দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নাভিশ্বাস

  • রিন্টু আনোয়ার
  •  ০৬ মার্চ ২০২২, ২০:০৯

– ছবি : নয়া দিগন্ত

সামনে রোজা। স্বস্তির খবর নেই কোনো বাজারেই। চাল-তেল থেকে মাছ-সবজি সব বাজারেই কারসাজি। নোংরা চাতুরি। রমজানে ভোজ্যতেল, ছোলা, চিনি, মসলাসহ অনেক পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। ফলে এক দিকে মুক্তবাজার অর্থনীতির তকমা, আরেক দিকে সরকার মাঝে মধ্যে চাল-তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম ঠিক করে দেয়। এতে বাজারে উল্টো বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ে। দাম আরো বাড়ে। বাংলাদেশে একবার কোনো পণ্যের দাম বাড়লে তা আর কমে না। কমতে চায় না। সোজা করে বললে, কমতে দেয়া হয় না। উপরন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে সব জিনিসের দাম বেড়ে গেছে উল্লেখ করে কারসাজিকে ন্যায্যতা দেয়া হয়। এক দিকে সরকার, বাজার অর্থনীতির কথা বলে আবার অসাধু ব্যবসায়ীরা নিত্যপণ্যের দামে কারসাজি বা সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দেয়, যা জাতির সাথে রীতিমতো মশকরা।

ন্যায্যমূল্যে দ্রব্য বিক্রির গাড়ির পেছনে মানুষের দীর্ঘ লাইন, কিংবা তা ধরার জন্য প্রাণপণ দৌড় দেখে কে বলবে, এ দেশে মানুষের মাথাপিছু আয় আড়াই হাজার ডলার ছাড়িয়ে গেছে? সম্প্রতি সরকার ঘোষণা করেছে দেশের বার্ষিক মাথাপিছু আয় এখন দুই হাজার ৫৯১ মার্কিন ডলার। অথচ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ধকলেই খোলস ছেড়ে বেরিয়ে পড়ল মানুষের আয়ের আসল চিত্র। যদি সত্যিই আয় বেড়ে থাকে তা হলে মানুষ কেন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির চাপ নিতে পারছে না? নাকি নিমিষেই আয় কমে গিয়ে আমরা দরিদ্র হয়ে যাচ্ছি? সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের এক গবেষণায় উঠে এসেছে, কোভিড-১৯-এর কারণে গত বছর থেকে এ পর্যন্ত বেকার হয়েছেন ২৬ লাখের বেশি মানুষ। কর্মজীবীদেরও আয় কমেছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে।

সমস্যা হলোÑ আমরা সবসময় প্রচারমুখী ও গড়ভিত্তিক সংখ্যাতত্ত¡ দিয়েই অর্থনীতিকে বিচার করি। মানুষের আয় ব্যতিরেকে বৈষম্য, ভঙ্গুরতা কিংবা সম্মানবোধকে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি না। একসময় অর্থনীতিতে শুধু সংখ্যার বিচারেই দারিদ্র্য মাপা হতো। নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করে আয় করতে পারলে ধরা হতো, তিনি দরিদ্র নন, নিম্নমধ্যবিত্ত বা মধ্যবিত্ত। তবে এখন পরিস্থিতি পরিবর্তন হয়েছে। এখন বিশ্বব্যাপী মানুষের আয়ের পাশাপাশি এসব বিষয়কেও বিবেচনায় নেয়া হয়।

বাস্তবতা হলো, বর্তমানে দেশে নিত্যপণ্যের লাগামহীন দামে দিশেহারা মানুষ। দিনকে দিন বেড়েই চলেছে জীবন যাত্রার ব্যয়। সব কিছুর দাম বাড়লেও বাড়ছে না কেবল মানুষের আয়। এ অবস্থায় বিশেষ করে শহরের স্বল্প আয়ের মানুষের টিকে থাকা দায় হয়ে গেছে। ভালো নেই মধ্য আয়ের কর্মজীবী মানুষও। শুধু খাদ্যদ্রব্য নয়, জীবনযাপনে প্রয়োজনীয় সব কিছুর দামই হু হু করে বাড়ছে। এতে নাভিশ্বাস উঠেছে মধ্য আয়ের মানুষেরও। মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা আয় করা ব্যক্তিরাও এখন সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। বাসা ভাড়া, সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ, অফিসে যাতায়াতসহ সংসারের যাবতীয় খরচের সাথে যোগ হয়েছে নিত্যপণ্যের লাগামহীন বাড়তি মূল্য।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির ফলে পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়া, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি, সরবরাহ সঙ্কট, উৎপাদন কম হওয়া এবং ডলারের মূল্য বৃদ্ধি দেশের বাজার অস্থির হওয়ার পেছনে প্রধান কারণ। ফলে এমন পরিস্থিতিতে শুধু টিসিবির মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য বিক্রি ছাড়া দ্রব্যমূল্য কমানোর কোনো বিকল্প রাস্তা দেখছে না সরকার। কিছুই করার নেই বলে সম্প্রতি এ বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, তেল, চিনি ও ডাল এই তিনটি পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়েছে বলেই দেশেও এর চাপ পড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে যে পণ্যের দাম বেড়ে গেছে, তা যারা কিনবে তারা তো আর লোকসানে বিক্রি করবে না।

