এমিল গিমে (১৭৯৫-১৮৭১) তার জাদুঘরের ভেতরেই বিশ্বভ্রমণ করে ফেলা সম্ভব। ১৮৬০-এর দশকে বিশ্বভ্রমণে বের হয়ে ধনী পরিবারের ইচ্ছে-তাড়িত সন্তান এমিল গিমে যা দেখেছেন এবং যা দেখাতে চেয়েছেন তা জাদুঘর-বন্দি করেছেন। এমিল গিমের দেখা সেই বিশ্বই প্রতিফলিত হয়েছে তার নামে সৃষ্ট জাদুঘরে। সংক্ষিপ্ত সময়ের বিশ্বভ্রমণের জন্য মাত্র সাড়ে সাত ইউরো দামের টিকেট কেটে জাদুঘরে ঢুকে পড়লেই হলো।
এমিল গিমের বাবা জ্য ব্যাপতিস্তে গিমে (১৭৯৫-১৮৭১) রাসায়নবিদ; আলট্রামেরিন রঙ তারই আবিষ্কার। এমিল গিমে লিখেছেন, (একালের সাহিত্যিকরা গিমে সাহিত্য পুরস্কারের নাম জানেন), সুর করেছেন, গ্র্যান্ড অপেরা সৃষ্টি করেছেন। সব ছাপিয়ে তার নাম নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে গিমে মিউজিয়াম। স্থাপিত হয়েছে ১৮৭৯ সালে, শিল্পকলা ও প্রত্ন সংগ্রহের এমন সমারোহ পৃথিবীর আর কোথাও নেই।
এমিল গিমে
এমন একটি প্রতিষ্ঠান যদি গাঙ্গেয় সংস্কৃতির নামে বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদের প্রদর্শনী করে বাংলাদেশকে পৃথিবীর সামনে নতুন আলোকে তুলে ধরতে চায়, সে তো আনন্দের কথা। কিন্তু আনন্দ মিলিয়ে গেল যখন জানা গেল বাংলাদেশের সাথে প্রদর্শনীর চুক্তিসহ প্রায় সব কাজই গোপনে লোকচক্ষুর অন্তরালে করা হয়েছে আপত্তি তুলেছে বাংলাদেশের সচেতন শিল্পমনা মানুষ। বাংলাদেশ থেকে প্রত্নসম্পদ যাবে, চুক্তি হয়ে গেছে, কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, ফিরবে তো?
বার্মার পাচারকৃত মূর্তি
ইউরোপের জাদুঘরগুলোর অধিকাংশ দর্শনীয় সামগ্রীই তো এশিয়া ও আফ্রিকার লুণ্ঠিত জাতীয় সম্পদ। কোনো সন্দেহ নেই যে সব দেশের অন্ততঃ কিছুসংখ্যক স্বার্থান্ধ মানুষের যোগসাজস না থাকলে এ ধরনের স্থানান্তর অনেকটাই অসম্ভব, এটাও সবাই মানেন। বাংলাদেশের প্রত্নসম্পদ এবং জাদুঘরে সুরক্ষিত প্রত্নসম্পদ চোরাচালান নিয়ে জাদুঘরের ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ লোকদের সন্দেহের চোখে দেখা হয়েছে।
‘মাস্টারপিসেস অব দ্য গ্যাঞ্জেস’ প্যারিসের গিমে জাদুঘরে প্রদর্শিত হবার কথা ছিল ২০০৭-এর অক্টোবরেই কিন্তু অমূল্য প্রত্নসম্পদ প্রেরণে বিলম্বের কারণে জানুয়ারি ২০০৮ প্রদর্শনীর জন্য নির্ধারিত হয়। গিমের প্রদর্শনী ক্যাটালগে উল্লেখ করা হয়:
বাংলাদেশ অসামান্য গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মালিক। ভারতীয় সাংস্কৃতিক ভূমন্ডলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হচ্ছে বাংলার পূর্বাঞ্চল। পশ্চিমের বিশ্ব যে প্রত্নতাত্ত্বিক ধ্বংসযজ্ঞ কল্পনা করতে অভ্যস্ত বাংলার ধরণটা তার চেয়ে ভিন্ন। এই অঞ্চলটি খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় থেকে প্রথম শতকের মৌর্য আমল থেকে শুরু করে অষ্টম থেকে ত্রয়োদশ শতকের পাল ও সেন রাজবংশের শাসনকালীন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। ভারতীয় প্রত্নঅঞ্চলের প্রাচীনতম বৌদ্ধ বিহার বাংলাদেশের পাহাড়পুরে, এটা এখন ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত।
