জেলা ক্রিকেটে হচ্ছেটা কী

জেলা ক্রিকেটে হচ্ছেটা কীছবি- সংগৃহীত

সমকাল : আরিফ হোসেন, আপনারা তো বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন ১৫ রানে অলআউট হয়ে।
আরিফ : ‘না ভাই, আরও বিশ্বরেকর্ড আছে; ২০১৮ সালে সিরাজগঞ্জের কাছে ১১ রানে অলআউট হয়েছিল পঞ্চগড় জেলা। সেটা বিশ্বরেকর্ড।’

সংকোচহীন, সাবলীল জবাব পঞ্চগড় জেলা ক্রিকেট দলের অধিনায়কের। তাঁর কথা শুনে যে কারও মনে হতে পারে, খারাপ খেলার বিশ্বরেকর্ডেও কৃতিত্ব রয়েছে। এ কারণেই কি রেকর্ডবুক থেকে ১১ রানে অলআউটের ঘটনা চট করে সামনে নিয়ে এলেন? এ থেকে একটা জিনিস পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে– ভালো নেই দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের ক্রিকেট। ক্রিকেটের পেশাদার যুগেও প্রাচীন মানসিকতায় পড়ে রয়েছেন তারা, সেই পুরোনো স্লোক নিয়ে– ‘হার-জিত বড় কথা নয়, অংশগ্রহণই আসল।’

জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে পঞ্চগড় জেলার ১৫ বা ১১ রানে অলরাউট হওয়া বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। এই পারফরম্যান্সে প্রকাশ পেয়েছে জেলা পর্যায়ের ক্রিকেটের দুর্বলতা। জেলা পর্যায়ে ঠিকভাবে ক্রিকেট খেলে কিনা, তা দেখার লোক নেই। আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা গড়া হলেও সক্রিয় না। বিসিবি থেকেই ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়নি। তাই পঞ্চগড়ে লিগ না হলেও জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ খেলে প্রতিবছর।

এ বছর বরগুনা ভেন্যুতে দ্বিতীয় টায়ারে আঞ্চলিক পর্যায়ে খেলছে তারা। গাইবান্ধার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে উতড়ে গেলেও কিশোরগঞ্জের কাছে অলরাউট হয় ১৫ রানে। ১১ জন মিলে করেন ১১ রান। বাকি চার রান অতিরিক্ত। এই লজ্জার রেকর্ড গড়া পঞ্চগড় জেলা দলের অধিনায়ক আরিফের কাছে খারাপ খেলার প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘১৫ রানে অলআউট হওয়া দুর্ঘটনা বলতে পারেন। এটা খেলারই অংশ। দুর্ঘটনাবশত এটা হয়ে গেছে। আমাদের খুব বেশি ভালো খেলোয়াড় নেই। এ ছাড়া পঞ্চগড় জেলা প্রত্যন্ত অঞ্চল। সেন্টার উইকেট তিন বছর হলো পরিচর্যা করা হয় না। জেলায় কোনো লিগ হয় না। এগুলো দেখার কেউ নেই। স্টেডিয়ামে একটা মাছিও থাকে না। খেলোয়াড় কোথায় পাব? জেলার কোচ কোনো কিছু করেন না। আমাকে দায়িত্ব দেওয়ায় গুছিয়ে একটা দল নিয়ে এসেছি। একটু একটু করে আমরা উন্নতি করছি। সামনে ভালো করব।’

পঞ্চগড় জেলা দলে কোনো কোচ নেই। বিসিবি গেম ডেভেলপমেন্ট থেকে জেলা কোচ রাখা হলেও জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে সম্পৃক্ত করে না জেলা ক্রীড়া সংস্থা। কোচ কাজী জাহিদুর রহমান কাজ করেন স্কুল ক্রিকেট নিয়ে। জেলা স্টেডিয়ামে স্কুল ক্রিকেটের খেলা থাকায় জেলা দল ঠিকমতো অনুশীলন করতে পারেনি বলে জানান অধিনায়ক ও দল নির্বাচক আরিফ।

কিছুটা অনুযোগের সুরে তিনি বলেন, ‘কিশোরগঞ্জ দলে ঢাকার প্রথম বিভাগে খেলা ১১ জন রয়েছে। প্রিমিয়ার খেলা ক্রিকেটারও আছে। আমাদের এত উঁচুমানের খেলোয়াড় নেই। আমাদের সারা বছর কোনো লিগ হয় না। এটা কেউ দেখার নেই। জেলা ক্রীড়া সংস্থারও কিছু করার নেই। কারণ অর্থ ছাড়া কিছু হয় না।’

৬ মার্চ বরগুনা জেলায় অনুষ্ঠিত ম্যাচটিতে কিশোরগঞ্জ জেলা নির্ধারিত ৫০ ওভারে ২৩৬ রান করে পাঁচ উইকেটে। ২৩৭ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে পঞ্চগড় জেলা গুটিয়ে গেছে ১৫ রানে। এই বিপর্যের কারণ জানতে চাওয়া হলে দলের ম্যানেজার এটিএম হাসানুজ্জামান পলাশের উত্তর ছিল বিস্ময়কর, ‘করার কিছু নেই ভাই। এটা হতেই পারে। ক্রিকেট অনিশ্চয়তার খেলা। আপনি জানেন, ভারত ৩৬ রানে অলআউট হয়েছে। বাংলাদেশ দলও তো ৪৮ রানে অলআউট হয়েছে।’

জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে দুই স্তরে খেলা হয়। প্রথম এবং দ্বিতীয় স্তরে বেশ কিছু ম্যাচে ৫০ রানে অলআউটের ঘটনা আছে। এভাবেই চলছে বছরের পর বছর। প্রান্তিক পর্যায়ের এই ক্রিকেট নিয়ে জানতে চাওয়া হলে বিসিবি টুর্নামেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি বলেন, ‘একটি দল আড়াইশ রান করল, সেখানে প্রতিপক্ষ ১৫ রানে অলআউট হওয়ায় বিস্ময়কর। আমি অবাকই হয়েছি। তবে ঢাকা থেকে বসে জেলার ক্রিকেট পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব না। এ ক্ষেত্রে আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থাকে সক্রিয় হতে হবে। জেলার ভালো খেলোয়াড় নিয়ে দল গঠন থেকে অনেক কিছু করার সুযোগ আছে তাদের।’

samakal