এ রকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখতে চাই না

Daily Nayadiganta


এ রকম বহু ঘটনা ঘটে যাচ্ছে নীরবে নিভৃতে। সব কিছু প্রকাশও হচ্ছে না। কোনো কোনো ঘটনা সাময়িক তোলপাড় সৃষ্টি করছে বটে। তারপর অন্য আরো মারাত্মক ঘটনার চাপে সেসব আড়াল হয়ে যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে কত নিরীহ মানুষ নির্যাতিত হয়ে প্রাণ হারাচ্ছে, এখন তার শুমার করা বোধকরি অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। মেজর সিনহাকে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করল ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। তা নিয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশব্যাপী তুমুল শোরগোল চলল। মনে তো হচ্ছিল যে, খুব দ্রুতই এই হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে। কিন্তু একটি পর্যায়ে গিয়ে আটকে গেল। সরকার হয়তো বলবে, তদন্ত চলছে, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। কিন্তু কী জবাব সিনহার মা-বোনের কাছে। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলছে। সিনহাকে ঠাণ্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা করে পা দিয়ে তার মাথা মাড়িয়ে দিয়েছিলেন ওসি প্রদীপ। এখন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, শেষ পর্যন্ত সিনহা হত্যার বিচার পাওয়া যাবে তো?

পুলিশের বর্বর নির্যাতনে চেকপোস্টে খুন হলেন রায়হান। কিন্তু সময়ের আবর্তনে মনে হয় সেসব ঘটনা হারিয়ে যেতে বসেছে। বিচার পাওয়া যায় না। কিংবা বিচারপ্রক্রিয়া কেবলই দীর্ঘায়িত হতে থাকে। তারপর হারিয়ে যায়। যেমন কক্সবাজারের কমিশনার একরামের আর্তনাদ আমরা শুনেছিলাম। শেষ পর্যন্ত ভেবেছিলাম তার একটি সুরাহা হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যে সদস্যরা তাদের হত্যা করল, সেসব লোকের বিচার হবে। বিচারে তাদের ফাঁসি না হওয়ার কোনো কারণ ছিল না। সব কিছুর প্রমাণ ছিল অডিও রেকর্ডে। তার স্ত্রী-কন্যা-পরিবার সংবাদ সম্মেলন করে সে অডিও প্রকাশ করেছিলেন। তাতে একরামের আর্তনাদ, গুলির শব্দ, পরিবারের হাহাকার সবই ছিল। সমাজে আলোড়ন তুলেছিল। আমরা সাধারণ মানুষ আশা করেছিলাম, বিচার হবে। ঘাতক ঝুলবে ফাঁসির কাষ্ঠে। কিন্তু না, একরামের পরিবারকে বাকরুদ্ধ করে দেয়া হয়েছে।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, সুপ্রিম কোর্টের কিছু রায় যথাযথভাবে কার্যকর না হওয়া দুঃখজনক। তিনি বলেন, রাষ্ট্রের সব সংস্থা সুপ্রিম কোর্টের রায় মেনে চলতে বাধ্য। তিনি বলেন, সংবিধানের ১১২ অনুচ্ছেদে আছে, দেশের নির্বাহী বিভাগসহ সবাই সুপ্রিম কোর্টের সহায়তায় কাজ করবে। যেখানে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা আছে কাজ করার জন্য, সেখানে কেন আবার আমাদের আদালত অবমাননারও রুল ইস্যু করতে হবে? রাষ্ট্রের সবার দায়িত্ব হলো সুপ্রিম কোর্টের রায় কার্যকর করা? রায় কার্যকর না হওয়ার বিষয়ে মাহমুদ হোসেন বলেন, আমরা কনটেম্পট অব কোর্ট করতে পারি। কনটেম্পট করে করে আমরা হয়রান। কারণ কনটেম্পটের পরও আমাদের রায় ঠিক যেভাবে কার্যকর হওয়ার কথা সেভাবে কার্যকর হচ্ছে না- এটি একটি দুঃখের বিষয়। তিনি বলেন, আমাদের যেসব রায় যাচ্ছে, আশা করি নির্বাহী বিভাগের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় প্রতিটি রায় বাস্তবায়ন হবে।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের উপলব্ধি মন্দ নয়। কিন্তু নির্বাহী বিভাগ যখন প্রধান বিচারপতির আদেশ বা আপিল বিভাগের আদেশ থোরাই পরোয়া করেন, তখন বোধ করি কিছু করার থাকে। কিছু না কিছু তো করার থাকেই। এই যেমন ধরুন, আপিল বিভাগ আদেশ দিয়েছিল যে, সব যানবাহন থেকে হাইড্রোলিক হর্ন সরাতে হবে। আমরা তখন মিস্ত্রি নিয়ে মিরপুর রোডে পুলিশ চেকপোস্ট বসাতে দেখেছিলাম। তারা প্রধানত ট্রাক থামিয়ে সেখান থেকে হাইড্রোলিক হর্ন খুলে নিচ্ছিলেন। তারপর বেশ কয়েক মাস হাইড্রোলিক হর্ন ছিল না। এখন আবার সব ট্রাক-বাসে ফের লাগানো হয়েছে হাইড্রোলিক হর্ন। ক’বার আদেশ দেবেন উচ্চ আদালত। হয়রান হয়ে যাওয়ারই তো কথা।