পাচারকৃত মূর্তি
সে সময়কার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ, মন্তব্য ও বিশ্লেষণ অনুবাদ করে এই লেখাটি দাঁড় করানো হচ্ছে।
ডেইলি ষ্টার-এর পিনাকী রায়ের ১২ অক্টোবর ২০০৭-এর প্রতিবেদন, ১৮৭টি প্রত্নসম্পদ প্যারিসে পাঠাতে প্রস্তুতি সম্পন্ন: আরো একটি মামলা রুজু হতে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের ১৮৭টি প্রত্নতাত্বিক মাষ্টারপিস প্যারিসের প্রদর্শনীতে পাঠাতে সরকার সম্পূর্ণ প্রস্তুত হয়ে আছে, এরই মধ্যে প্রত্নতাত্বিক বিশেষজ্ঞরা প্রত্নসম্পদ প্রেরণের বিরুদ্ধে আরো একটি মামলা রুজু করেছেন।
এয়ার ফ্রান্সের একটি বিশেষ কার্গো উড়োজাহাজ কাল সকালে (১৩ অক্টোবর) যখন এই সম্পদগুলোর প্যারিস যাত্রার কথা, ঢাকার প্রথম জয়েন্ট ডিস্ট্রিক্ট জজ আদালত থেকে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ফরাসি রাষ্ট্রদূতকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে ‘কেন প্রত্নসম্পদ প্রেরণের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে না’, অবিলম্বে তাদের তা জানাতে হবে। একই সঙ্গে পরিবহনকারী প্রতিষ্ঠান হোমবাউন্ড লিমিটেডকেও কারণ দর্শানোর আওতায় আনা হয়েছে। মামলা দায়ের করেছেন: প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সাবেক পরিচালক ডক্টর নাজিমউদ্দিন আহমেদ, জাদুঘরের সাবেক মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, স্থপতি শামসুল ওয়ারেস, শিল্প সমালোচক মইনউদ্দিন খালেদ এবং মুদ্রা বিশেষজ্ঞ নুরুল ইসলাম।
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন প্যারিসে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা ঢাকা থেকে প্রেরিত প্রত্নসম্পদের চালান গ্রহণ করবেন। প্রদর্শনীর নতুন তারিখ এখনও সাব্যস্ত হয়নি, তবে পূর্ব নির্ধারিত তারিখ ১৩ অক্টোবরের তিন থেকে চার সপ্তাহ পরে হতে পারে বলে জানানো হয়েছে।
১৮৭টি প্রত্ন নিদর্শনের মধ্যে ১২৮টিই পূর্ণ মানব-আকৃতির-ফুল সাইজ মূর্তি, অন্যগুলো টেরাকোটা, তামার ফলক, বৌদ্ধদের দুর্লভ প্রজ্ঞা পারিমিতা স্ক্রিপচার এবং মুদ্রা। এগুলো পাল, সেন, মৌর্য ও গুপ্ত রাজবংশের শাসনকালের, এগুলো বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, ময়নামতি, পাহাড়পুর, মহাস্থানগড় এবং বরেন্দ্র রিসার্চ মিউজিয়াম থেকে বাছাই করা হয়েছে।
