দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন দৌড়ে আছেন এক ডজন পুলিশ কর্মকর্তা। তাদের মধ্যে সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক, অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, এসপিসহ বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের কেউ কেউ অনেক আগে থেকে এলাকায় তৎপরতা চালাচ্ছেন। রাজনীতিকদের পাশাপাশি এসব পুলিশ কর্মকর্তা দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করায় এলাকায় শুরু হয়েছে নানা মেরূকরণ।
জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে চাকরি থেকে অবসর নেওয়া পুলিশের ৮৮ কর্মকর্তা গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সমর্থন করে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে ১৫ মহাপরিদর্শক (আইজিপি), ১৯ অতিরিক্ত আইজিপি, ২৪ উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি), ৩ অতিরিক্ত ডিআইজি, ১১ অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (এআইজি) ও পুলিশ সুপার (এসপি) এবং ১৫ জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) ছিলেন। এবারের নির্বাচনে এসব কর্মকর্তার মধ্য থেকে বেশ কয়েকজন ‘নৌকার মাঝি’ হতে আগ্রহী।
মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, একাদশ সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনে আওয়ামী লীগ থেকে এমপি হন সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক নূর মোহাম্মদ। এ আসনে এবার তাঁর পাশাপাশি টিকিট পেতে আগ্রহী সাবেক ডিআইজি আবদুল কাহার আকন্দ। তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা, জেলহত্যা মামলা, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলা, বিডিআর বিদ্রোহ মামলাসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ছিলেন। আবদুল কাহার আকন্দ বেশ কিছু দিন ধরে এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণাও চালিয়ে আসছেন।
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক শহীদুল হক শরীয়তপুর-১ আসন থেকে মনোনয়নপত্র কিনেছেন। এখানে আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি দলের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য ইকবাল হোসেন অপু। এবার অপুকে টেক্কা দিয়ে মনোনয়ন পেতে আগ্রহী শহীদুল হক। তাঁর ভাই এ কে এম ইসমাইল শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হিসেবে যোগদান করে ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন শহীদুল হক।
বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপির আমলে চাকরি হারানো সাবেক এসপি হাবিবর রহমান। ২০০৮ সাল থেকে তিনি টানা নির্বাচিত হয়ে আসছেন। এবারও আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন হাবিবর।
খুলনা-৪ আসনে (রূপসা-তেরখাদা-দিঘলিয়া) থেকে মনোনয়ন চান সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি শেখ মো. মারুফ হাসান। ওই আসনের বর্তমান এমপি সাবেক ফুটবলার আব্দুস সালাম মুর্শেদী। পুলিশ স্টাফ কলেজের রেস্টর ছাড়াও বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি, ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স), নৌ পুলিশের ডিআইজিসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন মারুফ। তিনি বলেছেন, ৩১ বছরের চাকরি জীবনে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করেছি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসেবে মনোনয়ন পেলে সবাইকে নিয়ে এলাকার উন্নয়নে ভূমিকা রাখব।
সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মোখলেসুর রহমান জামালপুর-১ আসনে (বকশীগঞ্জ-দেওয়ানগঞ্জ) মনোনয়ন দৌড়ে আছেন। তিনি পুলিশ সদরদপ্তরের অতিরিক্ত আইজি (প্রশাসন ও অপারেশন্স) ছাড়াও অপরাধ তদন্ত শাখার (সিআইডি) প্রধান ছিলেন। বাগেরহাট-৪ আসন থেকে নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশী সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি আব্দুর রহিম খান। মুজিবনগর সরকারকে গার্ড অব অনার প্রদান করা মাহবুব উদ্দিন আহমদ (বীরবিক্রম) এলাকায় এসপি মাহবুব নামে পরিচিত। বরিশাল-৫ আসনে নৌকার মনোনয়ন দৌড়ে আছেন তিনি।
এ ছাড়া সাতক্ষীরা-৪ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ আতাউর রহমান। তাঁর বাড়ি সাতক্ষীরার কালীগঞ্জে। এর আগে তিনি উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেন। তাঁর চাচা শেখ আবদুল ওয়াহেদ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ওয়াহেদের আপন ভাতিজা হলেন আতাউর রহমান। এ আসনের বর্তমান এমপি এস এম জগলুল হায়দারও মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
এ ছাড়া পুলিশ কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যরাও একাধিক আসন থেকে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের ছোট ভাই চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মাহমুদ সুনামগঞ্জ-২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। তিনি শাল্লা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। ওই আসনে প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী জয়া সেনগুপ্ত মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। তিনি বর্তমানে সুনামগঞ্জ-২ আসনের এমপি। আরও একাধিক আসন থেকে ডিআইজি, এসপিসহ বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তার স্বজন নৌকার মনোনয়ন ফরম কিনেছেন।
সূত্র : সমকাল