০৭ জুলাই ২০২৩, ০৪:৪১ পিএম
অপেক্ষার প্রহর শেষে মতিঝিলের পথে পরীক্ষামূলকভাবে চলতে শুরু করেছে মেট্রো ট্রেন। আগামী অক্টোবর মাস থেকে মেট্রো ট্রেন মতিঝিল অংশ পর্যন্ত বাণিজ্যিকভাবে যাত্রা করবে বলে প্রত্যাশা করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সেই লক্ষ্যে ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।
শুক্রবার (৭ জুলাই) বিকেল ৪টা ৩৫ মিনিটে মেট্রোরেলের আগারগাঁও স্টেশন থেকে একটি ট্রেন মতিঝিলের উদ্দেশে হুইসেল বাজিয়ে যাত্রা শুরু করে।
ডিএমটিসিএল জানায়, আজ আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশে মেট্রো ট্রেনের পারফরম্যান্স টেস্টের শুভ সূচনা হতে যাচ্ছে। এখন থেকে এই অংশে আপনারা মেট্রোরেলের পরীক্ষামূলক চলাচল নিয়মিত প্রত্যক্ষ করতে পারবেন। আগামী অক্টোবর মাসের শেষ দিকে প্রধানমন্ত্রী এই অংশের মেট্রোরেল চলাচলের শুভ উদ্বোধন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এই লক্ষ্যে আজ থেকে আগামী ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে পারফরম্যান্স টেস্ট, সিস্টেম ইন্টেগ্রেশন টেস্ট-সিট ও ট্রায়াল রান চলতে থাকবে। এই টেস্টগুলো শুক্রবার দিনে এবং অন্যান্য দিন রাতে করা হবে। টেস্টগুলো চলাকালীন পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে ইতোমধ্যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এর আগে, গত বুধবার (৫ জুলাই) রাতে হঠাৎ কারওয়ান বাজার দাঁড়িয়ে আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের লাইনে মেট্রো ট্রেন চলতে দেখেন অনেকে। এসময় কয়েকটি হুইসেলও বাজায় ট্রেনটি। পরে ডিএমটিসিএলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুক্রবার থেকে এ রুটে টেস্ট রান শুরু হবে। সেজন্য ওইদিন রাতে আগারগাঁও-মতিঝিল রুটে ট্রেন চালানো হয়েছে।
কয়েকদিন আগে একটি অনুষ্ঠানে ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক বলেছিলেন, আপনারা যেকোনো সময় দেখতে পেতে পারেন আগারগাঁও-মতিঝিল লাইনে মেট্রো ট্রেন চলছে। এতে বিচলিত হাওয়ার কোনো কারণ নেই। আমরা শুরুতে টেস্ট রান করব। সেটিতে সফল হলে শুরু হবে ট্রায়াল রান। এরপরই অক্টোবরের যেকোনো সময় থেকে এ রুটে মেট্রো ট্রেন পুরোদমে যাত্রী নিয়ে চলাচল শুরু করবে।
ডিএমটিসিএল সূত্র জানিয়েছে, উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত নয়টি স্টেশন যেভাবে ধাপে ধাপে খুলে দেওয়া হয়েছিল, সেই পদ্ধতি অনুসরণ করেই আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের সাতটি স্টেশন চালু করা হবে। তবে শুরুতে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত সরাসরি চলাচলের কথা আছে। এছাড়া এই পথের বাণিজ্যিক যাত্রা কবে থেকে শুরু হবে সেটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিডিউল পাওয়ার ওপর নির্ভর করবে।
আরও জানা যায়, পরীক্ষামূলকভাবে চলাচল শুরুর আগে মেট্রোরেলের পথ যাচাই করতে হয়েছে। এজন্য আগারগাঁও-মতিঝিল অংশে গত বুধবার কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত পায়ে হেঁটে রেলপথ যাচাই করেছেন প্রকৌশলীরা।
এদিকে, গত ৩০ জুন পর্যন্ত এমআরটি লাইন-৬ এর পর্যন্ত অগ্রগতি সার্বিক গড় অগ্রগতি ৯৫.৩৯%; উত্তরা উত্তর থেকে আগারগাঁও অংশের অগ্রগতি ১০০%; আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের অগ্রগতি ৯৫.২০%; ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল সিস্টেম এবং রোলিং স্টক ও ডিপো ইকুইপমেন্ট কাজের অগ্রগতি ৯০.২৪%; মতিঝিল থেকে কমলাপুর অংশের অগ্রগতি ৭.৫০%।
এমআরটি লাইন-৬ এর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের ৭টি মেট্রোরেল স্টেশনের কাজের অগ্রগতি
বিজয় সরণি মেট্রোরেল স্টেশনের কাজের অগ্রগতি ৯৭%; ফার্মগেট মেট্রোরেল স্টেশনের কাজের অগ্রগতি ৯৮%; কারওয়ান বাজার মেট্রোরেল স্টেশনের কাজের অগ্রগতি ৯৫%; শাহবাগ মেট্রোরেল স্টেশনের কাজের অগ্রগতি ৯৪%; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেট্রোরেল স্টেশনের কাজের অগ্রগতি ৯৭%; বাংলাদেশ সচিবালয় মেট্রোরেল স্টেশনের কাজের অগ্রগতি ৮৬% এবং মতিব্বিল মেট্রোরেল স্টেশনের কাজের অগ্রগতি ৯৫%।
কর্মপরিকল্পনা ২০৩০
সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা ২০৩০ এর আওতায় ইতোমধ্যে চারটি মেট্রোরেল লাইন বাস্তবায়ন করছে সরকার। এগুলো হলো- এমআরটি লাইন-৬, এমআরটি লাইন-১, এমআরটি লাইন-৫; নর্দান রুট এবং এমআরটি লাইন-৫; সাউদার্ন রুট। আরও দুইটি লাইন এমআরটি লাইন-২ এবং এমআরটি লাইন-৪ বাস্তবায়নের জন্য উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা অনুসন্ধান করা হচ্ছে।
বর্তমানে সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল করছে। আগামীকাল শনিবার (৮ জুলাই) থেকে দুটি অতিরিক্ত ট্রেন রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত চলাচল করবে। এরপর ট্রেনগুলো ডিপোতে যাওয়া, স্টেশনের হিসাব-নিকাশ শেষ করার পর রাত ১০টা থেকে পরীক্ষামূলকভাবে চলাচল শুরু হতে পারে, যা চলবে ভোর পর্যন্ত।
শুরুতে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার পথে মেট্রোরেল লাইন নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। পরে তা কমলাপুর পর্যন্ত সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত হয়।
মেট্রোরেল প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। শুরুতে এই প্রকল্পের ব্যয় ছিল প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা। মূলত মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১ দশমিক ৬ কিলোমিটার বাড়তি অংশ নির্মাণ, প্রতিটি স্টেশনের জন্য নতুন করে জমি অধিগ্রহণসহ বিভিন্ন নতুন অনুষঙ্গ যুক্ত হওয়ায় খরচ বেড়েছে। ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। ২০১২ সালে মেট্রোরেল প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। জাপানের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকার সঙ্গে ঋণচুক্তি হয় পরের বছর। পরে ২০১৭ সালে মূল কাজ শুরু হয়।
বর্তমানে দৈনিক গড়ে ৭০ হাজার দেশি-বিদেশি যাত্রী আনন্দ, উচ্ছ্বাস ও প্রয়োজনে মেট্রোরেলে যাতায়াত করছেন। এই সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে এখন দৈনিক গড়ে সরকারের আয় হচ্ছে প্রায় ২৬ লাখ টাকা।