বিধ্বস্ত অর্থনীতি, বিপর্যস্ত দেশ

  • ড. আবদুল লতিফ মাসুম
  • ৩০ নভেম্বর ২০২২

অর্থনীতি বিষয়টি জটিল ও কুটিল। অর্থনীতিবিদরা নানা ধরনের বিধি-বিধান ও কলাকৌশল প্রয়োগ করে অর্থনৈতিক বিষয়াদি ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করেন। সাধারণ মানুষ এর হিসাব-নিকাশ খুব কমই রাখে; কিন্তু তাদের জীবনে এর ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া প্রতিফলিত হয় প্রতিদিন। সু-অর্থনীতি জনগণের জীবনে আনে সুখ ও সমৃদ্ধি। আর কু-অর্থনীতির দাপটে তাদের জীবন হয় দুঃখ ও কষ্টের। সামগ্রিকভাবে এর প্রভাবে অর্থনীতি হয় বিধ্বস্ত। দেশ হয় বিপর্যস্ত।

এই সময়ে বিধ্বস্ত অর্থনীতির কবলে বিপর্যস্ত হচ্ছে দেশ। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা কী রকম তা বোঝার জন্য গত কয়েক দিনের কয়েকটি অর্থনৈতিক প্রতিবেদনের দিকে দৃষ্টি দেয়া যাক। বিধ্বস্ত অর্থনীতির সর্বশেষ উদাহরণ হলো- গত ১৭ নভেম্বর সয়াবিন তেল ও চিনির আকাশছোঁয়া আরেক দফা দাম বৃদ্ধি। এতে সয়াবিন তেল লিটারে ১২ ও চিনি কেজিতে ১৩ টাকা বৃদ্ধি করা হয়। উপরন্তু ওএমএসের আটার দাম বাড়ানো হয় কেজিতে ছয় টাকা। গত ১৫ দিনে বাজারে আটা-ময়দা, মসুর ডালের দাম বেড়েছে। এখন বাড়ল তেল, চিনি ও আটার দাম। চালের দাম বেড়েই চলেছে। দেশের বাজারে সয়াবিন তেলের দাম বাড়ছে দুই বছর ধরে। গত জানুয়ারি মাসে ৭৫ টাকা ছিল চিনির কেজি। এখন তা শতক পেরিয়েছে। আরেকটি পিলে চমকানো অর্থনৈতিক দুর্দশার করুণ চিত্র প্রতিফলিত হয়েছে বণিক বার্তার ১৮ নভেম্বরের প্রতিবেদনে। সেখানে বলা হয়, অর্থ ও ডলার সঙ্কটের কারণে স্পট মার্কেটে ৬৩ শতাংশ দাম কমলেও এলএনজি কিনতে পারছে না পেট্রোবাংলা। আন্তর্জাতিক বাজারে এখন প্রতি মিলিয়ন মেট্রিক ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট এলএনজির দাম নেমে এসেছে ২৫ ডলার ৮৮ সেন্টে। পেট্রোবাংলার তরফ থেকে জানানো হয়েছে, স্পট মার্কেটে এলএনজির দাম এখন কমতির দিকে থাকলেও তা কেনার মতো প্রয়োজনীয় অর্থ তাদের নেই।’ বাংলাদেশের সা¤প্রতিক অর্থনৈতিক অবস্থা অনুধাবনের জন্য প্রতীকী অর্থে এক দিনে চারটি প্রধান সংবাদপত্রের দিকে দৃষ্টিপাত করা যাক। গত সপ্তাহে দৈনিক যুগান্তরের একটি প্রধান প্রতিবেদন ছিল অর্থনীতি নিয়ে। শিরোনামটি ছিল এরকম- ‘বিশেষ ছাড়ের পরও খেলাপি ঋণ লাগামহীন, তিন মাসে বাড়ল ৯ হাজার কোটি।’ ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনা ও বৈশ্বিক মন্দার নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলায় বিশেষ ছাড়ের মধ্যেও ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের ঊর্ধ্বগতি লাগামহীন হয়ে পড়েছে। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খেলাপি এক লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। জুন থেকে সেপ্টেম্বর- এই তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৯ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য। ১৩ নভেম্বর ২০২২ প্রতিবেদনটি অনুমোদন করা হয়েছে। এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, খেলাপি ঋণ কমাতে ঢালাও সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। করোনার কারণে গেল বছরও ঋণ পরিশোধে ছাড় ছিল। এ ছাড়া ঋণ পুনঃতফসিল, পুনর্গঠনসহ নানা ছাড়ে খেলাপি ঋণ কম দেখানোর সুযোগ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আবার অনেক গ্রাহকের আবেদনে উচ্চ আদালত থেকে খেলাপি না দেখানোর ওপর আদেশ দেয়া হচ্ছে। এসব কারণে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ আসলে কত, তা নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, খেলাপি ঋণ এক লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা।

