আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে গত কয়েকদিন ধরে বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে বাংলাদেশের নির্বাচন প্রসঙ্গ। বিশেষ করে পশ্চিমা প্রভাবশালী গণমাধ্যমগুলোতে একের পর এক খবর প্রকাশিত হচ্ছে যাতে এ দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর আশঙ্কার কথা উঠে এসেছে। বিরোধী দলের বর্জন, তাদের ওপর সরকারের দমনপীড়নের অভিযোগও তুলে ধরা হয়েছে। নির্বাচনের পর যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা বিশ্ব সরকারের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিতে পারে বলেও এতে উল্লেখ করা হয়েছে।
নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট, বিবিসি, সিএনএন, ব্লুমবার্গ, আলজাজিরা, গার্ডিয়ানের পাশাপাশি বার্তা সংস্থা রয়টার্স, এএফপি ও এপির মতো বিশ্বখ্যাত গণমাধ্যমগুলো একের পর এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে চলেছে। তবে সবচেয়ে বেশি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের অনলাইন ভার্সনে। এতে গত পাঁচ দিনে অন্তত সাতটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে, যেগুলোতে সরকারের কঠোর সমালোচনা স্থান পেয়েছে।
শনিবার ব্লুমবার্গে ‘বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ, বিরোধী দলের নির্বাচন বয়কট’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার বর্জনের নির্বাচনে তাঁর ১৫ বছরের শাসনের মেয়াদ বাড়াতে চলেছেন। এখন প্রশ্ন হলো– মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সরকারগুলো দেশটিকে গণতান্ত্রিক অবনমনের জন্য শাস্তি এবং চীনের কাছাকাছি ঠেলে দেবে কিনা।
কুগেলম্যান বলেন, এ ব্যবস্থাগুলো হবে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ যা বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করতে পারে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির প্রায় এক-পঞ্চমাংশ যুক্তরাষ্ট্রে গেছে। এতে বাংলাদেশ আয় করেছে প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলার।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর মিনাক্ষী গাঙ্গুলি ব্লুমবার্গকে বলেন, আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এলে ঝুঁকি হলো– দলটি মনে করতে পারে যে তারা যেভাবে খুশি সেভাবে দেশ পরিচালনা করতে পারে। এ ব্যবস্থা এমন পরিস্থিতিতে নিয়ে যায় যেখানে কোনো জবাবদিহি থাকে না।
‘বাংলাদেশের অসুস্থ গণতন্ত্র একতরফা নির্বাচনে যাচ্ছে’ শিরোনামে নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় আসবেন, তাতে সন্দেহ নেই। তবে দেশের গণতন্ত্রের কী হবে সেটাই বড় প্রশ্ন।
এতে বলা হয়, সহিংসতার সম্ভাবনা বাতাসে ঝুলে আছে। বিরোধীদের ভোট বর্জনের ডাক ও অসহযোগ আন্দোলনের প্রচেষ্টা ভয়াবহ দমনপীড়নের মাধ্যমে দমন করা হয়েছে। বিএনপির ২০ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঢাকার কূটনীতিকরা বলেছেন, তারা উপচে পড়া কারাগারের অভ্যন্তরে ভয়ংকর পরিস্থিতির প্রতিবেদন পেয়েছেন। ২৮ অক্টোবরের ক্র্যাকডাউনের পর থেকে অন্তত ৯জন বিরোধী নেতা ও সদস্য কারাগারে মারা গেছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সমালোচকরা বলছেন, আওয়ামী লীগ দেশকে একদলীয় রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা করেছে। সরকারের নির্দেশ মতো না চললে তাদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা সংস্থা থেকে শুরু করে আদালত ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবহার করা হয়।
‘ভোট গণনা অপ্রয়োজনীয়: বাংলাদেশের উদ্ভট নির্বাচন পাশ্চাত্যের সঙ্গে সম্পর্কের পরীক্ষা’ শিরোনামে আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৭ কোটি মানুষের দেশটি রোববার সেই নির্বাচনে ভোট দেবে যা প্রধান বিরোধী দল বর্জন করেছে এবং যার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে পশ্চিমারা প্রশ্ন তুলছে।
এতে বলা হয়, প্রধান বিরোধী দলের বয়কট, বিক্ষোভকারীদের ওপর দমনপীড়ন এবং পশ্চিমা দেশগুলোর তীব্র চাপের মধ্যে রোববার বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। রাজনৈতিক পণ্ডিত এবং বিশ্লেষকরা বলছেন, যে পদ্ধতিতে নির্বাচন পরিচালনা করা হচ্ছে তা পশ্চিমা অংশীদারদের সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার দেশটির কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ককে প্রভাবিত করতে পারে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে।
যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী দৈনিক ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস ‘শেখ হাসিনা: বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতা ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়, ভোটের ফলাফল পূর্বনির্ধারিত বলে মনে হলেও পর্যবেক্ষকদের যুক্তি, আওয়ামী লীগ আরও পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। বেদনাদায়ক মুদ্রাস্ফীতি, বৈদেশিক রিজার্ভের পতন এবং ক্রমবর্ধমান ঋণখেলাপি, অর্থনৈতিক চাপের দিকে ইঙ্গিত করে তারা বলেন, এতে জনগণ ক্রমবর্ধমান কর্তৃত্ববাদী শাসন সম্পর্কে ধৈর্য হারাবে।
গত কয়েকদিন বিবিসি একের পর এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে চলেছে। এর মধ্যে রয়েছে– ‘বাংলাদেশ: দ্য ইলেকশন দ্যাট হ্যাজ টার্নড ইনটু আ ওয়ান উইম্যান শো’, ‘দে বিট মি ফর সিক্স মান্থস উইদাউট টকিং’, ‘বাংলাদেশ ইলেকশন্স: লপসাইডেট পোলস লিভ ডিজিলিউজড ভোটার্স আসকিং হোয়াটস দ্য পয়েন্ট’, ‘বাংলাদেশ ইলেকশন্স: মাই হাজব্যান্ড ডায়েড ইন জেল মান্থস বিফোর ভোট’।
সমকাল