ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল কেন জরুরি

  • তারেকুল ইসলাম
  •  ০৬ জুন ২০২৩, ২০:১৪
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল কেন জরুরি। – ছবি : সংগৃহীত

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক ও সমালোচনা হচ্ছে বহুদিন ধরে। টিআইবিসহ বিভিন্ন মানবাধিকার ও রাজনৈতিক সংগঠন আইনটি বাতিলের দাবি জানিয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। গত বছর একটি দৈনিকের সাথে সাক্ষাৎকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ‘কিছুটা অপব্যবহার’-এর কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আর যাতে অপব্যবহার না হয়, সে জন্য ডিএসএ আইনের অধীনে গ্রেফতার করার আগে অনুমতি নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে’। আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও এই আইনের অপব্যবহার হবে না বলে বারবার প্রতিশ্রুতি দিলেও সেটার বাস্তব প্রতিফলন দেখা যায়নি। কারণ এ বছরের মার্চেই ফেসবুকে দেয়া একটি পোস্টের কারণে সুলতানা জেসমিন নামে এক নারীকে র‌্যাব তুলে নিয়ে যায়। পরে তাকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আটক দেখানো হয়। কিন্তু র‌্যাবের হেফাজতেই ওই নারীর মৃত্যু ঘটে। ময়নাতদন্তে ওই নারীর মাথায় ‘বাহ্যিক আঘাত’ ও ‘মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ’-এর রিপোর্ট আসে। এ আইনের অপব্যবহার সীমাহীন। জেসমিনের ঘটনায় হাইকোর্টে রিট করা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক বলেছেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের (ডিএসএ) অধীনে দায়ের করা মামলার তদন্ত করার কোনো কর্তৃত্ব র‌্যাবের নেই।’ ওই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ প্রশ্ন তুলেছেন, বিনা মামলায় র‌্যাব কি কাউকে আটক করতে পারে? তা ছাড়া র‌্যাব কোন ক্ষমতাবলে জেসমিনকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল তা জানতে চান হাইকোর্ট।

একই সময়ের মধ্যে সিআইডি পরিচয়ে একদল মানুষ প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে মধ্য রাতে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। প্রায় ত্রিশ ঘণ্টা নিখোঁজ থাকার পর তাকে আদালতে হাজির করা হয় এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার দেখানো হয়। কারণ প্রথম আলোর ফেসবুক পেজে পোস্ট দেয়া শামসুজ্জামানের ফটোকার্ডটিতে দেশের বর্তমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও নাগরিক হতাশা নগ্নভাবে ফুটে ওঠে, যা ক্ষমতাসীনদের চোখে ‘অপরাধ’ হিসেবে গণ্য হয়। ফলে তার ওপর নেমে আসে রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের খড়গ। শামসুজ্জামানের জামিনের আবেদন প্রথমে নামঞ্জুর করা হলেও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে তার গ্রেফতার নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ায় এবং দেশ-বিদেশে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় ওঠায় তাকে অবশেষে দ্রুত জামিন দেয়া হয়। এ ইস্যুতে জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক বাংলাদেশ সরকারের কাছে ‘তাৎক্ষণিকভাবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন স্থগিত করা’র আহ্বান জানান।

