কর্নেল (অব:) মোহাম্মদ আবদুল হক পিএসসি :
প্রথম পর্ব
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অসংখ্য মানুষের চরম আত্মত্যাগ, অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট, নিষ্ঠুর, নৃশংস, দুঃসহ নির্যাতনের ইতিহাস। এমন অসংখ্য ঘটনা আছে যা হয়তো অনেকে জানেন না। তার একটি হলো ‘লাল ফিতা উড়িয়ে দাও’। এ নিবন্ধে সে ঘটনা সংক্ষিপ্তাকারে তুলে ধরা হয়েছে।
১৯৭১ সালে পাকিস্তান সামরিক সরকারের নীতিনির্ধারণী বডির মধ্যে এমন একজন সিনিয়র দূরদর্শী বাঙালি সামরিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন, যিনি দেশ নিয়ে, আমাদের অধিকার নিয়ে, পরাধীনতার গ্লানি থেকে দেশকে মুক্ত করতে ঝুঁকি সত্যেও পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। তিনি অনেকের আগে বুঝতে পেরেছিলেন- ইয়াহিয়া ও কুচক্রী ভুট্টো গং পাকিস্তানের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে গণহত্যার ছক এঁকে সময় ক্ষেপণ করছিল। রাজনীতিকদের কেউ কেউ তা বুঝে উঠতে না পারলেও সুদক্ষ সামরিক নেতা ও বিশেষজ্ঞ হিসেবে তিনি ও নিকটস্থ সহকর্মীরা তা স্পষ্টভাবে বুঝতে পেরেছিলেন। আর সামরিক পোশাকের দুঃসাহসী নিখাদ দেশপ্রেমিক সেই ব্যক্তিত্ব ছিলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহমুদুর রহমান মজুমদার। যিনি এম আর মজুমদার নামে পরিচিত।
বাংলাদেশ সৃষ্টির পেছনে আমাদের সেনাবাহিনীর অনবদ্য অবদানে অনন্য ও অসাধারণ ভূমিকা রেখেছেন মরহুম ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম আর মজুমদার। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে চট্টগ্রামের সামরিক আইন প্রশাসক, ফর্মেশন কমান্ডার, স্টেশন কমান্ডার, ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টারের কমান্ড্যান্ট ছিলেন। সে সময়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনী তথা সামরিক সরকারের মধ্যে তিনি ছিলেন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। একইসাথে পূর্ব পাকিস্তানে জ্যেষ্ঠতম বাঙালি সামরিক অফিসার। ফর্মেশন কমান্ডার হিসেবে তিনি সরকারের অনেক অতি গোপনীয় তথ্য জানতে পারতেন। শুরুতে পাকিস্তানিরা এটি টের পায়নি বা বুঝতে পারেনি; ফলে তত দিনে তিনি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের প্রায় প্রস্তুতি পর্যন্ত নিয়ে ফেলেছিলেন। তাই মুক্তিযুদ্ধের প্রাথমিক বা প্রস্তুতি পর্যায়ের তিনি হলেন অন্যতম পরিকল্পনাকারী। দেশের স্বার্থে নিজেকে উৎসর্গ করার মতো অত্যন্ত ঝুঁঁকিপূর্ণ সব দুঃসাহসিক কাজ তিনি নির্দ্বিধায় করেছেন। তিনি ১৯৭১ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে পশ্চিম পাকিস্তানি স্বল্পসংখ্যক সামরিক উপস্থিতির সময় তাদের বন্দী বা হত্যা করে স্বাধিকার অর্জনের ভাবনা, সেনাবাহিনীর ঊর্র্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অমান্য করে ‘সোয়াত’ জাহাজ থেকে অস্ত্র খালাস না করে বিঘœ সৃষ্টি ও বিদ্রোহের পরিকল্পনা করার কারণে শুধু অপসারিত হননি, এর জন্য তাকে অত্যন্ত কঠিন মাশুল দিতে হয়। তার উপর এমন অকল্পনীয়, অবর্ণনীয়, নির্মম, নিষ্ঠুর ও নৃশংস অত্যাচার চালানো হয়; যা আমেরিকার দ্বারা গোয়ান্তানামো বে কারাগারের বন্দী নির্যাতনকেও যেন হার মানায়।
