সরকারের ঋণের সুদ ব্যয়ের চাপ বাড়ছে

সরকারের ঋণের সুদ ব্যয়ের চাপ বাড়ছেপ্রতীকী ছবি

আশানুরূপ রাজস্ব আদায় না হওয়ায় বিভিন্ন দেনা শোধে হিমশিম খাচ্ছে সরকার। সার, জ্বালানি ও বিভিন্ন খাতের ভর্তুকির টাকা চেয়েও পাচ্ছে না অনেক প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে সরকারের ঋণের সুদহার দ্রুত বেড়ে চাপ আরও বাড়ছে। গত ছয় মাসেই সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ডের সুদহার ২৬ থেকে ৪৬ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। টাকার বিপরীতে ডলারের বিনিময় হার এবং সুদের কারণে বিদেশি উৎসের ঋণের ব্যয়ও বাড়ছে। ফলে চলতি অর্থবছরে সুদ পরিশোধে সরকার ৯৪ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকার যে বরাদ্দ রেখেছে, প্রকৃত ব্যয় তার অনেক বেশি হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, অভ্যন্তরীণ ও বিদেশি উৎসে সরকারের ঋণ স্থিতি রয়েছে প্রায় ১৬ লাখ কোটি টাকা। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিদেশি উৎসে সরকারের ঋণ ছিল ৭ হাজার ৫২৭ কোটি ডলার। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিনিময় হার (১১০ টাকা) ধরে হিসাব করলে যা প্রায় ৮ লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকা। আর গত অক্টোবর পর্যন্ত সঞ্চয়পত্রে সরকারের ঋণ স্থিতি রয়েছে ৩ লাখ ৬৫ হাজার ৮৮ কোটি টাকা। নভেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক ব্যবস্থায় সরকারের ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৯৭ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা। আইএমএফের শর্ত পরিপালন ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য গত জুলাইয়ে ব্যাংক ঋণে ৯ শতাংশ সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা তুলে দেওয়ার থেকে সুদহার দ্রুত বাড়ছে। এ সময়ে আইএমএফের শর্তের আলোকে নিট রিজার্ভ ২১ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলারে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ নিচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ডিসেম্বর মাসে ৩৬৪ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের সর্বোচ্চ সুদ উঠেছে ১১ দশমিক ৫০ শতাংশ। আর সর্বনিম্ন ১০ দশমিক ২০ শতাংশ সুদে দুই বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ড বিক্রি হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে এ সুদ এক দশকের বেশি সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ। এ সময়ে আন্তঃব্যাংক লেনদেনেও সুদহার দ্রুত বেড়ে সর্বোচ্চ সাড়ে ১২ শতাংশে উঠেছে। গত জুনে যা ৭ শতাংশের নিচে ছিল। গত জুনে ৩৬৪ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের গড় সুদহার ছিল ৭ দশমিক ৯০ শতাংশ। ডিসেম্বরে এসে তা ১১ দশমিক ২০ থেকে ১১ দশমিক ৫০ শতাংশে উঠেছে। এর মানে, এ ক্ষেত্রে গত ছয় মাসেই সুদহার বেড়েছে ৪২ থেকে ৪৬ শতাংশ। আর গত জুনে দুই বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের সুদহার ৮ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ থেকে এখন ১০ দশমিক ২০ শতাংশে উঠেছে। এ ক্ষেত্রে সুদহার বেড়েছে ২৬ শতাংশের বেশি। এ ছাড়া অনেক আগ থেকে সঞ্চয়পত্রে সরকারকে ১১ শতাংশের মতো সুদ গুনতে হচ্ছে।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে সরকারের সুদ ব্যয় বাবদ যে ৯৪ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, তার মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎসে সুদ পরিশোধে ব্যয় ধরা হয় ৮২ হাজার কোটি টাকা। আর বিদেশি উৎসে ১২ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা। গত জুনের পরিস্থিতির ভিত্তিতে এ হিসাব করা হয়েছিল। তখন অভ্যন্তরীণ উৎসে সরকারের ঋণের বেশির ভাগই দিচ্ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্য এখন সরকার কোনো ঋণ না দিয়ে বাজার থেকে নিলামের মাধ্যমে নিতে হচ্ছে। ফলে সুদহার দ্রুত বাড়ছে। অন্যদিকে, গত জুনে ডলারের আনুষ্ঠানিক দর ছিল ১০৭ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ১০৮ টাকা। এখন প্রতি ডলারে ২ টাকার বেশি বেড়ে ১১০ টাকা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে বিদেশি ঋণের সুদহারও বেড়েছে।

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) সরকারের রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে যা ১৬ হাজার ৪৫৯ কোটি টাকা কম। অবশ্য গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৪ দশমিক ২৬ শতাংশ বেশি।

সমকাল