এর আগে প্যারিস প্রদর্শনীর চুক্তির অস্বচ্ছতা চ্যালেঞ্জ করে কজন শিল্প সমযদার হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছেন। আদালত ১৮৭টি দ্রব্য প্রেরণে দুমাসের স্থগিতাদেশ প্রদান করেছে। পরে ফরাসি রাষ্ট্রদূত বলেছেন, এ অবস্থায় প্রদর্শনী শেষ পর্যন্ত নাও হতে পারে। অন্যদিকে ক’জন বুদ্ধিজীবী দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে প্রত্নসম্পদ প্যারিস পাঠাতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, তবে তারা এগুলোর নিরাপদ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতেও সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। এদিকে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে আপিল করলে সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে দেয়, ফলে দুর্লভ সামগ্রী প্রদর্শনীর জন্য পাঠাতে আর কোনো বাধা থাকে না। ১৩ অক্টোবর সকালেই পাঠানোর জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এয়ারপোর্টে নিরাপত্তার অনুরোধ জানায়।
প্রত্নসম্পদের বীমার অর্থ প্রসঙ্গে মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব বলেন, দুই দেশের সরকারের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী যেহেতু পাঠানো হচ্ছে, আশঙ্কার কোনো কারণ নেই।
বীমা ও চুক্তি যে এক বিষয় নয়, দুর্ভাগ্যবশত সরকারের যুগ্ম সচিবের সে ধারণাও নেই। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান সুফি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সাধারণ মালামালের মতো এগুলো পাঠানো হচ্ছে, দীর্ঘযাত্রায় নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে, অধিকন্তু কিছু সংখ্যক প্রত্ন নিদর্শনে ‘অ্যাকসেশন নম্বর লিপিবদ্ধ হয়নি, হারিয়ে গেলে এগুলো আর সনাক্ত করা সম্ভব হবে না। তিনি জানান ২৫০০ বছরের পুরোনো ৫০টি মুদ্রার বীমামূল্য মাত্র ৫০০০ ইউরো করা হয়েছে। এমন আরো একাধিক উদাহরণের পরও সরকারের ভাষ্য হচ্ছে, এসব কোনো সমস্যা নয়।
উদ্বেগ ও আশঙ্কা ২৬ নাগরিকের
দেশের প্রথিতযশা ২৬ জন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও বুদ্ধিজীবী তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধানের দৃষ্টি ভারত বিশেষজ্ঞ জোয়াকিম কে বাউজের ফরাসি রাষ্ট্রদূতকে লেখা একটি চিঠির প্রতি আকৃষ্ট করেছেন। ১৮৭টি প্রত্নসম্পদের নিরাপত্তা বীমার অর্থ মাত্র ১০ কোটি টাকা নির্ধারণকে তিনি একটি অবিশ্বাস্য ‘আর্থিক জালিয়াতি’ বলে উল্লেখ করেছেন, যেখানে এই টাকায় ভ্যান গখের একটি চিত্রের একাংশও মিলবে না। তারা উদ্বিগ্ন একই উড়োজাহাজে এক সঙ্গে যখন ১৮৭টি সম্পদ নিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত হয়েছে আকাশযানের একটি দুর্ঘটনাতেই সবগুলো সম্পদ চিরতরে নিঃশেষ হয়ে যাবে। তারা গিমে জাদুঘরের সাথে অসম চুক্তির নিন্দা করেন। এই সম্পদ হাতছাড়া করে বা নষ্ট করে, তারা পরবর্তী প্রজন্মের কাছে দোষী হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকতে চান না বলে জানান।
