ভোট বর্জন সফল করতে বিএনপির নানা কর্মসূচি

ভোট বর্জন সফল করতে বিএনপির নানা কর্মসূচি

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের মতো আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও ‘ভোট বর্জনে’র কৌশল নিয়ে কাজ করছে বিএনপি। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে দেশের প্রতিটি জেলা, মহানগর, থানা-উপজেলায় নেতাকর্মীর সঙ্গে মতবিনিময় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। নির্বাচন বয়কটের পাশাপাশি দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীকে আরও সক্রিয় করে রাজপথে নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। এ লক্ষ্যে আজ বুধবার নারায়ণগঞ্জ মহানগরে প্রথম কর্মিসভা অনুষ্ঠিত হবে।

দলীয় সূত্র জানায়, পর্যায়ক্রমে সারাদেশে একই কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। গত সোমবার রাতে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পাশাপাশি বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয় না– উল্লেখ করে লিফলেট বিতরণ কর্মসূচিও পালন করা হবে। এদিকে নির্বাচনের প্রথম ধাপে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্যকারী ১৮ জনকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। আজ-কালের মধ্যে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানা গেছে। তবে এই প্রার্থীদের অনেকে এটি ‘দলীয় নির্বাচন নয়’ বলে দাবি করছেন, আবার কেউ কেউ ‘জনগণ তাদের চাচ্ছে’– এমন অজুহাত দেখাচ্ছেন। দল থেকে বহিষ্কার হতে পারেন সেই ভয় উপেক্ষা করেই নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন তারা। তাদের অনেকের দলে কোনো পদ নেই। কেউ কেউ বহিষ্কৃত। দলের সিদ্ধান্ত অমান্যকারীদের বিষয়ে জেলা পর্যায়ের নেতারা আজীবন বহিষ্কারের সুপারিশ করে এরই মধ্যে কেন্দ্রে চিঠি পাঠিয়েছেন। স্থানীয় নেতাকর্মীকে এ নির্বাচনে প্রার্থীর পক্ষে প্রচার-প্রচারণাসহ কোনো বিষয়ে ন্যূনতম সম্পৃক্ত না থাকতে বলা হয়েছে।

জানা গেছে, বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটুট রয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। সে হিসেবে আসন্ন উপজেলার সব ধাপের নির্বাচনে যাচ্ছে না তারা। এর পরও কিছু জায়গায় দলের নেতারা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। অনেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে দলের সিদ্ধান্ত মেনে প্রত্যাহার করলেও অনেকে রয়ে গেছেন নির্বাচনী মাঠে। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তাদের বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে দলের সিদ্ধান্ত অমান্যকারীদের বিষয়ে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়, যাতে উপজেলা নির্বাচনের পরবর্তী ধাপে দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করার সাহস কেউ না পান। এমনকি দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নিতে কোনো নেতা যদি প্রার্থীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার চেষ্টা করেন, তাঁর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

দলের নেতাকর্মীরা জানান, উপজেলা নির্বাচন নিয়ে দলের প্রত্যেক বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে বিগত দিনে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সেখানে নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচন বর্জনের এ কর্মসূচি গ্রহণের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়, যা পরে দলের স্থায়ী কমিটির সভায় চূড়ান্ত হয়। তবে সারাদেশে কর্মিসভা ও লিফলেট বিতরণের দিনক্ষণ এখনও নির্ধারণ হয়নি। এ নিয়ে দলের একাধিক টিমও কাজ করছে। স্থায়ী কমিটির পরবর্তী বৈঠকে তা চূড়ান্ত করা হবে।

বিএনপির একজন স্থায়ী কমিটির সদস্য জানান, বৈঠকে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলের কোনো পর্যায়ের নেতাকর্মী যাতে অংশ না নেন, সে বিষয়ে তারা আলোচনা করেছেন। সেখানে নির্বাচনে যাতে দলের কর্মীরাও সম্পৃক্ত না হতে পারেন, সে জন্য তাদের সতর্ক করতে সারাদেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কর্মিসভা করা হবে। শুধু নেতাকর্মী নন, সাধারণ জনগণের মধ্যেও এ নির্বাচনকে ‘অহেতুক এবং সাজানো ও পাতানো’ উল্লেখ করে ভোট প্রদানে নিরুৎসাহিত করা হবে। শান্তিপূর্ণ ওই কর্মসূচির মাধ্যমে বিগত দিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে তাদের মতামতের প্রতিফলন ঘটেনি, সেসব চিত্র তুলে ধরা হবে।

একই সঙ্গে বৈঠকে দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং করণীয় বিষয়ে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠতা তৈরি করতে ধারাবাহিকভাবে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিএনপি নেতারা মনে করছেন, একতরফা দ্বাদশ নির্বাচনেই সবকিছু শেষ হয়ে যায়নি। তাদের আবারও ঘুরে দাঁড়াতে হবে। তাই আবারও নতুন কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে নামতে চাচ্ছে বিএনপিসহ সমমনা দল এবং জোটগুলো। এরই অংশ হিসেবে খুব শিগগির সমমনা দল ও জোটগুলোর সঙ্গে বৈঠক শুরু করবে বিএনপি। ওইসব বৈঠকে আগামী দিনে করণীয় এবং কর্মসূচির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। সেখানে ডান-বাম-মধ্যম আর ইসলামপন্থিদের নিয়ে রাজপথের আন্দোলনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির নেতারা।

এ ছাড়া আগামী ৩০ মে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মাসজুড়ে নানা ধরনের কর্মসূচি পালনের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এপ্রিলের শেষ দিকে এবং মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে একগুচ্ছ কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সূত্র জানায়, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে গত ১৮ এপ্রিল ফরিদপুর জেলার মধুখালীতে একটি মন্দিরে অগ্নিসংযোগ এবং পার্শ্ববর্তী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শৌচাগার নির্মাণের কাজ করার সময় সহোদর দু’জন শ্রমিককে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় এবং ঘটনার নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্তের জন্য দলের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে আগামী ৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক হচ্ছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী। অন্যরা হলেন– চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বিজন কান্তি সরকার, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল এবং ধর্মবিষয়ক সহসম্পাদক অমলেন্দু দাশ অপু।

samakal