এ দিকে ব্যবসায়ীরা বলছে, সরকার সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে আমদানি শুল্ক কমিয়ে দিলে দাম কিছুটা হলেও কমে যাবে।

কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি মনে করেন, সব মিলিয়ে দেশে একটি নাজুক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। তবে টিসিবির কার্যক্রম বাড়ালে সার্বিক বাজার পরিস্থিতিতে তেমন কোনো ফল না হলেও অন্তত কিছু মানুষ এতে উপকৃত হবে। এ ছাড়া পরিবহন খরচ বৃদ্ধি, সরবরাহ সঙ্কট, উৎপাদন কম হওয়া, ডলারের মূল্য বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে দেশের বাজারে পণ্যের দাম বাড়ছে। তা ছাড়া আমদানি পণ্যের মূল্য বাড়লে ট্যাক্সের পরিমাণও বেড়ে যায়। এটি বাজারের অন্যান্য পণ্যের দামেও প্রভাব ফেলে। করোনা সঙ্কটও এর জন্য দায়ী। এ অবস্থায় সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে, যাতে সাধারণ মানুষ স্বস্তিতে থাকে। বেশি জোর দিতে হবে মানুষের কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে, যাতে মানুষের আয়-রোজগার বাড়ে।

কিন্তু বাস্তবতা হলো, আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলানোর দুর্বিষহ সন্ধিক্ষণে উন্নয়ন আর জীবন বাঁচানোর অর্থনীতি, মাথাপিছু আয়ের সাথে সেবা ও নিত্যপণ্যের দামের ঘোড়দৌড় যার দৃশ্যায়ন হয় টিসিবির ট্রাকের পেছনে মাস্ক বা মাফলারে মুখ লুকিয়ে দীর্ঘ লাইনে থাকা চেহারাগুলোতে। মাস্কে বা মাফলারে মুখ ঢেকে মাথার পেছনে ২৯ হাজার ৪৩০ টাকা আয় নিয়ে তারা সামনে দেখেন টিসিবির ট্রাক। গত মাস কয়েক ধরে চাল, ডাল, তেল, পানি থেকে পান-সুপারি পর্যন্ত বেশির ভাগ নিত্যপণ্যের দামের চণ্ডালতায় কাহিল তারা। মাথার পেছনের আয়ের গড়ের অঙ্কে তারা ‘সামর্থ্যবান’। আয়ের অঙ্কটা মাথার পেছনে বলে তারা তা চোখে দেখেন না, মাথার সামনে থাকলে দেখতেন- বিষয়টি এমন? আবার নিত্যপণ্যের এমন দামের প্রতিবাদে রাস্তায় তেমন কোনো ক্ষোভ-বিক্ষোভও নেই। তার মানে, তারা সব মেনে নিয়েছেন? সামর্থ্য আছে বলেই তো কেনাকাটা করছেন। বাজারে কি অবিক্রীত কিছু থাকছে?

দেশে বিভিন্ন সময় মন্ত্রী বচনে ঢাকা শহরের বাথরুমে গিয়ে সিঙ্গাপুর দেখা বা বাংলাদেশের মানুষ বেশি ভাত খায় বলে চালের দাম বেড়ে গেছে, এমন যুক্তিও আছে। সম্প্রতি কৃষিমন্ত্রী জানিয়েছেন, সারের মূল্যে ভর্তুকি টানতে গিয়ে সরকারের খুব দুর্গতি হচ্ছে। ইশারা বা ইঙ্গিত নয়, সামনে সার-বীজসহ কৃষি খাতে কী খড়গ আসতে পারে সেই বার্তা স্পষ্ট তার বক্তব্যে। এর আগে বলেছেন, চালের এত দাম বৃদ্ধির পরও দেশে কোনো হাহাকার নেই, আয় বেড়েছে বলে মানুষের কষ্ট হচ্ছে না। মানুষ এখন গরু-ছাগলকেও চাল খাওয়াচ্ছে।

এরও আগে মানুষ ভাত বেশি খায়; তাই চালের দাম বাড়ছে বলেও মন্তব্য করেছিলেন তিনি। আবার বাণিজ্যমন্ত্রীসহ তার সহকর্মীরা যেমন মাঝে মধ্যে বলছেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের কিছু করার নেই। মজার ব্যপার হলো- করণীয় কিছু না থাকলেও তারা আবার জাতিকে বাজার নিয়ন্ত্রণের আশ্বাস দেন। কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি-ধমকি দিয়ে সংবাদ শিরোনামে আসেন। আগামী রমজানে স্থিতিশীল বাজারের আশাও দেখান। কিন্তু মানুষের অসহায়ত্বের সাথে এমন মশকরা না করলেই নয়?

