স্বতন্ত্র প্রার্থীর শক্ত অবস্থানের কারণে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েও বিপদে আছেন ১৪ দলীয় জোটের দুই শীর্ষ নেতা জাসদের (ইনু) সভাপতি হাসানুল হক ইনু এবং বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। ৯ আসনে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েও বেশ পিছিয়ে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা।
আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কয়েকজন শীর্ষ নেতার কাছ থেকে পাওয়া আসনভিত্তিক পর্যালোচনায় এমন ইঙ্গিত মিলেছে। প্রায় একই ধরনের তথ্য দিয়েছেন সরকারি দলের বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতা। তাদের অনেকেই ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নির্বাচনী এলাকা পরিদর্শন করে এসেছেন। এ ছাড়া সমকালের স্থানীয় প্রতিনিধিদের তথ্য বিশ্লেষণেও পাওয়া গেছে এমন আভাস।
স্বতন্ত্র প্রার্থীদের এগিয়ে থাকা আসনের মধ্যে রয়েছে– দিনাজপুর-৪, লালমনিরহাট-১, লালমনিরহাট-২, রংপুর-২, রংপুর-৫, গাইবান্ধা-২, গাইবান্ধা-৫, নওগাঁ-৪, নওগাঁ-৫, নওগাঁ-৬, রাজশাহী-২, রাজশাহী-৫, রাজশাহী-৬, সিরাজগঞ্জ-৫, পাবনা-১, পাবনা-৩, কুষ্টিয়া-১, কুষ্টিয়া-২, কুষ্টিয়া-৪, চুয়াডাঙ্গা-১, বরিশাল-৪, বরিশাল-৬, পিরোজপুর-৩, টাঙ্গাইল-২, টাঙ্গাইল-৫, জামালপুর-২, জামালপুর-৫, শেরপুর-১, ময়মনসিংহ-১, ময়মনসিংহ-৩, ময়মনসিংহ-৫, ময়মনসিংহ-৬, ময়মনসিংহ-৭, ময়মনসিংহ-৮, ময়মনসিংহ-১১, নেত্রকোনা-২, মানিকগঞ্জ-১, ঢাকা-১৮, ঢাকা-১৯, ঢাকা-২০, গাজীপুর-১, গাজীপুর-৩, গাজীপুর-৫, নরসিংদী-৩, নরসিংদী-৪, রাজবাড়ী-১, রাজবাড়ী-২, ফরিদপুর-২, ফরিদপুর-৩, ফরিদপুর-৪, গোপালগঞ্জ-১, মাদারীপুর-৩, সিলেট-৫, হবিগঞ্জ-১, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২, কুমিল্লা-৪, কুমিল্লা-৫, ফেনী-৩, নোয়াখালী-২, নোয়াখালী-৩, লক্ষ্মীপুর-১, লক্ষ্মীপুর-২, লক্ষ্মীপুর-৩, লক্ষ্মীপুর-৪, চট্টগ্রাম-১, চট্টগ্রাম-৩, চট্টগ্রাম-৮, চট্টগ্রাম-১০, চট্টগ্রাম-১২ ও চট্টগ্রাম-১৫।
আওয়ামী লীগের কয়েকজন নীতিনির্ধারক নেতা সমকালকে জানিয়েছেন, দিনাজপুর-৪ আসনে বর্তমান এমপি আবুল হাসান মাহমুদ আলীর বিরুদ্ধে এগিয়ে আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী চিরিরবন্দর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান তারিকুল ইসলাম। লালমনিরহাট-১ আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহার হোসেন এমপির বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী আতাউর রহমান প্রধান এগিয়ে আছেন।
রংপুর-২ আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া গেলেও বর্তমান এমপি আবুল কালাম মোহাম্মদ আহসানুল হক চৌধুরী ডিউকের বিরুদ্ধে জয় পেতে পারেন স্বতন্ত্র প্রার্থী কৃষক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ বিশ্বনাথ সরকার বিটু। রংপুর-৫ আসনে মিঠাপুকুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেক রহমান হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে থাকলেও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাকির হোসেন সরকারের দিকেই ঝুঁকছেন ভোটাররা।
ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন এমপিকে চ্যালেঞ্জ করে গাইবান্ধা-৫ আসনে কিছুটা এগিয়ে রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ফুলছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারজানা রাব্বী বুবলি। নওগাঁ-৪ আসনে মান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাহিদ মোর্শেদ বাবুর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন দু’জন। বর্তমান এমপি ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক এস এম ব্রুহানী সুলতান মাহমুদ গামা। এখানে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সঙ্গে লড়াই জমে উঠলেও এস এম ব্রুহানী সুলতান মাহমুদ গামা এগিয়ে আছেন।
আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিলের ছেলে ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দিন জলিল জন এমপির বিরুদ্ধে নওগাঁ-৫ আসনে জয় পেতে পারেন পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি দেওয়ান ছেকার আহমেদ শিষান। নওগাঁ-৬ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক সুমনের অবস্থা বেশ মজবুত। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দলের রানীনগর উপজেলা শাখার সভাপতি আনোয়ার হোসেন হেলাল এমপি।
রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারা এমপি রাজশাহী-৫ আসনে দলের প্রার্থী। তাঁর বিরুদ্ধে এগিয়ে আছেন জেলা যুবলীগের সাবেক সহসভাপতি ওবায়দুর রহমান। সিরাজগঞ্জ-৫ আসনে বেলকুচি আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল মমিন মণ্ডলের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাস শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। পাবনা-১ আসনে ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু কিছুটা বেকায়দায় আছেন। এখানে এগিয়ে আছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়িদ।
পাবনা-৩ আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মকবুল হোসেন এমপির বিরুদ্ধে এগিয়ে রয়েছেন চাটমোহর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হামিদ মাস্টার। দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ কা ম সরওয়ার জাহান বাদশা এমপির বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী দু’জন। সাবেক এমপি রেজাউল হক চৌধুরী ও সাবেক এমপি আফাজ উদ্দিনের ছেলে নাজমুল হুদা পটল। এ দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে নির্বাচনী লড়াই জমে উঠেছে। এর মধ্যে তুলনামূলক রেজাউল হক চৌধুরীর অবস্থা ভালো।
কুষ্টিয়া-৪ আসনে ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ এমপির বিরুদ্ধে এগিয়ে আছেন সাবেক এমপি আবদুর রউফ চৌধুরী। চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক উপকমিটির সদস্য দিলীপ কুমার আগরওয়ালার জেতার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপি। বরিশাল-৬ আসনে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আবদুল হাফিজ মল্লিকের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী বাকেরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামসুল হক চুন্নু এগিয়ে রয়েছেন।
টাঙ্গাইল-২ আসনে তানভীর হাসান ছোট মনির এমপির বিরুদ্ধে এগিয়ে রয়েছেন গোপালপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ইউনুস ইসলাম তালুকাদার ঠাণ্ডু। জামালপুর-৫ আসনে সাবেক সচিব আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজাউল করিম রেজনু এগিয়ে আছেন। শেরপুর-১ আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আতিউর রহমান আতিক এমপি ও সাধারণ সম্পাদক ছানোয়ার হোসেন ছানু পরস্পরের প্রতিপক্ষ। এখানে এগিয়ে রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ছানু। হালুয়াঘাট উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মাহমুদুল হক সায়েম ময়মনসিংহ-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জুয়েল আরেং এমপির চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর সাবেক বিশেষ সহকারী মাহবুবুল আলম শাকিলের স্ত্রী ও গৌরীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নিলুফার আনজুম পপির বিরুদ্ধে ময়মনসিংহ-৩ আসনে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন পাঁচজন। তারা হলেন– গৌরীপুর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সোমনাথ সাহা, জেলা শাখার উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য নাজনীন আলম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শরিফ হাসান অনু, কার্যনির্বাহী সদস্য মোর্শেদুজ্জামান সেলিম ও উপজেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক রমিজ উদ্দিন স্বপন। তাদের মধ্যে সোমনাথ সাহার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর। এখানে সোমনাথ সাহা এগিয়ে রয়েছেন।
ময়মনসিংহ-৭ আসনে বর্তমান এমপি হাফেজ রুহুল আমীন মাদানীর বিরুদ্ধে এগিয়ে রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ত্রিশালের সাবেক পৌর মেয়র এ বি এম আনিসুজ্জামান। ময়মনসিংহ-১১ আসনে দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এম এ ওয়াহেদ ও ভালুকা উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফার সঙ্গে বর্তমান এমপি কাজিম উদ্দিন আহম্মেদ ধনু কুলিয়ে উঠতে পারছেন না। এখানে এম এ ওয়াহেদের জেতার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজীর আহমেদ এমপির সঙ্গে ঢাকা-২০ আসনে এগিয়ে রয়েছেন ধামরাই উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মোহাদ্দেস হোসেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি আখতারউজ্জামান গাজীপুর-৫ আসনে মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি এমপির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান গড়ে তুলেছেন।
