প্রবাসীদের কাছ থেকে রেমিট্যান্স সংগ্রহের জন্য সরকারের চালু করা আকর্ষণীয় মুনাফার তিনটি বন্ডেরই নিট বিক্রি কমে গেছে। ফলে ওইসব বন্ডের আগের দেনা শোধ করতে হচ্ছে অন্য খাত থেকে ঋণ করে। তিনটি বন্ডেই প্রবাসীদের বিনিয়োগের নীতিমালা শিথিল করা হয়েছে। দুটি ডলার বন্ডের সুদহার বাড়ানো হয়েছে। এরপরও প্রবাসীরা এসব বন্ডে বিনিয়োগের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন না। বৈশ্বিক মন্দায় প্রবাসীদের আয় কমে যাওয়া এবং খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণেই মূলত বন্ডে বিনিয়োগ কমেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সূত্র জানায়, এসব বন্ডে বিনিয়োগ কমায় ডলারের প্রবাহ কমবে। এতে ডলার বাজারে ঘাটতি থেকে যাবে। তবে সম্প্রতি দুটি ডলার বন্ডের সুদহার বাড়ানো হয়েছে। বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এছাড়া এগুলোয় বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার জন্য আরও বেশকিছু সুবিধা দেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড গত অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বরে প্রবাসীরা বিনিয়োগ করেছেন ৩৩৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে বিনিয়োগ করেছেন ৩৭৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা। গত অর্থবছরের ওই সময়ে মূল অর্থ পরিশোধ করা হয়েছিল ১ হাজার ৯ কোটি টাকা, চলতি অর্থবছরের একই সময়ে পরিশোধ করা হয়েছে ১ হাজার ১২৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। সুদ পরিশোধ গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৭৯৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা, চলতি অর্থবছরের একই সময়ে পরিশোধ করা হয়েছে ৮২২ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এই বন্ডে নতুন বিনিয়োগের অর্থ দিয়ে আগের বিনিয়োগের অর্থ মুনাফাসহ পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে অন্য খাত থেকে সরকারের গৃহীত ঋণের টাকায় এ খাতের গ্রাহকদের অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে। ফলে গত অর্থবছরে ওই সময়ে এই বন্ডে নিট বিনিয়োগ নেতিবাচক ছিল ৬৭৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরে তা আরও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৪৫ কোটি ৩০ লাখ টাকায়। অথচ আগে এ বন্ডে পরিশোধের চেয়ে বিনিয়োগ বেশি হতো। কারণ, এতে আকর্ষণীয় মুনাফা দেওয়া হয়। পাঁচ বছর মেয়াদ শেষে মুনাফার হার ১২ শতাংশ।
ডলার প্রিমিয়াম বন্ডে গত অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বরে প্রবাসীরা বিনিয়োগ করেছিলেন ৬৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা, চলতি অর্থবছরের একই সময়ে বিনিয়োগ করেছেন ২০ কোটি ৭০ লাখ টাকা। গত অর্থবছরের মূল অর্থ পরিশোধ করা হয়েছিল ৬৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা, চলতি অর্থবছরের একই সময়ে পরিশোধ করা হয়েছে ৭৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা। সুদ পরিশোধ গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা, চলতি অর্থবছরের ওই সময়ে তা ছিল ১৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ এ বন্ডেও প্রবাসীদের বিনিয়োগ থেকে আগের দেনা পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে গত অর্থবছরের ওই সময়ে প্রবাসীদের বিনিয়োগ থেকে আগের দেনা পরিশোধ করেও ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা উদ্বৃত্ত ছিল। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা ৫৪ কোটি ২০ লাখ টাকা ঘাটতি হয়েছে। ফলে ওই অর্থ অন্য খাত থেকে ঋণ করে পরিশোধ করতে হচ্ছে। তিন বছর মেয়াদি এ বন্ডে মেয়াদ শেষে মুনাফার হার সাড়ে ৭ শতাংশ।
ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডে গত অর্থবছরের আলোচ্য সময়ে প্রবাসীদের বিনিয়োগ ছিল ১৩৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা, চলতি অর্থবছরের একই সময়ে বিনিয়োগ ২০০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। গত অর্থবছরে ওই সময়ে মূল অর্থ পরিশোধ করা হয়েছিল ৩৭৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা, চলতি অর্থছরের একই সময়ে পরিশোধ করা হয়েছে ৩৭০ কোটি ৯০ লাখ টাকা। সুদ পরিশোধ গত অর্থবছরের ওই সময়ে ছিল ৭১ কোটি টাকা, চলতি অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৮২ কোটি ৯০ লাখ টাকা। ফলে এ বন্ডে প্রবাসীদের নতুন বিনিয়োগ থেকে আগের অর্থ পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। অন্য খাত থেকে ঋণ করে অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে। গত অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বরে নিট বিনিয়োগে ঘাটতি ছিল ২৩৮ কোটি টাকা, চলতি অর্থবছরের একই সময়ে ওই ঘাটতি কিছুটা কমে ১৭০ কোটি ৪০ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। তিন বছর মেয়াদি এ বন্ডের মুনাফার হার মেয়াদ শেষে সাড়ে ৬ শতাংশ।
তিনটি বন্ডে চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বরে মোট ৯৬৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা ঘাটতি হয়েছে, গত অর্থবছরের একই সময়ে এ ঘাটতি ছিল ৯০৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
এসব বন্ড প্রবাসীরা বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সহযোগী ব্যাংক থেকে কিনতে পারেন। সম্প্রতি সরকার এসব বন্ডে বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এর আগে এসব বন্ডে বিনিয়োগ অনেক বেড়েছিল। তখন বিনিয়োগ কমাতে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছিল। কিন্তু এখন বিনিয়োগ একেবারেই নেতিবাচক পর্যায়ে চলে গেছে। এগুলোয় বিনিয়োগের ফলে একদিকে বাজারে ডলারের প্রবাহ বাড়ত, অন্যদিকে রেমিট্যান্সও বাড়ত। এতে রিজার্ভে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছিল।
Jugantor