কর্তৃত্ববাদের চরিত্র ও কৃতিত্ব

Daily Nayadiganta


বাংলাদেশ ক্রমান্বয়ে ‘কর্তৃত্ববাদী একদলীয় রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে’ বলে মন্তব্য করে ব্রিটেন অভিযোগ করেছে, দেশটিতে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে সম্পর্ক বিরোধপূর্ণ, রাজনৈতিক পদ্ধতি সঙ্ঘাতপূর্ণ এবং অত্যন্ত কেন্দ্রমুখী। পার্লামেন্ট ও স্থানীয় সরকারসহ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান দুর্বল। বিচারিক পদ্ধতি রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর জন্য উন্মুক্ত। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ক্ষমতা পাকাপোক্ত করায় বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ধীরে ধীরে চূর্ণ হতে চলেছে। ২০১৮ সালে প্রবর্তিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে সরকারের সমালোচনাকারী ও সংবাদমাধ্যমকে নিশ্চুপ থাকতে বাধ্য করা হচ্ছে। বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের ঝুঁকি বিষয়ে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র, কমনওয়েলথ ও উন্নয়ন দফতরের হালনাগাদ তথ্যে এসব বলা হয়েছে। বাংলাদেশে বাণিজ্য পরিচালনা করতে গিয়ে ব্রিটিশ ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা কী ধরনের নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক ঝুঁকিতে পড়তে পারেন- এতে বর্ণনা করা হয়েছে। ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দফতরের ওয়েবসাইটে এই ডকুমেন্ট দেখা যাবে। এর আগে ব্রিটেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত মানবাধিকার ও গণতন্ত্রবিষয়ক আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশ সরকার এতে ক্ষুব্ধ হয়। ব্রিটিশ হাইকমিশনার জাভেদ প্যাটেলকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়। বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে ব্রিটিশ প্রতিবেদনকে ‘বিভ্রান্তিকর’ বলে অভিহিত করা হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পশ্চিম ইউরোপ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন-বিষয়ক মহাপরিচালক ফাইয়াজ মুরসিদ কাজি ব্রিটেনের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারকে তলব করে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে ব্রিটিশ মানবাধিকার প্রতিবেদনে ‘গৃহবন্দী’ শব্দটি ব্যবহার করা অত্যন্ত বিভ্রান্তিকর। প্রকৃত বিষয় হচ্ছে, বেগম জিয়ার ভাইয়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার দণ্ডবিধির আওতায় তার কারাদণ্ড স্থগিত রেখে বেগম জিয়াকে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেয়। শর্ত হলো- বেগম জিয়া বাসায় থেকে চিকিৎসা নেবেন এবং বিদেশ ভ্রমণ করতে পারবেন না। কারাদণ্ড স্থগিত রেখে মুক্তির এই সুবিধা প্রথমে ছয় মাস এবং পরবর্তী সময়ে আরো ছয় মাস বর্ধিত করা হয়েছে। আইনগত কোনো বিষয়ে কোনো বিভ্রান্তি থাকলে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করতে ব্রিটিশ হাইকমিশনকে পরামর্শ দেয়া হয়। বাংলাদেশ সরকার বা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সম্পর্কে কোনো ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য অফিসিয়াল ডকুমেন্টে অন্তর্ভুক্ত করা থেকে ব্রিটিশ সরকার যাতে বিরত থাকে সে জন্য অনুরোধ জানানো হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ব্রিটিশ মানবাধিকার প্রতিবেদনে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যা নিয়েও উদ্বেগ জানান। উল্লেখ্য, ব্রিটেনের পররাষ্ট্র দফতর থেকে প্রকাশিত মানবাধিকার ও গণতন্ত্রবিষয়ক সা¤প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্বাধীনতার ওপর বিধিনিষেধ অব্যাহত রয়েছে। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিরোধী প্রার্থীদের ওপর হামলা এবং ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানোর ব্যাপক অভিযোগ ছিল। এ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করায় সরকার ব্রিটিশ হাইকমিশন ও অন্যান্য ক‚টনৈতিক মিশনের সমালোচনা করেছে। নভেম্বরে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনেও ভোটারদের হয়রানি, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। ব্রিটিশ প্রতিবেদনে বেগম জিয়ার অবস্থানকে ‘হাউস অ্যারেস্ট’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। সরকারের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রয়োগেরও সমালোচনা করা হয় ব্রিটিশ প্রতিবেদনে।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থা ও মানবাধিকার সম্পর্কে এ ছিল দু’টি প্রতিবেদন। (১৪/১২ জুলাই, ২০২১) ব্রিটেনের এ প্রতিবেদনটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ ‘কর্তৃত্ববাদ’ শব্দটি খুব সাধারণ অর্থ বহন করে না। একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থায় এ টার্মটি একটি নেতিবাচক শাসন প্রক্রিয়ার প্রতি ইঙ্গিতবহ। সাধারণ প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ সম্পর্কে পাশ্চাত্যের এ ধরনের মন্তব্য নতুন নয়। কিন্তু যখন রাষ্ট্রিক ভাষ্যে এ ধরনের মন্তব্য করা হয় তখন অবশ্যই তাকে গুরুত্ব দিতে হয়। মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকেও সা¤প্রতিককালে এ ধরনের মন্তব্য করা হয়েছে। সাধারণভাবে কর্তৃত্ববাদকে সাদামাটাভাবে ‘কর্তার ইচ্ছায় কীর্তন’ জাতীয় মনে হয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে কর্তৃত্ববাদ আরো কিছু নির্দেশ করে। বিদ্যায়তনিকভাবে কেবল বিষয় নির্দেশক অভিধার পরিবর্তন, পরিমার্জন ও পরিবর্ধন নিয়তই ঘটছে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর বিশেষত ৫০ ও ৬০-এর দশকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নে বিপ্লব ঘটেছে। পুরনো গতানুগতিক টার্মিনোলজি পরিত্যক্ত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় স্বৈরাচার বা একনায়কতন্ত্রের মতো শব্দাবলিকে শৈল্পিক ও মার্জিত করে বলা হয়, কর্তৃত্ববাদ। তবে আমরা যত সহজে স্বৈরাচার বুঝি তত সহজে কর্তৃত্ববাদ বুঝি না। অতি সাম্প্রতিককালে কর্তৃত্ববাদেরও বিশেষণ ‘প্রতিযোগিতামূলক কর্তৃত্ববাদ’।