বিবৃতিতে সই দিয়েছেন : অধ্যাপক খান সারওয়ার মোর্শেদ, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, অধ্যাপক কবীর চৌধুরী, অধ্যাপক বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, অধ্যাপক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, অধ্যাপক মুস্তফা নুরুল ইসলাম, অধ্যাপক সৈয়দ আকরম হোসেন, অধ্যাপক সালাহউদ্দিন আহমদ, অধ্যাপক নওশাবা খাতুন, অধ্যাপক অজয় রায়, সঙ্গীতশিল্পী কলিম শরাফী ও সানজিদা খাতুন, সাংবাদিক কামাল লোহানী, উদ্ভিদবিজ্ঞানী দ্বিজেন শর্মা, কবি বেলাল চৌধুরী, স্থপতি রবিউল হোসাইন, চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী, বুলবুল ওসমান, এমদাদ হোসেন ও আমিনুল ইসলাম।
নিরর্থক প্রতিবাদ
এসব কোনো সমস্যা নয় বলে ১ ডিসেম্বর মধ্যরাতে প্রতিবাদকারী ও সাংবাদিক এড়াতে পুলিশ প্রহরায় প্রথম চালানটি প্যারিস পাঠিয়ে দেওয়া হলো। দ্বিতীয় চালান ১৩টি ক্রেটের একটি ২২ ডিসেম্বর মধ্যরাতের পর ঢাকার এয়ারপোর্ট টারমাক থেকে নিরুদ্দেশ হয়ে গেল। তাতে ছিল টেরাকোটার কালো বিষ্ণুমুর্তি এবং একটি আবক্ষ বিষ্ণুমুর্তি।
প্রতিবাদকারীদের সমাবেশ
প্রতিবাদকারীদের আশঙ্কার সত্যতা জাতি দেখতে শুরু করল। এতে সরকারের ঈষৎ বোধোদয় হলো– প্রদর্শনী বাতিল করল। যাদের গ্রেফতার করা হলো তাদের মধ্যে একজন সাবেক সাংসদ ও ছিলেন। এই দুটো দুর্লভ মূর্তির ভাঙ্গা টুকরো পাওয়া গেল শহরের প্রান্তে, জঙ্গলের স্তুপে। গুনে গুনে পাওয়া গেল ৪৬ টুকরো একত্র করে জানানো হলো- এখানে দুই মূর্তির ৩০ শতাংশ রয়েছে। পুলিশ আশা প্রকাশ করলো সবগুলো টুকরোই উদ্ধার করতে সমর্থ হবে।
উদ্বেগ ও আশঙ্কা সত্যে পরিণত হতে প্যারিস পর্যন্ত যেতে হলো না। ঢাকাতেই তা প্রমাণিত হলো।
এই প্রথম বাংলাদেশের ইতিহাসে ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা আইয়ুব কাদরী পদত্যাগ করলেন।
সে সময় খ্যাতিমান চিত্রগ্রাহক শহিদুল আলম লিখেন, গিমে জাদুঘরের প্রত্নসম্পদ ফেরত না দেবার রেকর্ড রয়েছে। বাংলাদেশসহ চীন এবং এশিয়ার অন্যান্য দেশের চোরাই প্রত্নসম্পদ এই জাদুঘর অধিকার করে নিয়েছে। প্রথম চালানে পাঠানো সামগ্রীগুলো গিমে জাদুঘরে গিয়ে তিনি দেখতে চেয়েছিলেন, কিন্তু কিউরেটর ও পরিচালক তাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। ২৭ ডিসেম্বর ফরাসি সরকার প্রথম চালানে গিমেতে পৌঁছা ৪২টি প্রত্নসম্পদ ফেরত পাঠাবার সিদ্ধান্ত জানায়।
প্যারট লেডির প্রত্যাবর্তন
