বাংলাদেশে একনায়কতান্ত্রিক সরকারকে ভারত, চীন ও রাশিয়া যেভাবে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে, তা গণতন্ত্র এবং মানুষের মৌলিক অধিকার পরিপন্থি বলে জানিয়েছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান। তিনি বলেছেন, কূটনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘন করে বড় দেশগুলো যেভাবে অন্য দেশের বিরুদ্ধে দোষারোপ করে চলেছে, তা তাঁকে অবাক করেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে কেবল তপশিল পিছিয়ে একটি সাজানো নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রশ্নই আসে না জানিয়ে তিনি বলেন, যতই অত্যাচার-নির্যাতন করুক, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগকেও একদলীয় শাসনের চিন্তাধারা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
সোমবার সমকালকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন ড. মঈন খান। সাক্ষাৎকারে নির্বাচন, চলমান আন্দোলন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা, কিংস পার্টি, অর্থনৈতিক অবস্থাসহ সার্বিক বিষয়ে খোলামেলা উত্তর দেন তিনি। বিরোধী দলের এই শীর্ষ নেতা বলেন, একটি কথা স্পষ্ট করতে চাই– গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলন হবে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ। হরতাল-অবরোধের পাশাপাশি ভিন্ন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির বিষয়টিও আমরা পরিকল্পনা করছি।
সমকাল: বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দ্বিধাবিভক্ত। এ বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?
ড. মঈন খান: বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশগুলো দুটি ব্লকে বিভক্ত– এটা সবাই জানেন। গণতন্ত্রকামী দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটি ব্লকে। আরেকটি ব্লকে রাশিয়া, চীন এবং বন্ধুরাষ্ট্র ভারত। সবার যে চিন্তাধারা একই হবে, তেমন নয়। দুটি ব্লকের মৌলিক পার্থক্য বাংলাদেশের মানুষকে উপলব্ধি করতে হবে। মৌলিক পার্থক্য হচ্ছে, আজ পশ্চিমা গণতান্ত্রিক বিশ্ব স্পষ্ট ভাষায় কিছু কঠিন পদক্ষেপ নিচ্ছে; স্যাংশন ও ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে। তাদের উদ্দেশ্য, বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠান আর সুশাসন ফিরিয়ে আনা ও দুর্নীতি দূর করা। অন্য ব্লকটি বলছে, বাংলাদেশে যে ব্যবস্থা চলছে, তা চলতে থাকবে। এখানে তারা তাদের ভাষায়, কোনো ‘হস্তক্ষেপ’ করতে চায় না। আজ কেউ যদি গণতন্ত্রের বিষয় নিয়ে কথা বলে, এটা কোনো রাষ্ট্রীয় বা ভৌগোলিক সীমারেখার মধ্যে পড়ে না। আমরা যদি বলি, বিশ্ব বাংলাদেশে গণতন্ত্র দেখতে চায়, যদি তারা মানবাধিকারের কথা বলে– এটা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে চিহ্নিত হবে না। দুর্নীতি ও দুঃশাসনের কথা বললে তা অভ্যন্তরীণ বিষয় হতে পারে না। দুটি ব্লকের ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি দেশের মানুষের কাছে আজ অত্যন্ত স্পষ্ট। এর জন্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ডিগ্রিধারী হতে হবে না।
সমকাল: ক্ষমতাধর দেশগুলোর কেউ কেউ তো পরস্পরবিরোধী প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছে?
