এবারের বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের উন্মাদনা ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে। গত দু-একটি বিশ্বকাপেই এ ব্যাপারটা বাইরের দুনিয়ার মনোযোগ কেড়েছিল। এবার যেন মাত্রাটা অনেক বেশি। আর্জেন্টিনার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম বাংলাদেশের মানুষের এই সমর্থন ও ভালোবাসার ব্যাপারটি নিয়েছে খুবই গুরুত্ব ও আন্তরিকতার সঙ্গে। সত্যিই তো সাত-সমুদ্র তেরো নদীর ওপারের একটি দেশের মানুষ যদি এত ভালোবাসা ছড়িয়ে দেয়, সেটি আলাদাভাবে হৃদয় স্পর্শ করে।
আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশকে নিয়ে সংবাদ পরিবেশনা চলছেই। আর্জেন্টাইনরা বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসায় এতটাই বিমোহিত, যে তাদের দেশের সর্বোচ্চ লিগের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে মেসির একটি ছবিতে ফটোশপ করে বাংলাদেশের পতাকা দিয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। আর্জেন্টিনা দলের অফিশিয়াল টুইটারে তো বাংলাদেশের মানুষকে ‘আর্জেন্টাইনদের মতোই ফুটবল পাগল’ বলে সমর্থনের জন্য রীতিমতো কৃতজ্ঞতা জানানো হয়েছে। দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচ নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনিকে বাংলাদেশ নিয়ে প্রশ্নের জবাব দিতে হয়েছে। তিনিও বাংলাদেশের মানুষকে এ নিঃস্বার্থ সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ দিয়েছেন।
আর্জেন্টিনার কোচ এনে আমরা সারা দেশে প্রতিভা অন্বেষণ করতে পারি। আর্জেন্টিনার কোচদের আমরা বাংলাদেশের তৃণমূল পর্যায়ে থেকে ফুটবলার তৈরির কাজে ব্যবহার করতে পারি। আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ তারকাদের বাংলাদেশে এনে ফুটবলের প্রতি তরুণদের আগ্রহ আরও বাড়াতে পারি। বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবল-শক্তির কাছ থেকে আমাদের অনেক কিছু পাওয়ার সুযোগ আছে।
সাধারণ আর্জেন্টাইনরা নিশ্চয়ই ‘বাংলাদেশ’ নামের দেশটার খোঁজখবর করছে। তারা সবাই জানে, যে দেশের ফুটবলপাগল মানুষ তাদের দেশের প্রতি নিঃস্বার্থ সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে, যে দেশের মানুষ আর্জেন্টিনার ফুটবলকে এত ভালোবাসে, ফিফার তালিকায় সে দেশের অবস্থান ১৯০-এর ঘরে। ব্যাপারটা দেখে নিশ্চয়ই বেশ অবাক হচ্ছে তারা। যে দেশের মানুষ ফুটবল এত ভালোবাসে, তারা নিজেরা ফুটবলে কেন এত পিছিয়ে—এমন প্রশ্নও নিশ্চয়ই তাদের মনে আসছে।
তবে এ নিয়ে বাংলাদেশের ফুটবল প্রশাসকেরা খুব সম্ভবত তেমন কিছুই ভাবছেন না। দেশের ফুটবল যে গত ৩০ বছর ধরে ক্রমাগতভাবে পেছনের দিকে হেঁটেছে, সেটি তাদের এতটাই গা-সওয়া, যে নতুন করে আক্ষেপ করার কিছুই দেখেন না তাঁরা। বাংলাদেশের মানুষের প্রতি আর্জেন্টিনার এই আগ্রহ, এই কৃতজ্ঞতাকে তাঁরা তো ব্যবহার করতেই পারেন! আমরা তো বাংলাদেশের ফুটবল উন্নয়নে চাইতেই পারি আর্জেন্টিনার সহায়তা। এ ব্যাপারে গুরুত্ব দিয়ে তাঁরা কী আদৌ ভেবেছেন!
আর্জেন্টিনা বিশ্ব মানচিত্রে অর্থনৈতিকভাবে খুব সমৃদ্ধ দেশ নয়। বরং কয়েক দশক ধরে অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাওয়া একটি দেশ। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ-সংকট বাংলাদেশের মানুষের কাছে নতুন একটি সমস্যা। এ নিয়ে অনেক আলোচনা। কিন্তু এই রিজার্ভ-সংকট আর্জেন্টিনাতে দীর্ঘ দিনের সমস্যা। আমরা যেটা আর্জেন্টিনার কাছে চাইতে পারি, সেটি হচ্ছে মেধার সহায়তা। কোচ, কারিগরি সহায়তা বা টেকনিক্যাল সাপোর্ট, বিশেষজ্ঞ সহায়তা ইত্যাদি। দেশের একমাত্র পেশাদার লিগটাকে উন্নত ও প্রতিযোগিতামূলক করতে আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন বা তাদের বিখ্যাত ক্লাব যেমন বোকা জুনিয়র্স কিংবা রিভারপ্লেটের টেকনিক্যাল সহায়তা নিতে পারি। বোকা কিংবা রিভারপ্লেটের একাডেমিতে আমরা প্রতিবছর বাংলাদেশের প্রতিভাবান ফুটবলারদের পাঠাতে পারি।
আর্জেন্টিনার কোচ এনে আমরা সারা দেশে প্রতিভা অন্বেষণ করতে পারি। আর্জেন্টিনার কোচদের আমরা বাংলাদেশের তৃণমূল পর্যায়ে থেকে ফুটবলার তৈরির কাজে ব্যবহার করতে পারি। আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ তারকাদের বাংলাদেশে এনে ফুটবলের প্রতি তরুণদের আগ্রহ আরও বাড়াতে পারি। বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবল-শক্তির কাছ থেকে আমাদের অনেক কিছু পাওয়ার সুযোগ আছে। বিশ্বকাপ বাংলাদেশের মানুষকে যেভাবে আর্জেন্টিনায় পরিচিত করে তুলেছে, সেটিকে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন দেশের ফুটবলের উন্নতিতে ব্যবহার করতেই পারে।
বাফুফে ও এর সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন কি ব্যাপারটি একটু ভেবে দেখবেন?
- নাইর ইকবাল প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সহ–সম্পাদক