প্যারট লেডি খাজুরাহোর একটি মন্দির থেকে চুরি করা বালুমাটির এক নারীমূর্তি, তার কাঁধে তোতাপাখি। এই নারীর বয়স কমপক্ষে ৯০০ বছর। অপেশাদার স্মাগলারদের হাত ঘুরে এটি চলে আসে অন লাইন বিক্রেতাদের কাছে। অপেশাদার এ জন্য বলা হচ্ছে যে, তারা সম্ভবত এ নারীর বাজারমূল্য সম্পর্কে মোটেও অবহিত নয়। ২০১১ সালে প্যাট্রিশিয়া বার্ন নামের ষাট বছর বয়সী এক কানাডিয়ান নারী আমেরিকান অন লাইন ই-বে থেকে ৩৮১৮.৫৯ ডলার দিয়ে তিন ফুট দীর্ঘ প্যারট লেডিকে কিনে নেন। এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব সম্পর্কে ধারনা পেতে বিশেষজ্ঞরা যখন পরীক্ষা চালান তার দাম অনুমানিক ১০ মিলিয়ন ডলার সাব্যস্ত হয়। ২০১৬ সালে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কানাডা সফরের সময় শুভেচ্ছা উপহার হিসেবে কানাডিয়ান প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন হার্পার তার হাতে তুলে দেন প্যারট লেডিকে। এই নারীমূর্তি ঠিক কোন মন্দির থেকে তুলে নিয়েছে তা গবেষকরা নিশ্চিত হননি, তবে প্যারট লেডি প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে খাজুরাহোতে ফিরে এসেছে।
প্যাট্রিশিয়া বার্ন কোনো এই মূর্তি কিনতে গেলেন?
প্যাট্রিশিয়া বার্নের সাফ কথা, এটা চোরাই মূর্তি জানলে তিনি প্রায় চার হাজার ডলার খরচ করে নিজের বিপদ ডেকে আনতেন না।
তবুও প্যাট্রিশিয়া এটাই বা কিনলেন কেনো? কারণ এ ধরনের মূর্তির সাথে তার শৈশব স্মৃতি জড়িয়ে আছে। তার বাবা ছিলেন ইম্পেরিয়াল টোবাকো কোম্পানি অব ইন্ডিয়ার একাউন্টেন্ট, আর প্যাট্রিশিয়ার জন্ম কলকাতায়। সুতরাং ভারতীয় মূর্তির প্রতি তার আকৃষ্ট না হবার কারণ নেই।
অনলাইন বিক্রেতা তাকে জানাল তার নিকটবর্তী এডমন্টন এয়ারপার্টে মূর্তিটি পাঠানো হয়েছে। সেখানে শুল্ক পরিশোধ করে মূর্তিটি গ্রহণ করতে তিনি যখন এয়ারপোর্টে হাজির হলেন, শুল্ক কর্তৃপক্ষ জানাল এটা সম্ভবত চোরাই মাল, দেওয়া যাবে না। বিদেশি সাংস্কৃতিক সম্পদ লেনদেন নিষিদ্ধ। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এটি এক সময় তাকে দেওয়া হলেও পুনরায় তাকে নোটিশ দিয়ে এটি ফেরত নেওয়া হয়।
তিনি ই-বের কাছে টাকা ফেরত চাইলে তারা টাকা দিয়ে দেয়। বিস্তারিত তদন্ত শেষে নিশ্চিত হওয়া যায় এটিই খাজুরাহোর প্যারট লেডি।
এ ধরনের আরো অন্তত এক ডজন চোরাই ভারতীয় নারী মূর্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাওয়া যাবে বলে মনে করা হয়।
প্রত্নসম্পদের চোরাই বাজারটি বিশাল, অন্তত ৬ বিলিয়ন ডলারের। চোরাচালানিদের অন্যতম আকর্ষণ পাকিস্তান। হরপ্পা মহেঞ্জোদারো সভ্যতার বহু নিদর্শন পাকিস্তানের হাতছাড়া হয়ে গেছে। প্রায় প্রত্যেক দেশেই ঐতিহ্য রক্ষার স্বার্থে এ ধরনের চোরাচালান শাস্তিযোগ্য বড় অপরাধ এর আন্তর্জাতিক কনভেনশনও রয়েছে, কিন্তু প্রত্নসামগ্রী পাচারের বাজারটি ক্রমেই বড় হচ্ছে।