ড. মঈন খান: আমার কাছে পরস্পরবিরোধী দোষারোপ চোখে পড়েনি। রুশরা যুক্তরাষ্ট্রকে দোষারোপ করেছে, যা তারা খণ্ডন করেছে মাত্র। ভারত, চীন ও রাশিয়ার বক্তব্যের জবাবে পশ্চিমা বিশ্ব, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা সেসব দেশকে দোষারোপ করেনি। তবে আমার অবাক লেগেছে, আগে যে কূটনৈতিক শিষ্টাচার ছিল, আজ তা আর নেই।
সমকাল: বিএনপি তো কোনো কোনো দেশের ভূমিকা নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে…
ড. মঈন খান: আমরা মনে করছি, বন্ধুরাষ্ট্র ভারত, চীন ও রাশিয়া যে ধরনের বক্তব্য দিয়ে বাংলাদেশে একটি স্বৈরাচারী, অগণতান্ত্রিক এবং দুর্নীতিপরায়ণ সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে, তা ১৮ কোটি মানুষের স্বার্থবিরোধী। সে কারণে আমরা বক্তব্য-বিবৃতিগুলো দিয়েছি। আগামী নির্বাচনের যে প্রস্তুতি সরকার নিচ্ছে, তাতে বৃহত্তর বিরোধী দল বিএনপির প্রয়োজন নেই– আওয়ামী সরকার বলছে। তারা একাই নির্বাচন করবে। এমনকি তারা কিছু সাজানো গৃহপালিত বিরোধী দল সংসদে বসিয়ে দিতে সব ব্যবস্থা সম্পন্ন করেছে। এটা স্পষ্ট, সরকার আবারও ক্ষমতায় থেকে যেভাবে লুটপাট করে বিদেশে অর্থ পাচার করেছে, তা অব্যাহত রাখতে এবং দুর্নীতিবাজ প্রশাসনকে নিয়ে আগামীতে দেশ শাসন করতে চায়। সেই প্রক্রিয়াকে যারা সমর্থন করছে, তাদের বিরুদ্ধে বিএনপি বক্তব্য দিচ্ছে। এটা ভারত, চীন ও রাশিয়ার জনগণের বিরুদ্ধে বিএনপির কোনো বক্তব্য নয়। এটা স্পষ্ট করে বলছি, বাংলাদেশে একনায়কতান্ত্রিক সরকারকে তারা যেভাবে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে, আমরা মনে করি, তা গণতন্ত্র ও মানুষের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি।
সমকাল: ভারত, চীন ও রাশিয়া তো সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান ব্যক্ত করেছে।
ড. মঈন খান: এ প্রশ্নের উত্তর খুব সহজ। পৃথিবীর সব দেশে সংবিধান থাকে। কোনো দেশের মানুষ সংবিধানের জন্য তৈরি হয় না; সংবিধান মানুষের জন্য তৈরি হয়। পৃথিবীর এমন কোনো দেশ নেই, যেখানে সংবিধান পরিবর্তন হয়নি। এমনকি বাংলাদেশের সংবিধান অনেকবার পরিবর্তিত হয়েছে। এমনকি পরিবর্তনের পরও সংসদে তা বৈধতা দেওয়া হয়েছে। কাজেই সংবিধান সংশোধন হওয়া-না হওয়া কোনো মৌলিক সমস্যা নয়।
সমকাল: যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি নিয়েও সরকার ভীত নয় বলে সাফ জানিয়েছে।
ড. মঈন খান: তারা তো সাতসমুদ্র পাড়ি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার প্রয়োজন নেই বলছে। তার পরও যাচ্ছে। তারা মুখে যা বলে, কাজে সেটা করে না; কাজে যা করে, সেটা মুখে বলে না– এটা স্বীকৃত সত্য।
সমকাল: আগামীতে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে কি?