ক’দিন পরপর বাণিজ্যমন্ত্রীর বিশেষ কাজই যেন কোনটার দাম কেন বেড়েছে এবং দুই দিন পর কেন আরো বাড়বে, সেই যুক্তি দেয়া। এরপর আবার দেখা যায়, তিনি কোনো পণ্যের নাম মুখে নিলেই সেটার দাম বেড়ে যাওয়ার দৃষ্টান্ত তৈরি হচ্ছে। বলেছেন, চাল নিয়ে টেনশন না করতে। এর দুই দিন পরই চালের দাম বেড়ে গেছে। তেল-পেঁয়াজ নিয়েও একই ঘটনা। মুখের ‘এ ফুলচন্দনের মধ্যে’ তিনি এখন বলছেন, রমজানে নিত্যপণ্যের বাজার সহনীয় থাকবে। এতে রমজানে নিত্যপণ্যের কী দশা হতে পারে? এ নিয়ে আগাম টেনশন ভর করেছে জনমনে অনেকের মধ্যেই।

নিদারুণ এই দশার শিকাররা মোটেই এমন বর্তমানের জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। ভাবেনওনি কোনো দিন। একসময় তুলনামূলক কম দামে পণ্য কিনতে একশ্রেণীর নগরবাসীর কেউ কেউ বিভিন্ন বউ-বাজারে ঢু মারতেন। সতর্ক থাকতেন যেন চেনাজানা কেউ না দেখে। অবশ্য বর্তমানে করোনার কারণে মাস্ক তাদের জন্য টিসিবির ট্রাকের পেছনে লাইন ধরতে বা বউ-বাজারে ঢুকতে বেশ লাগসই হয়েছে। এরই মধ্যে বউ-বাজারের নামের সংস্করণ হয়েছে ‘ফকিন্নি বাজার’ নামে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বউ-বাজার, গরিবের বাজার নামে খ্যাত এ ধরনের বাজারে কম দামে নিম্নমানের ডাল, আটা, মসলা, সবজি মেলে। এগুলোর বেশির ভাগ দোকানি নারী হলেও সবাই বউ বা ‘ফকিন্নি’ নন। ক্রেতারাও তা নন। তুলনামূলক কম দামে সদাই কেনার বাজারের রূপক অর্থে নামকরণ হয়ে গেছে বউ-বাজার, হাল সংস্করণ ‘ফকিন্নি’ বাজার।

এসব বাজারের বিক্রেতারা কাওরান বাজার-শ্যামবাজারসহ বিভিন্ন আড়ত বা পাইকারি মোকাম থেকে ঠিকা দরে কিনে আনেন টুটা-ফাটা, উচ্ছিষ্ট বা ফেলে দেয়ার মতো মালামাল। সেগুলোকে বাছাই করে অন্যান্য পণ্যের সাথে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য বিভিন্ন স্থানে পসরা বিছিয়ে বসেন। একসময় এগুলোর কাস্টমারও ছিল নির্দিষ্ট, সীমিত। এখন তা অবারিত। ৫০ থেকে ১০০ গ্রাম বা আরো কম পরিমাণের পণ্যের ‘ভাগা’ও এখান থেকে কেনা যায়। রয়েছে পলিথিনের প্যাকেটে ১০ টাকার তেল কেনার ব্যবস্থাও। আর তাই মাস্কে পোক্ত করে মুখ ঢেকে ঝটপট একটু সদাই সেরে শর্টকাটে কেটে পড়া যাচ্ছে এসব কথিত বউ বা ফকিন্নি বাজার থেকে।

এসব বাজারের অংশীজনরা সবাই নিম্ন বা মধ্যম আয়ের মানুষ নন। উচ্চমানেরও আছেন। করোনার কারণে চাকরিচ্যুত, বেতন অনিয়মিত বা পথে বসা ব্যবসায়ীও আছেন। পরিস্থিতিটা এ শ্রেণীর জীবনকে কোন দশায় নামিয়েছে তার কিছুটা উপলব্ধি করা যায় ঢাকায় বিভিন্ন এলাকায় টিসিবির ট্রাকের পেছনে এবং বউ বা ফকিন্নি বাজারমুখীদের ভিড় দেখলে।

বাঁচার জন্য খেতে যেহেতু হবে, তাই টিসিবি ট্রাকে কিছুটা কম দামে চাল-ডাল-আটা-চিনি-তেল কিনতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য হওয়া ছাড়া আপাতত তাদের বিকল্প নেই। দুর্গতিই যে গতি তা বুঝতে অবশিষ্ট থাকছে না ভুক্তভোগীদের।