ওই একই দিনে প্রথম আলোর প্রধান প্রতিবেদনে বলা হয়- ‘সীমিত হয়ে আসছে ডলারের উৎস’। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, গত এপ্রিলে শুরু হওয়া ডলার সঙ্কট এখনো কাটেনি; বরং দিনে দিনে তা প্রকট হচ্ছে। আগে সঙ্কট মেটাতে ব্যাংকগুলো বেশি দামে প্রবাসী আয় এনে আমদানি দায় শোধ করছিল। এখন সেই সুযোগও বন্ধ হয়ে গেছে। প্রবাসী আয়ে ডলারের সর্বোচ্চ দাম বেঁধে দেয়া হয়েছে। এতে কমেছে প্রবাসী আয়, রফতানিও নি¤œমুখী। বিদেশী ঋণ ছাড়ও কমে গেছে। পাশাপাশি বিদেশী ব্যাংকগুলো ঋণসীমা কমিয়ে এনেছে। ফলে ডলার সংগ্রহের উৎসগুলো একে একে সঙ্কুচিত হয়ে পড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খোলা কমিয়ে দিয়েছে ব্যাংকগুলো। পাশাপাশি ডলার সঙ্কটে আমদানি দায় পরিশোধও পিছিয়ে দেয়া হচ্ছে। আগে ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো এলসি খুলতে সমস্যায় পড়ছিল। এখন বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোও খাদ্যপণ্য আমদানির ঋণপত্র খুলতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছে। যেসব ব্যাংকের রফতানি আয় নেই, তারা ঋণপত্র খুলছে না। এপ্রিল থেকে এখন পর্যন্ত ব্যাংক খাতে ডলারের দাম ৮৬ থেকে বেড়ে ১০৭ টাকায় উঠেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার সঙ্কট কাটাতে নানাভাবে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করছে। পাশাপাশি সরকারি আমদানির জন্য বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ থেকে ডলার বিক্রি করছে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ বা রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার থেকে কমে ৩৪ বিলিয়নের (এক বিলিয়নে ১০০ কোটি) ঘরে নেমে এসেছে।

নয়া দিগন্তের বিশেষ সংবাদদাতা ১৪ নভেম্বর তার অর্থনৈতিক প্রতিবেদনে লিখেন- ‘ডলার সঙ্কটে বাকিতে জ্বালানি পাওয়ার চেষ্টা’। প্রতিবেদনে তিনি বলেন, ক্রমবর্ধমান বৈদেশিক মুদ্রার সঙ্কটের মুখে বাংলাদেশ সরকার তেল রফতানিকারক দেশগুলোর কাছ থেকে বাকিতে তথা বিলম্বে পরিশোধের শর্তে জ্বালানি তেল পাওয়ার চেষ্টা করছে। এর মধ্যে সৌদি আরবের কাছে সাত বিলিয়ন ডলারের জ্বালানি তেল বিলম্বে পরিশোধের শর্তে সরবরাহ পাওয়ার জন্য প্রস্তাব দিয়েছে ঢাকা। ঢাকা সফররত সৌদি স্বরাষ্ট্র উপমন্ত্রী ড. নাসের বিন আবদুল আজিজের কাছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বয়ং এই প্রস্তাব দিয়েছেন। বিলম্বে পরিশোধের ভিত্তিতে জ্বালানি সরবরাহের ব্যাপারে কাতার ও কুয়েতের কাছেও প্রস্তাব দেয়া হতে পারে বলে জানা গেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে জ্বালানি তেল আমদানির নতুন ঋণপত্র স্থাপন ৫১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২.৬২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। একই সময়ে এই খাতের ঋণপত্র নিষ্পত্তি ১১১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২.৯৭ বিলিয়ন ডলারে। পেট্রোলিয়াম খাতের এভাবে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির প্রভাব পড়ছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও বিনিময় হারের ওপর। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সূত্র থেকে জানা গেছে, বাংলাদেশ প্রাথমিকভাবে মধ্যপ্রাচ্যের তেল রফতানিকারক দেশগুলো থেকে বাকিতে তেল পাওয়ার চেষ্টা করছে। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সাড়া না পাওয়া গেলে রাশিয়ার কাছ থেকে বিলম্বে পরিশোধ অথবা পণ্য বিনিময় ভিত্তিতে জ্বালানি সংগ্রহের বিকল্পকে সামনে রাখা হচ্ছে। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সফরকালে এই প্রস্তাব দেয়া হতে পারে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক ব্রিফিংয়ে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছিল। জানা গেছে, সৌদি স্বরাষ্ট্র উপমন্ত্রী বাংলাদেশে সফরে আসার আগেই রিয়াদের কাছে বিলম্বিত পরিশোধে জ্বালানি আমদানির প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে পাঁচ বিলিয়ন ডলারের বিলম্বিত পরিশোধে জ্বালানি তেল পাওয়ার প্রস্তাব দেয়া হলেও এবার সাত বিলিয়ন ডলারের তেল বাকিতে সরবরাহের কথা বলা হয়েছে। সৌদি উপমন্ত্রী ঢাকায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরাসরি এ প্রস্তাব দিলেন।

