ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যকার সশস্ত্র সংঘাতের কারণে বিশ্ববাজারে বেড়েছে জ্বালানি তেলের দাম। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, এবার তেলের চাহিদা বৃদ্ধি বা উৎপাদন হ্রাসের কারণে নয়, বেড়েছে রাজনৈতিক কারণে। গত শনিবার ইসরাইলের সঙ্গে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র হামাস গোষ্ঠীর সংঘাত শুরু হওয়ার পর গতকাল সোমবার সকালে বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়ে।
গতকাল সকালে অপরিশোধিত তেল ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ৪ দশমিক ১ ডলার বা ৪ দশমিক ৯৪ শতাংশ বেড়েছে। ইউএস টেক্সাস ইটারমিডিয়েট ক্রুড বা ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম বেড়েছে ব্যারেলপ্রতি ৪ দশমিক ২৩ ডলার বা ৫ দশমিক ১১ শতাংশ। ব্রেন্ট ক্রুডের দাম বেড়ে হয়েছে ব্যারেলপ্রতি ৮৮ ডলার ১৫ সেন্ট; ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম বেড়ে হয়েছে ব্যারেলপ্রতি ৮৭ ডলার ৬৯ সেন্ট। অথচ এক দিন আগে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ছিল ৮৪ ডলার ৫৮ সেন্ট।
ফিলিস্তিনের হামাস বাহিনী শনিবার ইসরাইলে গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক হামলার চালিয়েছে। এই হামলার কয়েকশ ইসরাইলি নাগরিক নিহত হয়েছেন এবং এরপর ইসরাইলি সামরিক বাহিনী গাজায় বিমান হামলা চালিয়েছে। এখনও দুই পক্ষের মধ্যে সংঘাত চলছে।
চলতি বছরের জুনের পর তেলের দাম বাড়তে শুরু করেছিল। একপর্যায়ে তা ব্যারেলপ্রতি ৯৭ ডলার ৬৯ সেন্ট হয়। তবে এরপর তেলের দাম আবার কমতে শুরু করে এবং একপর্যায়ে ব্যারেল প্রতি ৮৪ ডলারে নেমে যায়। গত সপ্তাহেও তেলের দাম কমেছে। মূলত বিশ্বজুড়ে উচ্চ সুদহারের প্রভাব নিয়ে শঙ্কার কারণে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম গত সপ্তাহে ১১ শতাংশ ও ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম আট শতাংশ কমেছিল। সেটা ছিল গত মার্চের পর তেলের সর্বোচ্চ দরপতন।
এএনজেড ব্যাংকের বিশ্লেষকরা এক নোটে লিখেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে ভূরাজনৈতিক ঝুঁকি বাড়লে তেলের দামও বাড়বে। তেলের দামে আরও উত্থান-পতন প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
সৌদি আরব ও ইসরাইলের মধ্যে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের যে প্রক্রিয়া চলছিল, এই সহিংসতার জেরে সেই প্রচেষ্টা ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম হতে পারে। কথা ছিল, ওয়াশিংটনের সঙ্গে রিয়াদের প্রতিরক্ষা চুক্তির বিনিময়ে সৌদি আরব ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে।
জানা গেছে, সৌদি আরবের কর্মকর্তারা গত শুক্রবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বলেছেন, ইসরাইলের সঙ্গে প্রস্তাবিত চুক্তির বিনিময়ে তারা আগামী বছরের শুরুতে তেলের উৎপাদন বৃদ্ধি করবে। সেটা বাস্তবায়ন হলে বাজারে তেলের সরবরাহ বাড়বে, দামও কমে আসবে।
তবে সৌদি আরব ও ইসরাইলের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক হলে সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে সম্পর্কোন্নয়নে সম্প্রতি যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তা কিছুটা থিতিয়ে পড়বে। পশ্চিমা নেতারা হামাসের হামলার নিন্দা করেছেন, যদিও ইরান ও তাদের মিত্র লেবাননের হিজবুল্লাহ এই হামলার প্রশংসা করেছে।
ইসরাইলের কর্তৃপক্ষ এই হামলার পেছনে এরই মধ্যে ইরানের সম্পৃক্ততার দিকে আঙুল তুলেছে, বাজারও সেই সম্ভাবনার আশঙ্কা করছে।
অস্ট্রেলিয়ার কমনওয়েলথ ব্যাংকের বিশ্লেষক বিবেক ধর এক নোটে বলেছেন, দীর্ঘ মেয়াদে তেল সরবরাহ ও পরিবহন কমলে তেলের বাজারে লম্বা সময়ের জন্য এই সংঘাত প্রভাব ফেলবে। তিনি আরও বলেন, পশ্চিমা দেশগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে হামাসের হামলার সঙ্গে ইরানি গোয়েন্দা বাহিনীর সম্পৃক্ততার কথা বললে দেশটির তেল সরবরাহ ও রপ্তানি হুমকিতে পড়বে।
এরই মধ্যে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, ইরান ও হামাসের মধ্যে সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। প্রকৃতপক্ষে ইরানের কাছ থেকে বহু বছর ধরে পাওয়া সমর্থন ছাড়া হামাস ‘হামাস’ হতো না। ইসরাইলে হামাসের এই সুনির্দিষ্ট হামলায় ইরানের জড়িত থাকার বিষয়ে তারা এখনও প্রত্যক্ষ কোনো প্রমাণ পাননি। তবে বহু বছর ধরে হামাসের প্রতি ইরানের সমর্থনের বিষয়টি স্পষ্ট।
এদিকে ইসরাইলে হামাসের হামলার পরিকল্পনায় ইরানের নিরাপত্তা বাহিনীর সহায়তার বিষয়ে যে খবর প্রকাশিত হয়েছে, তা অস্বীকার করেছে তেহরান।
হামাস ও ইসরাইল পাল্টাপাল্টি হামলায় এখন পর্যন্ত উভয় পক্ষে প্রায় এক হাজার ১০০ ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। ইসরাইলে নিহত মানুষের সংখ্যা ৭০০ ছাড়িয়েছে। আর গাজায় ৪০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
শেয়ারবিজ