গত ৩ মে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে ইউনেস্কো, আর্টিকেল নাইনটিন ও টিআইবির উদ্যোগে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রয়োগের শুরুর দিকে ‘মিসইউজ’ ও ‘অ্যাবিউজ’ হয়েছে, এটি সরকার স্বীকার করে। সরকার উদ্যোগ নেয়ায় এর অপপ্রয়োগ আগের থেকে হ্রাস পেয়েছে’ (৩ মে ২০২৩, প্রথম আলো)। কিন্তু বাস্তবতা হলো, র‌্যাবের ওপর স্যাঙ্কশন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহারের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া নজরদারি ও অব্যাহত চাপের ফলেই সরকার বাধ্য হয়েছে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধ করতে এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহারের লাগাম টেনে ধরতে। তার আগ পর্যন্ত দেশের নাগরিক সমাজের নিন্দা, ক্ষোভ ও প্রতিবাদের কোনো তোয়াক্কাই করা হয়নি।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় অভিযুক্ত সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলের গুমের ঘটনাটি এই আইনের চরম ভয়াবহতা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়। সে সময় সাংবাদিক কাজল ছাড়াও মানবজমিনের সম্পাদকসহ ৩২ জনের বিরুদ্ধে একই আইনে মামলা করা হয়। বস্তুতপক্ষে, আইসিটি আইনের নাম পরিবর্তন করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খোলসে ৫৭ ধারার পরিবর্তে আরো কঠোর-কঠিন ধারাগুলো যুক্ত করে রাজনৈতিক কর্মী, লেখক, সাংবাদিক, কার্টুনিস্ট, বক্তা ও যেকোনো নাগরিকের বাকস্বাধীনতা চূড়ান্তভাবে নিয়ন্ত্রণ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে ‘রাষ্ট্রচিন্তা’ নামে একটি সংগঠনের অন্যতম সংগঠক দিদারুল ইসলাম ভূঁইয়া, কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর ও লেখক মুশতাককে র‌্যাব তুলে নিয়ে যায় এবং তাদেরকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দিয়ে কারাবন্দী করা হয়। দিদার ভূঁইয়া ও কার্টুনিস্ট কিশোর পরে জামিনে মুক্তি পেলেও লেখক মুশতাকের মৃত্যু ঘটে কারাগারে বন্দিদশায়। মুশতাকের মর্মান্তিক মৃত্যুতে ক্ষমতাসীনদের দায়ী করে দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক প্রতিবাদ-বিক্ষোভ হয়। জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের উচ্চ কর্মকর্তারা সরকারের কাছে মুশতাকের মৃত্যুর স্বচ্ছ ও স্বাধীন তদন্ত করার আহ্বান জানান।
এ ছাড়া ২০২১ সালের ৯ এপ্রিল কার্টুনিস্ট কিশোরের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ প্রত্যাহার ও অবিলম্বে বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানিয়ে কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে) নামে একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্টে এক পৃষ্ঠার বিজ্ঞাপন ছাপায়।
দেশ-বিদেশে ‘ড্রাকোনিয়ান ল’ হিসেবে নিন্দিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে নিপীড়িতের সংখ্যা অগণিত। এএফপির বরাতে ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ান এক রিপোর্টে জানায়, ২০১৮ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের পর থেকে প্রায় তিন হাজার মানুষের বিরুদ্ধে এ আইনে মামলা হয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ২৮০ জনই সাংবাদিক (৩০ মার্চ ২০২৩, দ্য গার্ডিয়ান)। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো নানা সময়ে নিন্দা ও উদ্বেগ জানিয়েছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘The use of the draconian Digital Security Act on journalists and attacks on some of the largest news publications in the country together indicate a worrying trend towards repression and a downward spiral of the right to freedom of expression in Bangladesh’ (April 12, 2023).

পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন, ভিন্নমত দমনের জন্যই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে। কারণ ইতিমধ্যে যাদের বিরুদ্ধে এই নিবর্তনমূলক আইনের প্রয়োগ ঘটেছে, তাদের অনেকেই ভিন্ন মতাবলম্বী কিংবা সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করার কারণে ভুক্তভোগী হয়েছেন। সরকারের কোনো মন্ত্রী বা প্রভাবশালী ব্যক্তির সমালোচনা করলেও ‘রাষ্ট্রদ্রোহে’র অভিযোগ তুলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যখন-তখন মামলা দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেছিলেন, ‘সরকার বা সরকারের কোনো ব্যক্তির সমালোচনা কখনোই রাষ্ট্রদ্রোহ নয়। সরকারের সমালোচনা করা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোনো অপরাধ নয়। পেনাল কোডের ১২৪(ক) ধারায় রাষ্ট্রদ্রোহের বিষয়টি আছে। সেখানে যা বলা হয়েছে, তা এই আইনের প্রয়োগকারীরা বুঝতে পারছেন না। এখন ভাবমূর্তি ধরে যদি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করা হয় তাহলে কী বলার আছে? পুরো ব্রিটিশ আমলেও ১০০টির বেশি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা হয়নি। আর এখন কথায় কথায় রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ করা হচ্ছে।’ (২ মার্চ ২০২১, ডয়চে ভেলে বাংলা)।

এ ছাড়া জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার কমিটির অভিমত হলো, ‘All public figures, including those exercising the highest political authority such as heads of state and government, are legitimately subject to criticism and political opposition’ (অর্থাৎ সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানসহ সব পাবলিক ফিগার ন্যায়সম্মতভাবেই সমালোচনা ও রাজনৈতিক বিরোধিতার অধীন)।