ড. মঈন খান: যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেবে, সে কারণে সরকার সুশাসন ও ভোটের অধিকার এবং গণতন্ত্রের মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দেবে– এটা কোনো যুক্তি হতে পারে না। আওয়ামী লীগ নিজেদের দাবি করে দেশের প্রাচীনতম ও গণমানুষের দল। তাদের আচার-আচরণ ও কর্মপন্থা তা প্রমাণ করে না। আগের ইতিহাস বাদ দিলাম। গত ১৫ বছরে মৌলিক নীতিগুলোর পরিপন্থি কাজ করে চলেছে। আমি বিশ্বাস করি, স্বপ্রণোদিত হয়ে আওয়ামী লীগের সুশাসন, গণতন্ত্র, মৌলিক মানবাধিকার ফিরিয়ে আনা উচিত। দুই লাইন লিখে কে কার সমালোচনা করেছে, সে জন্য তাকে মধ্যরাতে বাড়ি থেকে তুলে গায়েব করে দেবে– এটা ঠিক নয়। একদলীয় শাসনের চিন্তাধারা থেকে আওয়ামী লীগকে বেরিয়ে আসতে হবে। শুধু আমরা বলছি না, আপনারা সুশীল সমাজসহ অনেকের কথাই শুনছেন। যারা শুরু থেকে আওয়ামী লীগ করেছেন, তাদের অনেকের মুখ থেকে গত কয়েক দিনে কিছু কথাও আমরা শুনেছি। আওয়ামী লীগের বর্তমান চিন্তাধারা ও কার্যপদ্ধতির প্রতিবাদ করছেন তারা। বর্তমান একদলীয় শাসনব্যবস্থাকে তারা সঠিক মনে করছেন না।
সমকাল: সরকার পতনের এক দফা দাবির চূড়ান্ত আন্দোলনে অবরোধ ও হরতাল মহাসড়কে কার্যকর হলেও রাজধানীতে ‘ঢিলেঢালা ভাব’। এ কর্মসূচি দিয়ে কি দাবি আদায়ে বাধ্য করা যাবে?
ড. মঈন খান: আজ দেশে যে অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, এটা তো বিএনপি করেনি। ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে যে ঘটনা ঘটেছে, তার ফলে রাতারাতি রাজনৈতিক পরিস্থিতি বদলে গেছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজকে আমরা হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি পালন করছি। আমরা দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে আন্দোলন করছি। সে উদ্দেশ্যটি সফল করার জন্য জনগণকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করছি। আন্দোলনে হরতাল-অবরোধসহ অনেক প্রক্রিয়া থাকতে পারে। বড় কথা হচ্ছে, দেশের কোটি কোটি মানুষ একদলীয় শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন চাচ্ছে– এ বার্তা পৌঁছে দিতে কর্মসূচি পালন করছি।
সমকাল: রাজপথে তো সাধারণ মানুষকে সেভাবে নামতে দেখা যাচ্ছে না। তাহলে কোটি কোটি মানুষের সমর্থন কীভাবে বুঝছেন?
ড. মঈন খান: বিষয়টি আজ অত্যন্ত স্পষ্ট। যারা রাজনীতি করে না, তারাও বলছে; এমনকি দেশের বাইরের মানুষও বলছে। আজকের রাজনৈতিক সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি দেখেই তারা এসব কথা বলছে। জাতিসংঘ মহাসচিব, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশ– যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা কী বক্তব্য দিচ্ছে, সেটাও সবাই লক্ষ্য করছেন। কারণ, আজ বাংলাদেশে গণতন্ত্র মৃত– এটা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করাই আমাদের দাবি। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো আবারও প্রহসনের নির্বাচন হবে, সেটা মানুষ মেনে নেবে না।
সমকাল: বিএনপি মহাসচিবসহ অনেক কেন্দ্রীয় নেতা কারাবন্দি, সাজাপ্রাপ্ত, আত্মগোপনে। গ্রেপ্তার অভিযান চলছে। দলীয় কার্যালয়েও তালা। সংকট নিরসনে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের নিঃশর্ত সংলাপের প্রস্তাবও নাকচ। আপনারা কীভাবে এ কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করবেন?
