বিশ্ববাজারে খাদ্যের দাম কমলেও বাংলাদেশে বেড়েছে

  • সাইফুল ইসলাম তানভীর
  •  ০২ নভেম্বর ২০২২, ২০:০৭

সম্প্রতি জাতিসঙ্ঘের কৃষিবিষয়ক সংস্থা এফএও প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে- বিশ্ববাজারে চাল গমের দাম কমেছে। দুঃখজনক, বাংলাদেশে বেড়েই চলছে। ৩০ অক্টোবর জাতিসঙ্ঘের ওই প্রতিবেদনের উদ্বৃতি দিয়ে দেশের নামকরা এক জাতীয় দৈনিক পত্রিকা সংবাদও প্রকাশ করেছে।

এই প্রতিবেদন থেকে জানা গেল, খাদ্য মন্ত্রণালয় রাশিয়া থেকে অতিরিক্ত দামে পাঁচ লাখ টন গম আমদানির চুক্তি করেছে। যে সময় এই চুক্তি রাশিয়ার সাথে বাংলাদেশ করেছে তখন রাশিয়া অন্যান্য দেশে কম দামে গম বিক্রি করছিল। ইতোমধ্যে সেই পাঁচ লাখ টনের এক লাখ টন চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছেছে। এ ছাড়াও ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে দানাদার খাদ্যশস্য চাল গম ইত্যাদি আমদানির চুক্তি করেছে বাংলাদেশ।

ওই প্রতিবেদন পড়ে বোঝা গেল, বাংলাদেশ সরকার খাদ্যশস্য কম দামে আমদানি করতে ও খাদ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে কত সাঙ্ঘাতিক ব্যর্থ হয়েছে । প্রায় ১৪ বছর ধরে দেশের নাগরিকরা অনেক মন্ত্রীদেরও চিনতে পারেননি। কে কোন মন্ত্রণালয় চালাচ্ছেন, কার বাড়ি কোথায়, কার কি দায়িত্ব। তাদের জবাবদিহিতাও নেই। ভোট ব্যবস্থা বিলীন হওয়ায় সংসদ সেটিও অকার্যকর অবস্থায়। পুরো রাষ্ট্রের পরিস্থিতি টালমাটাল। যেন একটি অকার্যকর রাষ্ট্র।

ব্যবসায়ীরা খাদ্যশস্য আমদানি করবেন তাদের শুল্ক হ্রাস করা হয়েছে। কিন্তু তার প্রভাব বাজারে নেই। আজকে মধ্যবিত্তরাও টিসিবির লাইনে দাঁড়াচ্ছে। কাল মার্কস সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর কয়েকটি নাম দিয়েছেন। সেটিই আমরা ব্যবহার করছি। উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত- এসব শ্রেণীর নাম। এখন উচ্চবিত্ত বাদে অন্য বিত্তরা হাহাকার পরিস্থিতির শিকার। টাকার মূল্য হ্রাস পেয়েছে মোটাদাগে। নাগরিকদের আয়ও কমেছে, বাড়েনি। দেশে কয়েক কোটি বেকার। ব্যবসায়-বাণিজ্যে চরম মন্দা। অবশ্যই লুটপাটকারী তথাকথিত কিছু সংখ্যক কোম্পানির ব্যবসায় বেশ ভালো। যেমন- বিদ্যুৎ থেকে লুট করা একটি পরিবার সিঙ্গাপুরের অন্যতম শীর্ষ ধনী হয়েছে। সরকার ঘরানার এরকম কয়েকটি কোম্পানি আছে। আমরা অতীতে দেখেছি, চালের দামের থেকে আটার দাম কম থাকে। কিন্তু এখন চালের দামের থেকে আটার দাম বেশি হয়েছে। এখন সব দোষ হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেনের। লুটপাটকারীরা লুটপাট করে যখন সব কিছুর দাম বাড়িয়েছে তখন তারা কখনো বিএনপি-জামায়াতের দোষ দিয়েছে। কখনো রোহিঙ্গাদের ওপরও দোষ চাপিয়েছে। আটার দাম যে যে কোম্পানি বাড়াচ্ছে তারা সরকার ঘরানার। তারা ইচ্ছেমতো আটার দাম, সয়াবিন তেলের দাম বাড়িয়ে নিয়েছে। নেপথ্য লুটপাট। কমিশন ইত্যাদি।

একটি দেশের স্বাধীনতার বয়স ৫১ বছর। আজ দেশের যে পরিস্থিতি তাতে বুঝতেই অসুবিধা হচ্ছে এই দেশ স্বাধীন! চারদিকে ক্ষুধার্ত মানুষের ঢল। বহু প্রতিষ্ঠান বেতন দিতে পারছে না। সরকারের রোষানলের শিকার মিডিয়াও, অনেক প্রতিষ্ঠান কর্মীদের বেতন দিতে পারছে না। ওইসব মিডিয়া সরকারি বেসরকারি বিজ্ঞাপন পায় না। অন্যদিকে রয়েছে চাটুকার মিডিয়া, এরা আবার বেশ আরামে আছে। তারা সুপারশপ থেকে বিলাসী সব পণ্য কিনতে পারছে।
সরকার রাষ্ট্রযন্ত্রকে এমনভাবে সাজিয়েছে তাতে দেশের বেশির ভাগ মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে। অপর দিকে, সরকারের কাছের স্বজনরা, চাটুকাররা আমুদে বিলাসী জীবন যাপন করছে। এমন পরিস্থিতি থেকে আমাদের উদ্ধার হওয়া সময়ের দাবি।