বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নানামুখী চাপ মোকাবিলায় চীনকে পাশে চান বামনেতারা। তারা মনে করেন, দেশে আগামীতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মুখ থেকে নানা দফায় উচ্চারিত হলেও তাদের মূল উদ্দেশ্য এই ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করা। সুষ্ঠু নির্বাচন, সুশাসন, মানবাধিকার-এসব বিষয় তাদের কাছে সে ফ একটি উপলক্ষ্য মাত্র।
চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক বিভাগের আমন্ত্রণে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ এবং সাম্যবাদী দলের (এমএল) শীর্ষ নেতারা ২৪ জুলাই কুনমিংয়ের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন। সাত দিনের সফর শেষে তারা ৩০ জুলাই সন্ধ্যায় ঢাকায় ফেরেন। প্রতিনিধিদলে নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি এবং সাম্যবাদী দলের (এমএল) সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া।
এর বাইরে এই প্রতিনিধিদলে আরও ছিলেন ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি, একই দলের লুৎফুন নেছা খান এমপি, তসলিমা খালেদ, জাসদের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আলম স্বপন, একই দলের কুষ্টিয়া জেলা কমিটির সহসভাপতি আহামেদ আলী, সাম্যবাদী দলের পলিটব্যুরোর সদস্য সাইফুল ইসলাম, একই দলের সিলেট জেলা কমিটির সম্পাদক ব্রজগোপাল চৌধুরী, রাজশাহী মহানগরের সম্পাদক ওমর ফারুক।
সূত্র জানায়, সফরের দ্বিতীয় দিনই চীনা কমিউনিস্ট পার্টির দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াবিষয়ক মহাপরিচালক পেনজ জাওবিনের সঙ্গে বৈঠক করেন বামনেতারা। এই বৈঠকটি নানা কারণেই ছিল সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং এই নির্বাচনের আগে মার্কিন ভিসানীতি ঘোষণাসহ তাদের নানামুখী তৎপরতা নিয়ে এ সময় আলোচনা হয়।
জানা গেছে, বৈঠকে একজন শীর্ষ বামনেতা স্পষ্ট করে বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে যে কোনো মূল্যে ক্ষমতাচ্যুত করতে চায়। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন, মানবাধিকার, সুশাসন-এসব কথা তাদের কথার কথা। বামনেতারা বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আসলে এই অঞ্চলে চীনের প্রভাব ঠেকাতে চায় এবং নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে চায়, যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বের কারণে তারা করতে পারছে না।
জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে জাসদ সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু যুগান্তরকে বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে এই সফরের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের, বাংলাদেশের সরকারের এবং এখানকার বামদলের নেতাদের যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে-তা এই সফরের মাধ্যমে প্রকাশ্যে এলো। তিনি আরও বলেন, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে বাংলাদেশের বামপন্থি দলগুলোর সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। এর আগেও চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে আমরা সেখানে গিয়েছি। এটা নতুন কিছু নয়। মাঝখানে করোনাসহ নানা কারণে এই সফর হয়নি। হাসানুল হক ইনু বলেন, আমরা সেখানে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। দ্বিপাক্ষিক এবং আঞ্চলিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করেছি।
সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া এ প্রসঙ্গে যুগান্তরকে বলেন, বামদলের নেতাদের এবারের এই সফরটি নানা কারণেই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমরা বাংলাদেশ ও চীনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে কথা বলেছি। রাজনৈতিক এবং আঞ্চলিক ইস্যু নিয়েও কথা হয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে কোনো মূল্যে এই অঞ্চলে প্রভাব বিস্তার করতে চায় এবং চীনের প্রভাব ঠেকাতে চায়-এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলীয় জোট সরকারের টানা শাসনামলে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নয়ন ঘটেছে। যে কারণে আঞ্চলিক নিরাপত্তা এখন আমাদের জন্য বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের গুরুত্বও অনেক বেড়েছে। সফরে এসব দিকও আলোচনায় উঠে এসেছে।