নরসিংদী-৩ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ফজলে রাব্বি খানের বিরুদ্ধে এগিয়ে রয়েছেন সাবেক এমপি সিরাজুল ইসলাম মোল্লা। রাজবাড়ী-১ আসনে বর্তমান এমপি কাজী কেরামত আলীর বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ইমদাদুল হক বিশ্বাস। রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিল্লুল হাকিম এমপি রাজবাড়ী-২ আসনে কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নুরে আলম সিদ্দিকী হকের সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারছেন না। ফরিদপুর-২ আসনে বর্তমান এমপি শাহদাব আকবর লাবু চৌধুরী এমপির বিরুদ্ধে ঝুঁকি তৈরি করেছেন নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জামাল হোসেন মিয়া।
ফরিদপুর-৩ আসনে বেশ শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন বিশিষ্ট শিল্পপতি ও এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি এ. কে. আজাদ। স্বতন্ত্র এই প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য। এ আসনে তাঁর জয়ের সম্ভাবনা বেশি। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামীম হক। আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান কাজী জাফরউল্যাহর বিরুদ্ধে ফরিদপুর-৪ আসনে এগিয়ে আছেন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন এমপি। গোপালগঞ্জ-১ আসনে লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান এমপির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে আছেন মুকসুদপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান কাবির মিয়া।
মাদারীপুর-৩ আসনে বর্তমান এমপি ড. আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপ ঝুঁকিতে পড়েছেন। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তাহমিনা বেগম এমপি। সিলেট-৫ আসনে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদের বিরুদ্ধে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আহমদ আল কবির দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও এগিয়ে রয়েছেন আনজুমানে আল ইসলাহর সভাপতি মাওলানা হুছামুদ্দীন চৌধুরী। কুমিল্লা-৪ আসনে রাজী মোহাম্মদ ফখরুল এমপির বিরুদ্ধে এগিয়ে আছেন দেবীদ্বার উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ।
নোয়াখালী-২ আসনে মোরশেদ আলম এমপির বিরুদ্ধে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক এগিয়ে রয়েছেন। একই চিত্র নোয়াখালী-৩ আসনেও। এখানে মামুনুর রশীদ কিরন এমপির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি মিনহাজ আহমেদ জাবেদ। লক্ষ্মীপুর-১ আসনে বর্তমান এমপি আনোয়ার হোসেন খানের বিরুদ্ধে এগিয়ে রয়েছেন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হাবিবুর রহমান পবন।
লক্ষ্মীপুরের অন্য তিন আসনেও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। লক্ষ্মীপুর-২ আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন এমপির বিরুদ্ধে সংরক্ষিত নারী আসনের বর্তমান এমপি কাজী সেলিনা ইসলাম, লক্ষ্মীপুর-৩ আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক এমপির বিরুদ্ধে ঢাকার মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সাত্তার এবং জাসদের (ইনু) মোশারফ হোসেনের বিরুদ্ধে সাবেক এমপি মোহাম্মদ আবদুল্লাহ এগিয়ে রয়েছেন।
এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে চট্টগ্রাম-১ আসনে দলের কেন্দ্রীয় সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের ছেলে মাহাবুব উর রহমান রুহেলের বিরুদ্ধে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক কার্যনির্বাহী সদস্য গিয়াস উদ্দিন, চট্টগ্রাম-৩ আসনে মাহফুজুর রহমান মিতা এমপির বিরুদ্ধে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. জামাল উদ্দিন চৌধুরী শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে চট্টগ্রাম-১০ আসনে মহিউদ্দিন বাচ্চু এমপির বিরুদ্ধে সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মনজুর আলম, চট্টগ্রাম-১৫ আসনে আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী এমপির বিরুদ্ধে সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল মোতালেব এগিয়ে রয়েছেন।
