ঢাকা
বিএনপি নয়, আওয়ামী লীগই বিদেশে লবিস্ট নিয়োগের নামে জনগণের অর্থ ব্যয় করেছে বলে অভিযোগ করে সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছে বিএনপি।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন এ দাবি করেন।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, সরকারের মন্ত্রীদের দাবি, তাঁরা কোনো লবিস্ট নিয়োগ করেননি। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, একটা জনসংযোগ প্রতিষ্ঠানকে কিছু দায়িত্ব দিয়েছেন। কিন্তু তথ্যপ্রমাণ বলে সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের পক্ষে মি. সজীব ওয়াজেদ যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম লবিস্ট ‘অ্যালক্যাডে অ্যান্ড ফো’কে নিয়োগে দেন ২০০৪ সালের ২৯ নভেম্বর, যা কার্যকর হয় ১ জানুয়ারি ২০০৫ থেকে। ২০০৫, ২০০৬, ২০০৭ সালে এই লবিস্ট ফার্মকে চুক্তি স্বাক্ষরকারী হিসেবে তিনি (সজীব ওয়াজেদ) মাসে ৩০ হাজার ডলার হিসেবে সাড়ে ১২ লাখ ডলার, অর্থাৎ ১০ কোটি টাকার বেশি দিয়েছেন।
মোশাররফ বলেন, ‘দেশবাসীর দুর্ভাগ্য যে তাদের ওপর নির্মম অত্যাচার, গুম, খুন, মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে এই জুলুমবাজ অবৈধ সরকার যে অপরাধ করেছে, তা ধামাচাপা দেওয়ার লক্ষ্যে লবিস্টদের নিয়োগের জন্য সেই নিপীড়িত দেশবাসীরই ট্যাক্সের টাকা ব্যয় করছে। সরকার ও সরকারি দল লবিস্ট নিয়োগের নামে জনগণের কী পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেছে এবং তার উৎস কী? তার স্বচ্ছ তদন্ত করে রিপোর্ট জনসমক্ষে প্রকাশ করার জন্য আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি।’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম সারির দুটি লবিস্ট ফার্ম ‘অ্যালক্যাডে অ্যান্ড ফো’ এবং ‘ফ্রিডল্যান্ড’–এর সঙ্গে আওয়ামী লীগের সজীব ওয়াজেদের চুক্তির কিছু কাগজপত্রও তুলে ধরেন খন্দকার মোশাররফ। তিনি বলেন, ‘বহু বছর ধরে নিয়মিত চুক্তিতে কাজ করা লবিস্ট প্রতিষ্ঠান বিজিআর ছাড়াও গত বছরের সেপ্টেম্বরে দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকের আয়োজন ও সফর বিনিময়ের লক্ষ্যে মাত্র ১ মাসের জন্য ৪০ হাজার ডলার ফিতে নিয়োগ করা হয়েছিল আরেকটি লবিস্ট প্রতিষ্ঠান ফ্রিডল্যান্ডারকে। এই ব্যাপারে কেঁচো খুঁড়তে গেলে আরও বড় বড় সাপ বেরিয়ে আসবে।’
‘বিএনপি লবিস্ট নিয়োগ করেনি’
বিএনপির লবিস্ট নিয়োগের বিষয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, বিএনপি ৮টি লবিস্ট ফার্মের সাথে চুক্তি করেছে এবং তার একটি ফার্মকেই দিয়েছে ১০ লাখ। অন্য ৭টি ফার্ম সম্পর্কে তার বক্তব্য হলো, সব তথ্য আছে। কিন্তু কিছুই দিতে পারেননি তিনি। সত্য তো এই যে বিএনপি কোনো লবিস্ট নিয়োগের সিদ্ধান্তই কখনো নেয়নি, লবিস্ট নিয়োগ করার প্রয়োজনও বোধ করেনি। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী যে অভিযোগ করেছেন, তা বাটোয়াট।’
খন্দকার মোশাররফ বলেন, লবিস্টরা যেসব কথা বলবেন, বিএনপির নেতারা তা নিজেরাই বলে থাকেন এবং তা–ও গোপনে না, প্রকাশ্যে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বিএনপি মহাসচিবের যেসব পত্রের কপি সাংবাদিকদের মধ্যে বিলি করেছেন, তাতেও কোথাও এমন কোনো বক্তব্য নেই, যা তিনি এবং দলের অন্যান্য নেতা প্রকাশ্যে বলেননি, মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়নি কিংবা আন্তর্জাতিক বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেনি।
বাংলাদেশ থেকে লবিস্ট নিয়োগ করা হয়নি ও বাংলাদেশ থেকে অর্থ কোথাও যায়নি দাবি করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সরকার যে অভিযোগ করেছে আমরা (বিএনপি) লবিস্ট নিয়োগ করেছি, তারাও আরও বলেছে যে এখান থেকে কীভাবে আমরা অর্থ প্রেরণ করেছি। আমরা চাই যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইনকোয়ারি করুক। তাদেরটাও ইনকোয়ারি করুক। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই যে আমরা বাংলাদেশ থেকে লবিস্ট নিয়োগ করিনি। তার জন্য বাংলাদেশ থেকে অর্থ কোথাও যায়নি।’
প্রবাসীরা এ দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি, সরকারের নিপীড়ন-নির্যাতনের বিষয়ে সেসব দেশে বিক্ষোভ কিংবা নিজেদের মনের কথা সেখানকার প্রতিনিধির কাছে বলতে পারেন বলে মন্তব্য করেন স্থায়ী কমিটির এই সদস্য।
‘ দূতাবাস থাকা সত্ত্বেও আলাদা করে লবিস্ট নিয়োগ অনৈতিক’
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ সরকারের প্রতিটি দেশে দূতাবাস আছে, জাতিসংঘে স্থায়ী প্রতিনিধির অফিস আছে। তাদের কাজ বাংলাদেশের পক্ষে, বাংলাদেশের ঘটনাবলির পক্ষে ওই সব দেশকে অবহিত করা এবং সেগুলোর ব্যাখ্যা দেওয়া। সেখানে সরকার বা সরকারি দলকে কেন লবিস্ট নিয়োগ করতে হবে, সেটাই প্রশ্ন। দূতাবাস থাকা সত্ত্বেও এভাবে জনগণের অর্থ খরচ করে লবিস্ট নিয়োগ অনৈতিক বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে সরকারের লবিস্ট নিয়োগের খবরের কাটিংও উপস্থাপন করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সেলিমা রহমান উপস্থিত ছিলেন।