তবু আদালতের ওপর তো আমাদের ভরসা থাকতে হবে। আর তা থাকতে হলে, আদালতকে প্রমাণ করতে হবে যে, নিম্ন থেকে উচ্চ আদালত পর্যন্ত সর্বত্র ন্যায়বিচার হয়। কিন্তু যখন দেখা যায়, রায় নির্বাহী বিভাগের পছন্দ হয়নি, তখন নিম্ন আদালতের বিচারককে স্ট্যান্ড রিলিজ করে তার অধঃস্তনকে দায়িত্ব দিয়ে সরকার তার পক্ষে রায় আদায় করে নিচ্ছে। তখন আদালত বলে আর কিছু থাকে না। প্রধান বিচারপতির কাছে আমরা কি প্রশ্ন রাখতে পারি যে, বিচার বিভাগের ওপর নির্বাহী বিভাগ তথা সরকারের এই নির্লজ্জ হস্তক্ষেপের ব্যাপারে আপনার কি কিছু করণীয় নেই? বিচারের বাণী কি নীরবে নিভৃতে কাঁদতেই থাকবে?

অপহরণ করে খুন করার ক্ষেত্রে র‌্যাবের সদস্যরা ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল। তারা একযোগে এক রাতে অর্থের লালসায় হত্যা করেছে সাতজন মানুষকে। তারা নূর হোসেনের কাছ থেকে শুধু টাকা নয় অন্যান্য সুবিধাও গ্রহণ করে। সেই কেলেঙ্কারির পর আরো নিশ্চয়ই অনেক কেলেঙ্কারিই ঘটেছে। কিন্তু সব কিছু আমরা জানতে পারিনি। কিন্তু সম্প্রতি র‌্যাব কর্তৃক আবার একটি অপহরণের ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। অপহরণ করে টাকা আদায়ের অভিযোগে র‌্যাবের চার সদস্যকে হাতিরঝিল থানা পুলিশ আটক করে।

এ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী তামজিদ হোসেন। গার্মেন্টের স্টক লটের ব্যবসায় কথা বলে র‌্যাব সদস্যরা তাকে ফাঁদে ফেলে। রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকার বাসিন্দা তামজিদকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করতে গেলে বৃহস্পতিবার (৯/৪) সন্ধ্যায় র‌্যাবের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর রাতে অভিযান চালিয়ে র‌্যাবের আরো দুই সদস্যকে আটক করা হয়। এ ছাড়া এদের সহযোগী রানু বেগমকেও আটক করে পুলিশ। পুলিশ বলছে, রানু বেগমসহ আটক ব্যক্তিরা একটি চক্রের সদস্য। রানু বেগম কখনো জমি বিক্রির মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করেন, কখনো গার্মেন্টের স্টক লটের ব্যবসায়ী পরিচয়ে কম দামে মাল বিক্রির কথা বলে ফাঁদে ফেলেন। এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত র‌্যাবের আরো দু’জন সদস্য ও রানু বেগমের সঙ্গী রাকিব পলাতক রয়েছেন। রানু বেগম এখন পুলিশ রিমান্ডে রয়েছেন।