ঝুঁকিতে সাত মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী
গাজীপুর-১ আসনে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপির বিরুদ্ধে কালিয়াকৈর উপজেলার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল করিম রাসেল এগিয়ে আছেন। লালমনিরহাট-২ আসনে সমাজকল্যাণমন্ত্রী নূরুজ্জামান আহমেদ এমপি বেশ ঝুঁকিতে পড়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে এগিয়ে রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও আদিতমারী উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল হক।
নরসিংদী-৪ আসনে শিল্পমন্ত্রী অ্যাডভোকেট নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এমপি ঝুঁকিতে পড়েছেন। এখানে এগিয়ে আছেন মনোহরদী উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম খান বীরু।
ঢাকা-১৯ আসনে দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক এমপি তালুকদার মোহাম্মদ তৌহিদ জং মুরাদ ও আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম স্থানীয় হওয়ার সুবিধা পাচ্ছেন। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান এনাম এমপি।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপিও ঝুঁকিতে আছেন। তাঁর বিরুদ্ধে রাজশাহী-৬ আসনে এগিয়ে রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক এমপি রাহেনুল হক।
ধর্মবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান দুলাল এমপির বিরুদ্ধে জামালপুর-২ আসনে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী তিনজন। ইসলামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি জিয়াউল হক, জেলা শাখার উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য সাজাহান আলী মণ্ডল ও কার্যনির্বাহী সদস্য এস এম শাহিনুজ্জামান শাহীন। এ আসনে এস এম শাহিনুজ্জামান শাহীনের সঙ্গে লড়াই হচ্ছে ধর্মবিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর। এগিয়ে রয়েছেন এস এম শাহিনুজ্জামান শাহীন। সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু এমপির বিরুদ্ধে নেত্রকোনা-২ আসনে এগিয়ে রয়েছেন সাবেক এমপি আরিফ খান জয়।
বেহাল দশা জাতীয় পার্টির
গাইবান্ধা-২ আসনে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে নির্বাচনে লড়ছেন জাতীয় পার্টির আবদুর রশিদ সরকার। এখানে কিছুটা এগিয়ে রয়েছেন আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান শাহ সারোয়ার কবির।
আওয়ামী লীগের সঙ্গে ২৬ আসনে জাতীয় পার্টির আসন ভাগাভাগি হলেও এ তালিকায় স্থান পাননি পিরোজপুর-৩ আসনে জাতীয় পার্টির বর্তমান এমপি রোস্তম আলী ফরাজী। তিনি নির্বাচনে ঈগল প্রতীক নিয়েই লড়ছেন। এ আসনে তাঁর ও মঠবাড়িয়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আশরাফুর রহমানের ভাই শামীম শাহনেওয়াজের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা সীমিত হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে বেশ শক্ত অবস্থানে রয়েছেন রোস্তম আলী ফরাজী। এ আসনে জাতীয় পার্টির মাশরেকুল আজম রবি আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়েও খুব একটা সুবিধা করতে পারছেন না।
আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েও ময়মনসিংহ-৫ আসনে সুবিধাজনক অবস্থানে নেই জাতীয় পার্টির প্রার্থী সালাহ উদ্দিন আহমেদ মুক্তি। এ আসনে এগিয়ে রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও কৃষক লীগের সহসভাপতি ড. নজরুল ইসলাম।
ময়মনসিংহ-৮ আসনে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করছেন জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম এমপি। এখানে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মাহমুদ হাসান সুমন।
