স্মরণ করা যায়, এক বছর আগে কাতারের কাছে আরও এক মিলিয়ন টন তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) চেয়েছে বাংলাদেশ। গত মার্চে দোহা সফরকালে কাতারের আমীর শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই বৈঠকে এনিয়ে আলোচনা হয়। ফিরতি সফরে আমীর আজ আসছেন, সঙ্গত কারণেই বিষয়টি বাংলাদেশ উত্থাপন করবে বলে জানানো হয়েছে। তবে এবারের সফরে সৌদি আরবের মতোই কাতারের কাছ থেকে ডেফার্ড পেমেন্টে বা বাকিতে জ্বালানি ক্রয় করা নিয়ে আলোচনা করবে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিষয়টি আলোচনায় আসতে পারে। বাংলাদেশে কাতারের আমীর শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির সফরকে ‘বিনিয়োগের সম্ভাবনা’ হিসেবে দেখছে সরকার। সফরটিকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সফরকালে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমীরের বৈঠক হবে। সফরটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ কাতার হচ্ছে পেট্রোলিয়াম সমৃদ্ধ সর্বোচ্চ গড় মাথাপিছু আয়ের দেশ। শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ। মন্ত্রী বলেন, ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান এবং কূটনৈতিক মধ্যস্থতার কারণে মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী দেশ হিসেবে পরিচিত কাতার। বাংলাদেশের অন্যতম শ্রমবাজারও এটি। আমীরের সফর একটি সম্ভাবনাময় বিনিয়োগের উৎস বলে বিবেচিত হতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি। ড. হাছান মাহমুদ বলেন, কাতারের সঙ্গ বন্ধুত্বের সম্পর্ক অনেক দিনের। ২০২৩ সালে কাতার ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক আবারো সুদৃঢ় হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় কাতারের মহামহিম আমীর বাংলাদেশ সফর করবেন। আমীরের সফরে কাতারকে বাংলাদেশে স্বতন্ত্র ইকোনোমিক জোন করার প্রস্তাব দেয়া হবে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, আমাদের সিরামিক আছে, আমাদের গার্মেন্ট প্রোডাক্ট আছে, আমাদের আরও অনেক এক্সপোর্ট আইটেম আছে, এগুলো রপ্তানি বাড়ানোর জন্য বলবো। এ ছাড়া আমাদের ওষুধ আছে। এগুলো এখনো রপ্তানি হয়, এগুলোর ভলিয়মটা আরও বাড়ানোর জন্য বলবো। বাংলাদেশে যাতে তাদের ইনভেস্টমেন্ট হয়, বিশেষ করে আমাদের ইকোনোমিক জোনে যাতে তাদের ইনভেস্টমেন্ট হয় সেটাও আলোচনা করবো। আমরা বিনিয়োগ চাইবো, কাতার তো নানা ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে পারে, অর্থনৈতিক সেক্টরে বিনিয়োগ করতে পারে। কাতার থেকে জ্বালানি সংগ্রহে গত বছর ১৫ বছর মেয়াদি নতুন চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। চুক্তি অনুসারে, বাংলাদেশ প্রতি বছর অতিরিক্ত এক দশমিক আট এমএমটি এলএনজি পাবে। গ্যাস সরবরাহ ২০২৬ সালে শুরু হবে। উল্লেখ্য, ইতিমধ্যে ১.৮-২.৫ এমটিপিএ এলএনজি সরবরাহে কাতারের সঙ্গে বাংলাদেশের এলএনজি এসপিএ চুক্তি রয়েছে যা ২৫শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ এ স্বাক্ষরিত হয়। ৯ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ তারিখে ডেলিভারি শুরুর পর থেকে ৩১শে মে, ২০২২ পর্যন্ত পেট্রোবাংলা ১৯১টি এলএনজি কার্গোর মাধ্যমে সফলভাবে ১১ দশমিক ৭৪৬ মিলিয়ন মেট্রিক টন এলএনজি পেয়েছে। বাংলাদেশের বর্তমান নেতৃত্বের সঙ্গে কাতারের শীর্ষ নেতৃত্বের ঘনিষ্ঠতা তথা হৃদ্যতার প্রসঙ্গে ঢাকার কর্মকর্তারা বলেন, ২০১৭ সালে আরব লীগ, বিশেষ করে সৌদি আরবের নেতৃত্বে মধ্যপ্রাচ্য ও আরব দেশগুলোর সঙ্গে কাতারের সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটেছিল। ওই সময় কাতারের বিপক্ষে অবস্থান নিতে বাংলাদেশের ওপর প্রবল চাপ তৈরি করেছিল রিয়াদ। কিন্তু বাংলাদেশ সেই চাপে ‘নিরপেক্ষ অবস্থান’ থেকে এক চুলও নড়েনি; বরং ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত কাতারের বিভিন্ন সংকটে যতটা সম্ভব পাশে ছিল বাংলাদেশ। ফলে দেশটি বাংলাদেশের ওপর সন্তুষ্ট। ওই কর্মকর্তার মতে, সেই বিবেচনায় গাল্?ফ কো-অপারেশন কাউন্সিল বা জিসিসিভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী কাতারের শীর্ষ নেতার এ সফর দু’দেশের মধ্যে রাজনৈতিক সহযোগিতার প্রেক্ষাপটেও বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। সফর বাস্তবায়নের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা বলছেন, আমীরের সফরে চুক্তি, সমঝোতা বা ঘোষণা কি আসে না আসে সেটি মুখ্য নয়; বরং এই সময়ে তিনি সফরটিতে রাজি হয়েছেন- সেটাই সিগনিফিক্যান্ট। গত মার্চে ঢাকা-দোহা প্রতিরক্ষা সহযোগিতা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। আমীরের সফরে সেই সহযোগিতার বাস্তব রূপরেখা কী হবে? তা নিয়ে কথা হবে। সমঝোতা মতে, বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের কাতারে কাজ করার কথা। তাছাড়া দেশটির নৌ-বাহিনীর সঙ্গে কোস্ট গার্ডের একটি সমঝোতা স্মারক রয়েছে, যার আওতায় কোস্ট গার্ডের সদস্যরা কাতারে কাজ করছেন। সর্বোচ্চ পর্যায়ের এই সফরে মোটাদাগে দ্বিপক্ষীয় বোঝাপড়া আরও পোক্ত হবে বলে ধারণা মিলেছে।
কাতারের আমীর আসছেন আজ
manabzamin