‘অক্সফোর্ড ডিকশনারি অব পলিটিক্স’-এ অথরিটারিয়ানিজম বা কর্তৃত্ববাদের আলোচনায় বলা হয়েছে- কর্তৃত্ববাদ হচ্ছে এক ধরনের শাসনব্যবস্থা যেখানে সরকার, নাগরিক সাধারণের তরফ থেকে প্রশ্নহীন আনুগত্য আশা করে। এরা নাগরিক সাধারণের বিশ্বাস ও আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করার যৌক্তিকতা প্রদর্শন করে থাকে। তারা ব্যক্তি স্বাধীনতার সামান্যই তোয়াক্কা করে। এরা নিজেদের সুবিধামতো কোনো কোনো ক্ষেত্রে উদার, আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে অনুদার কার্যক্রম গ্রহণ করে। অক্সফোর্ডের ব্যাখ্যায় সেটি হচ্ছে অবজ্ঞাসূচক শব্দ যা সরকার কোনোরকম কোনো যৌক্তিকতা বা আইনানুগ অনুমোদন ব্যতিরেকেই বিজিতভাবে অসহিষ্ণুতার সাথে কার্যকর করে। এভাবে কর্তৃত্ববাদ শব্দটি সেই পুরনো স্বৈরাচারকেই নির্দেশ করে (লিংকন এলিসন : ১৯৯৬ : ৩০)। এবার কমপিটিটিভ অথরিটারিয়ানিজম বা প্রতিযোগিতামূলক কর্তৃত্ববাদ সম্পর্কে কিছু বলা যাক। কর্তৃত্ববাদের সাথে প্রতিযোগিতামূলক শব্দটি সংযোজিত হয় মূলত সোভিয়েত তথা পূর্ব ইউরোপীয় সমাজতন্ত্রের পতনের পর। সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার পতনের পর যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সূচনা হলো তাতে বাস্তবে দেখা গেল, মার্কসীয় কর্তৃত্ববাদের সেই গুণাবলি বহমান রয়েছে। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির স্টিভেন লেভিটস্কি এবং টরোন্টো বিশ^বিদ্যালয়ের লুসান এ ওয়ে সমাজতন্ত্র পরবর্তী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এ শব্দটি আমদানি করেন। ১৯৯০ সালের পরে গণতন্ত্রের তৃতীয় তরঙ্গের পর তৃতীয় বিশে^ও এ প্রবণতা দৃষ্ট হয়। আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে এর প্রতিযোগিতার আরেকটি অর্থ হতে পারে কর্তৃত্ববাদের প্রয়োগের তুলনামূলক বিশ্লেষণ।