১৯২২ সালের ২৫ ডিসেম্বর তৎকালীন উপমহাদেশের কাছাড় জেলার কাঠিহড়া থানার চণ্ডিনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এম আর মজুমদার। তার পৈতৃক নিবাস বাংলাদেশের সিলেট জেলার জকিগঞ্জ উপজেলায় কসকনকপুর ইউনিয়নের বলরামের চক গ্রামে। বাবার নাম ওয়াজেদ আলী মজুমদার। বাবা ওয়াজেদ আলী মজুমদারের ছিল ছয় ছেলে। বড় ছেলে সাজ্জাদ মজুমদার ছিলেন ডেপুটি কমিশনার; ব্রিগেডিয়ার মজুমদার ছিলেন তার তৃতীয় সন্তান।
স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা শেষে সিলেট এমসি কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। শিক্ষাজীবন শেষে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে দ্বিতীয় গ্র্যাজুয়েট কোর্সে যোগদান করেন। পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে প্রশিক্ষণ শেষে ১৯৪৯ সালের ৩০ জুলাই পাঞ্জাব রেজিমেন্টে কমিশন পান। পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে তিনি একজন সুদক্ষ পেশাদার, চৌকস অফিসার হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন। ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধে শিয়ালকোট সেক্টরে দুর্ধর্ষ সমরনায়ক হিসেবে বীরত্বের সাথে যুদ্ধ পরিচালনা করেন এবং গুরুতর আহত হন। অসম সাহসিকতার জন্য রাষ্ট্রীয় সম্মানসূচক ‘টিকিউ’ (তগমায়ে কায়েদে আজম) পদক লাভ করেন। ১৯৬৯ সালে ব্রিগেডিয়ার পদে পদোন্নতি পান।
১৯৭১ সালে তিনি চট্টগ্রামের ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টারের (ইবিআরসি) কমান্ড্যান্ট হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। ব্রিগেডিয়ার মজুমদার ছিলেন সে সময়ে পূর্ব পাকিস্তানের সর্বজ্যেষ্ঠ বাঙালি সেনাকর্মকর্তা। একমাত্র বাঙালি ফর্মেশন কমান্ডার। জ্যেষ্ঠ সামরিক কমান্ডার হিসেবে পাকিস্তান সরকারের অনেক অতি গোপনীয় তথ্য জানতে পারেন। তা ছাড়া পশ্চিম পাকিস্তানে অবস্থানরত সিনিয়র বাঙালি অফিসার লে. কর্নেল মুহাম্মদ খলিলুর রহমানও (পরবর্তীতে মেজর জেনারেল ও মহাপরিচালক বাংলাদেশ রাইফেলস) অনেক তথ্য তাকে জানাতেন। যা তিনি জেনারেল ওসমানীর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর সাথে শেয়ার করতেন। সেনা কর্তৃপক্ষের অগোচরে পাকিস্তানি ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা সংক্রান্ত অতি গোপনীয় চিঠির একটি কপি তার হস্তগত হয়; যা তিনি বঙ্গবন্ধুর কাছে পাঠিয়ে দেন। ফলে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান সামরিক সরকারের গোপন পরিকল্পনা অবহিত হয়ে সহজে নিজস্ব পরিকল্পনা প্রণয়ন করতেন। মরহুম এম আর মজুমদারের নিজস্ব বর্ণনা- ‘পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে ছয় দফা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার জন্য ঢাকায় আসেন। শেখ মুজিবের সাথে কয়েক দফা বৈঠক করেন তিনি। ইয়াহিয়া ছয় দফা মেনে নিতে মৌখিকভাবে রাজি হন। করাচি ফেরার পথে ঢাকা বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘শেখ মুজিবই পাকিস্তানের ভাবী প্রধানমন্ত্রী’। পাঞ্জাব রেজিমেন্টে তথা পশ্চিম পাকিস্তানে আমার দীর্ঘ ১৮ বছর চাকরির অভিজ্ঞতা থেকে এ কথা বিশ্বাস করতে পারলাম না। ভাবলাম, ২৩ বছর ধরে বাঙালিদের ওপর প্রত্যক্ষভাবে আধিপত্যকারী পশ্চিম পাকিস্তানি আমলা ও সেনাকর্মকর্তারা খাঁটি বাঙালি শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় দফাভিত্তিক একচ্ছত্র শাসন কখনো মেনে নেবে না! করাচি ফিরে ইয়াহিয়া খান ভুট্টোর আমন্ত্রণে সপারিষদ সিন্ধু প্রদেশের লারকানা শহরে গেলেন। আমার মনে সন্দেহ হলো যে, লারকানায় ভুট্টোর রাজকীয় আতিথেয়তার আড়ালে নিশ্চয়ই বাঙালি ও মুজিববিরোধী কোনো অভিযানের ষড়যন্ত্র হচ্ছে।