দৈনিক নিউ এজ একই বিষয়ে একই দিনে যে শিরোনাম দেয় তা হলো- ‘এনপিএল হিটস ১.৩৪ লাখ ক্রোড় অ্যাজ ডিফল্টারস গো স্কট-ফ্রি’। তাদের প্রতিবেদনের মর্মার্থ হলো- এ বছরের সেপ্টেম্বর নাগাদ খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে ৩১ হাজার কোটিতে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে দেশের অর্থনীতিতে একটি বিপর্যয়ের লক্ষণ সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে ১৩টি ব্যাংকের পুনর্বিন্যাসকৃত দুই হাজার কোটি টাকা রয়েছে। এটি হচ্ছে মূল খেলাপি ঋণের ৭০ শতাংশ। গত সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে এই ঋণের পরিমাণ ছিল এক লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। গত জুন মাসে এর পরিমাণ ছিল এক লাখ ২৫ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ এ সময়ে তেমন কোনো খেলাপি ঋণ আদায় হয়নি। সবচেয়ে মারাত্মক খবর হলো- এক লাখ ১৮ হাজার ৫৫৩ কোটি ডলার খেলাপি ঋণ আদৌ আদায়যোগ্য নয়। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক রক্ষক বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়। গত রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের তরফ থেকে এই প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়। ক্রমবর্ধমান খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বহুমাত্রিক সঙ্কট সৃষ্টি করবে বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করেন। তারা আরো মনে করেন, এর ফলে বিরাজমান ডলার সঙ্কট তীব্রতর হবে। তারা আরো আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এই অনাদায়ী অবস্থা মুদ্রাস্ফীতিকে আরো স্ফীত করবে। অর্থনীতিবিদ সেলিম রায়হান এই অবস্থার জন্য সরকারকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ‘খেলাপি ঋণের বেশির ভাগই হচ্ছে ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণ। এর পেছনে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ক্ষমতাসীন বলয়ের প্রভাব রয়েছে।’ তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এই খেলাপি ঋণের পরিমাণ সামনে আরো বৃদ্ধি পাবে। তার কারণ, ঋণ আদায়ের কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ লক্ষ করা যাচ্ছে না। এ অবস্থা অন্যদেরও অনাদায়ী হওয়ার ক্ষেত্রে উৎসাহিত করবে। সরকার যদি আশু কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তাহলে বর্তমান অর্থনৈতিক সঙ্কট বৃদ্ধি পাবে। তিনি আরো মন্তব্য করেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের এই অনাদায়ী ঋণ আদায় করার স্বাধীন কর্তৃত্ব নেই। বেশির ভাগ অনাদায়ী ব্যক্তি খুবই ক্ষমতাসীন। তারা সরকার ও বড় কর্তাদের সাথে সম্পর্ক রেখে চলেন। জনগণের আস্থা অর্জন করতে হলে খেলাপি ঋণ আদায়ের বিকল্প নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ নিউ এজকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়ে বারবার পাইকারিভাবে পুনঃশিডিউল অনুমোদন করা সঠিক নয়। এতে অন্যেরা ঋণ অনাদায়ে উৎসাহিত হয়। অযৌক্তিক সুবিধা কোনো ক্ষেত্রেই কাজে আসে না।’ তিনি আরো মন্তব্য করেন, ঋণখেলাপিদের বিষয়ে কোনো সুশাসন, যথার্থ পর্যবেক্ষণ ও শৃঙ্খলাবিধায়ক কোনো ব্যবস্থা গৃহীত হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, ভালো ঋণ গ্রহণকারীরা ঋণ পায় না। এতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের অসৎ উদ্দেশ্য প্রদর্শিত হয়। এই সাবেক ব্যাংক গভর্নর পরামর্শ দেন, বাংলাদেশ ব্যাংক অবশ্যই অনাদায়ীদের আর ঋণ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। অনাদায়ীদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কার্যব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। এতে করে খারাপ ঋণের ঊর্ধ্বগতি রোধ করা যাবে।