কর্তৃত্ববাদ এবং প্রতিযোগিতামূলক কর্তৃত্ববাদের ধারণা পাওয়া গেল। বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে ইদানীং প্রকাশিত ব্রিটিশ বিবৃতিটি একক নয়। ২০২০ সালের ১৩ জুলাই ক্যামব্রিজ বিশ^বিদ্যালয়ের জার্নালে ‘ক্যামব্র্রিজ কোর’ বাংলাদেশের কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থার উত্থান নিয়ে একটি গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। এর শিরোনাম ছিল- ‘রাইজ অব কম্পিটেটিভ অথোরাটারিয়ানিজম ইন বাংলাদেশ’। শাফি এমডি মোস্তফা এবং ডিবি সুবেদির যৌথ প্রযোজনা ছিল এটি। বাংলাদেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় গণতন্ত্রের অসংহত অবস্থায় কর্তৃত্ববাদের পরিবর্তিত প্রকৃতি এতে ব্যাখ্যা করা হয়। গবেষকদ্বয় প্রমাণ করার চেষ্টা করেন, বাংলাদেশে প্রতিযোগিতামূলক কর্তৃত্ববাদের উদ্ভব ঘটেছে। একটি শাসনকাল যেন আরেকটি শাসনকালকে এর চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য দ্বারা অতিক্রম করতে চাইছে। নির্বাচন ব্যবস্থার ব্যবচ্ছেদকে গবেষকদ্বয় কর্তৃত্ববাদের ‘মূল নিয়ামক’ বলে নির্ণয় করেন। তাদের বিশ্লেষণ মোতাবেক, আরো তিনটি রাজনৈতিক ও সামাজিক বিষয় এর অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করেছে। এ তিনটি বিষয় হচ্ছে- ক. রাজনৈতিক বিরোধীদের প্রান্তিক অবস্থানে ঠেলে দেয়া; খ. কর্তৃত্ববাদের নীতিগত প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ; গ. ধর্ম এবং ধর্মীয় নেতৃত্বের রাজনৈতিক ব্যবহার। এ তিনটির সমন্বিত ব্যবহারের মাধ্যমে, তারা মনে করেন, গণতন্ত্রের বিহ্বলতা সৃষ্টি হয়েছে। অন্য ভাষায় গণতন্ত্রের সর্বনাশ সাধিত হয়েছে।

আরেকজন গবেষক ডিজিটাল আইনের ব্যাপক অপপ্রয়োগের কারণে বাংলাদেশকে ডিজিটাল কর্তৃত্ববাদের দেশ বলে চিহ্নিত করেন। গবেষক ফাহমিদা জামান তার অনলাইন প্রকাশনায় দেখান যে, বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্রে কখনোই জনগণের রাজনৈতিক স্বাধীনতা সুসংহত ছিল না। এখন ডিজিটাল আইনের মাধ্যমে কর্তৃত্ববাদ নিগ্রহের পরিপূরক হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, ২০২০ সালের ১৩ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রকাশিত বিবৃতিতে দেশ ও বিদেশের বাংলাদেশী নাগরিকদের ‘মিথ্যা, বানোয়াট, বিভ্রান্তিকর ও উত্তেজনাকর’ কোনো বিবৃতি বা বক্তব্যদানে বিরত থাকার আবেদন জানানো হয়। যেসব বিষয়ে কথা বলা যাবে না সেগুলো হলো- সরকার, সামরিক বাহিনী, পুলিশ এবং বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিবৃতিতে আরো বলা হয়, দেশের স্থিতিশীলতা ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা এবং জনগণের কল্যাণের প্রয়োজনেই এসব করা হচ্ছে। অবশ্য এর আগে ঘোষিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮তে ওই সব ঘোষণার প্রতিফলন ঘটে। মূলত সরকার এর মাধ্যমে ২০০৬ সালে ঘোষিত তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইন প্রতিস্থাপন করে আরো কঠোরভাবে।