লে. কর্নেল খলিলুর রহমান এ সময় জিএইচকিউ ট্রেনিং উইংয়ে জিএসও-১ ছিলেন। তিনি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে খুবই আগ্রহী ও উদ্বিগ্ন ছিলেন। তার সাথে টেলিফোনে প্রায়ই কথাবার্তা হতো। তিনি আমাকে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সাধারণত জিএইচকিউতে আসেন না। অথচ লারকানা থেকে ফিরে ইয়াহিয়া খানকে দু’-তিন দিন ধরে জিএইচকিউতে দেখতেছি। এখানে জেনারেল হামিদ, পিরজাদা, গুল হাসান ও ওমরকে নিয়ে রুদ্ধ কামরায় মিটিং করেছেন। নিশ্চয়ই ওরা কিছু একটা ঘোঁট পাকাচ্ছে।
এ অবস্থার মধ্যে একদিন জিএইচকিউ থেকে দীর্ঘ দুই পাতার একটি টপ সিক্রেট চিঠি পেলাম। চিঠি পড়ে মর্মাহত হলাম। চিঠিতে লেখা হয়েছে, আওয়ামী লীগের ছয় দফার ভিত্তিতে প্রতিরক্ষা বাহিনীতে সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব মেনে নিলে বাঙালির প্রাধান্যে এটি একটি তৃতীয় শ্রেণীর সেনাবাহিনীতে পরিণত হবে। বিস্তৃতভাবে এসব কথা বর্ণনার পর উপসংহারে লেখা হয়েছে, এমতাবস্থায় শেখ মুজিবকে কিছুতেই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে দেয়া যায় না।
তাহলে আমরা আর পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে থাকব না, আমরা স্বাধীন হবো। প্রয়োজনে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনব- এ ছিল আমার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া। আমার একান্ত বিশ্বস্ত চিফ ইন্সট্রাক্টর লে. কর্নেল মুজিবর রহমান চৌধুরীকে আমার অফিসে ডেকে পাঠালাম। তাকে চিঠি পড়তে দিলাম। এ নিয়ে দু’জনে আলোচনা করলাম। ঠিক হলো, কর্নেল (অব:) এম এ জি ওসমানীর মাধ্যমে শেখ মুজিবকে যথাশিগগির বিষয়টি অবহিত করতে হবে’।
অতঃপর ব্রিগেডিয়ার মজুমদার পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থিত সামরিক বাহিনী, ইপিআর, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর চাকরিরত ও অবসরপ্রাপ্ত বাঙালি সদস্যদের একটি তালিকা প্রণয়ন করেন। যাদের নিয়ে মাত্র কয়েক শ’ পাকিস্তানি সেনা (জানুয়ারি ১৯৭১) বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও তাদের ওপর আক্রমণ করার দুঃসাহসিক এক পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন এবং সেটি অনুমোদনে কর্নেল ওসমানীর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে পাঠান। কিন্তু বঙ্গবন্ধু বৃহত্তর বিবেচনায় তা অনুমোদন করেননি।
এ প্রসঙ্গে এম আর মজুমদারের বক্তব্য হলো- ‘ওসমানী সাহেবকে টেলিফোনে সিলেটি ভাষায় কিছু ইঙ্গিত দিয়ে যত শিগগির সম্ভব চট্টগ্রাম শহরে লে. কর্নেল রবের বাসায় গোপনে আসতে বলি। পূর্ব পাকিস্তানে তখন পূর্ব পাকিস্তানি ও পশ্চিম পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনীর শক্তি ও অবস্থানের মৌখিক হিসাব কষতে বসলাম আমরা। দেখা গেল, ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ইপিআর, পুলিশ, আনসার মিলে তাৎক্ষণিক স্ট্রাইকিং ফোর্স পশ্চিম পাকিস্তানিদের চেয়ে আমাদের সাত-আটগুণ বেশি। অতএব, স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনার জন্য অবিলম্বে আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। দু’দিন পর ওসমানী সাহেব এলেন। তাকে আমি জিএইচকিউ থেকে পাওয়া টপ সিক্রেট চিঠির বিষয়বস্তু জানালাম। বললাম, ইয়াহিয়া, মুজিব, ভুট্টো বৈঠক ও কাদা ছোড়াছুড়ি করে একে অন্যকে খেপিয়ে সংসদ অধিবেশন বিলম্বিত করার আড়ালে বাঙালিদের সামরিক বাহিনী দিয়ে দমন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে জিএইচকিউ। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে রিইনফোর্সমেন্ট আনার আগেই অকস্মাৎ আমাদের আক্রমণ করতে হবে।