১০ এপ্রিল তামজিদ হোসেন আদালতে জবানবন্দী দেন। তাতে তিনি বলেছেন, জমির মধ্যস্থতাকে কেন্দ্র করে গত বছর রানু বেগমের সঙ্গে তার পরিচয়। এরপর তার সঙ্গে তিনবার দেখা হয় গার্মেন্টস স্টক লট বিষয়ে আলোচনার জন্য। ঘটনার ৭-৮ দিন আগে রানু বেগমের সঙ্গে ২৫ লাখ টাকার গার্মেন্টস মালামাল কেনার বিষয়ে তার কথা হয়। গত বুধবার রানু বেগম তাকে ফোন করেন এবং পরদিন উত্তরার রাজলক্ষ্মী মার্কেটের সামনে থাকতে বলেন। পরদিন তামজিদ সকাল ১০টায় রাজলক্ষ্মী মার্কেটের সামনে গেলে রানু বেগম তাকে ডাক দেন। রানুর সঙ্গে রাকিব নামে এক ব্যক্তি ছিলেন, যাকে তামজিদ আগে দেখেননি। এর কিছুক্ষণ পর তার সঙ্গে দেখা করতে সেখানে যান পূর্ব পরিচিত ইকবাল হোসেন। এরপর রাকিবের প্রস্তাব অনুযায়ী মার্কেটের পেছনে নিউ ভিআইপি রেস্তোরাঁয় বসেন তারা।

রেস্তোরাঁয় বসার পর রানু বেগম জানতে চান মালামাল আজই নেবেন কি না, টাকা রেডি আছে কি না? তামজিদ জানান, আপনি মাল ডেলিভারি দিলেই টাকা পেয়ে যাবেন। এ সময় র‌্যাবের পোশাক পরা ৬-৭ জন সেখানে আসেন। তাদের হাতে হাতকড়া ও ওয়াকিটকি ছিল। তারা জানতে চান রাকিব কে? রাকিব হাত তোলেন। তখন র‌্যাব সদস্যরা ইকবাল ও তামজিদের জামার কলার ধরেন। এরপর রানু বেগম ও রাকিবকে সঙ্গে যেতে বলেন।

তারা গাড়িতে নিয়ে আমাদের হাতকড়া লাগায় এবং চোখ বাঁধে। আমাদের চর-থাপ্পড়ও মারে। আর বলে কোনো কথা বললে একদম মেরে ফেলব। এক দেড় ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে আমাদের এক জায়গায় নিয়ে যায়। র‌্যাব অফিসার রানু বেগমকে নিচে নামতে বলেন। পাঁচ সাত মিনিট পর তারা আবার উপরে ওঠে। এরপর একজন আমাকে বলে, তোর নামে অস্ত্র মামলা, ইয়াবা ও বিভিন্ন প্রতারণার মামলা দিবো। এই তোর বাবার কাছে টাকা চাবি। আমি বলি কত টাকা। সে বলে দুই কোটি টাকা। পরে ওরা আমার মোবাইল দিয়ে আমার আব্বার নম্বরে ফোন দেয়। আমার আব্বা জিজ্ঞেস করেন, তুই ঠিক আছিস কি না। আমি বলি ঠিক আছি। আমি আরো বলি একটি ঝামেলায় পড়েছি। ওরা দুই কোটি টাকা দাবি করে। এরপর মোবাইল নিয়ে যায়। আমাকে মারধর করে। পরে জানতে পারি আমার বাবা অসুস্থ হয়ে গেছেন এবং আমার বোনের সঙ্গে তাদের কথা হয়েছে। ১২ লাখ টাকা দিবে বলে কথা হয়েছে। আমার বোনকে যমুনা ফিউচার পার্কে আসতে বলে। টাকা নিয়ে না এলে আমাকে ক্রসফায়ারে দিবে বলে জানায়। সন্ধ্যার একটু আগে রোমান ও রনি নামে দু’জন গাড়ি থেকে নেমে যায়। কিছুক্ষণ পর আরো দু’জন নামে। এরপর রানু বেগমের ফোনে কল আসে। আমার কানে ফোন দিলে দুলাল নামের একজন বলে, তোর বোন সিনক্রিয়েট করে আমাদের দু’জনকে ব্লাকমেল করেছে। পাঁচ মিনিটের মধ্যে ওদের দু’জনকে না ছাড়লে তোকে মেরে তুরাগ নদীতে ফেলে দেবো। এরপর ওই মোবাইল দিয়ে আমার বোনকে ফোন দিলে সে জানায়, সে এখনো আসেনি। আমি কোথায় জিজ্ঞেস করলে বলি, তিনশ’ ফিট। এরপর মোবাইল নিয়ে যায়। এরপর গাড়ি নিয়ে উত্তরা চলে যায়। সেখানে গিয়ে ড্রাইভার, রানু বেগম, আমি আর ইকবাল ছাড়া সবাই নেমে যায়। আমি চোখের বাঁধন খুলে ফেলি। তখন একটি ছেলে এসে র‌্যাবের সরঞ্জামাদি নিয়ে যায়। তখন মোবারক নামের একজন বলে, এই দুইটাকে বাঁচিয়ে রেখে লাভ নেই। এরপর আমাকে নিয়ে হাতিরঝিল গেলে পুলিশ ঘেরাও করে আমাকে উদ্ধার করে।