ড. মঈন খান: রাজনীতিতে কঠিন ও সহজ পরিস্থিতি– সবকিছুই মোকাবিলা করতে হয়। সরকার বিএনপিকে দমন করতে বন্দুক, বুলেট, জলকামান, টিয়ার গ্যাসের শেল, হ্যান্ড গ্রেনেড ব্যবহার করছে। বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করতে আরও ব্যবহার করছে প্রশাসনকে। ২৮ অক্টোবরের ক্র্যাকডাউনের পর ১৬ হাজার বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী কারারুদ্ধ। ১৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন। ১৬০টির ওপর মামলা দিয়েছে। তবুও এ প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বিএনপি পিছিয়ে যাবে না। মুক্তিযুদ্ধের সময় কি কঠিন পরিস্থিতি ছিল না? বাংলাদেশের মানুষ জীবন বাজি রেখে পাকিস্তানের অপশাসন দূর করে দেশ স্বাধীন করেনি?
সমকাল: আন্দোলন ছাড়া বিএনপির সামনে আর কোনো বিকল্প নেই– বলছেন আপনারা। রাজপথে বিএনপি নেতাকর্মীর পিকেটিং তো কম।
ড. মঈন খান: জুলুম ও নির্যাতনের কারণে বিএনপির পিকেটিং কম– এটা ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন। বাস্তব চিত্র হচ্ছে, আজকে রাজপথে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করছে। রাষ্ট্রীয় শক্তি– পুলিশ বাহিনী, ডিবিসহ ‘আইনের বাম হাত’কে ব্যবহার করে রাজপথ দখল করে রেখেছে তারা। বিএনপি কিন্তু খালি হাতে শান্তিপূর্ণভাবেই তা মোকাবিলা করছে।
সমকাল: লাগাতার অবরোধ দিয়ে তো ২০১৪ সালেও নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায় করতে পারেননি। এবার কীভাবে সফল হবেন?
ড. মঈন খান: একটু অপেক্ষা করুন। সব দিক বিবেচনা করে যেভাবে এগিয়ে গেলে এ স্বৈরাচারী সরকারকে মোকাবিলা করা যায়, ঠিক সেই ধরনের কর্মসূচি দেওয়ার চেষ্টা আমরা করছি। একটি কথা স্পষ্ট করতে চাই, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলন হবে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ার বাইরে বিএনপি কোনো আন্দোলনে বিশ্বাস করে না।
সমকাল: সরকার যদি দাবি না মেনে তপশিলের সময়সীমা পুনর্নির্ধারিত করে, তাহলে আপনারা কি নির্বাচনে যাবেন, নাকি আন্দোলনের কর্মসূচি অব্যাহত রাখবেন?
ড. মঈন খান: বর্তমান পরিস্থিতিতে এই প্রহসনের নির্বাচনে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। তবে বিএনপি কিন্তু কোনো দিন বলেনি, তারা নির্বাচনে যাবে না। বিএনপি যেটা বলেছে, সেটা হলো– তারা একটি সাজানো প্রহসনের নির্বাচনে যাবে না। এটা শুধু বিএনপি নয়; বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ বিশ্বাস করে, বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে না।
সমকাল: আগামী দিনে কোন ধরনের কর্মসূচি দেওয়া হবে?