২০১৮ সালের আগস্টে আলজাজিরায় সরকারের সমালোচনা করে সাক্ষাৎকার দেয়ায় দেশের স্বনামধন্য ফটোগ্রাফার শহিদুল আলমকে ৫৭ ধারায় (বর্তমানে বিলুপ্ত) গ্রেফতার করা হয়। কারাগারে তাকে নির্যাতনের অভিযোগও ওঠে। তার মুক্তির দাবিতে বিখ্যাত বুদ্ধিজীবী নোয়াম চমস্কি ও ভারতীয় লেখিকা অরুন্ধতী রায় যৌথ বিবৃতি দেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ হয়। এমতাবস্থায় ওই বছরের অক্টোবরে তথ্য-প্রযুক্তি আইনের বিতর্কিত ৫৭ ধারা বিলুপ্তিপূর্বক নতুন করে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট করা হয় (বলতে গেলে নতুন বোতলে পুরনো মদ)। তখন থেকে এখনো ডিএসএ নিয়ে বিতর্ক চলমান। এই আইনে বর্ণিত অপরাধগুলো অস্পষ্ট। মূলত বিতর্কিত ৫৭ ধারার কথিত অপরাধগুলোই ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সন্নিবেশ করা হয়েছে। তবে এই আইনের সবচেয়ে ভয়াবহ দিক হলো, পুলিশকে গ্রেফতার করার অবাধ ক্ষমতা দেয়া। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে গ্রেফতারে এখন আর ওয়ারেন্ট লাগে না। ফলে সরকারের কর্মকাণ্ড নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তির্যক মন্তব্য বা সমালোচনা করলেই যে কাউকে তুলে নিয়ে গিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার দেখানো সম্ভব হচ্ছে। এ বিষয়ে মরহুম ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছিলেন, ‘আগে তো এই আইনে মামলা করতে মন্ত্রণালয়ের অনুমতির প্রয়োজন ছিল কিন্তু এখন পুলিশ চাইলেই মামলা করতে পারবে। পুলিশ চাইলেই বিনা মামলায় বিনা ওয়ারেন্টে যে কাউকে গ্রেফতার করতে পারবে। এটা শুধু কালো আইন নয়, বরং কুচকুচে কালো আইনের চেয়েও কালো।’ (৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, যুগান্তর)।

এছাড়া ভাবমূর্তি বা মানহানির মামলার জন্যও সরকারদলীয় মন্ত্রী, এমপি ও প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ বিভিন্ন সময়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন। এ বিষয়ে ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়–য়া বলেছেন, ‘এই আইনটি এমন যে এখানে ভাবমূর্তি বা মানহানির কোনো ব্যাখ্যা নেই। এর ব্যাখ্যা ঠিক করে পুলিশ। ফলে সরকার বা ক্ষমতাশালীরা যেভাবে মনে করে সেইভাবে এটাকে ব্যাখ্যা করা হয়। আসলে এই আইনে সাধারণ মানুষের বিচার পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ২০১৮ সালে এই আইনটি পাস হওয়ার পর সাধারণ মানুষ এর মাধ্যমে বিচার পেয়েছে তার একটিও উদাহরণ নেই। এই আইনে সাংবাদিক, লেখক এমনকি চিকিৎসকদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’ (২ মার্চ ২০২১, ডয়চে ভেলে বাংলা)।

জাতিসঙ্ঘের প্রণীত আইসিসিপিআর তথা নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারবিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশও আছে। এই চুক্তি মেনে চলতে বাংলাদেশ বাধ্য থাকলেও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহারের ফলে আইসিসিপিআরের ১৯ নং ধারার লঙ্ঘন ঘটেছে বারবার, যেখানে সব মাধ্যমে প্রত্যেকের বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। এ ছাড়া চুক্তিটির ৯.৩ নং ধারা বিচারপূর্ব আটক বা হাজতবাস (Pre-trial detention) সমর্থন করে না। কিন্তু আমাদের আইন ও সংবিধান অনুযায়ী কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতার করার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে হাজির করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও ভিন্নমত দমনের ক্ষেত্রে তা মানতে দেখা যায় না। তাই আজকে গুম আর নিখোঁজ যেন একাকার হয়ে গেছে।

আজ ত্রাসের রাজত্ব তৈরির মাধ্যমে কথা বলার অধিকার ও পরিবেশ সঙ্কুচিত করা হয়েছে। একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রে নাগরিক মাত্রেরই ভিন্নমত চর্চার অধিকার রয়েছে। অথচ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের হাতিয়ার ব্যবহার করে ভিন্ন মতাবলম্বী গণমাধ্যম, সাংবাদিক ও লেখকদের কণ্ঠরোধ বা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে, যা সুস্পষ্ট মানবাধিকার লঙ্ঘন। সে কারণেই আইনটির ব্যাপারে পশ্চিমা চাপ অব্যাহত রয়েছে। গত ২১ মে এক সংলাপ অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধন করার ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু সংশোধনের ক্ষেত্রে সরকার ‘একলা চলো’ নীতিতে এগোতে চাইলে সেটা কতটা ফলপ্রসূ হবে তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ থেকে যায়। এ ক্ষেত্রে দেশের নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দকে সম্পৃক্ত করা যেতে পারে। সেই সঙ্গে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে সরকারের প্রতি ২০২২ সালের জুনে জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশন (ওএইচসিএইচআর)-এর প্রদত্ত টেকনিক্যাল নোটের সুপারিশমালা অনুসরণ করতে পারে সরকার। তবে মুক্ত বাতাসে নির্ভয়ে কথার বলার পরিবেশ তৈরি করতে হলে গণমাধ্যম ও বাকস্বাধীনতার মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে কালো আইনটি দ্রুত বাতিলের কোনো বিকল্প নেই।

লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
[email protected]