২০১৮ সালের নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস আগে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই যে আইনটি হয়েছে তা স্পষ্ট বোঝা যায়। শিক্ষা অধিদফতর থেকে নির্দেশ দেয়া হয়, কোনো ছাত্র অথবা শিক্ষক গণমাধ্যমে সরকারবিরোধী বিষয় লিখতে, সমর্থন করতে, অংশ নিতে বা পোস্ট দিতে বিরত থাকবে। এই আইনের সীমারেখা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা পেশাদারিত্ব পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। পরবর্তীকালে প্রয়োগেও দেখা যায়, দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিত্ব থেকে মন্ত্রী, অর্ধমন্ত্রী, নেতা, পাতিনেতা এমনকি সংসদ সদস্য পর্যন্ত এই আইনের কার্যকারিতা সম্প্রসারিত হয়েছে। গবেষক এই অপপ্রয়োগের প্রামাণ্য উদাহরণ দেন। নির্বাচনী কর্তৃত্ববাদের উদাহরণ দিতে গিয়ে গবেষক ২০১৪ সালের ভোটারবিহীন নির্বাচনের উল্লেখ করেছেন। ২০১৮ সালের নিশীথ রাতের নির্বাচনকে এই গবেষক অবিশ্বাস্য, অনিয়মপূর্ণ ও অস্বাভাবিক বলে উল্লেখ করেন। ফাহমিদা জামান সরকারের এ ধরনের কার্যক্রমকে ‘সাইবার স্বৈরাচার’ বলে বিশেষায়িত করেছেন। গবেষক এনফোর্স ডিজ অ্যাপিয়ারেন্স বা গুমের বিশদ বর্ণনা দিয়েছেন।

শুধু ২০২০ বা ২০২১ সাল নয়। এই সরকারের প্রাথমিক বছরগুলোতেই যে কর্তৃত্ববাদের প্রবণতা পরিদৃষ্ট হয় তা ফুটে ওঠে খন্দকার হাবিবুল হকের নিবন্ধে। ২০১২ সালের ১ সেপ্টেম্বর ডেইলি স্টার এ প্রকাশিত তার নিবন্ধটির শিরোনাম ছিল ‘অথোরিটারিয়ানিজম ইন বাংলাদেশ’। ক্ষমতাসীন দলের শাসনব্যবস্থার স্বরূপ উদঘাটন করে তিনি একে কমপিটিটিভ অথোরিটারিয়ানিজম বা প্রতিযোগিতামূলক কর্তৃত্ববাদ বলে অভিহিত করেন। এ ক্ষেত্রে নিবন্ধের শুরুতেই উল্লিখিত দুজন ক্যামব্রিজ গবেষকের সাথে তার মতের মিল পাওয়া যায়। ১. মতপ্রকাশের স্বাধীনতা; ২.নিয়মিত গ্রহণযোগ্য নির্বাচন; ৩. ক্ষমতার স্বতন্ত্রীকরণ- বিশেষত এই তিনটি বিষয় বিশ্লেষণ করে লেখক তার মন্তব্যে পৌঁছান। তিনি অনুতাপের সাথে উল্লেখ করেন, ১৯৯০ সালে এক কর্তৃত্ববাদের পতনের মধ্য আরেক ধরনের কর্তৃত্ববাদের প্রতিষ্ঠা ঘটে। বাংলাদেশের বহমান রাজনৈতিক শাসনকালকে তিনি হাইব্রিড রিজিম বা কৃত্রিম গণতান্ত্রিক বলে অভিহিত করেন। পরলোকগত এসপি হান্টিংটন যে গণতন্ত্রের তরঙ্গ দেখেছিলেন, তা এখন বিপরীত তরঙ্গে পরিণত হয়েছে। এ সত্যতা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অনেক দেশে কর্তৃত্ববাদের অবাধ তরঙ্গ বইছে। এখানে নির্বাচন আছে গণতন্ত্র নেই। বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও জনগণের জন্য এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো, হৃত গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধার। যত শিগগির এটি সম্ভব হয় ততই মঙ্গল।

লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]