পুলিশ জানায়, র‌্যাব সদস্যরা তামজিদকে মাইক্রোবাসে তুলে রূপগঞ্জ, পূর্বাচল, আব্দুল্লাহপুর, গাজীপুর এলাকা ঘোরেন। এর মধ্যেই ফোনে তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ১২ লাখ টাকায় মুক্তির বিষয়টি চূড়ান্ত হলে তার বোন থানা পুলিশকে জানান। তামজিদের বোন যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে গেলে মুক্তিপণ নিতে আসা র‌্যাবের দুই সদস্যকে কৌশলে আটক করে হাতিরঝিল থানা পুলিশ। তাদের তথ্য অনুযায়ী হাতিরঝিল মহানগর ব্রিজের ওপর মাইক্রোবাসে থাকা র‌্যাবের আরো দুই সদস্যসহ রানু বেগমকে আটক করা হয়। আটক তিনজন সেনাবাহিনীর ও একজন বিমানবাহিনীর সদস্য। তাদের নিজ নিজ বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

কিন্তু এক ভিন্ন চিত্র পাওয়া গেল গাইবান্ধায়। সেখানে পুলিশের বিরুদ্ধেই আনা হয়েছে গুরুতর অভিযোগ। মাস খানেক আগে জুতা ব্যবসায়ী হাসান আলীকে (৪৫) আওয়ামী লীগ নেতার হাতে তুলে দেয় স্থানীয় পুলিশ। পরে আওয়ামী লীগ নেতা সুদের কারবারি মাসুদের বাসা থেকে হাসান আলীর লাশ উদ্ধার করা হয়। হাসান আলীকে ওই আওয়ামী লীগ নেতা মাসাধিককাল ধরে তার বাসায় আটকে রেখেছিল। এই লাশ উদ্ধার করা হয় ১০ এপ্রিল। লাশ উদ্ধারের ১৮ ঘণ্টা পরও মামলা নেয়নি পুলিশ। পরে নিহত হাসানের স্ত্রী বীথি বেগম গাইবান্ধা সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। ব্যবসায়ী হাসান আলী হত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেন হাসান আলীর পরিবার ও এলাকাবাসী।

