ভোটের পরেও আন্দোলন-কর্মসূচিতে থাকছে বিএনপি। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, ভোটের পর দলটি সরকার পতনের ‘এক দফা’ দাবি জোরদার করার লক্ষ্য ঠিক করেছে। তাই আন্দোলনে বিরতি না দিয়ে আগামী মঙ্গলবার থেকে দলটি নতুন কর্মসূচি শুরু করবে। আজ রোববার জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট ঘিরে দেওয়া ৪৮ ঘণ্টার হরতাল আগামীকাল সোমবার সকালে শেষ হচ্ছে।
বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, সরকারের পতন এবং দেশে গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। দলের নীতিনির্ধারণী নেতারা একমত হয়েছেন যে এবার আন্দোলন-কর্মসূচিতে বিরতি দেওয়া যাবে না। তবে ভোটের পর নতুন প্রেক্ষাপটে কী ধরনের কর্মসূচি দেওয়া হবে, সেটি এখনো ঠিক হয়নি। গত দুই দিনে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নীতিনির্ধারণী নেতারা বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদি আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাঁরা পরবর্তী আন্দোলনের ধরন নিয়েও ভাবছেন।
অবশ্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ভোটের পর কী কর্মসূচি হবে, তার জন্য একটা দিন অপেক্ষা করতে হবে। বিএনপি জনগণকে সম্পৃক্ত করে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনার সংগ্রামে আছে। এ অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত বিএনপি রাজপথে নিয়মতান্ত্রিক সংগ্রাম করে যাবে।
বিএনপির দাবি, দলটির হিসাব অনুযায়ী, এই মুহূর্তে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ২৭ হাজার নেতা-কর্মী কারাবন্দী। এর সঙ্গে আছে আদালতের দণ্ড। ইতিমধ্যে ৮৪টি মামলায় ১ হাজার ২৯৪ জনের বেশি নেতা-কর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, সামনের কর্মসূচিতে সরকার পতনের ‘এক দফা’র সঙ্গে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও মহাসচিবসহ হাজার হাজার কারাবন্দী নেতা-কর্মীর মুক্তির দাবি সামনে আসবে। কর্মসূচিতে সরকার পতনের লক্ষ্যে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোও থাকবে। তবে দলগুলোর নেতাদের অনেকে পরবর্তী আন্দোলন-কর্মসূচির কৌশল নিয়ে ভাবছেন। তাঁরা মনে করেন, আক্ষরিক অর্থেই বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের জনভিত্তি নেই। সরকার এক দিকে রাষ্ট্রযন্ত্রের ওপর ভর করে, আরেক দিকে প্রতিবেশী দেশের প্রভাবে ক্ষমতায় আছে। এই দুই শক্তির পূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতায় তারা ‘একতরফা’ একটি সাজানো নির্বাচন করছে, যে নির্বাচনে সবাই ঘুরেফিরে আওয়ামী লীগ বা তাদের সহযোগী শক্তি।
যুগপৎ আন্দোলনের শরিক জোট গণতন্ত্র মঞ্চের একজন নেতা প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র এভাবে একটি দল বা সরকারের পক্ষে এতটা একাত্ম ছিল, অতীতে কখনো দেখিনি। জনগণকেই এই পরিস্থিতির পরিবর্তন করতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি, ক্ষমতা কখনোই চিরস্থায়ী নয়।’
নির্বাচন বর্জন করে আন্দোলনে রয়েছেন, এমন একাধিক দলের নেতা বলেন, শুধু বিরোধী দলই যে এই নির্বাচন বর্জন করছে তা নয়, সরকারি দলের ভোটারদেরও এই নির্বাচনে ভোট দেওয়ার আগ্রহ নেই। কারণ, তাঁরাও ইতিমধ্যে জেনে গেছেন, কোন আসনে কে সংসদ সদস্য হবেন।
আন্দোলনের সব কৌশল ব্যর্থ হওয়ার পর বিরোধী দলগুলো ভোটের পর কী করবে, এমন প্রশ্ন এখন মুখে মুখে। এ বিষয়ে গত রাতে দেশবাসীর উদ্দেশে একটি ভিডিও বার্তা দিয়েছেন গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, সাত তারিখ (আজ সাত জানুয়ারি) পার হওয়ার পরেও এই কর্মসূচি থামবে না। এই সরকারকে ‘না’ বলেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের কর্মসূচির সঙ্গে যোগ দিন, আপনার ভোট, ভাত, কাপড়ের অধিকার ফেরাবার জন্য। লড়াই করতে জনতার কাফেলায় যোগ দিন। আমরা জিতব, আজ অথবা আগামীকাল; অনেক বিলম্ব হবে না। বিশ্বাস রাখবেন নিজের ওপর, আর আল্লাহর ওপর।’
প্রথম আলো