হওয়ায় আমরা লাশ উদ্ধার করেছি। ময়নাতদন্তের জন্য দুপুরে লাশ বান্দরবান সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে কেএনএফ গতকাল তাদের নিজস্ব ফেসবুক পেজে এক পোস্টে দাবি করেছে, ড্রোনের মাধ্যমে অবস্থান শনাক্ত করে বাকলাইপাড়ায় কেএনএফ সদস্যদের ঘিরে ফেলে সেনাসদস্যরা। এর পর উভয় পক্ষে গোলাগুলি হয়।
২ এপ্রিল রুমার সোনালী ব্যাংকে ডাকাতি করে কেনএনএফ। পুলিশের ১০টি এবং আনসার সদস্যের চারটি অস্ত্রও লুট করে নিয়ে যায় তারা। অপহরণ করা হয় ব্যাংকটির ব্যবস্থাপক নেজাম উদ্দিনকে। দু’দিন পর রুমার একটি পাহাড়ি এলাকা থেকে ছাড়া পান তিনি। রুমার ঘটনার পরদিনই থানচির সোনালী ও কৃষি ব্যাংকেও দিনদুপুরে টাকা লুটের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায়ও কেএনএফ জড়িত বলে জানায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। রুমা ও থানচির পর লুট হওয়া অস্ত্র-অর্থ উদ্ধার ও সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব ও পুলিশ সদস্যের যৌথ বাহিনী। অভিযান সমন্বয় করছে সেনাবাহিনী। বিভিন্ন এলাকা থেকে এখন পর্যন্ত ২২ নারীসহ ৭৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। যৌথ বাহিনীর অভিযানে এ পর্যন্ত কেএনএফের তিন সশস্ত্র সদস্য মারা গেছে। আর কেএনএফের গুলিতে মারা গেছে সেনাবাহিনীর করপোরাল রফিকুল ইসলাম।
samakal