রামজি বারুদ :
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু প্রায়ই দেমাগ দেখিয়ে বলেন, ইসরায়েলের ‘নিরাপত্তা’র প্রতি সব হুমকি মোকাবিলা ও নির্মূল করায় সর্বদাই প্রস্তুত তাঁর সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীও প্রচার চালায়, গাজা থেকে পশ্চিম তীর; লেবানন থেকে সিরিয়া পর্যন্ত সব ফ্রন্টে সব হুমকি সামলাতে তারা সক্ষম। কিন্তু ফিলিস্তিনি সময় শনিবার সকাল ঠিক ৬টায় হামাস তাদেরকে বাজেভাবে ভুল প্রমাণ করল। বাস্তবে নেতানিয়াহু কিংবা তাঁর সেনারা ইসরায়েলের ভেতরে একা একা যুদ্ধ করা কোনো ফিলিস্তিনি গ্রুপের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি।
ব্যাপারটা বুঝতে ও হজম করতে ইসরায়েলি নেতা, সামরিক কর্তা, গণমাধ্যম এবং সমাজের সময় লাগবে। কিন্তু এখন নেতানিয়াহু মরিয়া হয়ে দেখাতে চাইবেন– ইসরায়েল এখনও শক্তিমান রাষ্ট্র এবং আঞ্চলিক শক্তি এবং তাদের রয়েছে বহুলবন্দিত এক ‘অপরাজেয়’ সেনাবাহিনী। কিন্তু তাঁর পক্ষে সেটা করে দেখানো প্রায় অসম্ভব।
স্পষ্টতই হামাস এবং পরে যোগ দেওয়া ইসলামিক জিহাদের লক্ষ্য ছিল যতটা সম্ভব ইসরায়েলি সেনা ও বসতকার (সেটেলার) আটক করা। সেটা করা মানে নতুন এক প্রতিরক্ষা দেয়াল খাড়া করা, যাতে ইসরায়েলি হামলা কমানো এবং একটা পর্যায়ে ইসরায়েলকে আপসে বাধ্য করা যায়। কিন্তু ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের এই চাওয়া পূরণ করা অপদস্থ প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর জন্য অনেক কঠিন।
আল কাসাম ব্রিগেডের কমান্ডার মোহাম্মদ দেইফ থেকে শুরু করে হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইসমাইল হানিয়েহ এবং পরে ইসলামিক জিহাদের জিয়াদ আল-নাখালাহর বিবৃতি বোঝাচ্ছে, ফিলিস্তিনের দাবি খুবই পরিষ্কার ও স্পষ্ট: সব বন্দির মুক্তি; জেরুজালেমে ফিলিস্তিনি পবিত্র স্থানের শুচিতা রক্ষা, গাজা অবরোধের অবসান এবং আরও কিছু।
এসব দাবিকে যৌক্তিক মনে করা উচিত হলেও নেতানিয়াহু এবং তাঁর চরম ডানপন্থি সরকারের পক্ষে তা মেটানো প্রায় অসম্ভব। যদি তিনি রাজি হন, সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর সরকারের পতন ঘটবে এবং ইসরায়েলি রাজনীতি আরেকপাক বিপর্যস্ত হবে। হয় এভাবে, নয় অন্যভাবে; দৃশ্যত পতন আসন্ন।
উগ্রপন্থি প্রতিরক্ষামন্ত্রী, যিনি আল আকসায় অবৈধভাবে প্রবেশ করেছিলেন, সেই ইতামার বেন-ভির মোটামুটি রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে লাপাত্তা। এটা একটা ভালো ঘটনা। যেসব কুখ্যাত লোক আল আকসা মসজিদে, জেরুজালেমের নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর এবং ইসরায়েলের বহু কারাগারে বর্বর আচরণ করেছে, তারা এখন কোণঠাসা। এটা অবশ্যই প্রতিরোধ যোদ্ধাদের একটা অর্জন।
ইসরায়েলে নতুন কোয়ালিশন সরকার নেতানিয়াহুর জন্য আরও ঝামেলাই তৈরি করবে। মন্ত্রিসভা ইতোমধ্যে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। হবু মন্ত্রীরা চাইবেন যুদ্ধ ঘোষণার সঙ্গে নেতানিয়াহু যেন হামাসের চিরঅবসানের অঙ্গীকারও করেন।