ড. মঈন খান: আগামী কর্মসূচির বিষয় নিয়ে আমরা গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করছি। এখানে বুঝতে হবে, একদিকে বিএনপি জনগণের দল হিসেবে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে বদ্ধপরিকর; অন্যদিকে সরকার রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, নেতাকর্মীর বাড়ি বাড়ি গিয়ে জুলুম-নির্যাতন করে তাদের শুধু নয়, তাদের স্বজনকেও কারাগারে পাঠাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে আমাদের অবশ্য চিন্তা করতে হবে, এ আন্দোলন কীভাবে পরিচালনা করব; কোন প্রক্রিয়ায় এগিয়ে গেলে এ সরকার তাদের ভুলগুলো বুঝতে পারবে। আমাদের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন হবে সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক ও নিয়মতান্ত্রিক পন্থায়।
সমকাল: আপনারা ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো আর নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না বলেছিলেন।
ড. মঈন খান: নির্যাতন মোকাবিলা করে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। আওয়ামী লীগ প্রহসনের নির্বাচনের পরিকল্পনা করে ফেলেছে এবং সেটা নির্বাচনের ফলও নির্ধারণ করে ফেলেছে। ঢাকা থেকে চারটি কম্পিউটারের বাটন ক্লিক করা হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ডিসি, এসপি, ইউএনও এবং ওসি– এই চারটি বাটনে ক্লিক করলেই নির্বাচনী এলাকার কম্পিউটারে রেজাল্ট শিট প্রিন্ট হয়ে বের হয়ে আসবে।
সমকাল: যুগপৎ আন্দোলনে থাকা কোনো কোনো দল নানা লোভনীয় প্রস্তাব ও চাপে নির্বাচনে যাচ্ছে। ‘কিংস পার্টি’খ্যাত দলগুলোতে বিএনপির সাবেক নেতা কেউ কেউ গেছেন। এতে আন্দোলন ক্ষতিগ্রস্ত হবে না?
ড. মঈন খান: কিংস পার্টি তৈরি করে গৃহপালিত বিরোধী দল দিয়ে সত্যিকার গণতান্ত্রিক সংসদ ও সরকার হতে পারে না। জনগণ এরই মধ্যে তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। এরা কখনও রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিল না, ভবিষ্যতেও থাকবে না। সরকার তো ১৫ বছর ধরে বিএনপিকে ভাঙতে চেষ্টা করেছে। তারা কি ১৫ জন গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে নিতে পেরেছে?
সমকাল: এমনিতেই দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা নাজুক। এর মধ্যে টানা অবরোধ ও হরতাল চললে অবস্থা আরও খারাপ হবে না?
ড. মঈন খান: অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নাজুক করেছে সরকার। তারা লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। ব্যাংকগুলো ফোকলা হয়ে ডুবতে বসেছে। অন্যদিকে লাখ লাখ কোটি টাকার কাগুজে নোট ছাপিয়ে বাজার সয়লাব করে ফেলেছে। সর্বস্তরেই চরম দুর্নীতি করেছে। মেগা প্রজেক্টের নামে মেগা দুর্নীতি হয়েছে। অর্থনীতির দুরবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে হলে সরকারকে নীতি পরিবর্তন করতে হবে।
সমকাল: অনেকে বলেন, অর্থনৈতিক এ নাজুক পরিস্থিতিতে বিএনপি ক্ষমতায় এলেও পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাতে পারবে না।
ড. মঈন খান: এটা নির্ভর করবে নেতৃত্বের ওপর। আমরা যদি দুর্নীতি, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা, লুটপাট বন্ধ করে সততার সঙ্গে ঠিকমতো অর্থনীতির আইনকানুন ও অনুশাসনগুলো অনুসরণ করি, তাহলে নিশ্চয়ই অল্প সময়ে অর্থনীতিকে দৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে পারব।
সমকাল: যুগপৎ কর্মসূচিতে না থাকলেও জামায়াতে ইসলামী আপনাদের সঙ্গে মিল রেখে মহাসমাবেশ ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে। পর্দার আড়ালে তাদের সঙ্গে কোনো সমঝোতা হয়েছে কি?
ড. মঈন খান: আমি তো প্রশ্ন করব, জামায়াতের সঙ্গে সরকারের কোনো সমঝোতা আছে কিনা– সেটাই আজকে বিবেচ্য বিষয়। জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের কথা বলছে। সত্যিকার অর্থে যদি আইনগত বিশ্লেষণ করা হয়, জামায়াতের নিবন্ধন তাদের আদালত বাতিল করেনি। তারা বলেছে, জামায়াতের আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না। সে কারণে শুনানি বাতিল করা হয়েছে। দলটির নিবন্ধন বাতিলের প্রশ্ন আজও অনিষ্পন্ন রয়ে গেছে।
সমকাল