এ তো গেলো অতিসাম্প্রতিক সময়ের দুরবস্থার বিবৃতি। বিগত প্রায় ১৫ বছরে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যে কুকীর্তির প্রমাণ রেখেছে, তার বর্ণনা করতে গেলে মহাকাব্য রচিত হবে। এই পরিসরে তা সম্ভব নয়। অতি সংক্ষেপে তাদের দুর্নীতি, লুটপাট ও নৈরাজ্যের শাব্দিক উচ্চারণ করব মাত্র। এর মধ্যে রয়েছে- মেগা প্রজেক্টের নামে মেগা দুর্নীতি। দুর্নীতির মহাস্মারক হিসেবে স্থাপিত পদ্মা সেতু। রূপকথাকে হার মানানো রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের তেলেসমাতি। রামপাল কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র ও পায়রা বিদ্যুৎপ্রকল্পের অচিন্তনীয় দুর্নীতি। রেল ও সড়ক নির্মাণে বৈশ্বিক রেকর্ড সৃষ্টিকারী অপচয়। প্রতিটি কাজ ও টেন্ডারে আওয়ামী লুটপাটকারীদের মহোৎসব। অর্থপাচারে অতীতের রেকর্ড অতিক্রম। শেয়ার বাজারের মহাকেলেঙ্কারি। মাল্টি লেভেল মার্কেটিং তথা এমএলএম খাতে জালিয়াতি। জ্বালানি সঙ্কটে মহাদুর্নীতি। গ্যাস ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি করে জনগণের নাভিশ্বাস ইত্যাদি। তাদের অন্যায় ও অনিয়মের আরেকটি উদাহরণ হলো- দেশের সবচেয়ে প্রতিষ্ঠিত ও প্রশংসিত ইসলামী ব্যাংকের জবরদখল।

অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, বাংলাদেশে বিগত কয়েক বছর কৃত্রিমভাবে ডলারের দাম ধরে রাখা হয়েছিল। সর্বশেষ কয়েক মাসের মধ্যে তা লাগামছাড়া হয়ে যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ ৪৮ বিলিয়ন ডলার থেকে নেমে এসেছে ৩৪ বিলিয়নে। বিভিন্ন তহবিল ও বিনিয়োগ বাদ দিলে প্রকৃত রিজার্ভ দাঁড়ায় ২৬ বিলিয়ন ডলার। একটি সর্বশেষ পরিসংখ্যানে এই তথ্য জানা যায়।

এই দুর্বিষহ দুর্নীতি ও দুঃশাসনে মানুষের জীবন দুঃসহ হয়ে উঠেছে। দ্রব্যমূল্যের ক্রমবর্ধমান শনৈঃশনৈঃ বৃদ্ধি জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানির জন্য অকল্পনীয় খরচ করে এখন জনগণকে বিদ্যুৎবিহীন দিন-রাত্রি যাপনে বাধ্য করছে। জ্বালানি তেল ও গ্যাসের নামে অকাতরে অর্থ খরচ করে তারা দেশটাকে অথৈ কষ্টে ফেলেছে। মানুষকে ভাতে মারার ও পানিতে মারার কৌশলে ক্রমেই দুর্ভিক্ষের দিকে ধাবিত হচ্ছে দেশ। বহু আস্ফালনের পর আইএমএফের লোনের জন্য নতজানু নীতি অনুসরণ করছে বাংলাদেশ। ‘শ্রীলঙ্কা হবে না’ বলে যা বলা হচ্ছে তা আদর্শলিপির নীতিবাক্য, ‘খলের আশ্বাস বাক্য না করিবে বিশ্বাস’কে মনে করিয়ে দিচ্ছে। অর্থনীতিবিদ ও বিদ্বজনরা অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য পরিবর্তনের কথা বলছেন। রাজনীতিবিদরা আন্দোলন করছেন। সত্যিই যদি এই বিধ্বস্ত অর্থনীতি ও বিপর্যস্ত দেশকে উদ্ধার করতে হয় তাহলে সর্বাত্মক মুক্তির আন্দোলন ব্যতীত উপায় নেই, যে আন্দোলন আদর্শের আইন ও ভালো মানুষের শাসন নিশ্চিত করবে।

লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]