সমস্যা সমাধানে রাজনৈতিক নেতা ও সামরিক নেতার মধ্যে পার্থক্য হলো- প্রথমজন আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধান চান; আর দ্বিতীয়জন চান যত দ্রুত সম্ভব শত্রুকে ঘায়েল করে সমাধান। তবে একাত্তর সালের জানুয়ারির পর থেকে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ আলোচনার মাধ্যমে শুধু সময়ক্ষেপণ করছিল সামরিক প্রস্তুতি নেয়ার জন্য, প্রকৃতপক্ষে এটি ছিল একটি সামরিক সমস্যা, যা সামরিক উপায়ে সমাধান করতে হয় এবং এটি ব্রিগেডিয়ার মজুমদার একজন সামরিক নেতা হিসেবে বুঝতে পেরেছিলেন। তাই তিনি জেনারেল ওসমানীর মাধ্যমে তা বঙ্গবন্ধুর কাছে তুলে ধরেছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে কূটকৌশলে ইয়াহিয়া খান ২৫ মার্চ পর্যন্ত আলোচনার নাম করে এমনভাবে ব্যতিব্যস্ত রেখেছিলেন, বঙ্গবন্ধু যাতে জেনারেল ওসমানী বা তার রাজনৈতিক সহকর্মী কারোর সাথে একান্ত আলোচনা বা মতবিনিময়ের সময় না পান।
২৫ মার্চ অপারেশন সার্চলাইটের মাধ্যমে গণহত্যা চালানোর জন্য ‘সোয়াত’ নামক জাহাজে করে বিপুল অস্ত্র ও গোলাবারুদ পাকিস্তান থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছে মার্চের মাঝামাঝি। সে সময়ে বাঙালিদের তুলনায় পাকিস্তানি সেনাসংখ্যা ছিল একেবারে কম। এ বিশাল অস্ত্রভাণ্ডার যাতে খালাস করা না হয়; সে জন্য এম আর মজুমদার সময়ক্ষেপণ করছিলেন, যা পাকিস্তানিরা বুঝতে পেরেছিল। ফলে ২৪ মার্চ পাক সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল (কিউএমজি) আবু ওসমান মিঠা খান চট্টগ্রামে চলে আসেন। এম আর মজুমদারকে নিয়ে বন্দরে আসেন। মেজর জেনারেল মিঠা এম আর মজুমদারকে অস্ত্রভাণ্ডার খালাসে চাপ দিলে তিনি জানান, ‘সোয়াত’ থেকে এখন অস্ত্রশস্ত্র নামাতে গেলে শ্রমিক ও জনতার সাথে তাদের সংঘর্ষ অনিবার্য। এ ক্ষেত্রে উত্তেজিত জনতা যদি জেটি বিধ্বস্ত করে ফেলে বা তাতে অগ্নিসংযোগ করে, তাহলে খাদ্যশস্যসহ হাজার হাজার টন মালামাল বিনষ্ট হবে। উত্তরে জেনারেল মিঠা খান চরম উত্তেজিত হয়ে চিৎকার করে ব্রিগেডিয়ার মজুমদারকে বলেন, ‘আগুন যদি সারা দেশকে গ্রাস করে এবং কর্ণফুলী নদী যদি রক্তে ভেসেও যায়, তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আমি চাই আমার অস্ত্র খালাস হোক’। এরপরও এম আর মজুমদার আদেশ পালন করেননি।
নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর গুলি বর্ষণে অস্বীকৃতি ও এমভি সোয়াতের বিপুল অস্ত্র ও গোলাবারুদ খালাসের কাজের আদেশ তিনি কৌশলে অমান্য করেন। এম আর মজুমদারের ভাষায়- ‘আমার কাছে খবর এলো যে প্রায় ১০ হাজার টন অ্যামুনেশন নিয়ে এমভি সোয়াত চট্টগ্রাম পোর্টে আসছে, ডকিং করবে। আমি সাথে সাথে চট্টগ্রাম পোর্টের শ্রমিক সমিতির সভাপতি মান্নান সাহেবকে ডাকলাম। তাকে বললাম, ‘আপনি এই জাহাজ আনলোডিং করতে দেবেন না’। তিনি বললেন, ‘আপনি কোনো চিন্তা করবেন না, যা লেবার আছে ওদের সরিয়ে দেবো।’ আমি যত দিন চট্টগ্রাম ছিলাম অর্থাৎ ২৪ মার্চ পর্যন্ত সোয়াত থেকে অ্যামুনেশন আনলোড করতে দেইনি।’
Nayadiganta