মানিকগঞ্জ-১ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী জহিরুল আলম রুবেলকে আওয়ামী লীগ সমর্থন দিয়েছে। কিন্তু তিনি স্থানীয় না হওয়ায় সুবিধা পাচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম জাহিদ।
ঢাকা-১৮ আসনে স্থানীয় হওয়ায় বাড়তি সুবিধা পাচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক খসরু চৌধুরী। এ আসনে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে প্রার্থী হয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের স্ত্রী শেরিফা কাদের এমপি।
হবিগঞ্জ-১ আসনে জাতীয় পার্টির ডা. মুশফিক হুসেন চৌধুরী বাবুকে আওয়ামী লীগ সমর্থন দিলেও এগিয়ে রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক এমপি কেয়া চৌধুরী। আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে জাতীয় পার্টির রেজাউল ইসলাম কুলিয়ে উঠতে পারছেন না। এখানে দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঈন উদ্দিন মঈন ও সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধার মধ্যে লড়াই হচ্ছে। এগিয়ে রয়েছেন মঈন উদ্দিন মঈন।
ফেনী-৩ আসনে এগিয়ে রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক এমপি রহিম উল্যাহ। এখানে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান এমপি লে. জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী।
আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়েও চট্টগ্রাম-৮ আসনে কুলিয়ে উঠতে পারছেন না জাতীয় পার্টির প্রার্থী সোলায়মান আলম শেঠ। এখানে এগিয়ে রয়েছেন সাবেক সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম।
মনোনয়নবঞ্চিত এমপিদের সম্ভাবনা
সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট রহমত আলীর মেয়ে রুমানা আলী গাজীপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী। এখানে এগিয়ে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ এমপি।
বর্তমান এমপি ছানোয়ার হোসেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে টাঙ্গাইল-৫ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছেন। মামুন-অর-রশিদ এ আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী।
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদের প্রার্থিতা বাতিল হওয়ায় বরিশাল-৪ আসনে বেশ এগিয়ে রয়েছেন বর্তমান এমপি পঙ্কজ নাথ। চট্টগ্রাম-১২ আসনে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে বর্তমান এমপি সামশুল হক চৌধুরী এগিয়ে রয়েছেন।
ইনু ও বাদশা বিপাকে
আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়েও কুষ্টিয়া-২ আসনে বিপাকে পড়েছেন জাসদের (ইনু) সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি। এখানে মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান কামারুল আরেফিন এগিয়ে রয়েছেন।
রাজশাহী-২ আসনে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়েও বিপাকে রয়েছেন ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা এমপি। এখানে এগিয়ে আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শফিকুর রহমান বাদশা।
বাবা ও মেয়ের লড়াই
ময়মনসিংহ-৬ আসনে বাবা ও মেয়ের মধ্যে নির্বাচনী লড়াই জমে উঠেছে। এ আসনের বর্তমান এমপি অ্যাডভোকেট মোসলেম উদ্দিনের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী তাঁর মেয়ে সেলিমা বেগম। বাবা ও মেয়ের মধ্যকার লড়াইয়ের সুবিধা নিচ্ছেন আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী ফুলবাড়িয়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মালেক সরকার। তাঁর বিজয়ের সম্ভাবনা দেখছেন অনেকে।
বাবার কান্ডারি মেয়ে
বুড়িচং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল হাসেম খান এমপি কুমিল্লা-৫ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর নির্বাচনী এলাকায় আসতে পারেননি। তিনি গুরুতর অসুস্থ। তবে তাঁর মেয়ে ব্যারিস্টার নাজিয়া হাসেম নৌকা প্রতীকের পক্ষে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন। এ আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী দলের দক্ষিণ জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আবু জাহের। বিএনপির সাবেক নেতা ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তবে সাজ্জাদ হোসেন ও আবু জাহেরের মধ্যে লড়াইয়ের আভাস মিলেছে।
সমকাল