নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি, মূল্যস্ফীতির নিম্নগতি

  • নয়া দিগন্ত অনলাইন
  •  ০৭ মে ২০২৩, ১১:৪৬, আপডেট: ০৭ মে ২০২৩, ১২:১৫

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সংকটে নানা শ্রেণির মানুষ। রাজধানী ঢাকার বাজারগুলোতে যেকোনো সবজি কিনতে গুনতে হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা। চিনি নিয়ে অস্বস্তি তো আছেই। ভোজ্য তেলের দাম আরেক দফা বাড়ানো হয়েছে। স্বস্তির খবর নেই কোনো পণ্যেই।

এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এপ্রিল মাসের মূল্যস্ফীতির হিসাব প্রকাশ করেছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, মার্চের তুলনায় এপ্রিলে মূল্যস্ফীতি সামান্য কমেছে। এপ্রিলে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে নয় দশমিক দুই-চার শতাংশে। যেখানে আগের মাসে ছিল নয় দশমিক তিন-তিন শতাংশ। মার্চে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল নয় দশমিক শুন্য-নয় শতাংশ। এই হার এপ্রিলে নয় শতাংশের নিচে নেমে এসেছে।

কিভাবে সামাল দিচ্ছেন মানুষ
শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে জানা যায়, বাহারি সবজিতে বাজার ভরপুর থাকলেও বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। এতে বিপাকে পড়েছেন ক্রেতারা। বাজারে প্রতি কেজি টমেটো ৪০ থেকে ৬০ টাকা, বেগুন ৬০ থেকে ৭০ টাকা, পটল ৮০ টাকা, শসা ৬০ টাকা, ধন্দুল ৭০ টাকা, করলা ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ঢেঁড়শ ৬০ থেকে ৮০ টাকা, পেঁপে ৬০ থেকে ৭০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত।

শেওড়াপাড়া কাঁচাবাজারের বিক্রেতা আজিজুল হক বলেন, ‘সবজির দাম আগে থেকে বাড়তি। আমাদের পাইকারি বাজার থেকে বেশি দামে সবজি কিনতে হয়। বাজারে পণ্যের সরবরাহ কিছুটা কম। সবজির দাম নির্ভর করে সরবরাহের ওপর, সরবরাহ বাড়লে দাম কমে যাবে।‘

মসলাজাতীয় পণ্য পেঁয়াজ এবং আদার দামও এক সপ্তাহের ব্যবধানে দশ থেকে কুড়ি টাকা বেড়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের এই মূল্যবৃদ্ধিতে কষ্টে আছেন নির্দিষ্ট আয়ের মানুষ।

বেসরকারি একটি ব্যাংকের কর্মকর্তা রুবিনা আক্তার খান বলেন, ‘কিছু খরচে তো আর আমাদের হাত নেই। যেমন বাচ্চাদের স্কুলের খরচ। সেগুলো তো করতেই হচ্ছে।’ নির্দিষ্ট আয়ে কিভাবে সামাল দিচ্ছেন? জানতে চাইলে ওই ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, ‘আগে যেখানে মাসে একবার বা দু’বার গরুর মাংস কিনতাম, এখন কয়েক মাস হলো কিনিই না। কারণ ৮০০ টাকা কেজি। আবার বাজারে গিয়ে টমেটো বা শশা কিনি না, যেসব সবজির দাম কম সেগুলো কিনি। আগে যেসব মাছ কিনতাম, এখন আর সেগুলো কিনছি না। যেগুলোর দাম কম, শুধু সেই মাছ কিনছি। মুরগি কিনি না, ডিম দিয়েই প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করছি। এভাবেই আয়ের মধ্যে রাখতে হচ্ছে মাসের খরচ।’

তবু মূল্যস্ফীতির হার কেন কমছে?
গত বুধবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো এপ্রিল মাসের মূল্যস্ফীতির হার প্রকাশ করেছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, মার্চের তুলনায় এপ্রিলে মূল্যস্ফীতি সামান্য কমেছে। এপ্রিলে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতিই ছিল সবচেয়ে বেশি নয় দশমিক ৭২ শতাংশ। আর খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল আট দশমিক ৮৪ শতাংশ। মার্চের তুলনায় এপ্রিলে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমেছে। তবে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি আগের মাসের মতোই রয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমার কারণেই মূলত গত মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার আগের মাসের তুলনায় খানিকটা কমেছে। মার্চে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল নয় দশমিক শূন্য নয় শতাংশ। এই হার এপ্রিলে আট দশমিক ৮৪ শতাংশ।

নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির মধ্যেও খাদ্য মূল্যেস্ফীতি কীভাবে কমছে? জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘সবগুলো খাদ্যপণ্য মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব ফেলে না। বিশেষ করে চালের দাম বাড়লে মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব পড়ে। কিন্তু কয়েক মাস ধরে চালের দাম স্থিতিশীল। এমন কী কোনো ক্ষেত্রে কমেছেও। যেসব পণ্যের দাম বাড়ছে, এগুলো মূলত আমদানি পণ্য। যেমন তেল, চিনি, পেঁয়াজ এগুলো খুব বেশি মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব ফেলে না। এ কারণে মার্চের তুলনায় এপ্রিলে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি কমে এসেছে।’

ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম মনে করেন বর্তমান বাজারমূল্যে সব শ্রেণির মানুষের উপর প্রভাবটা সমান নয়।

তিনি বলেন, ‘তিন শ্রেণির ভোক্তা আছে। একটা শ্রেণির হাতে অনেক অর্থ। তারা বাজার করার পরও প্রচুর অর্থ তাদের হাতে থাকে। আরেকটা শ্রেণির হাতে কিছু উদ্বৃত্ত অর্থ থাকে। সেই অর্থ দিয়ে তারা বাজার করছে। আরেকটা শ্রেণি আছে যারা সব সময় ঘাটতিতে থাকেন। এই শ্রেণিটা প্রচন্ড চাপে আছে। এই শ্রেণির মধ্যে নির্দিষ্ট আয়ের মানুষ বেশি, বিশেষ করে চাকরিজীবী। যেমন একজন রিক্সাচালক এমন পরিস্থিতিতে ২০ টাকার ভাড়া ২৫ টাকা নিচ্ছেন, টং দোকানিও চায়ের দাম একটু বাড়িয়ে নিচ্ছেন কিন্তু নির্দিষ্ট আয়ের মানুষ সেটা পারছেন না। ফলে তারাই সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়েছেন।’

সূত্র : ডয়চে ভেলে