বাড়ল গ্যাসের দাম, বাড়ছে বিদ্যুতেরও

বাড়ল গ্যাসের দাম, বাড়ছে বিদ্যুতেরও 

বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্রের গ্যাসের দাম ৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেড়েছে। এ ছাড়া শিল্প কলকারখানার জন্য নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদনে (ক্যাপটিভ) ব্যবহৃত গ্যাসের দাম ২ দশমিক ৫ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। গতকাল মঙ্গলবার নির্বাহী আদেশে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে দাম ঘোষণা করে জ্বালানি বিভাগ। নতুন দাম চলতি মাস থেকে কার্যকর হবে। তবে বাসাবাড়ি ও পরিবহনে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়নি। দাম বৃদ্ধিতে মাসে পেট্রোবাংলার আয় বাড়বে প্রায় ৮৬ কোটি টাকা।

গ্যাসের দাম বাড়ানোয় বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বাড়বে। লোকসান কমাতে বিদ্যুতের দামও প্রতি ইউনিট ৩০ থেকে ৭০ পয়সা বাড়াবে সরকার। দুই-এক দিনের মধ্যে এ ঘোষণা আসবে, যা কার্যকর হবে মার্চ মাস থেকে। অর্থাৎ রমজানের আগেই বিদ্যুতের দাম বাড়ছে। চলতি বছর আরও একাধিকবার বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়বে।
গ্যাসের দাম বাড়ানোয় কারখানায় উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, এতে রপ্তানি কমবে।

গত বছর গ্যাসের দাম বাড়ানোয় সব শিল্পকারখানা বড় ধরনের চাপে পড়ে। এদিকে বাড়তি দামেও গ্যাস পাচ্ছে না কারখানাগুলো।
সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য প্রতি ইউনিট (এক ঘনমিটার) গ্যাসের বর্তমান দাম ১৪ টাকা। নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪ টাকা ৭৫ পয়সা। ক্যাপটিভে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা ৭৫ পয়সা করা হয়েছে। জ্বালানি বিভাগ এই বৃদ্ধিকে মূল্য সমন্বয় দাবি করে জানিয়েছে, এতে চলতি অর্থবছরে ভর্তুকি ৫৭০ কোটি টাকা কমবে।

দেশে গ্যাস ব্যবহারকারীদের ৮টি গ্রাহক শ্রেণি রয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৩৭ শতাংশ, শিল্পে ২৩ শতাংশ, ক্যাপটিভ বিদ্যুতে ১৮ শতাংশ, গৃহস্থালিতে ১০ শতাংশ, সার উৎপাদনে ৭ শতাংশ, সিএনজিতে ৪ শতাংশ এবং বাণিজ্যিক ও চা শিল্পে ১ শতাংশ গ্যাস ব্যবহৃত হয়। সর্বশেষ গত বছরের ১৮ জানুয়ারি নির্বাহী আদেশ জারি করে গ্যাসের দাম গড়ে ৮২ শতাংশ বাড়ানো হয়। ওই সময় সর্বোচ্চ ১৭৯ শতাংশ বাড়ানো হয় বিদ্যুৎ খাতে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম। সেবারও আবাসিকে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়নি।

দেশে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রর উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ১১ হাজার মেগাওয়াট। ক্যাপটিভ বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় তিন হাজার মেগাওয়াট।

শিল্পে খরচ বাড়বে
গত বছর গ্যাসের দাম বৃদ্ধির কারণে টেক্সটাইলসহ সব শিল্পকারখানা বড় ধরনের চাপে পড়ে। বাড়তি দামেও গ্যাস পাচ্ছে না কারখানাগুলো। গ্যাস সংকটে অনেক কারখানার উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে। এর মধ্যে ক্যাপটিভে আরেক দফা দাম বৃদ্ধি টেক্সটাইলসহ অন্য শিল্পকে আরও চাপে ফেলবে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিল অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) পরিচালক খোরশেদ আলম। তিনি বলেন, গত বছরের গ্যাসের দাম বাড়ানোর কারণে তাদের খরচ বেড়েছিল ৮ শতাংশ। তারপরও চাহিদামতো গ্যাস মেলে না। উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। রপ্তানি আদেশ বাতিল হচ্ছে। ক্যাপটিভে গ্যাসের দাম বাড়ানোয় খরচ আরও বেড়ে যাবে। প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়বে। কমে যাবে রপ্তানি।

বিদ্যুতের দাম বাড়বে
শিগগিরই বিদ্যুতের দাম বাড়াবে সরকার। আজকালের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে। এ বিষয়ে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, সরকারের ভর্তুকি গত বছর থেকে লাফিয়ে বাড়ছে। তাই আমরা সময়মতো ধীরে ধীরে এটি সমন্বয় করতে চাই। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, আগামী ৩ বছরে আমরা বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করব। তাই সহনীয় পর্যায়ে যেন বিদ্যুতের দাম সমন্বয় হয়, সেই ব্যবস্থাই নিয়েছি। অল্প অল্প করে দাম বাড়াচ্ছি। তিনি বলেন, যারা কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন এমন শ্রেণির গ্রাহকদের প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৩৪ পয়সা বাড়াচ্ছি। বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের প্রতি ইউনিটে মূল্য বাড়তে পারে ৭০ পয়সা।

নসরুল হামিদ বলেন, লাইফ লাইন গ্রাহক (৫০ ইউনিট পর্যন্ত ব্যবহারকারী) আছেন ১ কোটি ৪০ লাখ, যারা প্রতি ইউনিটে ৪ টাকা বিল দেন। যারা ওপরের দিকে আছেন তারা ৭ টাকা করে দেন। বিপরীতে বিদ্যুতের গড়ে উৎপাদন খরচ পড়ে ১২ টাকা। কাজেই সরকারকে একটি বড় অংশ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। ভর্তুকির পরিমাণ আরও বেড়েছে ডলারের দামের কারণে। এ বছর বিদ্যুতে সরকারের ভর্তুকি গুনতে হবে প্রায় ৪৩ হাজার কোটি টাকা।
দাম কার্যকর বিষয়ে তিনি বলেন, মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে বিদ্যুতের দামের সমন্বয় কার্যকর হবে। পরবর্তী সময়ে আরও ২/৩ বার অল্প অল্প করে বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করা হবে।

জ্বালানি বিভাগের ব্যাখ্যা
জ্বালানি বিভাগ জানায়, সরকার জনস্বার্থে গ্যাসের সমন্বয় করেছে। প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদন, আমদানি, সরবরাহ মূল্যের সঙ্গে বিক্রয়মূল্যের পার্থক্যের কারণে সরকারকে এ খাতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আর্থিক ভর্তুকি দিতে হবে প্রায় ছয় হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। এই মূল্য সমন্বয়ের ফলে এলএনজির বর্তমান বাজারমূল্য ও ডলার বিনিময় হার বিবেচনায় বিদ্যমান ভর্তুকি ছয় হাজার কোটি টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা সম্ভব হতে পারে।

সমকাল