বীথি বেগম মামলার বিবরণে উল্লেখ করেন যে, জেলা শহরের স্টেশন রোডে আমার স্বামীর আফজাল সুজ নামের জুতার দোকান রয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতা মাসুদ রানা (৪২) একজন দাদন ব্যবসায়ী। ব্যবসা চলার সময়ে মাসুদ রানার কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা দাদন নেন আমার স্বামী। এ টাকা এখন সুদাসলে ১৯ লাখ দাঁড়িয়েছে বলে মাসুদ রানা দাবি করেন। সম্প্রতি মাসুদ সুদের টাকার জন্য আমার স্বামীর ওপর চাপ দেন। এক পর্যায়ে গত ৫ মার্চ সকালে লালমনিরহাটের একটি বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে আমার স্বামীকে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে আসেন মাসুদ। তিনি তাকে গাইবান্ধা শহরের খানকা শরিফসংলগ্ন নারায়ণপুর এলাকায় নিজ বাসায় আটকে রাখেন। এরপর টাকা নিয়ে তাদের মধ্যে তর্কবিতর্ক হয়। টাকার জন্য তিনি আমার স্বামীকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন এবং নানা ধরনের হুমকি দেন। এসব নির্যাতনের কথা মুঠোফোনে জানতে পেরে আমি স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় স্বামীকে উদ্ধারের চেষ্টা করি। স্বামীকে উদ্ধারের জন্য ওই বাড়িতে যাই। কিন্তু টাকা না দিলে মাসুদ আমার স্বামীকে ছেড়ে না দিয়ে বড় ধরনের ক্ষতি করবে বলে হুমকি এবং আমাদের বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়।

ওই দিন সন্ধ্যায় বীথি স্বামীকে উদ্ধারে গাইবান্ধা সদর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। বীথি বলেন, পরে সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মুজিবর রহমান ও উপপরিদর্শক মোশাররফ হোসেন এবং একজন অজ্ঞাত পুলিশ কর্মকর্তা মাসুদের বাড়ি থেকে আমার স্বামীকে সদর থানায় নিয়ে আসেন। একই দিন রাতে আমাদের উপস্থিতিতে আমার স্বামীকে আমার জিম্মায় না দিয়ে মাসুদের পক্ষে দেন। তিনি মাসুদের টাকা ফেরত দিতে বলেন এবং আমাকে নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে সই করতে বলেন। আমি তাতে সম্মত না হলে মুজিবর আমার স্বামীকে মাসুদের জিম্মায় দেন।

এরপর দলীয় ক্ষমতার দাপটে মাসুদ আমার স্বামীকে এক মাস আটকে রাখেন। আমি অনেকভাবে চেষ্টা করেও আমার স্বামীকে উদ্ধারে ব্যর্থ হই। গত ১০ এপ্রিল রাতে আমার স্বামীকে নির্যাতন করে হত্যা করে বাথরুমে ঝুলিয়ে রাখা হয়। শনিবার সকালে আমি মাসুদের বাড়িতে গিয়ে দেখি, আমার স্বামীর লাশ ঝুলে আছে। মাসুদ ও তার সহযোগীরা পরিকল্পিতভাবে আমার স্বামীকে হত্যা করেছে। সদর থানার ওসি মাহফুজুর রহমান বলেন, পুলিশ মাসুদের হাতে হাসানকে তুলে দেয়নি। থানা চত্বরে সালিস বৈঠকের পর হাসান, তার স্ত্রী বীথি ও মাসুদসহ উভয়পক্ষের লোকজন এক সঙ্গে হেঁটে থানা থেকে বেরিয়ে যান। এরপর তারা কী করেছেন পুলিশ তা জানে না। পুলিশ সুপার সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, তদন্ত চলছে। কারো গাফিলতি পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পরে এই ঘটনায় মাসুদ রানাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার করে তাকে বিনা হ্যান্ডকাফে মোটরসাইকেলের পেছনে চড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন এক পুলিশ কর্মকর্তা। তখন এলাকাবাসী ওই মোটরসাইকেল ঘেরাও করে এবং মাসুদকে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে নিতে বলে। তখন পুলিশ বাধ্য হয়ে তাকে হ্যান্ডকাফ পরায়।

এখানে থানার কী স্বার্থ ছিল তা স্পষ্ট নয়। কিন্তু পুলিশ চাইলে যে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে একজন মানুষকে রক্ষা করতে পারত, সেটি তো নিশ্চিত। এ রকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি আমরা আর দেখতে চাই না।
লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক

[email protected]