একসময় ‘পানির দর’ শব্দযুগল ব্যবহার হতো সস্তার রূপক অর্থে। এখন শহরে পানির দরও আসমানছোঁয়া। হিসাবের খেরোখাতা বলছে, গত ১৩ বছরে ১৪ বার পানির দাম বাড়িয়েছে ঢাকা ওয়াসা। পৌনে ছয় টাকার পানি এখন ১৫ টাকা ২৫ পয়সা। সেবা দেয়ার মুরোদ না থাকলেও পানির দামের মতোই গ্রাহকের স্যুয়ারেজ বিল বাড়াচ্ছে ওয়াসা। পানির দাম বাড়ানোর ব্যাপক যুক্তি আছে ওয়াসার আলোচিত এমডির কাছে। বলেছেন, ‘ভিক্ষা করে সরকারি সংস্থা চলতে পারে না’।

পানির দাম বাড়ানোর বিষয়টি তার কাছে ‘উৎপাদন ব্যয়ের সাথে বাজারমূল্যের সমন্বয়’ যে সমন্বয় করোনা মহামারীর মধ্যে গত দুই বছরে আরো দু’বার করা হয়েছে। পানির দামের সাথে পাল্লা দিয়ে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘ সময় একেই চেয়ারে বসে থাকা এই এমডির বেতনও বেড়েছে ম্যাজিকের মতো। সর্বশেষ করোনার মধ্যে এক লাফে বেড়েছে পৌনে দুই লাখ টাকা। বাড়তিটাসহ তার মাসিক বেতন দাঁড়িয়েছে ছয় লাখ ২৫ হাজার টাকা। এ হিসাবে গত ১২ বছরে মাসিক বেতন বেড়েছে ৪২১ শতাংশ। তা টানতে কি ভিক্ষা মাগতে হয়?

তেলে-জলে মিল না হলেও দাম বাড়াতে কেউ কাউকে ছাড়েনি। তাই গত এক যুগে ছয়বার জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে বিপিসি। গত ১১ বছরে প্রায় আড়াই গুণ বাড়ানো হয়েছে গ্যাসের দামও। পেট্রোবাংলাসহ তিতাস, জালালাবাদ, বাখরাবাদ ও পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস বিতরণ কোম্পানি গ্যাসের খুচরা মূল্য প্রায় ১১৭ শতাংশ বা দ্বিগুণ বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠিয়েছে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে। যেখানে রান্নার জন্য দুই চুলার সংযোগে ৯৭৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে দুই হাজার ১০০ টাকা এবং এক চুলার ব্যয় ৯২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে দুই হাজার টাকা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। বছরের সাথে পাল্লা দিয়ে ১১ বছরে ১০ বার বেড়েছে বিদ্যুতের দাম। ২০১০ সালের তিন টাকার বিদ্যুৎ এখন সাত টাকার ওপরে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী বলছেন, গ্রাহক অসন্তোষ যেন না হয়, সে দিকে লক্ষ রেখে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির কাজ চলছে। প্রশ্ন হলো, কত টাকা পর্যন্ত বাড়ালে গ্রাহক অসন্তোষ হবে না? দুই চুলা গ্যাসের বিল ৯৭৫ টাকা করার সময়ও কি অসন্তুষ্ট হয়েছে গ্রাহক কোনো ব্যক্তিগোষ্ঠীর হাতে নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা চলে গেলে ভোক্তার স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হয়। তাই ভোক্তার সুরক্ষা দিতে হলে বাজার নিয়ন্ত্রণসহ সব ক্ষেত্রে সরকারের দরকার প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি করে দেয়া। অসাধু ব্যবসায়ী বা কোনো মহল যেন বিশেষ করে বাজার নিয়ন্ত্রণে কোনো ধরনের কারসাজি করতে না পারে- টিসিবি, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সে দিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে। কারণ চাল-তেল থেকে শুরু করে সুই-সুতা পর্যন্ত নিত্যপণ্যের দর মানুষকে এখন ঘুমে নয়, সজাগেও আঁতকে তুলছে। সবার মধ্যে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে রীতিমতো নাভিশ্বাস উঠেছে। বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না। ঘরে বা চার দেয়ালের মাঝে হাপিত্যেশ করা ছাড়া কিছুই যেন করার নেই, প্রকাশ্য নেই কোনো প্রতিক্রিয়া। নেই প্রতিবাদ। তার মানে কি মানুষ সব মেনে নিচ্ছে? নাকি তারা অধিক শোকে পাথর হওয়ার মতো অনুভ‚তিশূন্য হয়ে পড়ছে দিনকে দিন?
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট
[email protected]